সিলেট জেলায় আসছেন নতুনরা, মহানগরে পুরনোরাই

0

সিলেট জেলা ও মহানগর আওয়ামী লীগের ত্রিবার্ষিক সম্মেলন আজ। দীর্ঘ ৮ বছর পর জেলার গুরুত্বপূর্ণ দুই শাখার এ সম্মেলন ঘিরে সাজসাজ রব। জেলার ১৩ উপজেলা ও মহানগরীর ওয়ার্ডে ওয়ার্ডে কর্মী-সমর্থকদের মধ্যে বিরাজ করছে উৎসবমুখর পরিবেশ।

শেষ মুহূর্তে নানা সমীকরণে সিলেট জেলা ও মহানগর আওয়ামী লীগের শীর্ষ পদে বেশ কয়েকজনের নাম এখন আলোচনায়। দলের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, জেলা আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে যে পরিবর্তন আসছে তা প্রায় নিশ্চিত। জেলার সভাপতির দৌড়ে এগিয়ে আছেন বর্তমান সাধারণ সম্পাদক শফিকুর রহমান চৌধুরী, প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থানমন্ত্রী ইমরান আহমদ ও মাহমুদ উস সামাদ চৌধুরী। জেলা কমিটির সাধারণ সম্পাদক পদে আলোচনায় আছেন বিদায়ী কমিটির সহ-সভাপতি অ্যাডভোকেট শাহ ফরিদ আহমদ, যুগ্ম সম্পাদক অ্যাডভোকেট নিজাম উদ্দিন ও অ্যাডভোকেট নাসির উদ্দিন খানের মধ্যে একজন।

মহানগর কমিটি নিয়ে কিছুটা জটিলতা তৈরির ইঙ্গিত পাওয়া যাচ্ছে। ফলে বর্তমান সভাপতি বদর উদ্দিন আহমদ কামরান ও সাধারণ সম্পাদক আসাদ উদ্দিন আহমদ নিজ নিজ পদে বহাল থাকার সম্ভাবনাই বেশি। পরিবর্তনের কথাও বাজারে আছে। এক্ষেত্রে সভাপতির দৌড়ে বর্তমান সাধারণ সম্পাদক আসাদ উদ্দিন আহমদ ছাড়াও আছেন অ্যাডভোকেট রাজ উদ্দিন ও ফয়জুল আনোয়ার আলাওর। সাধারণ সম্পাদক পদে অধ্যাপক জাকির হোসেন, সিটি কাউন্সিলর আজাদুর রহমান আজাদ ও শফিউল আলম চৌধুরী নাদেলের কথাও শোনা যাচ্ছে।

সূত্র জানায়, কমিটিতে ঠাঁই দেয়ার আগে ইতিপূর্বে দলের জন্য কারা ত্যাগ শিকার করেছেন, কারাই-বা দলীয় পরিচয় বিক্রি করে সরকারি-বেসরকারি দফতর থেকে সুবিধা নিয়েছেন এসব বিশ্লেষণ করা হচ্ছে। এছাড়াও দীর্ঘ দিনের পরীক্ষিত ও ত্যাগী নেতাদের মূল্যায়নের বিষয়টিও আলোচনায় উঠে এসেছে। কমিটিতে স্থান পাওয়া নিয়ে জেলা ও মহানগর আওয়ামী লীগ নেতাকর্মী ও কাউন্সিলররা দ্বিধাবিভক্ত হয়ে পড়েছেন।

এক পক্ষে আছেন ত্যাগী-পরীক্ষিতরা, অন্য পক্ষে আছেন সুবিধাবাদীরা। আজকের সম্মেলনের মাধ্যদিয়ে এ লড়াইয়ের অবসান ঘটবে। দুপুর ১২টায় নগরীর আলিয়া মাদ্রাসা মাঠে সম্মেলনে প্রধান অতিথি থাকবেন দলের সাধারণ সম্পাদক ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। বিশেষ অতিথি থাকবেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. একে এ মোমেন, প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থানমন্ত্রী ইমরান আহমদ, প্রেসিডিয়াম সদস্য সাবেক শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুবউল আলম হানিফ ও আবদুর রহমান, সাংগঠনিক সম্পাদক আহমদ হোসেন ও মিসবাহ উদ্দিন সিরাজ, কেন্দ্রীয় সদস্য অধ্যাপক রফিকুর রহমান।

এর আগে ২০১১ সালে সিলেট জেলা ও মহানগর আওয়ামী লীগের সম্মেলন হয়। শেষ পর্যন্ত কেন্দ্রের নির্দেশে গত ২ মাসে উপজেলা ও ওয়ার্ড কমিটির সম্মেলন দায়সারাভাবে শেষ হয়। এসব কমিটি নিয়েও নানা বিতর্কের জন্ম দিয়েছে।

সিলেট জেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি পদে আর যারা আলোচনায় রয়েছেন তারা হচ্ছেন- ভারপ্রাপ্ত সভাপতি জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট লুৎফুর রহমান, আশফাক আহমদ, মাসুক উদ্দিন আহমদ, সাদ উদ্দিন এবং সাধারণ সম্পাদক পদে আলোচনায় আছেন বর্তমান সহ-সভাপতি অ্যাডভোকেট শাহ মোশাহিদ, অধ্যক্ষ সুজাত আলী রফিক, দক্ষিণ সুরমা উপজেলা চেয়ারম্যান আবু জাহেদ ও জগলু চৌধুরী।

মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি পদে বাকী যারা আলোচনায় তারা হলেন- অ্যাডভোকেট মফুর আলী, ফয়জুল আনোয়ার আলাওর ও আবদুল খালিক। সাধারণ সম্পাদক পদে আলোচনায় আছেন বর্তমান যুগ্ম সম্পাদক বিজিত চৌধুরী, সাংগঠনিক সম্পাদক এটিএম হাসান জেবুল, পরিবেশ সম্পাদক জগদীশ চন্দ্র দাস, তথ্য ও গবেষণা সম্পাদক তপনমিত্র ও সাংস্কৃতিক সম্পাদক প্রিন্স সদরুজ্জামান চৌধুরী।

জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি প্রার্থীদের মধ্যে সাংগঠনিক তৎপরতায় এগিয়ে বর্তমান সাধারণ সম্পাদক শফিকুর রহমান চৌধুরী। তিনি ২০০১ সালের জাতীয় নির্বাচনের সময় যুক্তরাজ্যের প্রবাস জীবন ছেড়ে দেশে আসেন। এরপর থেকেই দলের সাংগঠনিক কর্মকাণ্ডে জড়িয়ে আছেন। সংগঠন করতে গিয়ে খুইয়েছেন বিদেশের ব্যবসা-বাণিজ্য। দুটি জাতীয় সংসদ নির্বাচনে তিনি সিলেট-২ আসনে দলীয় প্রার্থী হলেও জোটের বলি হয়ে নির্বাচন থেকে বিরত থেকেছেন।

দীর্ঘদিন ধরে দল ক্ষমতায় থাকার সুযোগে অনেকেই আঙুল ফুলে কলাগাছ হলেও বিপরীতে অবস্থান শফিকুর রহমান চৌধুরীর। দলের এ ত্যাগী নেতাকে জেলার শীর্ষ পদে দেখতে চান কর্মী-সমর্থকরা। অপরদিকে জেলা আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি অ্যাডভোকেট লুৎফুর রহমান এখন বয়সের ভারে সাংগঠনিক কর্মকাণ্ড পরিচলনার অবস্থায় নেই বলে মনে করছে দলের একাংশ। এছাড়া গত জাতীয় সংসদ নির্বাচনের প্রাক্কালে তিনি সিলেট-৩ আসনে দলীয় সাংসদকে রেখে একাধিক নেতাকে দলীয় প্রার্থী হিসেব ঘোষণা করে নানা বিতর্কের জন্ম দেন।

এদিকে সম্মেলনস্থলের আশপাশ ছেয়ে গেছে নেতাকর্মী ও সমর্থকদের ব্যানার ফেস্টুন, পোস্টার ও তোরণে। নগরজুড়ে শোভা পাচ্ছে অসংখ্য তোরণ। সিলেট জেলা আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক শফিকুর রহমান চৌধুরী বলেন, দুপুর ১২টায় সিলেট সরকারি আলিয়া মাদ্রাসা মাঠে সম্মেলনের উদ্বোধনী অনুষ্ঠান হবে। পরে কাজী নজরুল অডিটোরিয়ামে হবে কাউন্সিল অধিবেশন।

৬০ ফুট মঞ্চ : সম্মেলনের জন্য বিশালাকারের মঞ্চ প্রায় প্রস্তুত। নগরীর চৌহাট্টা এলাকার আলিয়া মাদ্রাসা মাঠে এ মঞ্চ নির্মাণ করা হচ্ছে। জেলা আওয়ামী লীগের উপ-দফতর সম্পাদক জগলু চৌধুরী জানান, অনেকটা নৌকার আদলে এ মঞ্চ করা হচ্ছে। ৬০ ফুট বাই ৩০ ফুট মঞ্চে আসন থাকবে প্রায় ২০০টি।

মুক্তিযোদ্ধাদের ৪ দাবি : আসন্ন জাতীয় সম্মেলন ও চলমান তৃণমূলের বিভিন্ন জেলা-উপজেলায় আওয়ামী লীগের সম্মেলনকে সামনে রেখে দলের কাছে চারটি দাবি জানিয়েছেন সিলেটের মুক্তিযোদ্ধারা। বুধবার দুপুরে সিলেট জেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদ কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে এসব দাবি জানান সিলেট জেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার সুব্রত চক্রবর্ত্তী জুয়েল। দাবিগুলো হচ্ছে- ১. এদেশে রাজনীতি করার অধিকার রয়েছে শুধু মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় সমৃদ্ধ ব্যক্তিদের।

রাজনীতি করতে হলে মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্বাসী হতে হবে এবং মুক্তিযুদ্ধবিরোধী কোনো পরিবারের সন্তান হওয়া চলবে না। ২. সরকারি বা বিরোধী দল কোথাও ’৭১-এর রাজাকার, আলবদর, আলশামস বা বর্তমান জামায়াত-শিবির পরিবারের কোনো সদস্যের রাজনীতি করার অধিকার থাকবে না। ৩. আওয়ামী লীগের সভপাতিসহ সব নেতা ও কাউন্সিলরদের কাছে আমাদের দাবি হচ্ছে- তারা যেন ’৭১-এর রাজাকার, আলবদর, আলশামস, শান্তি কমিটির সদস্যদের সন্তান এবং অনুপ্রবেশকারী কাউকে তৃণমূল থেকে কেন্দ্র পর্যন্ত কোনো পদে না রাখেন।

৪. সিলেটের কোনো উপজেলায় গুরুত্বপূর্ণ পদে রাজাকার ও শান্তি কমিটির সদস্যদের সন্তানদের নির্বাচিত হওয়ার সুযোগ করে দেয়া হয়েছে। আমরা এসব কর্মকাণ্ডের তীব্র প্রতিবাদ জানাই এবং এসব পদে মুক্তিযুদ্ধের চেতনাসমৃদ্ধ ব্যক্তিদের দিয়ে কমিটি গঠনের দাবি জানাই।

তুমি এটাও পছন্দ করতে পারো

উত্তর দিন

আপনার ইমেইল ঠিকানা প্রচার করা হবে না.

WP2Social Auto Publish Powered By : XYZScripts.com