চতুর্থ শ্রেণির ছাত্রকে দেয়া প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রতিশ্রুতি পূরণ হচ্ছে। পটুয়াখালীর পায়রা নদীর ওপর নির্মাণ হবে সেতু। ‘কচুয়া-বেতাগী-পটুয়াখালী-লোহানিয়া-কানাইয়া সড়কের ১৭ কিলোমিটারে পায়রা নদীর ওপর সেতু নির্মাণ’ নামের একটি প্রকল্প পরিকল্পনা কমিশনে প্রস্তাব করেছে সেতু বিভাগ। এটি বাস্তবায়নে ব্যয় ধরা হয়েছে ১ হাজার ১৫৩ কোটি ১৫ লাখ টাকা। খবর সংশ্লিষ্ট সূত্রের।
২০১৬ সালের ১৫ আগস্ট একটি সেতু চেয়ে অনুরোধ জানিয়ে প্রধানমন্ত্রীকে চিঠি পাঠিয়েছিল পটুয়াখালী জুবিলী উচ্চ বিদ্যালয়ের ছাত্র শীর্ষেন্দু বিশ্বাস। সেই চিঠির জবাব দিয়ে সেতু নির্মাণের আশ্বাস দিয়েছিলেন প্রধানমন্ত্রী। সেতু বিভাগ থেকে প্রস্তাব পাওয়ার পর আগামী ৯ ডিসেম্বর এ প্রকল্প মূল্যায়ন কমিটির (পিইসি) সভার আয়োজন করা হয়েছে।
তবে প্রকল্পটিতে পরামর্শক ব্যয় বেশি হয়েছে বলে মনে করছে কমিশন। তাই এ খাতে ব্যয় যৌক্তিকভাবে কমাতে বলা হবে। সেই সঙ্গে দেশীয় প্রশিক্ষণ প্রস্তাব, অনুষ্ঠান ও উৎসব এবং অপ্রত্যাশিত ব্যয় বাদ দেয়া এবং বৈদেশিক প্রশিক্ষণ খাতে প্রায় আড়াই কোটি টাকা বরাদ্দের প্রস্তাব কমিয়ে ৭০ লাখ টাকা রাখতে বলা হবে বলে জানায় পরিকল্পনা কমিশন সূত্র।
জানতে চাইলে সেতু বিভাগের অতিরিক্ত সচিব (উন্নয়ন) মো. আনোয়ার হোসেন বুধবার যুগান্তরকে বলেন, প্রকল্পটি বাস্তবায়নের মধ্য দিয়ে শীর্ষেন্দুকে দেয়া প্রধানমন্ত্রীর প্রতিশ্রুতি পূরণ হবে। আমরা বৈদেশিক অর্থায়নের জন্য প্রচেষ্টা অব্যাহত রেখেছি। আপাতত সরকারি অর্থেই বাস্তবায়ন কাজ শুরু করতে প্রকল্পটি প্রস্তাব করা হয়েছে। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, এটা অনেক বড় সেতু হবে। তাই পরামর্শকের প্রয়োজন রয়েছে।
৯ ডিসেম্বর অনুষ্ঠেয় পিইসি সভার জন্য তৈরি করা কার্যপত্র থেকে জানা গেছে, প্রস্তাবিত প্রকল্পের আওতায় ১ হাজার ৬৯০ মিটার দীর্ঘ সেতুটি নির্মিত হলে মির্জাগঞ্জ উপজেলার সঙ্গে পটুয়াখালী সদর ও ঢাকার সরাসরি সড়ক যোগাযোগ প্রতিষ্ঠিত হবে। বর্তমানে কচুয়া-বেতাগী-পটুয়াখালী-লোহালিয়া-কালাইয়া সড়কের ১৭ কিলোমিটারে মির্জাগঞ্জের পায়রা নদীতে ফেরির মাধ্যমে স্বল্পপরিসরে যানবাহন চলাচল করছে।
অনেক ক্ষেত্রে দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়ায় জীবনের ঝুঁকি নিয়ে মানুষ পারাপার হয়ে থাকেন। প্রকল্পটি বাস্তবায়নের অংশ হিসেবে এরই মধ্য পরামর্শক প্রতিষ্ঠান এসএআরএম অ্যাসোসিয়েটসের মাধ্যমে সম্ভাব্যতা সমীক্ষা করা হয়েছে। চতুর্থ শ্রেণির ওই ছাত্রকে প্রধানমন্ত্রী প্রতিশ্রুতি দেয়ার পর এটি নির্মাণের প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করতে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে চিঠি দিয়ে সেতু বিভাগকে অনুরোধ জানানো হয়। সেতুটি নির্মাণের বিভিন্ন উন্নয়ন সহযোগীর কাছে অর্থ সহায়তা চাওয়া হয়েছে।
কিন্তু কোনো সাড়া না পেয়ে শেষ পর্যন্ত সরকারের নিজস্ব তহবিলের অর্থে বাস্তবায়নের প্রস্তাব করা হয়। এছাড়া বিষখালী নদীতে আরও একটি সেতু নির্মাণের জন্য সেতু বিভাগের নিজস্ব অর্থায়নের সম্ভাব্যতা সমীক্ষার কাজ চলছে। এটি নির্মিত হলে পায়রা বন্দরের সঙ্গে মোংলা বন্দরের সরাসরি সড়ক যোগাযোগ স্থাপিত হবে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।
পরিকল্পনা কমিশন সূত্র জানায়, প্রস্তাবিত প্রকল্পে ডিটেইল্ড ডিজাইনের জন্য পরামর্শক সেবা খাতে ১৫ কোটি ৬৬ লাখ টাকা এবং সুপারভিশন পরামর্শকের জন্য ২৩ কোটি ৩৮ লাখ টাকা বরাদ্দের প্রস্তাব করা হয়েছে। পিইসি সভায় সেতু বিভাগের নিজস্ব অর্থায়নের ডিটেইল্ড ডিজাইন করা হয়েছে কিনা- তা জানতে চাওয়া হবে। সেই সঙ্গে পরামর্শক সেবা খাতের ব্যয় যৌক্তিক পর্যায়ে কমাতে বলা হবে।
এছাড়া প্রকল্পের আওতায় স্থানীয় প্রশিক্ষণের জন্য ২৫ লাখ টাকা এবং বৈদেশিক প্রশিক্ষণের জন্য ২ কোটি ৫০ লাখ টাকা বরাদ্দের প্রস্তাব করা হয়েছে। পরিকল্পনা কমিশন বলছে, স্থানীয় প্রশিক্ষণের জন্য সেতু বিভাগের একটি প্রকল্প চলমান। কাজেই স্থানীয় প্রশিক্ষণ বাদ দেয়া যেতে পারে। বৈদেশিক প্রশিক্ষণ খাতে ১ কোটি ৮০ টাকা কমিয়ে ৭০ লাখ টাকা বরাদ্দ রাখা যেতে পারে।
পিইসি সভায় আরও যেসব বিষয়ে আলোচনা হবে সেগুলো হচ্ছে- রাজস্ব খাতের ব্যয় (ভ্রমণ ব্যয় ৫০ লাখ, ট্রান্সফার ব্যয় ৫০ লাখ, ওভারটাইম ২০ লাখ, টেলিফোন ২০ লাখ, ইন্টারনেট ১৯ লাখ ৫০ হাজার, প্রিন্টং ও বাইন্ডিং ১০ লাখ, স্টাম্প ও সিল ৩০ লাখ, অন্যান্য স্টেশনারি ব্যয় ৩০ লাখ টাকা) যৌক্তিকভাবে কমাতে বলা হবে।
এছাড়া প্রকল্পে সিকিউরিটি সার্ভিস ভাড়ার জন্য ২ কোটি ৭০ লাখ ৭৯ হাজার টাকার প্রস্তাব করা হয়েছে। সিকিউরিটি সার্ভিস ভাড়ার যৌক্তিকতার বিষয়ে প্রশ্ন তোলা হবে সভায়। প্রকল্পের আওতায় অনুষ্ঠান ও উৎসব খাতে ২ কোটি টাকা এবং অপ্রত্যাশিত ব্যয় খাতে ২ কোটি টাকার প্রস্তাব করা হলেও এ দুটি খাতের ব্যয় বাদ দেয়ার সুপারিশ করা হবে।
প্রকল্পে প্যানেল অব এক্সপার্ট খাতে ৪ কোটি এবং ভূমি অধিগ্রহণ পরিকল্পনা ও সামাজিক মূল্যায়ন খাতে ৪ কোটি টাকা বরাদ্দের কথা বলা হয়েছে। পরিকল্পনা কমিশন বলছে, এ দুটি খাত নিয়ে পিইসি সভায় আলোচনা করতে হবে। এছাড়া প্রাইস কন্টিনজেন্সি খাতে ৮৩ কোটি ৮৬ লাখ টাকা বা মোট প্রকল্প ব্যয়ের ৮ শতাংশ এবং ফিজিক্যাল কন্টিনজেন্সি খাতে ২০ কোটি ৯৬ লাখ টাকা বা মোট প্রকল্প ব্যয়ের ৫ শতাংশ রাখার প্রস্তাব করা হয়েছে। কমিশন মনে করছে, উভয় খাতেই মোট পূর্ত কাজের শূন্য দশমিক ৫০ শতাংশ করে অর্থ বরাদ্দ রাখা যেতে পারে।