বিএনপির শীর্ষ নেতাদের বৈঠকে নতুন ৬ সিদ্ধান্ত
বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল–বিএনপির জাতীয় স্থায়ী কমিটির ভার্চুয়াল সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। শনিবার (১০ এপ্রিল) সন্ধ্যায় অনুষ্ঠিত এ ভার্চুয়াল সভা থেকে নতুন আরও ৬টি সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। সভায় আলোচ্য বিষয় নিয়ে বিস্তারিত আলোচনার পরেবর্ণিত সিদ্ধান্ত সমূহ গৃহীত হয়।
বিএনপির দফতরের চলতি দায়িত্বে থাকা দলের সাংগঠনিক সম্পাদক সৈয়দ এমরান সালেহ প্রিন্স স্বাক্ষরিত এক বিবৃতিতে এসবতথ্য জানানো হয়। গৃহীত ৬ সিদ্ধান্তের মধ্যে রয়েছে–
১। সভায় বিগত ৩ এপ্রিল ২০২১ অনুষ্ঠিত জাতীয় স্থায়ী কমিটির সভায় গৃহীত সিদ্ধান্তসমূহ পঠিত ও অনুমোদিত হয়।
২। সভায় সারা দেশে কোভিড–১৯ করোনা ভাইরাসের সংক্রমন আশংকা জনক হারে দ্রুত বেড়ে যাওয়ায় গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করাহয়। করোনা ভাইরাস পর্যবেক্ষণ সেলের আহ্বায়ক ও জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু সভায় বর্তমান পরিস্থিতি নিয়ে বক্তব্য রাখেন এবং সার্বিক পরিস্থিতি সভাকে অবহিত করেন। সরকারের সীমাহীন উদাসীনতা, অযোগ্যতা, সমন্বয়হীনতার কারনে পরিস্থিতি দ্রুত অবনতি হয়েছে বলে সভা মনে করে ২০২০ সালের মার্চ মাস হতে যথেষ্ট সময় হাতে পাওয়ার পরেও সরকারি হাসপাতাল গুলোতে করোনা ভাইরাসের চিকিৎসার জন্য প্রয়োজনীয় বেড, অক্সিজেন, আইসিইউ, ভেন্টিলেটর সংযোজন করতে সরকার ব্যর্থ হয়। উপরন্তু বসুন্ধরা ও মহাখালীতে যে জরুরি হাসপাতাল নির্মাণ করা হয় সেখানে যথাক্রমে ৩১কোটি ও ১৩ কোটি টাকা ব্যয়ে তা বন্ধ করে দেয়া হয় এবং বসুন্ধরা এবং মহাখালীর হাসপাতাল দুটি উধাও হয়ে যায়।
সংক্রমণের হার ও মৃত্যুর হার গত যে, আশংকাজনক হারে বৃদ্ধি পেয়েছে তা ইতোমধ্যেই জনগণের মধ্যে ভীতি ও আতঙ্কের সৃষ্টিকরেছে। সরকার স্বাস্থ্যসেবায় চরম দুর্নীতি এবং কোভিড–১৯ এবং চিকিৎসা নিয়ে যে ব্যাপক ভয়াবহ দূর্নীতি করেছে তারই ফলশ্রুতিতে আজকে করোনায় চিকিৎসা ও প্রতিরোধ ব্যবস্থা সম্পূর্ণ ভেঙ্গে পড়েছে বলে সভা মনে করে। অন্যদিকে সময়মত লকডাউন ঘোষণা না করে পরিস্থিতির অবনতি ঘটাতে সাহায্য করেছে। লকডাউন ঘোষণা করার পরেও গণপরিবণ চালু করা, শপিংমল, দোকানপাট খুলে দেওয়া এবং গার্মেন্টস চালু রাখা প্রমান করেছে যে সরকারের সিদ্ধান্তহীনতা ও সমন্বয়ের অভাবে জনগণের জীবন ও জীবিকা বিপন্ন হয়ে পড়েছে। অবিলম্বে চিকিৎসার জন্য জরুরি ভিত্তিতে মেকশিপট হাসপাতাল তৈরি করা, যথেষ্ট পরিমাণে বেড, অক্সিজেন সরবরাহ, আইসিইউ এবং ভেন্টিলেটরের ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য সরকারের প্রতি আহ্বান জানানোহয়।
দিন আনে দিন খায় মানুষ, মাঝারি, ছোট কল–কারখানার শ্রমিক, রিকশা–ভ্যান শ্রমিক, গণপরিবহণ শ্রমিক, কৃষক এবং অপ্রতিষ্ঠানিক (ছোট ও ক্ষুদ্র) উদ্যোক্তদের ভাতা প্রদানের আহ্বান জানানো হয়। বিএনপি ২০২০ সালে করোনাকালীন অর্থনীতিকে সচল রাখার বিষয়ে ৮৭ হাজার কোটি টাকার বিভিন্ন সেক্টরে প্রণোদনা প্রদানের প্রস্তাব করেছিলো। সরকার কর্ণপাত করেনি। সরকার যে প্রণোদনা ঘোষণা করেছিলো তা শুধুমাত্র কল–কারখানার মালিক, গার্মেন্টস মালিক ও মধ্যসত্ব ভোগীদের নিকট গেছে। সাধারণ প্রান্তিক মানুষের কাছে পৌঁছায় নাই। অবিলম্বে বিশেষজ্ঞ সমন্বয়ে টাক্সফোর্স গঠন করে মানুষের জীবিকা ওঅর্থনীতিকে সচল রাখার পরিকল্পনা ও রোডম্যাপ প্রস্তুত করে ব্যাপক প্রণোদনা প্রদানের আহ্বান জানানো হয়। এ বিষয়ে বিস্তারিত প্রস্তাব বিএনপি পরবর্তীতে রাখবে বলে সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। সভা মনে করে ১৪ এপ্রিল ২০২১ তারিখ হতে যে লকডাউনের প্রস্তাব করা হয়েছে তাতে দিন আনে দিন খায় মানুষ, নিম্নআয়ের মানুষ ও সব পেশার শ্রমিকদের ভাতা প্রদানের ব্যবস্থা করতে হবে।
৩। সভায় মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের জলবায়ু বিষয়ক বিশেষ দূত জন কেরির ঢাকা সফর নিয়ে আলোচনা হয়। মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের ৪০টি দেশের নেতৃবৃন্দর শীর্ষ বৈঠককে সময়োচিত বলে মনে করা হয়। বাংলাদেশ জয়বায়ু পরিবর্তনের অন্যতম ভুক্তভোগী দেশ এবং অদূর ভবিষ্যতে বাংলাদেশের পরিবেশ, জীববৈচিত্র্য এবং সমুদ্র উপকূল এলাকা ভয়াবহ ক্ষতিগ্রস্তহ ওয়ার সম্ভাবনা আছে বলে এ বিষয়ে সরকারি উদ্যোগ আরও অনেক বাড়ানো উচিত বলে সভা মনে করে। সভা মনে করে এই সরকার দুর্নীতিগ্রস্ত হওয়ার কারণে ইতোমধ্যে আন্তর্জাতিক জলবায়ু তহবিল হতে প্রাপ্ত অনুদান নিয়ে ব্যাপক দুর্নীতি হয়েছে এবংবেশ কিছু অংশ ফেরত গেছে। এ বিষয়ে বিস্তারিত বক্তব্য ও প্রস্তাব নিয়ে পরবর্তীতে সংবাদ সম্মেলনের সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়।
৪। সম্প্রতি নারায়ণগঞ্জের নিকট শীতলক্ষ্যা নদীতে বাগেরহাট–২ আসনের সরকার দলীয় সংসদ সদস্যের মালিকানাধীন জাহাজের ধাক্কায় যাত্রীবাহী লঞ্চ ডুবে যাওয়ায় প্রায় ৩৫ জনের মৃত্যুতে গভীর শোক প্রকাশ করা হয় এবং বিদেহী আত্মার মাগফেরাত কামনা করা হয়। এই ঘটনার দায়ী জাহাজের মালিক অথবা চালক কারও বিরুদ্ধেই মামলা না করায় তীব্র নিন্দা ওপ্রতিবাদ জানানো হয়। অবিলম্বে মালিকসহ সংশ্লিষ্ট সকলের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানানো হয়।
৫। সম্প্রতি ফরিদপুরের সালথা উপজেলায় সংঘটিত ঘটনায় প্রায় ১১টি মামলায় ১৭ হাজার মানুষকে আসামী করায় এবং বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই বিএনপি’র নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা দায়ের করে সালথা থানায় চরম নির্যাতন চালানোর তীব্রক্ষোভ ও নিন্দা জানানো হয় এবং নিরপেক্ষ তদন্ত অনুষ্ঠানের দাবী জানানো হয়।
বিএনপি’র পক্ষ থেকে জেষ্ঠ্য নেতৃবৃন্দ এবং আইনজীবী সমন্বয়ে ৫ সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করে অবিলম্বে তদন্ত সম্পূর্ণকরে তার প্রতিদেন প্রকাশ করার সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। সভায় এই ভয়াবহ করোনার মধ্যেও দেশব্যাপী বিএনপি এবং অঙ্গ ওসহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীদের গ্রেফতার করতে তাদের বাসা বাড়ীতে, পাড়া–মহল্লায় অভিযান পরিচালনার তীব্র প্রতিবাদ জানিয়ে অবিলম্বে এই গ্রেফতার, হয়রানি বন্ধ এবং গ্রেফতারকৃত নেতাকর্মীদের মুক্তি ও মিথ্যা মামলা প্রত্যাহারের দাবি জানানোহয়।
৬। আলোচনা শেষে সভাপতি সকলকে ধন্যবাদ জানিয়ে সভা মুলতবি করা হয়।
বিএনপি’র ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের সভাপতিত্বে সভায় আরও উপস্থিত ছিলেন জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য যথাক্রমে ব্যারিস্টার জমির উদ্দিন সরকার, মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, মির্জা আব্বাস, বাবু গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, ড. আব্দুল মঈন খান, নজরুল ইসলাম খান, আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু।