করোনা মোকাবেলায় গণবিচ্ছিন্ন আওয়ামী লীগ সরকার কার্যকর উদ্যোগ নিচ্ছে না: বিএনপি

0

সরকার গণবিচ্ছিন্ন বলেই করোনা মোকাবেলায় কার্যকর উদ্যোগ নিচ্ছে না অভিযোগ করে বিএনপি বলছে, জনগণের ভোটে নির্বাচিত নয় বলেই জনগণের দুঃখদুর্দশা মোকাবেলায় তারা বরাবরই উদাসীন। সরকারের অপরিকল্পিত কান্ডজ্ঞানহীনপদক্ষেপে জনগণ চরম অনিশ্চয়তার মধ্যে নিপতিত। বিএনপি করোনা মোকাবেলায় এবং একইসাথে লকডাউনে ক্ষতিগ্রস্ত কর্মহীন মানুষের সহায়তায় সরকারের বাস্তবসম্মত পদক্ষেপ দাবি করছে।

মঙ্গলবার ( মার্চ)দুপুরে নয়াপল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে অভিযোগ করেন বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক সৈয়দ এমরান সালেহ প্রিন্স।

এমরান সালেহ প্রিন্স বলেন, ‘কোভিড১৯ করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ ঠেকাতে সরকার গত এপ্রিল ২০২১ থেকে দিনেরজন্য দেশব্যাপী লকডাউন ঘোষনা দিয়েছে। লকডাউনের দুই দিন অতিবাহিত হয়েছে। কোভিড১৯ এর ২য় ঢেউ বাংলাদেশে আরও বেশী শক্তি নিয়ে আক্রমণ করেছে। মূলত গত মাসের ১ম সপ্তাহ থেকে বাংলাদেশে করোনা সংক্রমণ বাড়লেও সরকারের উদাসীনতা ব্যর্থতায় তা মোকাবেলায় কোন কার্যকর বাস্তবসম্মত পদক্ষেপ গ্রহণ করে নাই।

তিনি বলেন, ‘মার্চ এর শুরু থেকে সংক্রমণ বাড়ার সময় হতেই বিশেষজ্ঞ মহল সরকারকে সতর্ক করে দিয়ে কার্যকর কঠোর ব্যবস্থা নেয়ার সুপারিশ করলেও সরকার মূলত উৎসব আয়োজন নিয়ে ব্যস্ত থেকেছে। বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি) করোনা ভাইরাসের ভয়াবহ সংক্রমণের প্রেক্ষিতে স্বাধীনতার সূবর্ণ জয়ন্তী উদযাপন এবং দলের রাজনৈতিক সাংগঠনিক কার্যক্রম স্থগিত করে সরকারকে উৎসব আয়োজন স্থগিত করে করোনা মোকাবেলায় কার্যকর পদক্ষেপ নেয়ার আহবান জানালেও সরকার সেই আহবানে কর্ণপাত করে নাই। বরং তাদের কর্মকান্ড স্বাভাবিক গতিতে চালিয়ে জনগণকে করোনা সংক্রমণের ঝুঁকিরমধ্যে নিক্ষেপ করেছে। বাংলাদেশে সংক্রমণের হার রকেট গতিতে বেড়েই যাচ্ছে। গত এক মাসে সংক্রমণের হার শতাংশ থেকে৯৬ শতাংশে গিয়ে দাঁড়িয়েছে।

বিএনপির এই নেতা বলেন, ‘করোনা মোকাবেলায় সরকার হঠাৎ করে গত এপ্রিল থেকে দিনের জন্য বাংলাদেশে লকডাউন ঘোষণা দেয়। এমনিতে সরকারের ভ্রান্তনীতির ফলে জনগণের আয়রোজগার সংকুচিত হয়ে গেছে। সরকারী দলের লোকজনদের সিন্ডিকেটের ফলে নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রবমূল্য আকাশচুম্বী। এসব কারণে জনগণ দিশেহারা। এমন পরিস্থিতিতে সরকারের এই আকস্মিক ঘোষনায় নিম্ম আয়ের মানুষসহ সকল শ্রেণীপেশার মানুষ বিপাকে পড়ে।

সরকারের মন্ত্রীরা লকডাউন বললেও উচ্চ পদস্থ সরকারী কর্মকর্তারা বলছেন, এটি লকডাউন নয়, কিছু বিষয়ে নিষেধাজ্ঞা দেয়াহয়েছে। লকডাউন নিয়ে সরকারের মধ্যে দুই রকম বক্তব্যে চরম সমন্বয়হীনতারই প্রমাণ মেলে। সরকারের কোন বক্তব্যকে জনগণ বিশ্বাস করবে? সরকারের এই দ্বিধাগ্রস্ত সিদ্ধান্ত সমন্বয়হীনতায় জনমনে বিভ্রান্তি সৃষ্টি হয়েছে। কোন কোন ক্ষেত্রে মাঠ পর্যায়ের কর্মকর্তারাও দ্বিধাগ্রস্ত, যার ফলে মাঠ পর্যায়ে লকডাউন বা নিষেধাজ্ঞা যেটিই বলা হোক না কেন তা কার্যকর হচ্ছে না। কার্যকর করতে সরকারের কোন উদ্যোগ নেই।

বিএনপির এই সাংগঠনিক সম্পাদক বলেন, ‘অপরিকল্পিত প্রস্তুতিহীন এসকল পদক্ষেপে নিম্ন আয়ের মানুষ থেকে শুরু করে ব্যবসায়ী, চাকুরীজীবি, শ্রমিককর্মচারী সকলেই ক্ষুব্ধ এবং কিংকর্তব্যবিমূঢ় পরিস্থিতিতে হাবুডুবু খাচ্ছে। দেশব্যাপী বিক্ষোভ করছে ব্যবসায়ী, ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী, হকার, দোকান কর্মচারীসহ সাধারণ মানুষ। বিক্ষোভ প্রশমিত করতে সরকার আলাপআলোচনার পরিবর্তে দমননিপীড়ণের পথ বেছে নিয়েছে। একদিকে করোনা পরিস্থিতির ভয়াবহতা, অন্যদিকে আয়রোজগারের অনিশ্চয়তায়দমননিপীড়ণের মুখে ব্যবসায়ী, ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী, দোকান কর্মচারীসহ সাধারণ মানুষ দিশেহারা হয়ে পড়েছে। ফরিদপুরের সালথায়গত এপ্রিল বিক্ষোভরত জনতার ওপর পুলিশের গুলিবর্ষণে একজন নিহত অসংখ্য মানুষ আহত হন।

প্রিন্স বলেন, ‘একদিকে সরকার বলছে লকডাউন/নিষেধাজ্ঞায় মিলকলকারখানা, গার্মেন্টস ফ্যাক্টরী খোলা থাকবে এবং গণপরিবহন, মার্কেট, শপিং মল বন্ধ থাকবে। আবার এর দুদিন পর সরকার বলছে শুধু সিটি কর্পোরেশনের ভেতরে গণপরিবহন চলবে, কিন্তু দুরপাল্লা উপজেলা থেকে জেলা শহরে গণপরিবহন চলবে না। তাহলে প্রশ্নসরকারের ঘোষণা অনুযায়ী চালু থাকামিলকারখানায় শ্রমিককর্মচারীরা কিভাবে যাবেন? তাছাড়া সেখানে কি সামাজিক দুরত্ব বজায় রাখা স্বাস্থবিধি মেনে কাজ করাসম্ভব? শ্রমিককর্মচারীদের কি করোনা ঝুঁকিতে পড়ার সম্ভাবনা নেই? অফিসআদালতে ৫০ শতাংশ লোকবল দিয়ে কাজ করার নির্দেশনা কি আদৌ বাস্তবায়িত হচ্ছে?’

তিনি বলেন, ‘বাস্তবতা হচ্ছে সরকারী অব্যবস্থাপনায় লকডাউন বা নিষেধাজ্ঞা কোনটাই মাঠ পর্যায়ে কার্যকর হচ্ছে না, বরং সরকারের পরস্পরবিরোধী পদক্ষেপে মানুষ করোনা ঝুঁকির মধ্যে পড়ছে। সর্বত্রই লেজেগোবরে অবস্থা। নানা দূর্ভোগে জনগণ।সরকারের যারা এধরণের সিদ্ধান্ত দিচ্ছে, তাদেরকে বেতনভাতা কিংবা সুযোগ সুবিধা নিয়ে চিন্তা করতে হয় না, কিন্তু তাদের সিদ্ধান্তে জনগণকে পড়তে হয় বিপাকে। আয়রোজগার, সংসার চালানো কিংবা ভবিষ্যতের চিন্তায় জনগণ আজ দিশেহারা।প্রস্তুতিহীন লকডাউন বা নিষেধাজ্ঞা কোনটাই যে কার্যকর হচ্ছে না, তার প্রমাণসড়ক মহাসড়কে দীর্ঘ যানযট। শহরের বিভিন্নস্থানে পরিবহনের জন্য মানুষের দীর্ঘ অপেক্ষা। মূলতঃ সবকিছুই চলছে আগের মতোই

তিনি আরও বলেন, ‘করোনার ২য় ঢেউ মোকাবেলায় গত বছরের মতোই সরকারের পদক্ষেপ সমন্বয়হীন, অপরিকল্পিত, অদূরদর্শী কান্ডজ্ঞানহীন। এবার সরকার অনেক সময় হাতে পেলেও পূর্ব প্রস্তুতি না থাকায় গতবারের মতোই অবস্থা।হাসপাতাল গুলোতে অবস্থা বেগতিক। ঢাকাসহ বিভিন্ন জেলা শহরে সরকারীবেসরকারী হাসপাতাল করোনা রোগী দ্বারা পরিপূর্ণ।কোন সিট খালি নেই। নেই পর্যাপ্ত আইসিইউ, ভেন্টিলেটর অক্সিজেন। করোনা আক্রান্ত রোগীরা চিকিৎসার জন্য এক হাসপাতাল থেকে অন্য হাসপাতালে ছুটতে ছুটতে পথিমধ্যে মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়ছেন। এর দায়দায়িত্ব সরকারকেই বহন করতেহবে। সরকার শুধু বাগাড়ম্বরেই ব্যস্ত। জনগণ গত বছর করোনা মোকাবেলায় সরকারের দুর্নীতি, লুটপাট অব্যবস্থাপনার কথাভুলে যায়নি।

বিএনপির এই নেতা আরও বলেন, ‘আলাপআলোচনার পরিবর্তে গুলি করে লাশ ফেলে জনবিক্ষোভকে সরকার দমন করতে চায়। সরকারের একজন পদস্থ কর্মকর্তার উপস্থিতিতে তার কর্মচারী কর্তৃক এক দোকান কর্মচারীকে অমানবিক নির্যাতনের পেক্ষিতে ফরিদপুরের সালথায় গণবিক্ষোভ হলেও সেখানে গুলি করে মানুষ হত্যা চার হাজার মানুষকে আসামী করে মামলাদায়েরের ঘটনায় এটি পরিস্কার যে, সরকারের পায়ের নীচে শেষ মাটিটুকুও আর অবশিষ্ট নেই। আমি বিএনপির পক্ষ থেকে সালথার ঘটনায় গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করছি, তীব্র নিন্দা ধিক্কার জানাচ্ছি এবং অবিলম্বে ঘটনার জন্য দোষী কর্মকর্তাদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি করছি। পাশাপাশি গুলিতে নিহতের বিদেহী আত্মার মাগফিরাত কামনা শোকাহত পরিবারপরিজনদের প্রতি গভীর সহমর্মিতা জ্ঞাপন করছি। নিহতের পরিবারকে যথাযথ ক্ষতি পূরণের দাবি জানাচ্ছি। একই সাথে জনগণকে এই করোনা পরিস্থিতি মোকাবেলা নিজের জীবন রক্ষায় স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার আহবান জানাচ্ছি।

সংবাদ সম্মেলনে বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতা আব্দুস সালাম আজাদ, তাইফুল ইসলাম টিপু প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।

তুমি এটাও পছন্দ করতে পারো

উত্তর দিন

আপনার ইমেইল ঠিকানা প্রচার করা হবে না.

WP2Social Auto Publish Powered By : XYZScripts.com