শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান ‘বীরউত্তম’ ও বিএনপির ঐতিহাসিক যত অর্জন

0

স্বাধীনতার ৫০ বছর পেরিয়েছে বাংলাদেশ। সুবর্ণজয়ন্তী উদযাপন করেছে দেশ। যদিও দেশের জনগণ ঐতিহাসিক এইমাহেন্দ্রক্ষণে স্বতঃস্ফূর্ত উদযাপনের সুযোগ পায়নি। সরকার সুবর্ণজয়ন্তী উদযাপনের নামে বিদেশীদের এনে কর্মসূচি পালনকরেছে। একইসময় দেশে অন্য রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মীদের ওপর হামলা, মামলা নির্যাতন চালিয়ে ঐতিহাসিক আনন্দউদযাপন থেকে তাদেরকে বঞ্চিত করা হয়েছে। এমনকি স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীর দিন ২৬ মার্চ চট্টগ্রামের হাটহাজারী, ব্রাহ্মণবাড়ীয়াসহ বিভিন্ন স্থানে সাধারণ জনগণের ওপর হামলায় হতাহতের ঘটনাও ঘটেছে। সরকারের অনমনীয় আচরণেরকারণে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলবিএনপির ঘোষিত সুবর্ণজয়ন্তীর কর্মসূচি স্থগিত করতে হয়েছে। এমন প্রেক্ষাপটে জাতিরকাছে স্বাধীনতা আন্দোলন থেকে শুরু করে সুবর্ণজয়ন্তী পর্যন্ত বাংলাদেশের উন্নয়ন, সমৃদ্ধি অগ্রযাত্রায় শহীদ প্রেসিডেন্টজিয়াউর রহমান তার হাতে প্রতিষ্ঠিত বিএনপির ঐতিহাসিক কিছু অর্জন জাতিকে স্মরণ করিয়ে দেয়ার ক্ষুদ্র প্রায়াস

বিএনপির জাতীয় স্থায়ী কমিটির সভায় ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের সভাপতিত্বে ২০২০ সালের ২০ নভেম্বর স্বাধীনতাসুবর্ণজয়ন্তী উদযাপন জাতীয় কমিটি গঠিত হয়। যায় নেতৃত্বে রয়েছেন স্থায়ী কমিটির সদস্য মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক ডক্টর খন্দকারমোশাররফ হোসেন, সদস্য সচিব চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুস সালাম। ছাড়া বিষয়ভিত্তিক, বিভাগীয়, বহিঃবিশ্ব পেশাজীবী সমন্বয়কসহ ৩৭টি কমিটি গঠন করা হয়। জাতীয় কমিটির কর্মসূচির সাথে সমন্বয় করে ধারাবাহিকবৈঠকের মধ্য দিয়ে প্রতিটি কমিটি কর্মসূচি প্রণয়ন বাস্তবায়ন করছে।

ইতোমধ্যে জাতীয় কমিটির উদ্যোগ মার্চ স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উদযাপন কর্মসূচি গুলশানে একটি হোটেলে উদ্বোধন করা হয়।উদ্বোধন করেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। মার্চ স্বাধীনতার পতাকা উত্তলন দিবস, মার্চ স্বাধীনতাইশতেহার পাঠ দিবস, মার্চ মার্চ এই দুদিন ঐতিহাসিক বিবেচনায় বিএনপির উদ্যোগে আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে।

এক মাসের ঘোষিত কর্মসূচি বছরব্যাপী স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী পালনের মূল উদ্দেশ্য হচ্ছে মুক্তিযুদ্ধের প্রকৃত ইতিহাসসঠিকভাবে বর্তমান প্রজন্মের কাছে তুলে ধরা। একইসাথে আগামী প্রজন্মের জন্য সংরক্ষিত রাখা, যেন তারা ইতিহাসের সঠিকপর্যালোচনা করতে পারে।

স্বাধীনতায় মেজর জিয়ার অবদান

২৫ মার্চ ১৯৭১ সালে পাকিস্তান সামরিক বাহিনী ঢাকার পিলখানায় বর্ডার গার্ড রাইফেলস তথা বিডিআর সদর দফতর, রাজারবাগ পুলিশ লাইনস, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, দৈনিক ইত্তেফাকসহ দেশের অনেক স্থানে নিরস্ত্র নাগরিকদের ওপর হামলার মধ্যেদিয়ে গণহত্যা শুরু করে।

চট্টগ্রামের অষ্টম ইস্টবেঙ্গল রেজিমেন্টের তৎকালীন মেজর জিয়াউর রহমান বিদ্রোহ করেইউ রিভোল্টজানিয়ে কালুরঘাট বেতারকেন্দ্র থেকে স্বাধীনতার ঘোষণা দিয়ে দেশবাসীর প্রতি আহ্বান জানান স্বাধীনতা যুদ্ধে অংশ নিতে। পাশাপাশি বিশ্বের গণতান্ত্রিকদেশগুলো বিশেষ করে প্রতিবেশী দেশের সরকার জনগণের কাছে সাহায্য সহযোগিতার আবেদন জানান।

পাকিস্তানি সামরিক বাহিনীর আক্রমণের বিরুদ্ধে চারদিকে জনগণের প্রতিরোধ শুরু হয়। একাত্তরের এপ্রিল সিলেটতেলিয়াপাড়ায় চা বাগানে মুক্তিযুদ্ধের সর্বাধিনায়ক জেনারেল ওসমানীর নেতৃত্বে যুদ্ধের জন্য সেক্টর কমান্ডারদের কাঠামো তৈরিকরা হয়।

১৭ এপ্রিল যুদ্ধকালীন সরকার শপথগ্রহণ করে। অস্থায়ী রাষ্ট্রপতি সৈয়দ নজরুল ইসলাম প্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দিন আহমেদেরনির্দেশে মুক্তিযুদ্ধের সর্বাধিনায়ক জেনারেল ওসমানী সারাদেশকে যুদ্ধের জন্য ১১টি সেক্টরে ভাগ করেন। মেজর জিয়াসহ ১১জনকে করা হয় সেক্টর কমান্ডার।

১৭ জুলাই মেজর জিয়াউর রহমানের নামের প্রথম অক্ষর দিয়ে জেড ফোর্স ব্রিগেড। এরপর সেপ্টেম্বর শেষে এস ফোর্স কে ফোর্সব্রিগেড গঠিত হয়।

জেড ফোর্সের নেতৃত্বে মেঘালয় তেলঢালায় জামালপুর বকশিগঞ্জ কামারপুর অঞ্চলে ২২ হাজার মুক্তিযুদ্ধার নেতৃত্বে পাঁচ বর্গকিলোমিটার প্রথম স্বাধীন ভূখণ্ড নিশ্চিত হয়।

মাস সশস্ত্র মুক্তিযুদ্ধের মধ্যে দিয়ে ৩০ লাখ প্রাণের হাজার হাজার মাবোনের ইজ্জতের বিনিময়ে ১৬ ডিসেম্বর ১৯৭১ সালে৫৬ হাজার বর্গ মাইলের স্বাধীন সার্বভৌম ভূখণ্ডটি বিশ্ব দরবারেস্বাধীন বাংলাদেশনামে পরিচিত হতে থাকে।

স্বাধীন বাংলাদেশে প্রথম সেনাপ্রধান মেজর জেনারেল কে এম শফিউল্লাহের চেয়ে মেজর জেনারেল জিয়াউর রহমান কর্ম ক্ষেত্রেসিনিয়র ছিলেন। কিন্তু জিয়াউর রহমানকে উপসেনাপ্রধান করা হয়। এরপর জিয়াউর রহমান পেশাদার সেনা কর্মকর্তা হিসেবেদায়িত্ব পালন করেছেন।

১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট দেশে রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর নভেম্বর সিপাহী জনতার বিপ্লবের মধ্য দিয়ে সেনাপ্রধান মেজরজেনারেল জিয়াউর রহমান বন্দীশালা থেকে মুক্তি পেয়ে জনগণের কাতারে আসেন। ঠিক এর চার দিন আগে নভেম্বর খালেদমোশাররফ জোরপূর্বক রাষ্ট্রক্ষমতা দখল করে জিয়াউর রহমানকে কারাবন্দী করেন।

মুক্তি পেয়ে আবারো জাতির আরেক ক্রান্তিকালে মেজর জেনারেল জিয়াউর রহমান জনগণের উদ্দেশ্য ভাষণ দেন। এর আগে১৯৭১ সালে ২৬ মার্চ মেজর হিসেবে জিয়াউর রহমান স্বাধীনতা ঘোষণা দিয়েছিলেন।

১৯৭৫ সালে নভেম্বর জিয়াউর রহমান জাতির সামনে এসে সংক্ষিপ্ত ভাষণে বলেন, আপনারা ধৈর্য ধারণ করুন। নিজ নিজকাজে মনোযোগ দেন। সামরিক বাহিনী আপনাদের পাশে আছে। ইনশাআল্লাহ, দ্রুত সকল সমস্যা আমরা কাটিয়ে উঠতে সক্ষমহবো। মহান আল্লাহ আমাদের সহায় হোন, আমিন।

শুরু হলো জনগণের মাঝে কর্ম চাঞ্চল্য। শিল্প কারখানায় শ্রমিকরা, কৃষকরা কৃষি খামারে, স্কুল কলেজ বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রশিক্ষকের পদচারণা, অফিস আদালতসহ সকল সরকারি আধা সরকারি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের স্থবিরতা কাটিয়ে উঠতে থাকেসরকারের বিভিন্ন প্রণোদনায়।

দেশের উন্নয়ন উৎপাদনে প্রেসিডেন্ট জিয়ার ১৯ দফা কর্মসূচি

প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্বগ্রহণের পর জিয়াউর রহমান বিশ্ব দরবারে স্বাধীন বাংলাদেশের নাগরিকদের জাতি রাষ্ট্র হিসেবে প্রতিষ্ঠিতকরেনবাংলাদেশী জাতীয়তাবাদ সুষম বন্টনের মাধ্যমে রাষ্ট্রের উন্নয়ন উৎপাদন নিশ্চিত করতে জাতীয়তাবাদের ভিত্তিতে১৯ দফা ঘোষণা করেন প্রেসিডেন্ট জিয়া। একইসাথে বাংলাদেশী জাতীয়তাবাদকে হাজার বছর টেনে নিয়ে যেতে প্রতিষ্ঠিত করাহয় উদার গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক দলবাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলবিএনপি

শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান মাত্র সাড়ে চার বছর রাষ্ট্রক্ষমতায় ছিলেন। এই স্বল্প সময়ে বাংলাদেশের এমন কোনো ক্ষেত্র নেইযেখানে তার হাতের ছোঁয়া লাগেনি। অসাধারণ কর্মদক্ষতার মধ্য দিয়ে ধাপে ধাপে তিনি প্রতিটি ক্ষেত্রেই সুপরিকল্পিতভাবে কর্মনৈপুণ্য বৈষম্যহীন নীতির মধ্য দিয়ে সাফল্য নিয়ে এসেছেন।

মুক্তিযুদ্ধে শহীদের স্মরণে প্রথম স্মৃতিসৌধ কুমিল্লা সেনানিবাসে ১৯৭২ সালে প্রধানমন্ত্রী উদ্বোধন করেন, সেখানেও তার ছোঁয়া।

অপরিকল্পিত জনসংখ্যা বৃদ্ধির প্রেক্ষপটে পরিবার পরিকল্পনার মাধ্যমে কর্মসূচি প্রণয়ন করা হয়। পারিবারিক স্লোগান তৈরি করাহয়একটি সন্তান হলে দুটি নয়দুটি সন্তান হলে আর নয়

মধ্যপ্রাচ্যে শ্রমিকদের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করে জনসংখ্যাকে জনশক্তিতে রূপান্তর করেন প্রেসিডেন্ট জিয়া। এর মধ্য দিয়ে শুরুহয় শ্রম রফতানি। একইসাথে শ্রমিকদের আরো কর্মসংস্থানের ক্ষেত্র প্রস্তুত হয় রফতানি পণ্য পোশাক খাত দিয়ে। আর শ্রমিক পোশাক রফতানির দ্বার উম্মোচনের মাধ্যমে বাংলাদেশের অর্থনীতির ভিত মজবুত হতে থাকে জিয়ার শাসন আমল থেকেই।

কৃষি খাতের উন্নয়নে প্রেসিডেন্ট জিয়ার উদ্যোগ ছিল, কৃষি উপকরণে ভর্তূকি স্বল্প সুদে কৃষি ঋণ। ছাড়াও কৃষি কারিগরিসহায়তা খাদ্য উৎপাদন মজুদের জন্য খাদ্য গোডাউন তৈরি।

বিনামূল্যে প্রাথমিক শিক্ষা উপকরণ, শিশুদের মানসিক বিকাশের লক্ষ্যে শিশু একাডেমি প্রতিষ্ঠা করা হয় প্রেসিডেন্ট জিয়ারশাসনকালে। নারী শিক্ষা নারী অধিকার প্রতিষ্ঠায় নারী শিশুবিষয়ক মন্ত্রণালয়সহ দেশে তথ্য প্রযুক্তি বিজ্ঞানের বিকাশেতিনি গঠন করেন বিজ্ঞান প্রযুক্তিবিষয়ক মন্ত্রণালয়।

শহরের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ করে গ্রামকে গড়ে তুলতে প্রতিষ্ঠিত করা হয় জাতীয় গৃহায়ণ, গ্রামীণ জনপদের উন্নয়ন সুশাসনেরজন্য গ্রাম সরকার।

সারাদেশে স্বাস্থ্য, শিক্ষা আধুনিক বিজ্ঞান প্রযুক্তি উন্নয়নে মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল মেডিক্যাল কলেজে পল্লী চিকিৎসারট্রেনিং কর্মসূচির ব্যবস্থা করা হয়। স্কুল কলেজ বিশ্ববিদ্যালয় ক্লাবের মাধ্যমে বিজ্ঞান মেলা, শিক্ষা সফর, শিক্ষা ভির্তিরআয়োজনও ছিল প্রেসিডেন্ট জিয়ার ১৯ দফারই অংশ।

এখানেই শেষ নয়। তার ১৯ দফায় আরো ছিল গ্রামের আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় সরকারি আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর অধীনেগ্রাম পুলিশ বাহিনী। নদীর পানি প্রবাহ, সেচ কাজে পানির প্রয়োজনীয়তা, সুস্বাদু খাবার পানি নিশ্চিত করতে স্বেচ্ছাশ্রমে শুরুকরেন নিজ হাতে কোদাল তুলে খালখনন কর্মসূচি। পাড়া মহল্লায় মজা পুকুর পরিষ্কার খাননের উদ্যোগ ছিল জিয়ারঐতিহাসিক সফল কর্মসূচির একটি।

সারাদেশে সহজ প্রক্রিয়ায় বিদ্যুতের চাহিদা মেটাতে প্রেসিডেন্ট জিয়ার শাসনকালে গঠন করা হয় পল্লী বিদ্যুৎতায়ন বোর্ড। পল্লীউন্নয়ন বোর্ডের আওতায় সমবায়ভিত্তিক সমিতি মাধ্যমে হাওর, বিল, পুকুর, খাল ডোবায় মাছ চাষের কর্মসূচিও শুরু হয় তারশাসনকালে।

সাংসদ মাধ্যমের স্বাধীনতা ফিরিয়ে দিয়ে আধুনিকায়নের লক্ষ্য আরো কার্যকর করে তুলেন প্রেস ইনিস্টিউট, প্রেস কাউন্সিল, ওয়েজ বোর্ডসহ কর্মশালার আয়োজন গণমাধ্যমকে নতুন ধারায় নিয়ে আসে। দেশে গণমাধ্যমের স্বাধীনতা ফিরিয়ে দিয়েছিলেনপ্রেসিডেন্ট জিয়ারউর রহমানই। সঙ্গতকারণেই প্রেসিডেন্ট জিয়া স্বাধীন বাংলাদেশে বহুদলীয় গণতন্ত্র মুক্ত সংবাদ মাধ্যমেররূপকার হিসেবে স্বীকৃতি পেয়েছেন।

যুগান্তকারী পদক্ষেপ সাফল্য পররাষ্ট্র নীতিতে মুক্তিযুদ্ধের সময়ে প্রতিবেশী ভারতের অসামান্য সহযোগিতা ছিল। তাদের সাথেদ্বিপক্ষীয় সুসম্পর্ক রেখে আধুনিক উন্নয়নশীল দেশ চীনের থেকে স্বাধীন বাংলাদেশের স্বীকৃতি আদায় দেশটির সাথেকূটনীতিক সম্পর্ক স্থাপনে প্রেসিডেন্ট জিয়ার অবদান ঐতিহাসিকভাবে স্বীকৃত।

দক্ষিণ এশিয়ার অঞ্চলিক শীর্ষ সংগঠন– ‘সার্কগঠনে কার্যকর প্রক্রিয়া শুরু সাফল্য প্রেসিডেন্ট জিয়াকে আন্তর্জাতিক নেতারস্বীকৃতি এনে দিয়েছে।

জাতিসংঘ, ওআইসি, কমনওয়েলথ, আসিয়ানসহ সকল আন্তর্জাতিক সংস্থায় বাংলাদেশ সক্রিয় ভূমিকা রেখেছে প্রেসিডেন্টজিয়াউর রহমানের শাসন আমলে।

দক্ষিণ এশিয়া অঞ্চল বাংলাদেশে প্রথম জাপান সরকারের আর্থিক কারিগরি সহায়তায় বাংলাদেশ টেলিভিশন রঙিনসম্প্রচার শুরু করে।

বাংলাদেশ টেলিভিশন প্রথম রিয়েলিটি শো সকল ক্ষেত্রে শিল্পী কলাকৌশলী তৈরি করতেনতুন কুঁড়িনামে প্রতিযোগিতামূলকসাংকেতিক অনুষ্ঠান মালা তার সরকারের সময়ের।

স্বাধীনতার আন্দোলন সংগ্রাম মুক্তিযুদ্ধে প্রধান আকাঙ্ক্ষা ছিল গণতন্ত্রের। এই গণতন্ত্র হত্যা হয়েছে মাত্র কয়েক মিনিটেজাতীয় সংসদে আইন করে সংবিধান সংশোধনের মাধ্যমে বাকশাল প্রতিষ্ঠা করে।

মুক্তিযুদ্ধের আকাঙ্ক্ষা আর মুক্তিযোদ্ধাদের আত্মত্যাগে স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশে সমাজের স্বস্ব ক্ষেত্রে গুণী প্রতিষ্ঠিতজনএবং প্রতিষ্ঠানকে সন্মানিত করতে প্রেসিডেন্ট শিয়ার শাসনকালে রাষ্ট্রীয়ভাবে প্রচলন করা হয় একুশে পদক স্বাধীনতা পদক।সাংস্কৃতিক অঙ্গে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারও তার সময় থেকেই।

কাজেইস্বাধীনতার ঘোষক’, ‘স্বনির্ভর আধুনিক বাংলাদেশের রূপকার’, ‘বহুদলীয় গণতন্ত্রেরপ্রবক্তা, ‘সার্কবাংলাদেশীজাতীয়তাবাদেরপ্রতিষ্ঠাতাসহ বহু বিশেষণে বিশেষায়িত করা হয় শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানকে।

১৯৮১ সালে ৩০ মে চট্টগ্রাম সার্কিট হাউসে বিপথগামী একদল সৈনিকের হাতে দেশের সবচেয়ে জনপ্রিয় প্রেসিডেন্ট বিএনপিরপ্রতিষ্ঠাতাকে জীবন দিতে হয়েছে। এর মধ্য দিয়ে বাংলাদেশে ফের উন্নয়ন অগ্রযাত্রায় স্থবিরতা নেমে আসে। স্তব্ধ হয়ে যায় পুরোজাতি। মানুষের গণতান্ত্রিক অধিকার বাক স্বাধীনতা হারিয়ে যায়।

প্রেসিডেন্ট জিয়া শহীদ হওয়ার কয়েক দিন পর রাজধানীর মানিক মিয়া এভিনিউয়ে তার নামাজে জানাজায় লাখ লাখ মানুষেরউপস্থিতি হন। পরে জাতীয় সংসদ ভবনের পাশে শেরেবাংলা নগরে বহুদলীয় গণতন্ত্রে পূর্ণ প্রবক্তাকে শায়িত করা হয়। জানাজায়মানুষের ঢল তখন তাদের চোখের পানি ঝরানোই প্রমাণ করে তিনি একজন সফল প্রেসিডেন্ট হিসেবে দেশবাসীর হৃদয় জয়করেছিলেন।

বহুদলীয় গণতন্ত্রকে প্রাতিষ্ঠানিক শক্তিশালী রাখতে বিএনপি সরকারের ভাইসপ্রেসিডেন্ট বিচারপতি আব্দুস সাত্তার নির্বাচনেরমধ্যে দিয়ে রাষ্ট্রপতি নির্বাচিত হোন।

স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলনে বেগম জিয়া বিএনপি

এরপর জেনারেল হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ নির্বাচিত সরকারের রাষ্ট্রপতিকে জোরপূর্বক সরিয়ে ক্ষমতা দখল করেন। তিনি নয় বছরদেশ শাসনের মধ্য দিয়েস্বৈরাচারএরশাদ হিসেবে স্বীকৃতি পান। গণতন্ত্র পুনঃদ্ধারে তার বিরুদ্ধে দীর্ঘ নয় বছর বেগম খালেদাজিয়ার নেতৃত্বে শহীদ জিয়ার দল বিএনপি আন্দোলন সংগ্রাম অব্যাহত রাখে। ১৯৯০ সালে বিএনপিসহ তিন জোটের রূপরেখায়কঠোর আন্দোলনে গণঅভ্যুত্থানে স্বৈরশাসক হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের পতন হয়।

বাংলাদেশে ১৯৯১ সালে বিচারপতি শাহাবুদ্দিন আহমেদের নেতৃত্বে প্রথম নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে জাতীয় সংসদনির্বাচনে বেগম খালেদা জিয়ার নেতৃত্বে বিএনপি সংখ্যা গরিষ্ঠতা অর্জন করে। ফিরে আসে গণতন্ত্রের সুবাতাস। সংবিধানসংশোধন করে রাষ্ট্রপতি শাসিত সরকার ব্যবস্থার পরিবর্তে সংসদীয় সরকার ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা করা হয়।

বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া পূর্ণ দুই মেয়াদে প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। তার নেতৃত্বে দেশেরঅর্থনৈতিক সাফল্য, সুশাসন প্রতিষ্ঠা, গুণগত পরিবর্তন হয়েছে লক্ষণীয়ভাবে।

তার হাত ধরে প্রাথমিক গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়, মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয় প্রবাসী কলাণবিষয় মন্ত্রণালয় প্রতিষ্ঠা হয়েছে।রায়েরবাজার বধ্যভূমি চিহ্নিত করে গড়ে তুলেছেন বধ্যভূমি সৃতিসৌধ। দুজন বীর শ্রেষ্ঠ মুন্সি আব্দুর রউফ বীর শ্রেষ্ঠ মতিউররহমানের সমাধি স্থান

১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধে ২০ এপ্রিল পাকিস্তানি বাহিনীর সাথে সম্মুখ যুদ্ধে শহীদ হয়েছিলেন বীর শ্রেষ্ঠ মুন্সি আব্দুল রউফ।২৬ মার্চ যুদ্ধ শুরু হলে সহকর্মীদের সাথে তিনিও ছুটে আসেন পার্বত্য চট্টগ্রামে। রাঙামাটি জেলার নানিয়ারচর উপজেলারবুড়িঘাট আক্রান্ত হলে শত্রুবাহিনীর তিনটি নৌযান একাই ধ্বংস করেন তিনি।

তৎকালীন পার্বত্য চট্টগ্রামে রাঙামাটিমহালছড়ি পানিপথ প্রতিরোধ করার জন্য অষ্টম ইস্টবেঙ্গল রেজিমেন্টের এক কোম্পানিসৈন্যের সাথে বুড়িঘাটে দায়িত্ব পালন করছিলেন তিনি। হঠাৎ পাকিস্তান সেনাবাহিনীর কমান্ডো ব্যাটেলিয়নের দুই কোম্পানিসৈন্য, বেশ কয়েকটি স্পিড বোট দুটি লঞ্চে করে বুড়িঘাট দখলের জন্য আক্রমণ করে। মর্টার আর ভারী অস্ত্র দিয়ে চালানোআক্রমণে প্রতিহতে বলিষ্ঠ ভূমিকা রাখেন মুন্সি আব্দুর রউফ।

একটি গোলার আঘাতে ছিন্নভিন্ন হয়ে যায় তার দেহ। স্থানীয় দয়াল কৃষ্ণ চাকমা তার লাশ উদ্ধার করে তাকে এই দ্বীপেই সমাহিতকরেন।

২০০৬ সালে ২৫ মার্চ গণতন্ত্রপর বেগম খালেদা জিয়ার নেতৃত্বে সরকার রাইফেল সম্মিলিত ভাস্কর্যটি নির্মাণ শুরু করে যান।

৩৫ বছর পর ২০০৬ সালে ২৪ জুন পাকিস্তান থেকে বীর শ্রেষ্ঠ মতিউর রহমানের দেহাবশেষ এনে মিরপুর বুদ্ধিজীবী করবস্থানেসমাধিত করা হয়েছিল।

নারী ক্ষমতায়নের জন্য জাতিসঙ্ঘ পুরস্কার তুলে দিয়েছে, দারিদ্র্য দূরীকরণে জাতিসঙ্ঘ ঘোষিত লক্ষ্য মাত্র পূর্ণ করেছে। নারীশিক্ষার সুযোগ বৃদ্ধির জন্য অবৈতনিক শিক্ষাব্যবস্থা চালু করা হয়েছে। প্রাথমিক শিক্ষা বাধ্যতামূলক করা হয়েছে।

মাতৃ শিশুমৃত্যুর হার কমেছে বিএনপির সরকারের সময়। এর ফলে ইউনিসেফের পুরস্কার পেয়েছে বাংলাদেশ। কিন্তুপরবর্তীকালে বিভিন্নভাবে দেশের এসব সাফল্যের ধারাবাহিকতা পরিকল্পিতভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করা হয়েছে।

যে কথা দিয়ে শেষ করতে চাই, দেশে বিদ্যমান পরিস্থিতিতে স্বাধীনতার সুফল লাভের পরিবেশ নেই। তা এমনিতে তৈরিও হবে না।এজন্য গণতন্ত্র জাতীয়তাবাদে বিশ্বাসীদের ঐক্যবদ্ধ ধারাবাহিক চেষ্টার প্রয়োজন। রাজনীতিতে গণতন্ত্রের যে অনুপস্থিতি, থেকে উত্তরণে এগিয়ে আসতে হবে দেশপ্রেমিক অন্য রাজনীতিকদেরও। বর্তমান ফ্যাসিবাদ সরকারের কাছে থেকে জনগণকে মুক্তকরতে বামেরডানের মধ্যে সংযোগস্থাপন করতে কারো না কারো এগিয়ে আসতে হবে। স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীর সুফলদেশবাসীর কাছে পৌঁছে দিতে এর কোনো বিকল্প নেই।

লেখক: শায়রুল কবির খান  সাংবাদিক সাংস্কৃতিককর্মী

তুমি এটাও পছন্দ করতে পারো

উত্তর দিন

আপনার ইমেইল ঠিকানা প্রচার করা হবে না.

WP2Social Auto Publish Powered By : XYZScripts.com