আওয়ামী ক্ষমতাসীনদের নির্যাতনে সংখ্যালঘুরা দেশ ছেড়ে ভারতে যেতে বাধ্য হচ্ছে: বিএনপি

0

আওয়ামী লীগের শাসনামলে দেশে সংখ্যালঘু নির্যাতনের মাত্রা বহুগুণ বৃদ্ধি পেয়েছে দাবি করে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুলইসলাম আলমগীর বলেছেন, ‘আর কারণেই সংখ্যালঘুরা দেশ ছেড়ে ভারতে চলে যেতে বাধ্য হচ্ছে।

বৃহস্পতিবার (২৫ মার্চ) দুপুরে গুলশানে চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে এমন অভিযোগ করে তিনি বলেন, ‘আজকে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় থাকার পরেও কী কারণে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের মানুষের ভারতে চলে যাচ্ছে? কারণ কী? কারণএকটাই, আর সেটা হচ্ছে, এই সরকারের আমলে দেশে সংখ্যালঘুদের ওপর নির্যাতনের পরিমাণ আরও বেশি করে বেড়ে গেছে।আওয়ামী লীগের লক্ষ্যই হচ্ছে সংখ্যালঘুদের সম্পত্তি দখল করা এবং তাদের মালামাল লুট করা।

পাকিস্তান আমলে তৈরিশত্রু সম্পত্তি আইনসরকার বাতিল করছে না, নিয়েও প্রশ্ন তুলেন বিএনপি মহাসচিব।

তিনি বলেন, ‘আওয়ামী লীগ মুখে বলে, তারা সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি রক্ষা করতে চায়, সংখ্যালঘুদের স্বার্থ রক্ষা করতে চায়। কিন্তুএখন পর্যন্তশত্রু সম্পত্তি আইনতারা বাতিল করেনি, তাদের যে ন্যায্য অধিকারগুলো রয়েছে তা দেয়নি।

বিএনপির শাসনামলে ২০০১ সালে সংখ্যালঘুদের দেশছাড়ার মাত্রা বেশি ছিলো বলে আওয়ামী লীগের অভিযোগ প্রসঙ্গেপ্রতিক্রিয়া জানতে চাইলে বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘আমি যে বক্তব্য দেবো সেটা আমার দলীয় বক্তব্য হবেতাই না। আপনারাযে ইনভেস্টেগেটিভ জার্নালিজম করছেন সেখান থেকে তো আপনারা দেখতে পারবেন। প্রত্যেকটা রিপোর্টে আসছে যে, সরকারের সময়ে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের ভারতে যাওয়া বেশি বেড়েছে।

সেটা কি ২০০১ সালের থেকেও বেশি কিনাসাংবাদিকদের এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘অনেক বেশি, অনেক বেশি.. নিসন্দেহেঅনেক বেশি। এটা আমার কথা না, আমেরিকাই তোপারসেন্টেজবলে দিয়েছে। তাদের পত্রপত্রিকায় আসছে তো।                 

সুনামগঞ্জের শাল্লা উপজেলায় নোয়াগাঁও গ্রামে সংখ্যালঘুদের ওপর হামলার সাম্প্রতিক ঘটনার প্রসঙ্গ টেনে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘বছর দুই আগে ঠাকুরগাঁওয়ে একজন প্রভাবশালী এমপি তিনি কয়েক একর জমি দখল করেছিলেন। সেটার বিরুদ্ধেসংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের মানুষ মিছিল করেছে, মানববন্ধন করেছে। কিন্তু কোনো সুরাহা বা সমাধান পায়নি। ফরিদপুরেও এরকমঘটনা। এবারে দেখেন, শাল্লার ঘটনার যিনি নেতৃত্ব দিচ্ছেন সবখানে এসছে, তিনি একজন যুবলীগ নেতা। অথচ ওবায়দুলকাদের সাহেব বলছেন যে, এখানে বিএনপি নেতৃত্ব দিয়েছে। বিএনপির নামগন্ধও নেই এখানে। অর্থাৎ এটা হচ্ছে, মানুষকেবিভ্রান্ত করা, মানুষকে ভুল বুঝানো, মানুষকে একটা ভুল রাস্তায় নিয়ে যাওয়া।

তিনি বলেন, ‘আমরা স্পষ্ট করে বলতে চাই, আওয়ামী লীগ কখনোই সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের পক্ষের শক্তি ছিলো না বা এদেশেসাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির পক্ষে তারা কখনোই ছিলো না। বরাবরই তারা যেমন সন্ত্রাসী কায়দায় ক্ষমতায় টিকে আছে, ঠিক একইকায়দায় সংখ্যালঘুদের সম্পত্তি দখল করেছে।

সংবাদ সম্মেলনে শাল্লায় ঘটনা সরেজমিনে পরিদর্শন করে আসা বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান নিতাই রায় চৌধুরী বলেন, ‘সম্প্রতি শাল্লা উপজেলায় হিন্দু অধ্যুষিত নোয়াগাঁও গ্রামে পূর্ব পরিকল্পিতভাবে হিন্দুদের বাড়ি, মন্দিরে উপাসনালয়ে ব্যাপকভাংচুর, লুটপাট নারকীয় ধ্বংসযোগ্য চালানো হয়। আমরা সরেজমিনে ক্ষতিগ্রস্থ ভুক্তভোগীদের বাড়ী ঘরে, উপাসনালয়েঅবর্ণনীয় ধ্বংসলীলা দেখতে পেয়েছি।  ক্ষতিগ্রস্থরা ভীত সন্ত্রস্ত অবস্থায় অকপটে বলেছেন, ঘটনার দিন মাইকে প্রচার করেঘটনার সময় স্থানীয় যুবলীগ নেতা স্বাধীন মিয়ার নেতৃত্বে তার অনুসারী শত শত মানুষ ওই গ্রামে উপস্থিত হয়ে প্রায় ৬০/৭০টিবাড়িঘরের সমস্ত মালামাল আসবাবপত্র লুটপাট করতে থাকে, বাড়িঘরের জানালা, দরজা, বেড়া কুপিয়ে ছিন্নবিচ্ছিন্ন করে, নারী পুরুষ শিশুদের মারধর করে।

বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘শিশু বাচ্চাদের নিয়ে বাথরুমে প্রাণ ভয়ে পালিয়ে থাকা মহিলাদের বের করে এনে লাঞ্ছিত করে।আওয়ামী যুবলীগের সন্ত্রাসী হারমাদ বাহিনী হিন্দুদের বাড়িঘর, মন্দির উপাসনালয়ে ব্যাপক ভাঙচুর লুটপাট চালায়।

প্রশাসনের গাফিলতি ক্ষমতাসীন দলের নেতৃবৃন্দের প্রচ্ছন্ন মদদে শাল্লার নোয়াগাঁ গ্রামে ন্যাক্কারজনক এই ঘটনা ঘটেছেঅভিযোগ করে তিনি বলেন, ‘ঘটনা ঘটার পরেও স্থানীয় প্রশাসন তাতক্ষনিক কোন ব্যবস্থা নেয় নাই। পরবর্তীতে ব্যাপকসমালোচনার মুখে দুটি মামলা দায়ের করা হয়। সেই মামলার প্রধান আসামী স্থানীয় যুবলীগ সভাপতি স্বাধীন মিয়া। অন্যান্যআসামীরাও ক্ষমতাসীন দলের। পর্যন্ত ২৫ জনকে আটক করা হয়েছে, তাদের অধিকাংশই ক্ষমতাসীন দলের সমর্থক।

মির্জা ফখরুল বলেন, ‘আমরা সুনামগঞ্জের শাল্লায় হিন্দু সম্প্রদায়ের ওপর ন্যাক্কারজনক নির্মম এই ঘটনার তীব্র নিন্দা প্রতিবাদ জানাচ্ছি এবং ঘটনার সাথে জড়িত সকলের গ্রেফতার শাস্তি দাবি করছি। এই ঘটনায় ক্ষতিগ্রস্থ ঘরবাড়ী, মন্দির, উপাসনালয় পুনঃনির্মাণ পুনর্বাসনে সরকারকে সর্বাত্মকভাবে এগিয়ে আসার এবং ওই এলাকাসহ হিন্দু সম্প্রদায় অধ্যুষিতঅন্যান্য এলাকায় সার্বিক নিরাপত্তা বিধান করতে প্রশাসনের প্রতি আহবান জানাচ্ছি।

গত ২০ মার্চ নিতাই রায় চৌধুরীর নেতৃত্বে জেলা সভাপতি কলিম উদ্দিন আহমেদ মিলন, সাধারণ সম্পাদক নুরুল ইসলামনুরুল, নারী শিশু অধিকার ফোরামের সদস্য সচিব অ্যাডভোকেট নিপুন রায় চৌধুরী শাল্লায় গিয়ে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেনএবং প্রত্যক্ষদর্শী ক্ষতিগ্রস্তদের বক্তব্য লিপিবদ্ধ করে একটি প্রতিবেদন দলের কাছে জমা দেন।

গুলশানের সংবাদ সম্মেলনে বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক সৈয়দ এমরান সালেহ প্রিন্স নির্বাহী কমিটির সদস্য নিপুণ রায়চৌধুরী উপস্থিত ছিলেন।

তুমি এটাও পছন্দ করতে পারো

উত্তর দিন

আপনার ইমেইল ঠিকানা প্রচার করা হবে না.

WP2Social Auto Publish Powered By : XYZScripts.com