পদত্যাগ এক সেকেন্ডের বিষয় : বাণিজ্যমন্ত্রী
বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি বলেছেন, কেউ কেউ আমার পদত্যাগ দাবি করছেন। কিন্তু পদত্যাগ করলে যদি পেঁয়াজের দাম কমে যায়, এক সেকেন্ডও লাগবে না আমার মন্ত্রিত্ব ছাড়তে।
মঙ্গলবার দুপুরে রাজধানীর পল্টনের হোটেল ফারসের হলরুমে ‘নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি রোধকল্পে ব্যবসায়ী সমাজের করণীয়’ শীর্ষক এক মতবিনিময় সভায় তিনি এ কথা বলেন। আওয়ামী লীগের শিল্প ও বাণিজ্যবিষয়ক উপকমিটি এই সভার আয়োজন করে।
টিপু মুনশি বলেন, আমি ব্যবসা করি ৪৭ বছর ধরে। ১৯৭২ সালে ব্যবসা শুরু করি। আর রাজনীতি শুরু করি তার থেকে ৫-৬ বছর আগে। ১৯৬৬ সালে ছাত্রলীগ দিয়ে শুরু করি। কাজেই রাজনীতিতে ৫৩ বছর হয়ে গেছে। আর বলে রাখি নিজের কথা, আমি একজন মুক্তিযোদ্ধা। আমি কিন্তু একজন মুক্তিযোদ্ধার সন্তানও। বাংলাদেশের ইতিহাসে এটি বিরল ঘটনা। আমি এবং আমার বাবা দু’জন একসঙ্গে মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করেছিলাম।’
মন্ত্রী বলেন, পেঁয়াজ আমদানির ৯০ শতাংশ নির্ভর করতে হয় ভারতের ওপর। অক্টোবরের দিকে ভারত এক লাফে পেঁয়াজের টন সাড়ে আটশ’ ডলার করে দেয়। আমরা মনে করলাম, এই বৃদ্ধিটা সাময়িক। কিন্তু তারা দাম বাড়িয়েই শান্ত হল না, ২৯ সেপ্টেম্বর তারা ঘোষণা করল, বাংলাদেশে পেঁয়াজ ‘এক্সপোর্ট’ বন্ধ করে দেবে। আমি রাজনীতিবিদের পরে ব্যবসায়ী।
প্রতিটা মুহূর্ত আমি চেষ্টা করেছি। সমস্যা হয়েছে, ৫ দিন ধরে বা ছয় দিন ধরে ‘ইজিপ্ট’ এবং ‘টার্কিস’ থেকে মাল আসতে শুরু করেছে। আমাদের কথা দিয়েছে সিটি গ্রুপ, মেঘনা গ্রুপ, এস আলম গ্রুপ।
আমরা ৫০ থেকে ৬০ হাজার টন মাল আপনাদের দেব এবং সবচেয়ে আনন্দের কথা, ‘রিয়েলি অ্যাপ্রিশিয়েট’ করি ব্যবসায়ী হিসেবে। তারা বলেছে, আমরা এক টাকা প্রফিট করব না। যত কোটি টাকা লাগে আমরা ইনভেস্ট করব এবং এক টাকা প্রফিট করব না।
তিনি বলেন, তিন দিন ধরে যে পেঁয়াজ তারা আমাদের দিয়েছে সেটা সব মূল্যে খরচ পড়েছে সাড়ে ৪২ টাকা এবং সেই দামেই তারা আমাদের দিয়েছে। আমি বলেছি আপনারা প্রফিট করেন। ৫ টাকা প্রফিট করেন, তিন টাকা প্রফিট করেন। তারা আমাদের বলেছে, আমরা এক টাকাও প্রফিট করব না।
মন্ত্রী বলেন, ‘সিটি গ্রুপ, মেঘনা গ্রুপের বাইরেও কিছু কিছু পেঁয়াজ চিটাগাং বন্দর দিয়ে ঢুকছে। ওই পেঁয়াজের খরচও কোনো অবস্থাতেই কিন্তু ৪৪ টাকার বেশি হওয়ার কথা নয়। কিন্তু আমদানিকারকরা তা বিক্রি করছে বেশি দামে। তাহলে মানবিক মূল্যবোধটা কোথায়।
এ ধরনের মুনাফালোভী যারা দুর্ভিক্ষের মধ্যে, সংকটের মধ্যেও নিজের মূল্যবোধকে জাগ্রত করে না, তাদের কিন্তু ব্যবসায়ী হওয়ার কথা নয়।’
তিনি আরও বলেন, “আমাদের ‘সেলফ সাফিশিয়েন্ট’ হতে হবে। প্রধানমন্ত্রীও বলেছেন, দুই থেকে তিন বছরের মধ্যে আমাদের যেভাবে হোক ‘সেলফ সাফিশিয়েন্ট’ হতেই হবে।” ব্যবসায়ীদের উদ্দেশে টিপু মুনশি বলেন, ‘সংকট আমাদের আছে। আল্লাহর ওয়াস্তে, ইথিকাল প্রফিটটা করেন, লজিক্যাল প্রফিটটা করেন। এই সংকট আমাদের সারাজীবন থাকবে না। ইনশাআল্লাহ, আমরা ওভারকামও করব।’
তিনি বলেন, ‘সিদ্ধান্ত নিয়েছি, দরকার পড়লে টিসিবি দিয়ে এক লাখ টন আগামী ৪০ দিনের মধ্যে ঢাকা এবং চট্টগ্রামের মার্কেটে দেব। আমি উইল ফেইস ইট। একটু কষ্ট করতে হবে। আমরা এই বিপদটাকে সম্পদে পরিণত করবই করব। খুব বেশিদিন লাগবে না। আমরা প্রডাকশনে সেলফ সাফিশিয়েন্ট হবই হব।
৭ টাকার ফুলকপি কেন ৫০ টাকা হবে- প্রশ্ন নানকের : সভায় আওয়ামী লীগের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর কবির নানক বলেন, ‘এই অনুষ্ঠানের অতিথি হিসেবে থাকব জানতে পেরে আমি (সোমবার) রাত ১১টায় ঢাকা থেকে কুমিল্লার উদ্দেশে রওনা করি। রাত সোয়া ১২টার দিকে নিমসার বাজারে গিয়ে পৌঁছাই এবং রাত আড়াইটা পর্যন্ত আমি বাজারদর বোঝার চেষ্টা করি। কথা বলেছি তৃণমূলের কৃষকের সঙ্গে। যারা মাথায় করে মাল নিয়ে এসে বিক্রি করছে। পাইকারি বাজারে কত করে বিক্রি করছেন জানতে চেয়েছি। এ বিষয়গুলো আমি লুঙ্গি পরে সাধারণ মানুষের মতো বোঝার চেষ্টা করেছি।’
তিনি বলেন, ‘নিমসার বাজারে যে ফুলকপি কেনা হচ্ছে ৭ টাকায়, সেই ফুলকপি কারওয়ান বাজারে তিন হাত বদলে ২০ টাকা বিক্রি হবে। সেই ২০ টাকার কপি কারওয়ান বাজার থেকে কৃষি মার্কেটে গিয়ে ৪০-৫০ টাকা হয়ে যাবে কেন? এটি মেনে নেয়া যায় না। এটি কোনো জনবান্ধব সরকার মেনে নিতে পারে না। এটি জনগণের দল আওয়ামী লীগ মেনে নেবে না।’
জাহাঙ্গীর কবির নানক বলেন, ‘সারাবিশ্বে রমজান মাসে বাজারদর নেমে যায়, আর আমাদের দেশের ব্যবসায়ীরা রমজান মাসে দাম হাঁকিয়ে ওপরে উঠিয়ে দেন। এটি লজ্জার।’
দেশের বাজার ব্যবস্থাপনায় একটি অসুস্থ অবস্থা বিরাজ করছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘২০০৮ সালের সরকার গঠনের পর এমন একটি পরিস্থিতি তৈরি হয়েছিল। আমরা চেষ্টা করছিলাম একটি বিকল্প বাজার ব্যবস্থাপনা গড়ে তোলার। রাজধানীর বিভিন্ন ব্যবসায়ী সংগঠনের সঙ্গে বসে আমরা চেষ্টা করেছিলাম বোঝার জন্য কোথায় শুভাঙ্করের ফাঁকি রয়েছে।’
তিনি বলেন, ‘বাজার পরিস্থিতিকে লাগামহীন হতে দেয়া যাবে না। জনগণের সরকার বাজারের অস্বস্তিকর পরিস্থিতি মেনে নিতে পারে না।’
ব্যবসায়ীদের উদ্দেশে আওয়ামী লীগের এই নেতা বলেন, ‘ভোজ্যতেলের বাজার, চালের দাম কেন বাড়ল? কেন বাড়ছে আদার দাম? কেন বাড়ছে রসুনের দাম? কেন ফুলকপির দাম বাড়বে? আপনারা (ব্যবসায়ীরা) সাধারণ মানুষের মুখের দিকে তাকিয়ে দর সহনীয় মাত্রায় নিয়ে আসেন।’
আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদ সদস্য এবং উপকমিটির আহ্বায়ক কাজী আকরাম উদ্দীন আহমেদের সভাপতিত্বে সভায় আরও বক্তব্য দেন আওয়ামী লীগের শিল্প ও বাণিজ্য সম্পাদক আবদুস সাত্তার ও বিভিন্ন পণ্যের ব্যবসায়ীরা।