আমরা ইতিহাসকে বিকৃত করার জন্য আলোচনা করতে আসিনি: মোশাররফ
স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উদযাপন জাতীয় কমিটির আহবায়ক ও বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেনবলেছেন, `আমরা কাউকে ছোট বা কাউকে বড় করা বা ইতিহাস বিকৃত করতে এখানে আলোচনা করতে আসিনি। আমরাজনগণের কাছে প্রকৃত ইতিহাস তুলে ধরার জন্য এই আলোচনা অনুষ্ঠান করছি। আমরা ১ মার্চ যেদিন একটি নির্বাচিত সংসদেরঅধিবেশন স্থগিত করে দিয়েছিলো সেই দিনই আমরা বিএনপি সূবর্ণ জয়ন্তীর সারা বছরের কর্মসূচির উদ্বোধন করেছি। যাউদ্বোধন করেছেন আমাদের দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। আমরা ২ মার্চ পতাকা উত্তোলন, ৩ মার্চ স্বাধীনতাইশতেহারের দিবসটিও আমরা পালন করেছি।’
রোববার জাতীয় প্রেস ক্লাবে এক আলোচনা সভায় তিনি এসব কথা বলেন।
খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, ‘এরপর ৭ মার্চ। এই দিন মানুষ আশা করেছিলো যেখানে ছাত্র সমাজ পতাকা উত্তোলনকরেছেন আসম আবদুর রব, স্বাধীনতার ইশতেহার পাঠ করেছেন শাহজাহান সিরাজ তাহলে ৭ মার্চ স্বাধীনতার ঘোষণা আসবে।আমি তখন উচ্চ শিক্ষার্থে বিদেশে ছিলাম। লন্ডনে থেকে আমরা ছাত্ররা বাংলাদেশের সংগ্রামী ছাত্র সমাজ নাম দিয়ে একটিসংগঠন করেছিলাম, যার আহবায়ক ছিলাম আমি। আমরাও মনে করেছি ৭ মার্চ স্বাধীনতার ঘোষণা হবে। তখন আমরা লন্ডনেআওয়ামী লীগ, ছাত্র সংগ্রাম পরিষদ, ডক্টরস অ্যাসোসিয়েশন যৌথভাবে হাইপার্স পিকারস কর্নারে সমাবেশ ডেকেছিলাম। সেইসমাবেশে আমরা কিন্তু স্বাধীনতার পতাকা উত্তোলন ও স্বাধীনতার ঘোষণা দিয়েছিলাম। কারণ তখন এরকমের মোবাইলের যুগছিলো না। আমরা লন্ডনে তখনও জানতে পারেনি ৭ মার্চ স্বাধীনতার ঘোষণা হয়নি। এইভাবে বিবেচনা করতে হবে স্বাধীনতারঘোষণার জন্য বাংলাদেশের ছাত্র সমাজ দেশ–বিদেশে যে প্রত্যাশা করেছিলো, সেই প্রত্যাশা পুরণ হয় নাই।
তিনি বলেন ‘অনেকে আমাদের প্রশ্ন করছেন যে, আপনারা আগে তো সূবর্ণ জয়ন্তী পালন করেন নাই। আমরা সূবর্ণ জয়ন্তীরএকটি দিন হিসেবে ৭ মার্চ পালন করছি। ইতিপূর্বে স্বাধীনতার সূবর্ণ জয়ন্তী আর আসে নাই।আমরা প্রকৃত ইতিহাস তুলে ধরতেএই দিনটি পালন করছি।’
বিএনপির স্থায়ী কমিটির এই সিনিয়র সদস্য বলেন, ‘যখন ওই সময় নির্বাচিত সংসদ ডেকে স্থগিত করে দেয়া হয়েছে তখনসারাদেশে পূর্ব পাকিস্তান উত্তাল হয়ে গিয়েছিলো। কেননা এটা গণতান্ত্রিক অধিকার, পাকিস্তানের সাংবিধানিক অধিকার যে, সংখ্যাগরিষ্ট দলের কাছে ক্ষমতা ছেড়ে দিতে হবে। পাকিস্তানের জান্তা তারা নানা রকমের টালবাহানা করছিলো–এমনি প্রেক্ষাপটে৭ মার্চের ভাষন অবশ্যই ঐতিহাসিক এবং জনগনকে উদ্দিপ্ত করার জন্য, জনগনকে ঐক্যবদ্ধ করার জন্য কিছু নির্দেশনা ছিলো।’
খন্দকার মোশাররফ বলেন, ‘এটা আমরা অস্বীকার করতে চাই না এখানে ওই বক্তব্যের পেছনে সেই সময়ের অবিসংবাদিত নেতাজনাব মরহুম শেখ মুজিবুর রহমান। এটাও আমরা অস্বীকার করি না। বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানতিনি যতবার জাতির উদ্দেশ্যে আনুষ্ঠানিক এবং জাতীয় সংসদে বক্তব্য রেখেছেন যারা বাংলাদেশের স্বাধীনতার জন্য, মুক্তিযুদ্ধের জন্য অবদান রেখেছেন তাদের সকলকে স্মরণ করতে গিয়ে শেখ মুজিবুর রহমানের নামও স্মরণ করেছেন।তেমনিভাবে আমাদের নেত্রী দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া যতবার সংসদে বক্তব্য রেখেছেন এবং তিনি জাতির উদ্দেশ্যে ভাষনদিয়েছেন তিনি স্বাধীনতা ও মুক্তিযুদ্ধের অবদান রেখেছেন তাদেরকে শ্রদ্ধা নিবেদন করেছেন সেখানে শেখ মুজিবুর রহমানের নামছিলো।’
তিনি বলেন, ‘আমরা ইতিহাসকে অবজ্ঞা করতে চাই না, আমরা ইতিহাসকে মুছে দিতে চাই না। ৭ মার্চ জনাব শেখ মুজিবুররহমান বলেছেন, জনগনের প্রতিনিধির কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর করতে হবে। সংখ্যাগরিষ্ট দলের নেতা উনি। আমি মনে করি, এই যেতার বক্তব্য–এটা সঠিক। ওই সময়ে সেটাই তার বক্তব্য রাখা উচিত ছিলো সেটাই উনি রেখেছেন। কী বক্তব্য রেখেছেন? জনগনেরপ্রতিনিধির কাছে ক্ষমতা ছেড়ে দিতে হবে। তাহলে যদি কেউ আলোচনা করে ৭ মার্চের বক্তৃতা ছিলো পাকিস্তানের কাঠামোর মধ্যেইএকটি সংখ্যাগরিষ্ট দল হিসেবে, জনগনের প্রতিনিধি হিসেবে তাদের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর করার জন্য সেই সময়ের আন্দোলন–সংগ্রাম–হরতাল–সমাবেশ– এটা সেই দরকাষাকষির অংশ। এটা যদি বলেন তাহলে কি অন্যায় হবে?।’ এসময় ‘সংগ্রাম ও যুদ্ধ একবিষয় নয়’ উল্লেখ করে ক্ষমতাসীনরা একে এক করে গুলিয়ে ফেলেছে বলেও মন্তব্য করেন স্থায়ী কমিটির এই সদস্য।