বর্তমান সরকারের মুক্তিযুদ্ধের সংজ্ঞা আংশিকভাবে বিতর্কিত ও অগ্রহণযোগ্য : ইব্রাহিম
বাংলাদেশ কল্যাণ পার্টির চেয়ারম্যান মেজর জেনারেল সৈয়দ মোহাম্মদ ইব্রাহিম বীর প্রতীক বলেছেন, বর্তমান সরকার মুক্তিযুদ্ধেরযে সংজ্ঞা তুলে ধরছে তা আংশিকভাবে বিতর্কিত ও অগ্রহণযোগ্য।
বৃহস্পতিবার জাতীয় প্রেসক্লাবে সম্ভাবনার বাংলাদেশ নামক একটি সংগঠন আয়োজিত ‘স্বাধীনতার ৫০ বছর পূর্তি : প্রত্যাশা ওপ্রাপ্তি’ শীর্ষক সেমিনারে তিনি এ কথা বলেন।
সৈয়দ মোহাম্মদ ইব্রাহিম বলেন, ‘বর্তমান সরকার মুক্তিযুদ্ধের সংজ্ঞার যে চিত্রায়ণ করছে তা আংশিকভাবে বিতর্কিত ওঅগ্রহণযোগ্য। রণাঙ্গনের একজন সম্মুখসারির যোদ্ধা হিসেবে বলছি, ক্ষমতাশীনদের দুর্নীতিমুক্ত করতে পারলে অথবা ভালোরাজনীতিবিদদের দেশ পরিচালনার দায়িত্ব দিতে পারলেই আমাদের সামাজিক অধিকার প্রতিষ্ঠিত হবে। মুক্তিযোদ্ধাদের যে স্বপ্নছিল তা বাস্তবে রূপ পাবে।’
তিনি বলেন, ‘আমি জীবনে দুবার নির্বাচনে অংশগ্রহণ করেছি। একবার দিনের বেলায় অনুষ্ঠিত নির্বাচনে। আরেক রাতেরবেলার নির্বাচনে।’
তিনি আরো বলেন, ‘নির্বাচনের মাধ্যমে দেশের প্রকৃত শাসন ব্যবস্থা নির্মিত হয়। আমাদের বাংলাদেশের চলমান শাসকগোষ্ঠীযখন বুঝতে পেরেছে জনগণের রায়ের মাধ্যমে ক্ষমতায় টিকে থাকার কোনো সম্ভাবনা নেই তখনই তারা নির্বাচন প্রকৌশলেরমাধ্যমে নির্বাচন ব্যবস্থাকে তামাশায় পরিণত করেছে। এভাবে ভোটারবিহীন নির্বাচন নিশীথ রাতের নির্বাচন গোটা জাতি প্রত্যক্ষকরেছে। গ্রাম–গঞ্জে স্থানীয় সরকার নির্বাচনও দলীয় মোড়কে সম্পূর্ণ অগ্রহণযোগ্য হয়ে পড়েছে। জনগণের আদর্শ, বিশ্বাস, জীবনবোধ, রাজনীতি, অর্থনীতি, ইতিহাস ভূলুণ্ঠিত হচ্ছে।’
তিনি আরো বলেন, ‘এখানে রাজনীতির বাহন হিসেবে ইসলাম ব্যবহারিত হলেও আত্মিক আদর্শ হিসেবে এটি উপেক্ষিত হচ্ছে।বৈশ্বিক প্রভাব ও প্রতিবেশীর রিমোট কন্ট্রোলে দেশে ইসলামকে একটি দ্বন্দ্ব ও সংঘাতের বিষয়ে পরিণত করা হচ্ছে। বিপরীতভাবাদর্শের ইসলাম কেন্দ্রীক সংঘাত তীব্রভাবেই বাংলাদেশের রাজনীতিতে বহমান। ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধের মূল চেতনা আজম্লান হয়ে পড়েছে। এ থেকে পরিত্রাণের জন্য ঐক্যবদ্ধ ভাবে দেশের জনগণকে মাঠে নেমে এসে তাদের দাবি প্রতিষ্ঠিত করতে হবে।’
দৈনিক নয়া দিগন্তের সম্পাদক আলমগীর মহিউদ্দিনের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন বাংলাদেশ কল্যাণ পার্টিরচেয়ারম্যান মেজর জেনারেল সৈয়দ মোহাম্মদ ইব্রাহিম বীর প্রতীক। বিশেষ অতিথি ছিলেন ঢাকা বিশ্বিবিদ্যালয়ের ফার্মেসিবিভাগের অধ্যাপক ড. চৌধূরী মাহমুদ হাসান।
প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের সরকার ও রাজনীতি বিভাগের প্রফেসর আব্দুল লতিফ মাসুম।
বাংলাদেশ ইসলামী ইউনিভার্সিটির শিক্ষক ড. আবদুল মান্নানের সঞ্চালনায় আলোচনায় অংশ নেন ঢাকা বারঅ্যাসোসিয়েশনের সিনিয়র সহ–সভাপতি অ্যাড. এসএম কামাল উদ্দিন, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব বিশ্ববিদ্যালয়ের সহযোগী অধ্যাপকডা. আতিয়ার রহমান, সমাজসেবক ইঞ্জিনিয়ার শেখ আল আমিন, বাংলাদেশ সুপ্রিমকোর্ট বার অ্যাসোসিয়েশনের সাবেক সহ–সভাপতি ড. গোলাম রহমান, সমাজউন্নয়ন কর্মী অ্যাড. ড. মো: হেলাম উদ্দিন, সুপ্রিমকোর্ট অব বাংলাদেশ অ্যাড. মো: পারভেজহোসেন, ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক মো: শহিদুল ইসলাম, কোষাধ্যক্ষ গাযী আনোয়ারুল হক প্রমুখ।
সভাপতির বক্তব্যে আলমগীর মহিউদ্দিন বলেন, ‘বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠিত হয়েছে বলেই আজ আমরা কথা বলতে পারছি। চলমানসময়ে শোষণমুক্ত সমৃদ্ধ জনগণের রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠাই আমাদের লক্ষ্য হওয়া উচিৎ। সেই সাথে এই দেশ–জাতি–রাষ্ট্রের জন্য অন্য যারাএকই লক্ষে কাজ করছেন তাদের সবাইকে নিয়ে সমবেত চেষ্টায় ব্রতী হতে হবে সকলকে। এভাবেই অর্জিত হতে পারে ‘জাতীয়ঐক্যমত্য’। সে লক্ষ্যে নিরন্তর নিয়োজিত হোক আমাদের সমস্ত আয়োজন।’
চৌধূরী মাহমুদ হাসান বলেন, ‘শক্তিমানদের সাথে সত্যের সংমিশ্রণ না হলে সমাজে দুর্নীতিসহ সকল অনাচার চেপে বসে। সকলঅশান্তি দূর করতে হলে শক্তিমানদের সাথে সত্যের মিলন করাতে হবে। আর ক্ষমতা থাকতে হবে মুত্তাকিদের হাতে। তাহলেইসমাজে শান্তি–শৃঙ্খলা বজায় থাকবে।’
তিনি আরো বলেন, ‘জ্ঞানী লোকেরা অনৈতিক হলে সমাজ বেশি খারাপ হয়।’ জোর করে কেন আপনাকে ক্ষমতায় থাকতে হবে– এমন প্রশ্ন রেখে সকারের উদ্দেশে তিনি বলেন, ‘জনগণের ভালোবাসা নিয়ে ক্ষমতায় থাকুন।’
সমাজসেবক ইঞ্জিনিয়ার শেখ আল আমিন বলেন, ‘বিএনপি, আ’লীগ ও জামায়াত ঐক্যবদ্ধ আন্দোলনের ইতিহাস রয়েছে। তাইডান–বাম না দেখে স্বৈরতন্ত্রের বিরুদ্ধে মানবাধিকার প্রতিষ্ঠায় আন্দোলন করা জরুরি।’
অ্যাড. ড. গোলাম রহমান বলেন, ‘সামাজিক, রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক অধিকার বাস্তবে প্রতিষ্ঠিত না হলে একটি রাষ্ট্রে মানুষস্বাধীনভাবে বাস করতে পারে না। আমাদের সকল অধিকার প্রতিষ্ঠা করতে পারলেই দেশ সত্যিকার অর্থে এগিয়ে যাবে।’
ডা. আতিয়ার রহমান বলেন, ‘স্বাস্থ্য খাতে সরকারি বাজেট মাত্র চার ভাগ। স্বাস্থ্য মৌলিক অধিকার হলেও এখন তা ব্যবসায়িকপণ্যে পরিণত হয়েছে। উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ডাক্তার ও ওষুধ পাওয়া যায় না। অথচ প্রাইভেট চিকিৎসা ব্যবস্থা চলছেহরদমে।’
মো: শহিদুল ইসলাম বলেন, ‘এদেশে কোনো গণমাধ্যম নেই। আছে শুধু সরকারি প্রচার মাধ্যম। আমরা ৫০ বছরে পেয়েছি ধর্ষণেসেঞ্চুরি করা সোনার ছেলে, বাটপার সাহেদ, কেসিনো সম্রাট, হলমার্কের মতো অসংখ্য ব্যাংক লুটেরা। এদের রুখতে হলে বিভেদভুলে ঐক্যবদ্ধ আন্দোলনে নামতে হবে।’
অ্যাড. ড. মো: হেলাম উদ্দিন বলেন, ‘আমরা একটি স্বাধীন ভূখণ্ড ও পতাকা পেয়েছি। ব্রিগেডিয়ার জেনারেল আযমী, ব্যারিস্টারআরমানের মতো গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিরা কেন গুম হয়েছে, তা জাতি জানতে চায়। তাদের বাসায় ফোন এলেই তাদের সন্তানরা জানতেচায় বাবার কোনো খবর আছে কি–না।’
তিনি আরো বলেন, ভাষা আন্দোলনের মতো আমাদের সকল অধিকার আদায়ে মাঠে ঝাঁপিয়ে পড়তে হবে।
অ্যাড. মো: পারভেজ হোসেন, বলেন, ‘৫০ বছরে বাংলাদেশে সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে। আমরা যদি ইউনিট পর্যায় থেকে সরকারিদুর্নীতি প্রতিরোধে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করতে পারি তাহলেই দেশ এগিয়ে যাবে।’