৭ মার্চের ভাষণ অবশ্যই ইতিহাস, জিয়ার স্বাধীনতার ঘোষণাও ইতিহাস: বিএনপি
একাত্তরের ৭ মার্চ শেখ মুজিবুর রহমানের ভাষণ অবশ্যই ইতিহাস বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তিনি বলেন, ‘আমরা শুধু ৭ মার্চ নয়, ২ মার্চ, ৩ মার্চ পালন করছি। ২ মার্চ প্রথম স্বাধীন বাংলাদেশের পতাকা উত্তোলন করেছিলেন আ স ম আবদুর রব। এটা স্বাধীনতার ইতিহাসের অংশ। ৩ তারিখ স্বাধীনতার ইশতেহার পাঠ করেছেন শাজাহান সিরাজ। এটাকে অস্বীকার করব কী করে?’
স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীর কর্মসূচি উপলক্ষে আজ শনিবার দুপুরে রাজধানীর গুলশানের একটি মিলনায়তনে গণমাধ্যমের সঙ্গে মতবিনিময় অনুষ্ঠানে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে মির্জা ফখরুল ইসলাম এসব কথা বলেন।
মির্জা ফখরুল বলেন, ‘ঠিক একইভাবে ৭ মার্চ যে ভাষণ শেখ মুজিবুর রহমানের, সেটা অবশ্যই ইতিহাস। অবশ্যই তাঁর মর্যাদা তাঁকে দিতে হবে। তার অর্থ এই নয় যে আপনি যখন ৭ মার্চ পালন করবেন, তখন বলবেন ৭ মার্চের ডাকে সব হয়ে গিয়েছিল। সেটা কি না, তা আলোচনার মধ্যে আসবে, ইতিহাস থেকে আসবে, ইতিহাসের সমস্ত বই থেকে আসবে। কে বক্তৃতাতে ৭ মার্চে কী বলেছিলেন, পরবর্তীকালে ২ মার্চে কী বলেছিলেন, ৩ মার্চে কী বলেছিলেন, ৯ মার্চ মাওলানা ভাসানী কী বলেছিলেন পল্টন ময়দানে—এগুলো ইতিহাস। একই সঙ্গে ২৬ মার্চ শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের যে ঘোষণা জাতিকে ঝাঁপিয়ে পড়তে অনুপ্রাণিত করেছিল এবং সমগ্র জাতি যুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়েছিল, এটাও ইতিহাস। সুতরাং এগুলো কোনোটাই অস্বীকার করা যাবে না।’
বিএনপির মহাসচিব বলেন, ‘কাউকেই খাটো করার কোনো রকম ইচ্ছা আমাদের নেই এবং আমরা বিশ্বাস করি সেটা উচিতও না। বিশেষ করে স্বাধীনতার ব্যাপারে প্রকৃত সত্য সবাইকে উদ্ঘাটিত করতে হবে।’
জাতিকে বিভক্ত করার জন্য আওয়ামী লীগকে অভিযুক্ত করেন বিএনপির মহাসচিব। তিনি বলেন, ‘দুর্ভাগ্য আমাদের, স্বাধীনতার ৫০ বছর পরে জাতি হিসেবে আমরা বিভক্ত হয়ে পড়েছি। সেটার জন্য কৃতিত্ব আওয়ামী লীগেরই। জাতিকে প্রথম থেকে তারা স্বাধীনতার পক্ষে, স্বাধীনতার বিপক্ষে, চেতনার পক্ষে, চেতনার বিপক্ষে নিয়ে গেছে।’
মির্জা ফখরুল ইসলাম প্রশ্ন তোলেন, ‘ওই চেতনা নিয়ে কি দেশ স্বাধীন হয়েছিল যে আমি গণতন্ত্র লুট করে নেব, আমি আগের রাত্রে নির্বাচন করে সরকার লুট করব, আমি কোষাগার খালি করে দেব। একজন লেখক, একজন নিরীহ মানুষ তিনি লেখেন, সেই অপরাধে তাঁকে জেলে পাঠিয়ে মৃত্যুবরণ করতে হবে।’
বিএনপির মহাসচিব বলেন, ‘আজকে যে ডিজিটাল আইন তৈরি করা হয়েছে, তার সবচেয়ে বেশি ভুক্তভোগী সাংবাদিকেরা। প্রায় ৪০০ জন বিভিন্নভাবে ভুক্তভোগী, কতজনকে জেল খাটতে হয়েছে। এ জন্য তো আমরা স্বাধীনতাযুদ্ধ করিনি, এ জন্য তো আমরা স্বাধীনতা চাইনি। আমরা কোনো একজন ব্যক্তি, কোনো একটা পরিবার, কোনো একটা দলের একান্ত ব্যক্তিগত পারিবারিক সম্পত্তি করার জন্য এ দেশ স্বাধীন করিনি।’
স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উদ্যাপন কমিটির আহ্বায়ক খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, ‘জিয়াউর রহমান প্রথম পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে বিদ্রোহ ঘোষণা করে সরাসরি পাকিস্তানি বাহিনীর প্রথম সম্মুখযুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তোলেন। তিনিই প্রথম সেক্টর কমান্ডার, প্রথম জেড ফোর্সের অধিনায়ক। অত্যন্ত বেদনাদায়ক গত ১২ বছর দেখেছি, মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসকে বিতর্কিত করার জন্য হেন কোনো চেষ্টা নেই, তা করা হয়নি। সর্বশেষ তাঁর খেতাব বাতিলের জন্য আজকে সরকার যে উদ্যোগ গ্রহণ করেছে, তা অত্যন্ত দুঃখজনক।’
জিয়াউর রহমানের ‘বীর উত্তম’ খেতাব বাতিলের বিষয়ে এক প্রশ্নের জবাবে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, জিয়াউর রহমানকে ইতিহাস ধারণ করেছে। কে কার খেতাব নিল, না নিল তাতে জিয়াউর রহমানের কিচ্ছু যায় আসে না। এ দেশের স্বাধীনতাকামী মানুষেরও কিছু যায় আসে না, বিএনপিরও কিচ্ছু যায় আসে না। কারণ, শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের খেতাব কারও দয়ায় নয় বা কোনো সরকারের বা কোনো ব্যক্তির আনুকূল্যে নয়। তিনি এটা অর্জন করেছিলেন।
এ প্রসঙ্গে মির্জা ফখরুল ইসলাম বলেন, ‘আমাদের দলের প্রথম চেয়ারম্যান ছিলেন জিয়াউর রহমান। এর পরে যিনি চেয়ারপারসন হয়েছেন বেগম খালেদা জিয়া, তিনিও স্বাধীনতাযুদ্ধে একজন অংশগ্রহণকারী ও নির্যাতিত এক নেত্রী। তিনি কারাবরণ করেছেন একাত্তর সালে এবং আজকেও তিনি যে লড়াইটা করছেন, এখনো কারাবন্দী আছেন। তাঁর একটা মাত্র লক্ষ্য গণতন্ত্রকে মুক্ত করা।’
এই সময়ে যখন গণতন্ত্র নেই, খালেদা জিয়া কারাগারে, যখন আপনাদের সমাবেশ করতে দেওয়া হয় না, এমন পরিস্থিতিতে সুবর্ণজয়ন্তীর অনুষ্ঠান কেন করছেন। এমন প্রশ্নের জবাবে বিএনপির মহাসচিব বলেন, ‘সুবর্ণজয়ন্তী করছি কার? স্বাধীনতার। এটা আমার, এ দেশের মানুষের। এটা বাস্তবতা। এটা স্বপ্ন আমার, এটা আমার সবকিছু। আমি স্বাধীনভাবে একটা জাতিকে নির্মাণ করতে চাই। কে কী করল না করল বড় কথা নয়। এটা আমার অধিকার, আমি এই স্বাধীনতার ৫০ বছর অবশ্যই পালন করব।’
মতবিনিময় অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, সেলিমা রহমান, ইকবাল হাসান মাহমুদ, ভাইস চেয়ারম্যান শওকত মাহমুদ প্রমুখ।
অনুষ্ঠানের শুরুতে কারাবন্দী অবস্থায় লেখক মুশতাক আহমেদের মৃত্যুতে এক মিনিট নীরবতা পালন করে তাঁর প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করা হয়।