রাশিয়া ও মিয়ানমারের উপর নিষেধাজ্ঞার পথে ইইউ
ইইউ পররাষ্ট্রমন্ত্রীরা রাশিয়া ও মিয়ানমারের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক পদক্ষেপের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে চলেছেন। বিরোধী রুশ নেতা নাভালনির উপর দমন নীতি এবং মিয়ানমারে সামরিক অভ্যুত্থান নিয়ে তারা আলোচনা করছেন।
পররাষ্ট্র নীতির ক্ষেত্রে রাষ্ট্রজোট হিসেবে ইউরোপীয় ইউনিয়নের মধ্যে ঐকমত্য অর্জন করা সব সময়ে সহজ হয় না। কিন্তু রাশিয়া ও মিয়ানমারের বর্তমান পরিস্থিতির আলোকে এই দুই দেশের উপর শাস্তিমূলক নিষেধাজ্ঞা চাপানোর প্রশ্নে তেমন মতভেদ দেখা যাবে না বলে আশা করা হচ্ছে। সোমবার ইইউ পররাষ্ট্রমন্ত্রীরা তাদের বৈঠকে এই নীতিগত সিদ্ধান্ত নিলে আগামী কয়েক সপ্তাহের মধ্যে সেই নিষেধাজ্ঞার স্পষ্ট রূপরেখা তুলে ধরা হবে। মার্চ মাসে ইইউ শীর্ষ সম্মেলনে সেই ঘোষণা করা হতে পারে। ওয়াশিংটনে পালাবদলের পর বাইডেন প্রশাসনের সাথে আরো সমন্বয়ের মাধ্যমে পররাষ্ট্র নীতির ক্ষেত্রে যৌথ উদ্যোগও দেখা যাচ্ছে। সোমবারই ইইউ পররাষ্ট্রমন্ত্রীরা মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিংকেনের সাথে নানা বিষয়ে আলোচনা করছেন।
রাশিয়ার সাথে ইইউ-র সম্পর্ক বেশ কয়েক বছর ধরে অবনতির পথে। ইউক্রেনের সাথে সংঘাতের জের ধরে ক্রাইমিয়া উপদ্বীপ দখল করার পর ইইউ রাশিয়ার উপর নিষেধাজ্ঞা চাপিয়েছে। বর্তমানে রুশ বিরোধী নেতা আলেক্সেই নাভালনির বিরুদ্ধে মস্কোর পদক্ষেপগুলির কারণে উত্তেজনা আরো বাড়ছে। তার বিরুদ্ধে আদালতের সর্বশেষ রায়কেও রাজনৈতিক হিসেবে বিবেচনা করছে ইইউ। সংলাপের মাধ্যমে মতবিরোধ মেটানোর প্রচেষ্টাও বিফল হয়েছে। ইইউ পররাষ্ট্র নীতি বিষয়ক প্রধান জোসেপ বরেলের মস্কো সফরের সময় রাশিয়া ইইউ দেশের কয়েকজন কূটনীতিককে বহিষ্কারের ঘোষণা করায় ব্রাসেলসে ক্ষোভ আরো বেড়ে গেছে।
এমন প্রেক্ষাপটে রাশিয়ার কিছু শীর্ষ কর্তাব্যক্তির ইউরোপে প্রবেশ, ইউরোপে তাদের সম্পদের নাগালের মতো শাস্তিমূলক পদক্ষেপ নিতে পারে ইইউ। সেইসাথে বেলারুশে রাশিয়ার নীতি ও নাভালনির সমর্থকদের উপর দমন নীতির মতো কারণে এই প্রথম মানবাধিকার লঙ্ঘনের দায়ে রাশিয়ার উপর নিষেধাজ্ঞা চাপাতে পারে ইেউ। নাভালনির দুই ঘনিষ্ঠ ব্যক্তি রোববারই আটটি দেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সাথে সাক্ষাৎ করে রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের ঘনিষ্ঠ ব্যক্তিদের নাম পেশ করেছেন, যারা মানবাধিকার লঙ্ঘনের সাথে জড়িত। তবে কূটনীতিকদের মতে, নাভালনির বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রে সরাসরি জড়িত ব্যক্তিদের বিরুদ্ধেই শেষ পর্যন্ত পদক্ষেপ নেয়া সম্ভব হবে, যাতে আদালতে চ্যালেঞ্জ করা হলে সেই সিদ্ধান্ত প্রত্যাহার করতে না হয়।
ইউরোপীয় ইউনিয়নে রাশিয়ার রাষ্ট্রদূত ভ্লাদিমির চিজভ জার্মানির ‘ডি ভেল্ট’ সংবাদপত্রকে বলেছেন, ইইউ আরো নিষেধাজ্ঞার পথ বেছে নিলে রাশিয়াও পালটা শাস্তিমূলক পদক্ষেপ নেবে। রাশিয়া এর আগেও প্রয়োজনে ইইউ-র সাথে সম্পর্ক ছিন্ন করার হুমকি দিয়েছিল।
মিয়ানমারে সামরিক অভ্যুত্থানের পর ইউরোপীয় ইউনিয়ন বাছাই করা সামরিক কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক পদক্ষেপের পরিকল্পনা করছে। বিশেষ করে সামরিক শাসনের বিরুদ্ধে শান্তিপূর্ণ প্রতিবাদ-বিক্ষোভ দমন করার নীতির তীব্র সমালোচনা করছে ব্রাসেলস।
সূত্র : ডয়েচে ভেলে