অন্যায়-অবিচার ও গুম-খুনের বিরুদ্ধে যে ঝড় উঠেছে, এই ঝড়ে মাফিয়াতন্ত্র লন্ডভন্ড হয়ে যাবে: রিজভী
ক্ষমতাসীন অবৈধ সরকারের অন্যায়-অবিচার ও গুম-খুনের বিরুদ্ধে যে ঝড় উঠেছে, এই ঝড়েই এই মাফিয়াতন্ত্র লন্ডভন্ড হয়ে যাবে বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম-মহাসচিব অ্যাডভোকেট রুহুল কবির রিজভী।
তিনি বলেছেন, ‘যে ঝড় উঠেছে এই ঝড়ের মধ্যে বালিতে মাথা গুঁজে রাখলে ঝড়ের প্রভাব কিন্তু কমবে না। এই ঝড়ে মাফিয়াতন্ত্র লন্ডভন্ড হয়ে যাবে। চারিদিকে অন্যায়, অবিচার, ও গুম-খুন যেভাবে বিস্তার লাভ করেছে, এটা চিরদিন চলতে পারে না। এর অবসান হবেই। এত অন্যায় অবিচার, এত রক্তপাত এর মধ্য দিয়ে একটি স্বাধীন দেশ চলতে পারেনা। এই দেশে গণতন্ত্র ও আইনের শাসন ফিরে আসবে। এই অপরাধীদেরও বিচার হবে।’
রবিবার (২২ ফেব্রয়ারি) দুপুরে নয়াপল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে নারী ও শিশু অধিকার ফোরাম আয়োজিত বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারির প্রতিবাদে এক প্রতিবাদ সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
রুহুল কবির রিজভী বলেন, ‘সরকারের যে কুকির্তী গুলো বেরিয়ে পড়েছে, সেই কুকির্তী গুলো ঢাকার জন্য তারা ষড়যন্ত্র-চক্রান্তের আশ্রয় নিয়েছে। জিয়াউর রহমানের খেতাব বাতিলের সিদ্ধান্ত, বেগম খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা এবং ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের বিরুদ্ধে সাজা দেয়া হয়েছে। কারণ তারা চায়, বিএনপি এটা নিয়ে ব্যস্ত থাকুক তাহলে আমাদের কুকির্তী গুলো যেগুলো দেশে-বিদেশে প্রচারিত হচ্ছে এই বিষয়ে আর কেউ কথা বলবে না।’
তিনি প্রধানমন্ত্রীর প্রতি প্রশ্ন রেখে বলেন, ‘আপনি কি চাপা দিতে পারবেন প্রধানমন্ত্রী? আপনি চাপা দিতে পারবেন না? যে ঘটনাগুলো ঘটছে তা আজকে জনগণের কাছে উন্মোচিত হয়ে গেছে। বিটিআরসিকে দিয়ে আপনি আল-জাজিরার রিপোর্ট ধামাচাপা দেয়ার চেষ্টা করছেন। কিন্তু এটা করে কোন লাভ হবে না। কথা বললেই আমাদের নেতাকর্মীদেরকে গ্রেপ্তার করছেন। কম তো করেননি, আমাদের ৩৫ লক্ষ লোকের বিরুদ্ধে মামলা দেয়া হয়েছে। প্রতিদিন গ্রেপ্তার করা হচ্ছে, রিমান্ডের নামে নির্যাতন করছেন, তারপরও জাতীয়তাবাদী শক্তির শেকড় এত গভীরে যে এই শিকড় কে তুলে ফেলতে পারছেন না।’
সরকারের কঠোর সমালোচনা করে বিএনপির এই নেতা বলেন, ‘মাফিয়াতন্ত্র তারা এমনভাবে প্রতিষ্ঠা করেছে, যাই হোক তারা কোন তোয়াক্কা করে না। আল-জাজিরায় যারা রিপোর্ট করেছে তারা বাংলাদেশে খায় না পরে? তারা আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে একটি দেশের ফ্যাসিবাদ কায়েম করতে গিয়ে কি পরিমান অন্যায় হয়েছে, তার একটি রিপোর্ট করেছেন। তাদের সাথে কোন দেনাপাওনা নেই যে তারা প্রতিহিংসার বশবর্তী হয়ে এই রিপোর্ট করেছে। তারা যেটা করেছে এটা হল একটা বস্তুনিষ্ঠ সাংবাদিকতার অংশ। আপনারা সেটাও সহ্য করতে পারলেন না। নানাভাবে কথা বলেও যখন এটাকে ধামাচাপা দিতে পারলেন না তখন আপনাদের তৈরি করা আদালতের বিচারকদের দিয়ে সেই কাজটি করালেন। যে আদালত বলছে ইউটিউব এবং ফেসবুকে আল-জাজিরার যে রিপোর্ট প্রকাশিত হয়েছে এটা বন্ধ করে দিতে হবে। হাসিনা মাঝে মাঝেই বলেন গণতন্ত্রের কথা, এই হচ্ছে তার গণতন্ত্রের নমুনা।’
এ সময় রুহুল কবির রিজভী সরকারের উদ্দেশে আরও বলেন, ‘আজকে আইন-আদালত, বিচারক সব মাফিয়াতন্ত্রের অধীনস্থ। রাষ্ট্রশক্তি যেখানে মাফিয়ারা নিয়ন্ত্রণ করে, সেখানে কোনো আইন-আদালত ও প্রশাসন কেউ নিরপেক্ষভাবে কাজ করতে পারে না। তারা প্রত্যেকেই সরকারের মুখাপেক্ষী। তারা প্রত্যেকেই শেখ হাসিনার মুখাপেক্ষী। সংবিধান যে অধিকারটুকু দিয়েছে, সেই অধিকারকে বানচাল করে আদালত কি করে বাংলাদেশ টেলিকমিউনিকেশন রেগুলেটরি কমিশনকে নির্দেশ দিতে পারে যে আপনারা ইউটিউব এবং ফেসবুক থেকে এই রিপোর্ট সরিয়ে ফেলতে হবে?’
‘বিএনপির মরা গাঙে আর জোয়ার আসবে না’, গতকাল দেয়া আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের এমন বক্তব্যের সমালোচনা করে বিএনপির এই মুখপাত্র বলেন, ‘আওয়ী লীগ সাধারণ সম্পাদক অত্যন্ত সুরক্ষিত গৃহ থাকেন, যেখানে করোনা ভাইরাস ঢুকবে না। সেই গৃহ থেকে তিনি বলছেন, বিএনপির মরা গাঙ্গে আর জোয়ার আসবে না। মরা গাঙ তো আপনারাই তৈরি করেছেন। যাদের সাথে আপনাদের রক্তের সম্পর্ক, তারাই তো বাংলাদেশের গাঙ, নদী-নালান পানি প্রবাহ বন্ধ করে দিয়েছে। আপনি ঠিকই বলেছেন ওবায়দুল কাদের সাহেব, বিএনপি’র মরা গাঙ্গে জোয়ার আসবে না। কারণ, মরা গাঙ্গে এখন রক্তের স্রোত বয়, বিরোধীদলকে গুম খুন করে যে রক্ত ঝরিয়েছেন, সেই রক্তের স্রোত এখন শুকনা নদীতে প্রবাহিত হয়।’
ওবায়দুল কাদেরের উদ্দেশে রিজভী আরও বলেন, ‘আপনারা এখন প্রতিপক্ষ না পেয়ে নিজেরা নিজেরাই মারামারি করছেন, আপনার ছোট ভাইকে আপনি সামাল দিতে পারেন না। আপনার ছোট ভাই এখন বিবেকের তাড়নায় হোক অথবা পরিবারের মধ্যে লেনদেন নিয়ে কোন ঘাটতির কারণে হোক, সত্য কথাগুলো বলে দিচ্ছেন। তিনি বলছেন যে নির্বাচন ফেয়ার হয়নি, দিনের ভোট রাতে হয়েছে এটা কাদের মির্জা বলছেন যিনি আপনার ছোট ভাই। আমরা যে কথাগুলো প্রতিদিন বলছি জনগণ যে কথাটি নিজের চোখে দেখেছে সেই কথা এখন আওয়ামী লীগের নেতারা নিজেরাই বলছেন। তাদের এই ঝগড়াঝাঁটির মধ্যে নিরীহ সাংবাদিক মুজাককিরকে জীবন দিতে হলো। কাদের সাহেব আপনিতো প্রতিদিন বিএনপি’র বিরুদ্ধে বিষোদগার করেন এর উত্তর আপনি কি দিবেন? আপনার ভাই এবং আওয়ামী লীগের এক নেতার মধ্যে সংঘর্ষের সময় নিরীহ সাংবাদিক নিহত হলো এখন কোথায় মুখ লুকাবেন?
তিনি বলেন, ‘বেগম খালেদা জিয়া কিন্তু এখনো বন্দি, তারপরও নড়াইলের একটি আদালতে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করা হয়েছে। প্রতিহিংসার আগুনের শিখা এতই লেলিহান, এটা যেন এই সরকার এবং সরকার প্রধানের মন থেকে নিভেই না। যাকে কারাগার থেকে নিয়ে বাসায় বন্দি করে রাখা হয়েছে, তার সমস্ত মানবিক অধিকার হরণ করা হয়েছে। তারপরও নড়াইলের একটি আদালতে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করা হয়েছে। এটা একটা পৈশাচিক সরকার ছাড়া কেউ করত না। হিটলার মুসোলিনি সাদ্দাম এরা এই কাজগুলোই করতেন। বিরোধী দলকে নিশ্চিহ্ন করার জন্য যত ধরনের প্রথা পদ্ধতি দরকার, তারা প্রয়োগ করতেন। ঠিক একই কায়দায় এই অবৈধ সরকারও দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে তা করছে।’
দলীয় নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে গ্রেফতার ও মামলা দেওয়া প্রসঙ্গে বিএনপি’র এই শীর্ষ নেতা বলেন, আপনাদের কথা বলতে দেয়া হবে না। এই অধিকার তোমাদের নেই, এই অধিকার এখন কাদের আছে? যারা মাফিয়াতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করেছে, যারা লুটপাটের সাথে জড়িত, যারা বাংলাদেশ ব্যাংক লুট করেছে, সোনালী ব্যাংক লুট করেছে, বেসিক ব্যাংক লুট করেছে, যারা ক্যাসিনোর রাজত্ব করে তুলেছে তাদের অধিকার আছে। কিন্তু গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার জন্য যারা লড়াই-সংগ্রাম করবে তাদের অধিকার নেই। প্রেসক্লাবের সামনে বিনা উস্কানিতে বিএনপি’র নেতাকর্মীদের উপর আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী আক্রমন চালালো।’
তিনি আরও বলেন, ‘আওয়ামী লীগ হলো ধান ভাঙানোর কলের মতো। মুজিবের হত্যাকারীরা যদি আওয়ামী লীগ করে তাহলে তারা বৈধ হয়ে যাবে। কোন রাজাকার যদি আওয়ামী লীগ করে তারা বৈধ হয়ে যায়। নুরু রাজাকারকে মন্ত্রী বানিয়েছে এই আওয়ামী লীগই।’
আয়োজক সংগঠনের সদস্য এবং ছাত্রদলের সাবেক সভাপতি আজিজুল বারী হেলালের সভাপতিত্বে এবং সদস্য সচিব অ্যাডভোকেট নিপুন রায় চৌধুরীর সঞ্চালনায় প্রতিবাদ সভায় বিএনপি’র স্বেচ্ছাসেবক বিষয়ক সম্পাদক মীর সরাফত আলী সপু, সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক অ্যাডভোকেট আবদুস সালাম আজাদ, ঢাকা জেলা বিএনপি’র সভাপতি ডাক্তার দেওয়ান সালাউদ্দিন বাবু, সাধারণ সম্পাদক খন্দকার আবু আশফাক প্রমুখ বক্তব্য দেন।