অনির্বাচিত সরকার হটাতে ‘একদফা’ আন্দোলনের প্রস্তুতির আহ্বান, কর্মসূচী চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা
সরকার হটানোর ‘একদফা’ আন্দোলনের প্রস্তুতি নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছে বিএনপি। গতকাল বুধবার দুপুরে ঢাকায় এক বিক্ষোভ সমাবেশে দলের নেতারা এই আহ্বান জানান। জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে ঢাকা মহানগর দক্ষিণ ও উত্তরের যৌথ উদ্যোগে স্বৈরতন্ত্র ও মাফিয়াতন্ত্র পতন এবং স্বাধীনতার ঘোষক শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান বীর উত্তমের খেতাব বাতিলের সরকারি অপচেষ্টার প্রতিবাদে এই বিক্ষোভ সমাবেশ হয়।
ঢাকা মহানগরসহ বিভিন্ন অঙ্গসংগঠনের হাজার হাজার নেতাকর্মী এই সমাবেশে অংশ নেন। সকাল ১০টায় সমাবেশ শুরু হয়ে ১১টা ৫৪ মিনিটে শেষ হয়। সকাল ৯টা থেকে তোপখানা রোড, জাতীয় প্রেসক্লাব প্রাঙ্গণসহ আশ-পাশের এলাকায় ব্যাপক পুলিশ ও গোয়েন্দা সংস্থার সদস্য মোতায়েন করা হয়। পুলিশের এমন উপস্থিতির মধ্যেও সমাবেশে ব্যাপক নেতাকর্মীর উপস্থিতি দেখা গেছে। বরিশাল বিভাগ ছাড়া সারা দেশে মহানগর ও জেলায় একযোগে এই কর্মসূচি অনুষ্ঠিত হয়।
সমাবেশে বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আমান উল্লাহ আমান বলেন, ‘বিভিন্ন পৌরসভা-সিটি করপোরেশন নির্বাচনে কীভাবে ভোট ডাকাতি করছে। আমরা এই সরকারকে আর কোনো নির্বাচনের সুযোগ দেব না। নির্বাচন করে আবার ভোট ডাকাতি করে ক্ষমতায় আসবেন-এটা বাংলাদেশের হতে পারে না। আমরা বলতে চাই, সকলে ঐক্যবদ্ধ হয়ে রাজপথে নেমে জনগণের ভোটাধিকার প্রতিষ্ঠার জন্যে এক দফার আন্দোলনে শরিক হতে হবে। দলমত নির্বিশেষে সকলকে রাজপথে নেমে এই অবৈধ হাসিনার সরকারের পতন ঘটিয়ে নিরপেক্ষ নির্দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন করে জনগণের সরকার প্রতিষ্ঠা করতে হবে।’
আমান অভিযোগ করে বলেন, ‘এই সরকার গণতন্ত্র ধবংস করে দিয়েছে, জাতীয় সংসদ ধবংস করে দিয়েছে, নির্বাচনী ব্যবস্থাকে ধবংস করে দিয়েছে। গণতন্ত্রের মোড়কে এই সরকার একদলীয় শাসন ব্যবস্থায় আজকে পরিচালিত হচ্ছে। তাই আজকে জনগণকে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে। সকল দল-মতকে ঐক্যবদ্ধভাবে রাজপথে নেমে জনগণের ভোটাধিকার প্রতিষ্ঠা করতে হবে, গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার করতে হবে এবং এই সরকারের পতন ঘটাতে হবে।’
সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেন, ‘আজকের এই সমাবেশে সবাই বলেছেন, জিয়াউর রহমান এ দেশের মানুষের হৃদয়ের মধ্যে প্রতিমূর্তি। কয়েকজন মাফিয়া, কয়েকজন সন্ত্রাসী পান্ডা তার খেতাব কেড়ে নেবে কী নেবে না-এটা দিয়ে জিয়ার ঐতিহাসিক অবদানকে মুছে ফেলা যাবে না।’
যুগ্ম মহাসচিব সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল বলেন, ‘ক্ষমতাসীনদের বলতে চাই দয়া করে মনে রাখবে, বিএনপি হচ্ছে সেই গরম পানি যেই গরম পানিতে নরম ডিমকে শক্ত করে আবার শক্ত আলুকে নরম করে। যারা করেছেন যথেষ্ট করেছে, যথেষ্ট করেছেন। এবার থামেন।’
তিনি আরও বলেন, ‘যাদেরকে গ্রেপ্তার করেছেন তাদেরকে মুক্তি দেন। আজকেও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা যেখানে আপনাদের পাশে আমাদের নেতাকর্মীদের বসিয়ে রেখেছেন তাদেরকে দয়া করে ছেড়ে দেন, অল্প কয়েকজনকে আটকিয়ে রেখে আপনারা কিছু করতে পারবেন না। এই বারাসাতের মধ্যে ভেসে যাবে মাফিয়া সরকারের সমস্ত মাফিয়া এক এক করে। সেই দিন পর্যন্ত আমরা ক্লান্তহীনভাবে আন্দোলনের মধ্যে থাকবে।’
‘কর্মসূচি চলবেই’
সভাপতির বক্তব্যে ঢাকা মহানগর দক্ষিণের সভাপতি হাবিব উন নবী খান সোহেল বলেন, ‘আমাদের বহু মিছিলকে রাস্তায় বাধা দেওয়া হয়েছে, যাতে সমাবেশ আসতে না পারে। আমাদের ডানে এবং বামে সমস্ত জায়গায় প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করা হয়েছে, যাতে আমরা সমাবেশ করতে না পারি। এত ভয় কেন? আজকে আমাদের অনেক নেতাকর্মীকে গ্রেপ্তারও করা হয়েছে। আমরা বলতে চাই, অনতিবিলম্বে গ্রেপ্তারকৃতদের মুক্তি দিতে হবে। নইলে আমাদের সমাবেশ ও আমাদের প্রতিবাদ কর্মসূচি চলতেই থাকবে, এই কর্মসূচি থাকবে না।’
তিনি বলেন, ‘গত কয়েকদিন ধরে আমরা শহীদ জিয়ার খেতাব কেড়ে নেওয়ার প্রতিবাদ জানাচ্ছি। কারা সেই খেতাব কেড়ে নিতে চায়, যারা বেগ অ্যান্ড বেগেজ পাকিস্তানে চলে গিয়েছিল, যারা কলকাতার থিয়েটার রোডে হোটেলের রুমের মধ্যে যুদ্ধ করেছিল, তারা রনাঙ্গনের মুক্তিযোদ্ধা শহীদ জিয়ার খেতাব কেড়ে নিতে চায়। আরেক রাজশাহীর নেতা বলেছেন, শহীদ জিয়া নাকি এ দেশের লোকই ছিলেন না, আরেকজন বলেছেন, শহীদ জিয়া নাকি পাকিস্তানিদের সাথে যোগাযোগ রেখেছিলেন, আরেকজন বলেছেন, শহীদ জিয়া নাকি শেখ মুজিব হত্যাকাণ্ডের সাথে জড়িত। এসব আবোল-তাবোল কথা কারা বলে? পাগলরা বলে।’
হাবিব উন নবী খান সোহেলের সভাপতিত্বে এবং দক্ষিণের কাজী আবুল বাশার ও উত্তরের আবদুল আলীম নকির পরিচালনায় বিক্ষোভ সমাবেশে বিএনপির শহিদউদ্দিন চৌধুরী এ্যানি, নাজিমউদ্দিন আলম, আমিনুল হক, আবদুস সালাম আজাদ, নিপুণ রায় চৌধুরী, মহানগর শেখ রজিউল আলম রবি, ইউনুস মৃধা, এজিএম শামসুল হক, তানভীর আহমেদ রবিন, যুব দলের সুলতান সালাহউদ্দিন টুকু, রফিকুল আলম মজনু, এসএম জাহাঙ্গীর, স্বেচ্ছাসেবক দলের মোস্তাফিজুর রহমান, মৎস্যজীবী দলের আবদুস রহিম, শ্রমিক দলের সুমন ভুঁইয়া, ছাত্রদলের ফজলুর রহমান খোকন প্রমুখ নেতার।