ইয়েমেন নিয়ে ইরানি পরিকল্পনা
হুতিরা ইয়েমেনের দীর্ঘস্থায়ী গৃহযুদ্ধে একটি বড় পক্ষ। তারা সৌদি আরব ও সংযুক্ত আরব আমিরাতের বিপক্ষে ইরানের সাথে জোটবদ্ধ। ইয়েমেনের যুদ্ধটি অনেকাংশে গৃহযুদ্ধ থেকে অন্য দেশের প্রক্সি যুদ্ধে পরিণত হয়। সৌদি আরব ও সংযুক্ত আরব আমিরাত উভয়ই হুতিদের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে বিমান হামলা চালিয়ে আসছে আর তাদের বিপক্ষ শক্তিকে সহায়তা দিয়ে আসছে। অন্য দিকে ইরান হুতিকে (দৃশ্যত ইরানি প্রক্সি বাহিনী) সৌদি আরবে নিক্ষেপ করতে ক্ষেপণাস্ত্র সরবরাহ করে আসছে।
ইয়েমেন হলো মধ্যপ্রাচ্যে একটি কৌশলগত অবস্থানের দেশ। এটি সৌদি আরব এবং ওমানে শক্তি প্রয়োগ করতে পারে অথবা আরো শক্তিশালী মিত্রদের তা করার সুযোগ করে দিতে পারে। আরো গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো, ইয়েমেনের অবস্থান থেকে একটি কাল্পনিক শক্তি বাব এল মান্দের জলদস্যুতা বন্ধ করতে পারে এবং লোহিত সাগর বন্ধ করে দিতে পারে। প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, লোহিত সাগরে প্রবেশ এই অঞ্চলের জন্য বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ। ১৯৬৭ সালে মিসর ইসরাইলের সাথে ছয়দিনের যুদ্ধ শুরুর সময় তিরান প্রণালী বন্ধ করে ইসরাইলকে লোহিত সাগর থেকে প্রবেশে বাধা দেয়।
ইয়েমেন নিজে এই প্রণালী আটকানোর মতো অবস্থানে নেই, তবে আঞ্চলিক বিশৃঙ্খলা বপন করার চেষ্টায় বাইরের একটি পক্ষ হতে পারে এটি। আর যদি তা হয়ে থাকে তবে এটি মিসর, ইসরাইল এবং ইথিওপিয়াকে এমন একটি সঙ্ঘাতের দিকে টানতে পারে যা তারা নাও চাইতে পারে। আর সৌদি আরব ও ওমানকে হুমকির মুখে ফেলে পারস্য উপসাগরে আরবদের অবস্থান দুর্বল করে তুলতে পারে।
ইরানের নিজের জন্য ইয়েমেনের প্রয়োজন নেই। তবে স্বল্পমেয়াদে ইয়েমেন এমন একটি ভিত্তি যেখানে থেকে ইরান দৃশ্যত তার প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী সৌদি আরবের ওপর চাপ সৃষ্টি করতে পারে। করতে পারে সংযুক্ত আরব আমিরাতের ওপরও। যদি হুতিরা ইরানের সমর্থনে গৃহযুদ্ধে বিজয়ী হতে পারে, তবে তারা এ অঞ্চলে অস্থিতিশীলতা সৃষ্টি করতে পারবে। আর খুব কম সময়ে এই অঞ্চলে ক্ষমতার ভারসাম্য পরিবর্তন করে কিছু সুন্নি আরব শক্তিকে ইরানের সাথে সমন্বয় করার জন্য বাধ্য করতে পারে।
ইসরাইল সংযুক্ত আরব আমিরাত ও অন্য কয়েকটি আরব দেশের সাথে যে চুক্তি করেছে তা সৌদি আরবের সাথেও করতে চাইছে। ইরানি হুমকি যত বাড়বে সৌদিরা অভ্যন্তরীণ কারণে চুক্তিতে স্বাক্ষর না করলেও ইসরাইলের সাথে সম্পৃক্ত হবার দিকে এগিয়ে যেতে বাধ্য হবে বলে একটি ধারণা সক্রিয় রয়েছে। সুন্নি আরব রাষ্ট্রগুলোর অনেকে ইরানকে মারাত্মক হুমকি হিসেবে দেখে এবং তারা ইয়েমেনকে কেবল ইরানের সাথে একটি পরীক্ষামূলক যুদ্ধক্ষেত্র হিসেবেই দেখেনি, পাশাপাশি সিরিয়া ও ইরাক থেকে ইয়েমেন পর্যন্ত মূল স্বার্থের প্রত্যক্ষ আক্রমণ হিসেবে দেখেছে। সুন্নি আরব দেশগুলোর ইরানের ভয় মূলত পারমাণবিক অস্ত্র নিয়ে নয়, তারা যে বিষয়টিকে ভয় করে তা হলো সিরিয়া ও ইয়েমেনের মতো জায়গায় ইরানের অনুপ্রবেশ ও সাফল্যের ঘটনায় এই দেশগুলো এবং একই সাথে অন্যান্য দেশ ইরানের প্রভাব বিস্তারের ক্ষেত্রে পরিণত হবে। আর ইরান বাস্তবে যা চায় মধ্যপ্রাচ্যের সে প্রভাবশালী অবস্থান এটি তৈরি করে দেবে।