জিয়ার খেতাব বাতিল মানে বঙ্গবন্ধুকে অপমান করা: ঢাবি সাদা দল
বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা ও সাবেক রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের মুক্তিযুদ্ধের রাষ্ট্রীয় খেতাব ‘বীর উত্তম’ বাতিল করা মানে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে অপমান করা বলে মন্তব্য করেছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) বিএনপি-জামায়াতপন্থী শিক্ষকদের সংগঠন সাদা দলের নেতৃবৃন্দ।
বুধবার (১৭ ডিসেম্বর) দুপুরে জিয়াউর রহমানের রাষ্ট্রীয় খেতাব বাতিলে সরকারের উদ্যোগের প্রতিবাদে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অপরাজেয় বাংলার পাদদেশে আয়োজিত মানববন্ধনে এই মন্তব্য করেন তারা।
মানববন্ধনে সাদা দলের যুগ্ম-আহ্বায়ক অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ ছিদ্দিকুর রহমান খান বলেন, ‘প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের মুক্তিযুদ্ধের খেতাব কারও দয়ার দান নয়, এটা তার অর্জন। মুক্তিযুদ্ধে সর্বোচ্চ অবদান রেখেই তিনি এই খেতাব অর্জন করেছেন। যথার্থভাবেই বাংলাদেশ সরকার তাকে মূল্যায়িত করেছেন। এই খেতাব বাতিলে জামুকার আইনগত কোনো এখতিয়ার নেই। জামুকার অপতৎপরতার নিন্দা জানাই।’
মুক্তিযুদ্ধে জিয়ার অবদানের কথা স্মরণ করিয়ে তিনি বলেন, ‘শহীদ জিয়া জাতির ক্রান্তিকালে জাতিকে মুক্তির দিশা দিয়েছেন। যখন আওয়ামী লীগের নেতারা আত্মগোপনে চলে যান তখন শহীদ জিয়া উই রিভোল্ট বলে পাকিস্তানি বাহিনীর বিরুদ্ধে প্রথম বিদ্রোহ ঘোষণা করেন। তার নেতৃত্বে চট্টগ্রাম অঞ্চলে ব্যাপক প্রতিরোধ গড়ে তোলা হয়। তার নামে মুক্তিযুদ্ধে প্রথম ফোর্স গঠন করা হয়। জিয়ার নামের অদ্যাক্ষর দিয়ে ‘জেড‘ ফোর্স হয়। বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধকে প্রাতিষ্ঠানিক রূপ প্রদান ও জামুকা গঠন করেছে শহীদ জিয়া ও বিএনপির সরকার। শহীদ জিয়ার খেতাব বাতিলের আইনগত বৈধতা জামুকার আছে কি-না সে নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে।’
ড. মোহাম্মদ ছিদ্দিকুর রহমান খান বলেন, ‘অনেকেই এমনও বলছে- ক্ষমতাসীনদের সীমাহীন দুর্নীতি নিয়ে যখন আল জাজিরায় রিপোর্ট প্রকাশ হলো, সেটাকে চাপা দিতেই জিয়ার খেতাব বাতিলের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। যারা বলে জিয়া মানুষের ভাতের ও ভোটের অধিকার কেড়ে নিয়েছে। এর চেয়ে ইতিহাস বিকৃতি আর হয় না। তিনি তো দেশের প্রথম ভোটের মাধ্যমে নির্বাচিত প্রেসিডেন্ট। ভাতের অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য খাল খনন প্রকল্প বাস্তবায়ন করেছেন। শহীদ জিয়া তার কীর্তির মাধ্যমে জাতির হৃদয়ে বেঁচে থাকবেন আপন মহিমায়। তার খেতাব বাতিলের জন্য যারা অপতৎপরতায় লিপ্ত, তাদেরকে নিবৃত্ত থাকার আহ্বান জানাচ্ছি।’
পদার্থ বিজ্ঞান বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক এ বি এম ওবায়দুল ইসলাম বলেন, ‘জিয়াউর রহমানের খেতাব বাতিলের সিদ্ধান্ত নেয়ার মানে হচ্ছে বঙ্গবন্ধুকে অপমান করা। আজকের প্রধানমন্ত্রীর (শেখ হাসিনা) বাবা কি তাহলে ভুল করছিলেন, যে ভুল এখন তিনি সংশোধন করছেন। শহীদ জিয়া সেক্টর কমান্ডার ছিলেন, জেড ফোর্সের অধিনায়ক ছিলেন।’
তিনি আরও বলেন, ‘দেশে এখন দুটি মন্ত্রণালয় সক্রিয়। একটি জিয়া পরিবার দমন মন্ত্রণালয়, অপরটি দুর্নীতি দমন মন্ত্রণালয়। কিন্তু কোনো লাভ নেই, জিয়াউর রহমানের প্রতি মানুষের ভালোবাসা, বিএনপির প্রতি ভালোবাসা আছে থাকবে। এসব কার্যক্রম থেকে সরে দাঁড়ান, সঠিক ইতিহাস চর্চা করুন। না হলে আগামীতে আপনাদের খেসারত দিতে হবে।’
সভাপতির বক্তব্যে সাদা দলের আহ্বায়ক অধ্যাপক লুৎফর রহমান বলেন, ‘যে খেতাবটি দিয়েছিলেন শেখ মুজিবুর রহমানের সরকার। জামুকার দায়িত্ব ছিল সঠিক তালিকা তৈরি করা, মুক্তিযোদ্ধাদের পুনর্বাসন করা। ইতিহাস বিকৃত করার কারণে যারা জিয়াউর রহমানকে ভুলতে বসেছিল, সে প্রজন্ম আজ জেগে উঠেছে জিয়াউর রহমানকে জানার জন্য। বর্তমান সরকারকে বলব- আপনারা জামুকার এই সুপারিশে কর্ণপাত করবেন না, যদি করেন, আজ যেমন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা জেগে উঠেছে; তেমনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ও জেগে উঠবে।’
মানববন্ধনে অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন অধ্যাপক ড. ছিদ্দিকুর রহমান নিজামী, আবুল কালাম সরকার, ড. মামুন আহমেদ, অধ্যাপক আল মোজাদ্দেদী আলফেছানি, অধ্যাপক ড. সাইফুদ্দিন আহমেদ, অধ্যাপক শহিদুল ইসলাম, অধ্যাপক গোলাম রাব্বানী, অধ্যাপক আলমগীর হোসেন সম্রাট, অধ্যাপক শহিদুল ইসলাম, অধ্যাপক নুরুল আমিন, অধ্যাপক মোহাম্মদ সাইফুল্লাহ প্রমুখ।