সামনে বিএনপি ক্ষমতায় আসবে, এটা মাথায় রাখেন: শামসুজ্জামান দুদু
সরকারের প্রতি কড়া হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান ও কৃষকদলের আহ্বায়ক শামসুজ্জামান দুদু বলেছেন, ‘সামনে বিএনপি ক্ষমতায় আসবে, এটা মাথায় রাখেন। বিএনপির ব্যর্থতা মনে করার কিছু নেই। বিএনপিকে ২০০৬ বা ২০০৭ এ একটি ষড়যন্ত্রের মাধ্যমে সরানো হয়েছিল। কোনও ভোটের মাধ্যমে নয়। একবার যদি ভোট হয় আপনাদের অস্তিত্ব রক্ষা করাই কঠিন হবে।’
এসময় জিয়াউর রহমানের ‘বীর উত্তম’ খেতাব বাতিলের বিষয়ে জাতীয় মুক্তিযোদ্ধা কাউন্সিলের (জামুকা) নেয়া সিদ্ধান্তের তীব্র প্রতিবাদ জানান তিনি।
শুক্রবার (১২ ফেব্রয়ারি) দুপুরে জাতীয় প্রেসক্লাবে জাতীয়তাবাদী জিয়া প্রজন্ম দল আয়োজিত বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা ও সাবেক রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের রাষ্ট্রীয় খেতাব বাতিলের সিদ্ধান্তের প্রতিবাদে এক আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
শামসুজ্জামান দুদু বলেন, ‘বাঙালি বা বাঙালি জাতির নেতা হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী, মাওলানা ভাসানী, শেখ মুজিবুর রহমান ও জিয়াউর রহমান তাঁরা সকলেই পৃথিবী ছেড়ে চলে গেছেন। তাদের যা যা ভূমিকা তা ইতিহাসে লিপিবদ্ধ হয়েছে। আমরা আমাদের সেই পূর্বপুরুষদের সফলতা-ব্যর্থতা নিয়েই সামনের দিকে এগিয়ে যাই। তাঁদের এক এক জনকে আমরা তো এক এক রকমভাবে দেখতে পারি, কিন্তু তাদের যে অর্জন তা আমরা কেড়ে নেবো, ফেলে দেবো, পদদলিত করবো? বাঙালি ছাড়া পৃথিবীর অন্য কোনও জাতি তাদের শ্রেষ্ঠ সন্তানদের এভাবে অপমান করতে পারে, এটা আমার জানা নেই।’
বিএনপির এই শীর্ষ নেতা বলেন, ‘এ কোন বাংলাদেশ, যাঁরা বাংলাদেশ নির্মাণ করেছেন, সাহসিকতার সাথে যুদ্ধ করেছেন, বাংলাদেশ তাদেরকে অপমানিত করতে ছাড়ছে না। লজ্জার তো একটা সীমা থাকে, এ কোন বাংলাদেশে এসে আমরা দাড়িয়েছি? শহীদ জিয়াউর রহমান হচ্ছেন বাংলাদেশের অন্যতম বীর। শুধু যোদ্ধা বললে কম বলা হবে।’
বিএনপির এই ভাইস চেয়ারম্যান বলেন, ‘কোনও সরকারই শেষ সরকার নয়। তাহলে কি ভবিষ্যতে অন্য পদবীগুলো অন্যরা কেড়ে নেবে? এটা কোনও রাষ্ট্রীয় ব্যবস্থা হতে পারে? এই প্রধানমন্ত্রীর আমলে যেগুলো হচ্ছে এগুলো কি দ্বায়িত্বশীলতার ব্যাপার?’
প্রধানমন্ত্রীকে উদ্দেশ্য করে তিনি বলেন, ‘যে নেতাকে সবসময় অনুসরণ করা উচিত, যাঁর পরিচয় দিতে গেলে একটুও মিথ্যা কথা বলতে হবে না, যাকে অনুসরণ করে আপনার জীবনকে সুন্দর করতে পারেন, আপনি সেই নেতাকেই (জিয়াউর রহমান) ছোট করছেন। আমি যখন আপনাকে পদত্যাগের কথা বলি এর চেয়ে আর সত্যি কথা নেই। আল্লাহ কাউকে অমর করেন নাই, মানুষ তার কিছু কর্মের মধ্য দিয়ে ইতিহাসে বেঁচে থাকেন।’
শেখ হাসিনাকে উদ্দেশ্য করে দুদু আরও বলেন, ‘আপনি মনে হয় না বয়সে আমার থেকে খুব বেশি বড় হবেন। আপনি আওয়ামী লীগ করেন, আমি বিএনপি করি। আপনার ব্যর্থতাগুলো আমি তুলে ধরি। আমাকে জেলে দেন, মারেন-কাটেন যাই করেন, সত্যটা তো বলতেই হবে।’
ছাত্রদলের সাবেক এ সভাপতি বলেন, ‘শহীদ জিয়া ছোট হয়ে গেলে গণতন্ত্র ছোট হয়ে যায়, শহীদ জিয়া ছোট হয়ে গেলে স্বাধীনতা ছোট হয়ে যায়, শহীদ জিয়া ছোট হয়ে গেলে মুক্তিযুদ্ধ ছোট হয়ে যায়। এই কথাগুলো মাথায় রাখতে হবে। আপনি (শেখ হাসিনা) শহীদ জিয়াকে ছোট করছেন? কি বলবো- ‘গাধা’ বললে তো আপনারা অখুশি হবেন, ‘বুদ্ধিহীন’ বললেও তো অখুশি হবেন। শেরেবাংলা একে ফজলুল হক, জিয়াউর রহমান এদেরকে ছোট করবেন না। পারলে তাঁদের পদক আরও বাড়িয়ে দিন।’
নেতাকর্মীদের ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহ্বান জানিয়ে দুদু বলেন, ‘রাস্তায় নামতে হবে। এর কোনও বিকল্প নাই। গণতন্ত্রকে ফিরিয়ে আনতে হলে আন্দোলন-সংগ্রামের কোনও বিকল্প নাই। তাই আপনারা রাস্তায় নামার জন্য তৈরি হোন।’
আলোচনা সভায় আয়োজক সংগঠনের সভাপতি গিয়াস উদ্দীনের সভাপতিত্বে এবং কৃষকদলের কেন্দ্রীয় আহ্বায়ক কমিটির সদস্য কে এম রকিবুল ইসলাম রিপনের সঞ্চালনায় আলোচনা সভায় বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা হাবিবুর রহমান হাবিব, কৃষক দলের কেন্দ্রীয় আহ্বায়ক কমিটির সদস্য লায়ন মিয়া মোহাম্মদ আনোয়ার, কৃষকদলের কেন্দ্রীয় নেতা শাজাহান মিয়া সম্রাট, গোলাম সারোয়ার সরকার, মোক্তার আকন্দ প্রমুখ বক্তব্য দেন।