আল-জাজিরার প্রতিবেদন: জাতিসংঘের তদন্তের দাবি বিএনপির

0

বাংলাদেশকে নিয়ে আল-জাজিরায় প্রকাশিত প্রতিবেদনের অভিযোগ সম্পর্কে জাতিসংঘের তদন্তের দাবি জানিয়েছে বিএনপি। বুধবার (১০ ফেব্রুয়ারি) বিকেলে গুলশানে চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে আয়োজিত দলের স্থায়ী কমিটির এক সংবাদ সম্মেলনে স্থায়ী কমিটির সদস্য খন্দকার মোশাররফ হোসেন এই দাবি জানান।

তিনি বলেন, ‘আল-জাজিরার প্রতিবেদন শাসনের অভাবে মানবাধিকার লংঘন তথা দুঃশাসনের এক বিশাল ক্যানভাসের কেবলেই ক্ষুদ্র চিত্র। রাষ্ট্র ক্ষমতার চরম অপব্যবহার ও মাফিয়া সংস্কৃতির এক অতি ক্ষুদ্রাংশ, রাষ্ট্রযন্ত্রকে কুক্ষিগত করে ক্ষমতার দখলদারিত্ব অব্যাহত রাখার ভয়ানক প্রক্রিয়ার এক অতি ক্ষুদ্র ভগ্নাংশ এবং লাগামহীন সাগর সম দুর্নীতির একটি ট্রিপ অব দ্যা আইসবার্গ।

৭টি আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থাকে জাতিসংঘ এই বিষয়ে তাদের নিজস্ব পদ্ধতিতে যে তদন্তের আহ্বান জানিয়েছে এই সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে তার প্রতি বিএনপি পূর্ণ সমর্থন ঘোষণা করছে এবং জাতিসংঘকে তার নিজস্ব পদ্ধতিতে আল জাজিরার প্রতিবেদনে উল্লেখিত অভিযোগের বিষয়ে আশু তদন্তের আহ্বান জানাচ্ছে।’

খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, ‘একদিকে সরকার আল-জাজিরার পুরো প্রতিবেদনকেই মিথ্যা ও বানোয়াট বলে নাকচ করে দিয়েছে। অপরদিকে দায়সারাভাবে জাতিসংঘের কর্তৃক তদন্ত আহ্বানে অনাপত্তি জানিয়ে বলেছে, তদন্ত হতেই পারে, এ ব্যাপারে আমাদের কোনও আপত্তি নাই। আবার অন্যদিকে আল-জাজিরার বিরুদ্ধে মামলা করার হুমকি দিয়ে পররাষ্ট্র মন্ত্রী বলেন, সেখানে তথ্যগত ভুল আছে, সেগুলো আমরা তুলে ধরবো এবং আমরা মামলা করবো।’

তিনি বলেন, ‘আল-জাজিরার প্রতিবেদনে উল্লেখিত অভিযোগগুলোর সত্যতা যাচাই না করেই সরকার প্রতিবেদনটিকে ঢালাও ভাবে ‘মিথ্যা ও বানোয়াট’ হিসেবে আখ্যায়িত করেছে। অথচ সঠিক তথ্যের প্রকাশই হচ্ছে ভুল তথ্যের জবাব। আর অপ্রচার থেকে

ভাবমূর্তি পুনরুদ্ধারের উপায়ও হচ্ছে আসল সত্য তুলে ধরা। কিন্তু সরকার প্রতিবেদনের মূল বিষয় বস্তু উহ্য রেখে খন্ডিত তথ্য অথবা প্রান্তিক বিষয়ের ওপর ভর করে ‘ষড়যন্ত্রের তত্ত্ব’ প্রকাশ করে চলছে। যদিও তথ্যচিত্রটি সম্প্রচারের আগে অভিযুক্তদের আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগ দেয়া হয়েছিল যা তারা উপেক্ষা করেছে।’

‘সেনাবাহিনী আমাদের গর্ব’
মোশাররফ হোসেন বলেন, ‘বাংলাদেশ সেনাবাহিনী দেশের গর্ব। ১৯৭১ সালের ২৬ মার্চ পাকিস্তান হানাদার বাহিনীর বিরুদ্ধে সশস্ত্র বিদ্রোহের মাধ্যমে গড়ে উঠা বাংলাদেশ সেনাবাহিনী আমাদের অহংকার। নানা প্রাকৃতিক দুর্যোগ ও জাতীয় সংকটে অকাতরে কাজ করে যাওয়া দেশপ্রেমিক বাংলাদেশ সেনাবাহিনী তথা প্রতিরক্ষা বাহিনী সর্বদা জনগণের প্রশংসা কুড়িয়েছে। কোনও ব্যক্তি বা গোষ্ঠীর দুর্নীতি বা নৈতিকতা বিবর্জিত কর্মের কারণে রাষ্ট্রের সংবেদনশীল এই মহান প্রতিষ্ঠানের ভাবমূর্তি ক্ষুন্ন হওয়া কোনও ভাবেই মেনে নেয়া যায় না।’

তিনি আরও বলেন, ‘আল-জাজিরার প্রতিবেদনে প্রচারিত অভিযোগসমূহে উল্লেখিত অনেক বিষয় নিঃসন্দেহে দেশের প্রচলিত আইন অনুযায়ী গুরুতর ফৌজদারি অপরাধ। দেশে ও দেশের বাইরে একাধিক দেশে এই সব অপরাধ সংগঠিত হওয়ার সংবাদের কারণে উল্লেখিত অভিযোগসমূহ আন্তর্জাতিক ফৌজদারি অপরাধে রূপ লাভ করেছে।’

তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশ সরকার জাতিসংঘ শান্তি মিশনের জন্য হাঙ্গেরি থেকে আড়িপাতার যন্ত্রপাতি আমদানির কথা ইতোমধ্যেই স্বীকার করেছে। কিন্তু জাতিসংঘ পরিষ্কার ভাষায় তা নাকোচ করে দিয়েছে। এখন জনমনে প্রশ্ন অবৈধভাবে আমদানিকৃত ওইসব আড়িপাতা ও নাগরিকের ব্যক্তিগত গোপনীয়তার অধিকার লঙ্ঘনের সরঞ্জামাদি কাদের বিরুদ্ধে ব্যবহার করা হচ্ছে?

জনশ্রুতি আছে যে, এ সকল সরঞ্জামবিরোধী জনমতকে দমন করার কাজে ব্যবহার করে নাগরিক অধিকার তথা মানবাধিকারের মত সাংবিধানিক মৌলিক অধিকার লঙ্ঘন করে চলছে সরকার। যা গণতন্ত্র হত্যা তথা সংবিধান লঙ্ঘনজনিত অপরাধের শামিল।’

‘শান্তিরক্ষা মিশনের বৃহত্তর অংশীদারিত্ব নিয়ে শঙ্কা’

মোশাররফ হোসেন বলেন, ‘সেনাবিহিনী তথা প্রতিরক্ষা বাহিনী জাতীয় ঐক্যের গর্বিত প্রতীক। প্রতিরক্ষা বাহিনীকে সকল বিতর্কের উর্ধ্বে রেখে তার স্বচ্ছ ভাবমূর্তি বজায় রাখা দলমত-নির্বিশেষে আমাদের সকলের নৈতিক দায়িত্ব।’

তিনি আরও বলেন, ‘গোপনীয়তা লংঘনে আড়িপাতার সিগন্যাল সরাঞ্জামাদি আমদানির ক্ষেত্রে জাতিসংঘের নাম ব্যবহারের সরকারী ব্যাখ্যা জাতিসংঘ কর্তৃক বাতিল হওয়ার পর জাতিসংঘের শান্তিরক্ষা মিশনের বৃহত্তম অংশীদার হিসেবে ওই দায়িত্বে বাংলাদেশের সংশ্লিষ্টতাই এখন অনিশ্চয়তার মুখে পড়বে বলে আমরা আশঙ্কা করছি। এরূপ আশঙ্কার মধ্যেই জাতীয় ঐক্যের প্রতীক আমাদের প্রতিরক্ষা বাহিনী তথা আমাদের মাতৃভূমি বাংলাদেশ হারিয়ে ফেলতে পারে তার আন্তর্জাতিক গ্রহণযোগ্যতা, ভাবমুর্তি এবং প্রাসঙ্গিকতা।’

এতে দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, নজরুল ইসলাম খান, আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, সেলিমা রহমান ও ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু উপস্থিত ছিলেন।

সংবাদ সম্মেলনের পর দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের সভাপতিত্বে জাতীয় স্থায়ী কমিটির বৈঠক হয়। এতে সিঙ্গাপুর থেকে দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরসহ খন্দকার মোশাররফ হোসেন, জামির উদ্দিন সরকার, মির্জা আব্বাস, গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, আবদুল মঈন খান, নজরুল ইসলাম খান, আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, সেলিমা রহমান ও ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু উপস্থিত ছিলেন।

তুমি এটাও পছন্দ করতে পারো

উত্তর দিন

আপনার ইমেইল ঠিকানা প্রচার করা হবে না.

WP2Social Auto Publish Powered By : XYZScripts.com