নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের এই অগ্নিমূল্য জনজীবনকে চরমভাবে বিপর্যস্ত করে ফেলেছে :মির্জা ফখরুল
প্রেসকনফারেন্স — দ্রব্যমূল্যের উর্দ্ধগতি নিয়ন্ত্রণে সরকারের ব্যর্থতার প্রেক্ষিতে
বিএনপি’র মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর মঙ্গলবার, ডিসেম্বর ৩, ২০১৯, নয়া পল্টন কেন্দ্রীয় কার্যালয় সংবাদ সম্মেলন করেন।
সংবাদ সম্মেলনে বিএনপি মহাসচিব প্রদত্ত বক্তব্যের পূর্ণপাঠ নিচে দেয়া হল —
ডিসেম্বরের মহান বিজয়ের মাসে আপনাদের মাধ্যমে দেশবাসিকে শুভেচ্ছা।
দেশবাসীর কাছ থেকে তাদের ভোটারধিকার আর নাগরিক মর্যাদাই এই ফ্যাসিবাদ স্বৈরাচার সরকার ছিনিয়ে নেয়নি, এমনকি তাদের দৈনন্দিন জীবনের সুখ-শান্তিও আজ একের পর এক কেড়ে চলেছে এই ভোটারবিহীন গণবিরোধী সরকার। ২৯ ডিসেম্বরের প্রহসনমূলক “মিডনাইট নির্বাচন’’ পরবর্তী রাজনৈতিক সংকট, পাহাড়প্রমাণ দুর্নীতির চিত্র এবং গুম, খুন ও ধর্ষণের ঘটনায় গোটা রাষ্ট্র যখন গণতন্ত্র ও আইনবিহীন হয়ে পড়েছে তখন তার স্বাভাবিক ধারাবাহিকতায় নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের বাজার নিয়ন্ত্রণেও সরকার ব্যর্থ হয়েছে। যার সর্বশেষ প্রমাণ পেঁয়াজ, চাল, ডাল, তেল, লবণ থেকে শুরু করে সকল নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যের অসহনীয় মূল্যবৃদ্ধি।
নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের এই অগ্নিমূল্য লাগাতারভাবে আমাদের সাধারণ জনজীবনকে চরমভাবে বিপর্যস্ত করে ফেলেছে সে বিষয়ে বর্তমান ভোটারবিহীন অবৈধ সরকারের ব্যর্থতা ও উদাসীনতা বিষয়ে দেশবাসীকে অবগতকরণের অংশ হিসেবেই আজ আমরা আপনাদের সামনে উপস্থিত হয়েছি।
পেঁয়াজের দুর্মূল্য নিয়ে গত মাস কয়েক যাবৎ আমরা কথা বলছি। দেশের সকল গণমাধ্যমে এ বিষয়ে প্রতিদিন রিপোর্ট বের হচ্ছে। সরকার প্রধান নিজেও “পেঁয়াজ বিমানে উঠে গেছে, আর কোনো সমস্যা নাই’’ বলেই এয়ার শো দেখতে দুবাই থেকে ইডেনে গার্ডেন হয়ে এখন আবার মাদ্রিদ শহরে ঘুরে বেড়াচ্ছেন। আর এদিকে পেঁয়াজের ঝাঁজ এখন চাল, ডাল, লবণ, তেল, আদা, রসুন শুরু করে শীতকালীন সকল সবজিতে সংক্রমিত হয়েছে। মোটকথা দৈনন্দিন জীবনে রান্নার জন্য ব্যবহৃত প্রতিটি জিনিষের দাম সাধারণ মানুষের ক্রয়সীমানার বাইরে চলে গেছে। পরিস্থিতি কতটা ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে তা গত কয়েক দিনে প্রকাশিত কিছু সংবাদ শিরোনামই পরিষ্কার করে।
প্রিয় সাংবাদিক বন্ধুরা,
বর্তমান অবৈধ সরকার পেঁয়াজের দাম নিয়ন্ত্রণে ব্যর্থ হয়ে জনগণকে পেঁয়াজ খেতে নিষেধ করছে। তাহলে চালের মূল্য কেজিতে ১০ থেকে ১৫ টাকা, আটার মূল্য ৫ থেকে ১০ টাকা বৃদ্ধির পরিপ্রেক্ষিতে তারা এখন কি বলবেন! ভাত খাওয়া বন্ধ করে দিতে? রুটি খাওয়া বন্ধ করে দিতে? ভোজ্যতেলের দাম বেড়েছে, সুতরাং তেল খাওয়াও কি বন্ধ করে দিতে হবে?
আপনাদের কি মনে হয় এটা সরকারের দায়িত্বের মধ্যে পড়ে না? বন্ধুগণ কোনো সরকার যারা জনগণের ভোটের মাধ্যমে নির্বাচিত হয়ে জনগণের সমস্যা সমাধানের দায়িত্ব নেন তারা একথা কখনোই বলতে পারেন না।
আপনাদের সকলের নিশ্চিত মনে আছে, এই সরকারের প্রধানমন্ত্রী ২০০৮ সালের নির্বাচনের বিভিন্ন জনসভায় এবং আওয়ামীলীগের প্রচার প্রপাগান্ডায় লাগাতারভাবে প্রচার করেছে,“১০ টাকা সের চাউল খাওয়াবো, ঘরে ঘরে চাকুরী দেবো। ”
অতএব, আমরা দ্ব্যার্থহীন ভাষায় বলতে চাই, বাজারে দ্রব্যমূল্যে বাড়লে নিয়ন্ত্রণের দায়িত্ব সম্পূর্ণরূপে সরকারের ! জনগণ কী খাবে ! কী খাবে না তা নির্ধারণের দায়িত্ব সরকারের না! এর ব্যত্যয় ঘটার কোনো সুযোগ নাই। যদি এর ব্যত্যয় ঘটে তাহলে পরিষ্কারভাবে বুঝতে হবে সরকার বাজার নিয়ন্ত্রণে সম্পূর্ণভাবে ব্যর্থ। বর্তমানে আমাদের দৈনন্দিন নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যের যে লাগামহীন মুল্যবৃদ্ধি ঘটেছে তার একটাই কারণ !সেটা হচ্ছে, এই সরকার জনগণের সরকার নয়! এইসরকার একটি ভোট ডাকাত সরকার ! তাই জনগণের জীবনযাত্রা নিয়ে তাদের কোনো মাথাব্যথা নাই। ফলশ্রুতিতে বাজারে নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিসের দাম এখন জনগণের ক্রয়সীমার নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে গেছে। পরিস্থিতি কতটা ভয়াবহ তা গত কয়েক দিনের বিভিন্ন নিত্য প্রয়োজনীর দ্রব্যের মূল্য তালিকা দেখলেই প্রতীয়মান হবে।
প্রতি কেজি চাল ৫৯ থেকে ৬০ টাকা।
মোটা চালের কেজিপ্রতি ৩৬ থেকে ৩৭ টাকা ।
প্রতি কেজি চিনির দাম বেড়েছে ১০ থেকে ১২ টাকা,
প্রতি কেজি ডালডার দাম বেড়েছে ১৫ থেকে ১৬ টাকা,
প্রতি লিটার পামঅয়েলের দাম বেড়েছে ১৬ থেকে ১৭ টাকা
প্রতি কেজি ময়দার দাম ১০ টাকা বেড়েছে।
ভোজ্যতেলের দাম ১৬ থেকে ২০ টাকা, ইত্যাদি
এছাড়া শীতকালীন সব্জির অগ্নিমূল্যের চিত্রঃ
শিম ৬০ থেকে ৭০ টাকা,
প্রতি পিস ফুলকপি ৪০ থেকে ৫০ টাকা,
বাঁধাকপি ৪০ থেকে ৫০ টাকা,
মুলার কেজি ৪০ থেকে ৫০ টাকা।
প্রতি কেজি শশা ৯০ থেকে ১০০ টাকা,
করলা ১০০ থেকে ১২০ টাকা,
আধাপাকা টমেটো ১২০ টাকা,
কাঁচা টেমেটো ৮০ টাকা,
নতুন আলু ৮০ থেকে ১০০ টাকা,
ধনেপাতা ১৫০ থেকে ২০০ টাকা
বরবটি ৯০ টাকায় বিক্রি হয়।
শালগম ৬০ থেকে ৭০ টাকা,
পেঁপে ৩০ টাকা,
লেবুর হালি ২০ থেকে ৩০ টাকা,
চিচিঙ্গা ৬০ থেকে ৭০ টাকা,
ঢেঁড়স ৬০ টাকা,
কচুর লতি ৬০ টাকা,
ধুন্দুল ৬০ টাকা ও
কচুরমুখী ১০০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হয়।
প্রিয় সাংবাদিক বন্ধুরা,
উল্লেখিত পণ্যের বাজার-মূল্য সম্পর্কে আমরা এখানে উপস্থিত সবাই ওয়াকিবহাল। বাজার থেকে খাবার টেবিল এই দুইটি জায়গার বাস্তবচিত্রই ঘুরেফিরে আমাদের সামনে আসে। তবে দ্রব্যমূল্যের ভয়াবহতায় মানুষের জীবন কতটা দুর্বিষহ হতে পারে তার পুরোটা আমাদের জানা সম্ভবই হয় না। বর্তমান বাজার পরিস্থিতিতে সাধারণ মানুষ কতটা অসহায় তার একটা উদাহরণই তাদের মানবেতর জীবনযাত্রা সম্পর্কে ধারণা দিতে সক্ষম। দ্রব্যমূল্যের উর্ধবগতিতে গ্রাম থেকে আসা এক শিক্ষার্থীর সহজ স্বীকারোক্তি হচ্ছে এরকম- “বাজারে সব্জির মূল্য বৃদ্ধির ফলে সব্জি খাওয়া বন্ধ করে দিয়েছি। কারণ বাজারে এমন কোনো সব্জি নাই যার মূল্য ৮০ থেকে ১০০ টাকার নীচে ! এমন কি পেঁয়াজ পাতার দামও হচ্ছে কেজিতে ১০০ টাকা।” প্রশ্ন ছিলো তাহলে তাদের খাদ্য তালিকায় কী থাকে। উত্তর ছিলো ডিম এবং যথারীতি এক বাটি পানি সমৃদ্ধ ডাল! তাও ১ টা ডিম দুজনে ভাগ করে খায়!
প্রিয় সাংবাদিক বন্ধুরা,
দ্রব্যমূল্যের এই ভয়াবহ পরিস্থিতিতে এটাই হচ্ছে বাস্তব চিত্র ! আর এই হচ্ছে আমাদের বর্তমান ভোটারবিহীন সরকারের দেশকে মধ্যম আয়ের দেশে পরিণত করার অসহনীয় ফলাফল !
আমাদের দৈনন্দিন জীবনের এই ভয়াবহ চিত্র রূপায়িত করার জন্য যারা দায়ী তারা হচ্ছেন, বর্তমান ভোটারবিহীন অবৈধ সরকার। তাদের দুর্নীতি, টাকাপাচার, লুটপাটের মাধ্যমে পাহাড়সমান সম্পদ অর্জনের ফলশ্রুতিতে দৈনন্দিন নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যের মূল্যবৃদ্ধি আকাশ্চুম্বি হয়েছে । এর পেছনে প্রধান কারণ অবশ্য দ্রব্যমূল্যের ভয়াবহতার নূন্যতম আঁচ তাদের উপর লাগেই না।
কারণ আপনার আমার সহ এদেশের খেটে খাওয়া মানুষের শ্রমে, ঘামে অর্জিত ট্যাক্সের টাকার শতকরা ৩৬% পাচারকৃত অর্থই গত ১ বছরে ৪৩৭% পেঁয়াজের মূল্যবৃদ্ধির ঝাঁজ থেকে রক্ষা করছে। এবং দক্ষিণ এশিয়ার সর্বাধিক ঘুষের টাকা এদের পকেটেই যাচ্ছে। (আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক ঘুষবিরোধী ব্যবসায়িক সংগঠন ট্রেস প্রকাশিত প্রতিবেদন মোতাবেক দক্ষিণ এশিয়ায় সবচেয়ে বেশি ঘুষের ঝুঁকিতে বাংলাদেশ)
প্রিয় সাংবাদিক বন্ধুরা,
পৃথিবীর সমগ্র দেশেই কখনো কখনো মানুষের নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিসের মুল্য বাড়ে। কিন্তু পার্থক্য হচ্ছে, দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধির সাথে সাথেই বা বাড়ার আগেই সরকারের কাজ হচ্ছে বাজার নিয়ন্ত্রণে কার্যকরী পদক্ষেপ গ্রহণ করা । যার ফলশ্রুতিতে বাজার খুব তারাতারি নিয়ন্ত্রণের মধ্যে আসে। তবে এক্ষেত্রে যে বিষয়টা গুরুত্বপূর্ণ তা হচ্ছে, সরকার, ব্যবসায়ী উৎপাদকের মাঝে গভীর সমন্বয় সাধন করা। সেটা তখনই সম্ভব হবে যখন একটা দক্ষ ও গণবান্ধব সরকার দেশ পরিচালনার দায়িত্বে থাকবে । সে প্রেক্ষিতে দ্রব্যমূল্যের বর্তমান অস্বাভাবিক বৃদ্ধির প্রধান ও অন্যতম কারণ হচ্ছে বর্তমান অবৈধ ভোটারবিহীন ফ্যাসিবাদ সরকার। যার যাত্রা শুরু ১/১১ নামধারী অগণতান্ত্রিক সরকারের সময় কাল থেকে। এবং তাদের প্রেতাত্মা বর্তমান অবৈধ সরকার ২০০৯ সালের জানুয়ারি থেকে সেই ধারাবাহিকতা রক্ষা করে চলেছে।
অর্থনীতির স্বাভাবিক নিয়ম অনুযায়ী, পণ্যের সরবরাহ কমলে দাম বাড়ে এবং সরবরাহ বাড়লে দাম কমে। বাজারে যেসব পণ্যের দাম বেড়েছে, পেঁয়াজ ছাড়া কোনোটির সরবরাহে কোনো ঘাটতি নেই। সরকারের একাধিক নিয়ন্ত্রক সংস্থা ‘মুক্তবাজার অর্থনীতি’র দোহাই দিয়ে বাজার ব্যবস্থাপনাকে সবচেয়ে কম গুরুত্ব দেয়ায় এমনটি হয়েছে। জনসংখ্যার হিসাবে দেশে খাদ্যপণ্যের প্রকৃত চাহিদা নিরূপণ করতে পারেনি মন্ত্রণালয়গুলো। ফলে নিত্যপণ্যের বাজারের পুরো ব্যবস্থাপনা বহুমুখী ও ক্রমবর্ধমান সঙ্কটে পড়েছে। নিয়ন্ত্রণহীন হয়ে পড়ছে বিভিন্ন পণ্যের দাম।
আপনারা সকলেই জানেন, অর্থনীতির স্বাভাবিক নীতিমালা এবং সরকারের দক্ষতার উপরই নির্ভর করে মূলতঃ দ্রব্যমূল্যের সার্বিক অবস্থা। এ প্রসঙ্গে নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে বর্তমান অবৈধ ভোটারবিহীন সরকার যে সম্পুর্ণ ব্যর্থ তা আমাদের প্রিয় নেত্রী দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার নেতৃত্বাধীন সময়কালীন সরকারের দ্রব্যমূল্যের সার্বিক চিত্রের সাথে বর্তমান ফ্যাসিবাদ দখলদার সরকারের সময়কালের মুল্য তালিকা তুলে ধরলে সমগ্র বিষয়টি আরো সুস্পষ্ট হবে।
নিম্নে টিসিবি ও বিভিন্ন জাতীয় দৈনিকের তথ্য অনুযায়ী নিত্য প্রয়োজনীয় কয়েকটি পণ্যেও দাম বৃদ্ধির একটি তুলনামূলক চিত্র দেয়া হলঃ
ক্রমিক নং পণ্যের নাম
(কেজি/ লিটার) ১২-০৯-২০০৬ (টাকার অংকে) ১৬ -০৫ -২০১৭ ০১-১২-২০১৯ বাজারে প্রকৃত দাম
(সুপার সপ) হ্রাস/বৃদ্ধি ২০০৬ এর সাথে ২০১৯
১. মোটা চাল ১৭.৫০ ৪২-৪৫ ৩৪-৪০ ৩২-৪০
২. সরু চাল ২৪.৫০ ৫০-৫৬ ৪৮-৬০ ৫৫-৫৮
৩. পিঁয়াজ ৮-২০ ২৫-৩২ (দেশী)
২০-২৫ (বিদেশী) ২২০-২৩০ (দেশী)
১৩০-২০০ (বিদেশী) ২৪০
৪. সয়াবিন তেল (বোতল)
সয়াবিন তেল (লুজ)
পাম অয়েল ৫৫
৪৮
৩৯-৫২ ১০০-১০৬ ৯৫-১১০
৮০-৮৫
৭০-৭৫ ১০০
৫. গরুর গোশত ১৪০-১৫০ ৫০০ ৫৩০-৫৫০ ৫৬৫
৬. খাসির গোশত ২৩০ ৭০০-৮০০ ৮১৫
৭. ইলিশ (প্রতি কেজি) ২৮০ (বড় সাইজ) ৬০০-১০০০ ১৫০০
৮. গুঁড়া দুধ ২৮৫-৩৪৫ ৫৮০ ৫৯০-৬১০ ৬৩০
৯. দেশি মশুর ডাল ৪৫-৬০ ৮০-১৪০ ১০০-১১০ ১২০
১০. নেপালি মশুর ডাল ৪৫ ১২০-১২৫ ১৩০
১১. মুরগী (ব্রয়লার) ৭০ ১৫০-১৫৫ ১১০-১২০ ১২৫
১২. মুরগী (দেশী) ১৮০ ৪০০-৫৫০ ৭৩০
১৩. আটা ১৭ (খোলা)
২০ (প্যাকেট) ২৪-২৮
৩০-৩২ ২৮-৩২
৩৪-৩৫ ৩৪
৪২
১৪. ময়দা ২১ (খোলা)
২৬ (প্যাকেট) ৩৪-৩৬
৪০-৪২ ৩৭-৪০
৪৫-৪৮
৪৬
১৫. ফার্মের ডিম (প্রতি হালি) ১১ ২৬-২৮ ৩৪-৩৫ ৩৬
১৬. দেশি মুরগীর ডিম (প্রতি হালি) ১১-১২ ৭২
১৭. হাসের ডিম ১২ ৭০
১৮. আলু ৬ ১৫- ২০ ২৮-৩০ ৩০
১৯. মুগ ডাল ৩০-৩২ ১০০-১২০ ৯০-১৩০ ১২০
২০. লবন ১৮ ২৫-৩৮ ২৫-৩৫ ৩৫
২১. চিনি ৩৭ ৬৫-৬৮ ৫৮-৬০ ৬০
২২. ছোলা ৩৫ ৭০-৮০ ৭৬
২৩. রসুন ২০ ১৮০-২১০ ১৬০-১৮০ ২০৪/২৭৪
২৪. হলুদ ৭০ ১৬০-২৫০ ৪৮০
২৫. এলাচ ৩৮০০
উপরোক্ত দাম বিশ্লেষণ করলে দেখা যায় বিগত ১৩ বছরে জিনিষপত্রের মূল্য গড় হিসেবে বেড়েছে দিগুনেরও বেশি। অনেক জিনিসের মূল্য বেড়ে ৩ গুণ হয়েছে। অথচ এসেনসিয়াল কমোডিটিস এ্যাক্ট অনুযায়ী সরকার ১৭টি নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের মূল্য নির্ধারণ করে দিতে পারে। এই সরকারের প্রতিশ্রুত ১০ টাকার চাল আমজনতা খেয়েছে ৭০ টাকায়।
পেঁয়াজের কৃত্রিম সংকটকে পুঁজি করে অতি মুনাফালোভী সরকারদলীয় ব্যবসায়ী গোষ্ঠী, আমদানিকারক, আড়তদার, মজুদদার ও খুচরা ব্যবসায়ী সিন্ডিকেট পেঁয়াজের দাম অস্বাভাবিক বৃদ্ধি করে ভোক্তাদের পকেট থেকে হাতিয়ে নিয়েছে শত শত কোটি টাকা। চাল, তেল, ডিম, আদা, রসুন, ময়দা, মরিচ, হলুদ, মসলা, চিনিসহ অধিকাংশ নিত্যপণ্যের দাম।
যে দেশে গুরুতর দুঃসংবাদ ছাড়া সংবাদমাধ্যম জনমনে সাড়া ফেলতে পারে না, সেই দেশের সংবাদমাধ্যমে একটা চাঞ্চল্য সৃষ্টিকারী চরিত্র হিসেবে কিছুদিন ধওে পেঁয়াজের দৌরাত্ম্য লক্ষ্যনীয় । এ বিষয়ে সর্বশেষ খবর হলো, বাংলাদেশের বাজারে পেঁয়াজের দাম ইতিহাসের সর্বোচ্চ রেকর্ড গড়েছে।
বর্তমান সরকার একদিকে মুক্ত বাজারের দর্শনে বিশ্বাসী, অন্যদিকে নিজস্ব দলীয় ব্যবসায়ীদের স্বার্থ রক্ষায় আগ্রহী। দলীয় ব্যবসায়ীদের দ্বারা তৈরি ব্যবসায়ী জোট ভাঙতে না পারলে, টিসিবিকে শক্তিশালী ও সক্রিয় না করতে পারলে, দলীয় লোকজন দ্বারা পরিবহনের চাঁদাবাজি বন্ধ না করতে পারলে এবং মধ্যস্বত্বভোগের ব্যবস্থা বন্ধ না করতে পারলে দ্রব্যমূল্য হ্রাস করা সম্ভব হবে না। বক্তৃতা-বিবৃতি ও লোক দেখানো ভ-ামি দ্বারা আর যাই হোক, দ্রব্যমূল্য হ্রাস বা অর্থনৈতিক সমস্যার সমাধান সম্ভব নয়।
সরকার ও ব্যবসায়ীদের সদিচ্ছার ওপরই নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসের মূল্য নির্ভরশীল। খাদ্য নিরাপত্তার সঙ্গে সামাজিক নিরাপত্তার সম্পর্ক রয়েছে। খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে সব সিন্ডিকেটের বিরুদ্ধে দ্রুত ব্যবস্থা নিতে হবে। জনগণের প্রতি দায়বদ্ধতা থেকে নিত্যপণ্যের দাম নিয়ন্ত্রণ রাখতে সরকার দ্রুত উপযুক্ত ব্যবস্থা গ্রহণ করবে-এটাই জনগণের দাবি। কিন্তু বর্তমান মিডনাইট সরকারের বাংলাদেশের জনগণের প্রতি কোন দায়বদ্ধতা নেই। কারণ তাদের সরকার গঠনের জন্য জনগণের ভোটের কোন দরকার হয়নি এবং আগামী নির্বাচনে তাদের জনগণের ভোটের কোন দরকার নেই। তারা নির্বাচনের খোলসে দলীয় আইন-শৃংখলা বাহিনী ও প্রশাসনের ঘাড়ে ভর করে গায়ের জোরে পুনরায় সরকার পঠন করতে চায়। কিন্তু জনগণ তাদের এই গণবিরোধী ষড়যন্ত্র আর বরদাশত করবে না। একটি নির্বাচনকালীন নিরপেক্ষ সরকারের তত্বাবধানে আগামী নির্বাচনে ঐক্যবদ্ধভাবে তারা তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করে এই স্বৈরাচারী, জালিম সরকারকে উচিত শিক্ষা দেবে।
দ্রব্যমূল্যের এই অস্বাভাবিক মূল্য বৃদ্ধির পেছনে যেসব বিষয় ও ঘটনা প্রধান অনুঘটক হিসেবে ভূমিকা রেখে আমাদের সাধারণ সমগ্র জনজীবনকে বিপর্যস্ত করে ফেলেছে তার মধ্যে প্রধান কারণ হচ্ছে জগদ্দল পাথরের ন্যায় জাতির ঘাড়ে বর্তমান ভোটারবিহীন সরকারের লাগাতার দখলদারিত্ব। অবৈধ দখলদার সরকার রাষ্ট্রযন্ত্রকে ব্যবহার করে সমাজের সকল ক্রিয়াশীল অংশকে বিকল করে রেখেছে। যার ফলশ্রুতিতে সমাজে নিয়তই বেড়ে চলেছে ঘুষ, দুর্নীতি, টাকা পাচার, লুটপাট, চাঁদাবাজি, সিন্ডিকেট বাণিজ্য। ঠুটো জগন্নাথ পার্লামেন্ট কেবলই সরকারের ক্ষমতার একটি লেবাস। ফলে সরকারের নেই কোন জবাবদিহিতা জনগণের প্রতি নেই কোন দায়বদ্ধতা। আর এই জবাবদিহিতা বিহীন পরিস্থিতি নিশ্চিত করতেই দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে অন্যায় ভাবে কারাবন্দি করে রেখেছে এই স্বৈরাচারী সরকার।
অতএব, দ্রব্যমূল্যসহ জনজীবনের সকল স্বাভাবিক জীবনযাত্রাকে সহনীয় মাত্রায় রাখতে হলে আমাদের গড়ে তুলতে হবে একটি জবাবদিহিতা মূলক সরকার। দেশের স্বাধীনতা, সার্বোভৌমত্ব ও গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা রক্ষা করার জন্য অবিলম্বে এই অবৈধ ভোটারবিহীন তথাকথিত নির্বাচনের ফলাফল বাতিল করে নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে একটি নিরপেক্ষ নির্বাচন কমিশন গঠন করে তার পরিচালনায় সকল দলের অংশ গ্রহণে একটি অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠানে সরকারকে বাধ্য করতে হবে। অন্যথায় শুধু দ্রব্যমূল্য ভিত্তিক মানুষের দৈনিন্দন জীবনের সমস্যাই নয় জাতির গোটা ভবিষ্যত জীবন আরো অসহনীয় ও দুর্বিষহ হয়ে উঠবে।