‘এই বিচার ট্রাম্পের স্বাধীন মত প্রকাশে হস্তক্ষেপ’
যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের অভিশংসনে মার্কিন কংগ্রেসের উচ্চকক্ষ সিনেটে বিচারের শুনানী শুরু হচ্ছে মঙ্গলবার। সাবেক মার্কিন এই প্রেসিডেন্টের পক্ষাবলম্বী আইনজীবীরা বিচারের বিষয়ে যুক্তি দিয়েছেন, এই বিচারের মাধ্যমে যুক্তরাষ্ট্রের সংবিধানের প্রথম সংশোধনী (ফার্স্ট অ্যামেন্ডমেন্ট) অনুযায়ী সাবেক প্রেসিডেন্টের মত প্রকাশের স্বাধীনতায় হস্তক্ষেপ করা হচ্ছে।
পাশাপাশি দায়িত্বের মেয়াদ শেষ হওয়ার পর নতুন করে এই বিচার মার্কিন সংবিধানের বিরোধী বলে যুক্তি দিচ্ছেন ট্রাম্পের আইনজীবীরা।
তবে মার্কিন আইনি বিশেষজ্ঞরা মন্তব্য করছেন, এই বিচারে সাংবিধানিক বৈধতা নয়, প্রাধান্য পাচ্ছে ট্রাম্পের অসদাচরণের মাত্রা।
যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাসে ডোনাল্ড ট্রাম্প প্রথম প্রেসিডেন্ট যিনি পরপর দুইবার অভিশংসিত হয়েছেন। এ ছাড়া দায়িত্ব ছাড়ার পর তিনিই একমাত্র প্রেসিডেন্ট, যাকে অভিশংসনের জন্য বিচারের মুখোমুখি করা হয়েছে।
সাধারণ অপরাধের বিচারের চেয়ে ভিন্ন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের এই বিচারের মাধ্যমে সিদ্ধান্ত নেয়া হবে, ট্রাম্পের কর্মকাণ্ড সংবিধান লঙ্ঘন করেছিল কিনা।
বেশিরভাগ আইনি বিশেষজ্ঞ মনে করছেন, প্রেসিডেন্টের দায়িত্বের মেয়াদের পরে ইতিহাসের বিবেচনা ও কংগ্রেসে অতীত অনুশীলনের ভিত্তিতে অভিশংসনের বিচারের অনুমতি দেয়া যেতে পারে।
যুক্তরাষ্ট্রের টেক্সাস বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের সাংবিধানিক আইন বিষয়ক অধ্যাপক স্টিভ ভ্লাডেক বলেন, ‘বিশেষজ্ঞদের বিপুল ঐক্যমত এই যুক্তিকে সমর্থন করছেন।’
রক্ষণশীল মতাবলম্বী শীর্ষ অ্যাটর্নি চার্লস জে কুপার ওয়াল স্ট্রিট জার্নালে প্রকাশিত এক নিবন্ধে বলেন, সিনেটে অভিশংসনের জন্য সাবেক প্রেসিডেন্টেরও বিচার হতে পারে।
ট্রাম্প প্রশাসনে জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা হিসেবে কাজ করা জন বোল্টন, ন্যাশনাল রাইফেলস ক্লাবের পক্ষে আইনি লড়াই করা খ্যাতনামা রক্ষণশীল এই আইনজীবী ওই নিবন্ধে মন্তব্য করেন, দায়িত্ব ছাড়ার পর ট্রাম্পের অভিশংসনে বিচারের বিষয়ে ডেমোক্রেটদের রাজনৈতিক ও আইনি যৌক্তিকতা রয়েছে।
ওয়াল স্ট্রিট জার্নালে রোববার প্রকাশিত চার্লস জে কুপারের এই নিবন্ধ মার্কিন আইন পরিষদের রিপাবলিকান সদস্যদের সাবেক প্রেসিডেন্টকে অভিশংসন সংবিধানের বিরোধী হওয়ার যুক্তিকে দুর্বল করে দিয়েছে।
কুপার বলেন, এই বিচারের মাধ্যমে একই ধরনের অপরাধে দোষী হওয়া ব্যক্তিদের পরে দায়িত্ব গ্রহণে বাধা দেয়া সম্ভব হবে।
পাঁচজন ছাড়া মার্কিন সিনেটের আর সকল রিপাবলিকান সিনেটরই ট্রাম্পের সমর্থনের ইঙ্গিত দিয়েছিলেন। তবে কুপারের এই মতামত সত্ত্বেও রিপাবলিকান সিনেটররা তাদের আগের অবস্থান থেকে সরে আসবেন কিনা, তা স্পষ্ট নয়।
সাবেক মার্কিন অ্যাটর্নি জেনারেল জেফ জেসনসের দীর্ঘদিনের বন্ধু চার্লস জে কুপার তার নিবন্ধে সাবেক প্রেসিডেন্টের অসদাচরণের মাত্রা বিবেচনা করে রিপাবলিকান সিনেটরদের তাদের অভিমত পুনর্বিবেচনার আহ্বান জানান।
অধ্যাপক স্টিভ ভ্লাডেক বলেন, কুপারের এই অভিমত বিচারের ফলে পরিবর্তন আনার বিষয়ে তার সন্দেহ আছে।
সিনেটে কোনো বিচারে দোষী সাব্যস্তে মোট এক শ ভোটের মধ্যে ৬৭ ভোটের প্রয়োজন হয়। বর্তমানে মার্কিন সিনেটে দুই দলেরই সমান আসন রয়েছে।