করোনা গবেষণাগার থেকে ছড়ায়নি: ডব্লিউএইচও

0

চীনের উহান থেকে ছড়ানো করোনায় বিপর্যস্ত বিশ্ব। করোনাভাইরাস চীনের গবেষণাগার থেকে ছড়িয়েছে বলে কথা উঠেছিল। দেশটিতে সফরে থাকা বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার বিশেষজ্ঞ দল তা নাকচ করে দিয়েছেন। করোনার উৎস খুঁজতে চীনে যাওয়া বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার তদন্ত দলের প্রধান পিটার বেন এমবেরেক বলেন, উহানের ল্যাব থেকে ভাইরাস ছড়ানোর ‘সম্ভাবনা নেই বললেই চলে’।

চীন থেকে ছড়িয়েছে ভাইরাসটি, বছরজুড়ে আলোচনায় থাকা এই প্রশ্নের সুরাহা ডব্লিউএইচও’র বিশেষজ্ঞরাও করতে পারেননি।  তাহলে করোনাভাইরাসের উৎস কোথায়? ভাইরাসের উৎস খুঁজে বের করতে আরও কাজ করতে হবে, উহানে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা ও চীনের যৌথ তদন্তের সমাপ্তিতে এই মন্তব্যই করেছেন এমবেরেক।

চীনের মধ্যাঞ্চলের হুবেই প্রদেশের উহান শহরেই ২০১৯ সালের শেষ দিকে নতুন করোনাভাইরাসে মানুষের আক্রান্ত হওয়ার প্রথম খবর আসে। তারপর থেকে বিশ্বজুড়ে ছড়িয়ে পড়া এই ভাইরাসে ১০ কোটির বেশি মানুষ আক্রান্ত হয়েছে, তার মধ্যে মারা গেছে ২৩ লাখের উপরে।

মঙ্গলবার (৯ ফেব্রুয়ারি) এক সংবাদ সম্মেলনে এমবেরেক বলেন, উহানে তদন্তে নতুন তথ্য পাওয়া গেছে। তবে তাতে রোগটির প্রাদুর্ভাবের চিত্রের নাটকীয় বদল ঘটেনি।

বিশেষজ্ঞদের বিশ্বাস, নতুন এই করোনাভাইরাস মানবদেহে ছড়ানোর আগে অন্য কোনো প্রাণী থেকে এসেছে। তবে তা কীভাবে ঘটেছে, সে বিষয়ে তারা নিশ্চিত নন। বাদুড়ের কোনো ‘প্রাকৃতিক সংরক্ষণাগার’ থেকেই এই ভাইরাস ছড়িয়েছে বলে সন্দেহ করছেন বিশেষজ্ঞরা।

তবে তা উহানে ঘটার সম্ভাবনা কম বলে মনে করছেন বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার তদন্ত দলের প্রধান। তিনি বলেন, অন্য কোনো প্রাণী থেকে মানবদেহে ভাইরাসটি সংক্রমিত হওয়ার পথ বের করার কাজ এখনও বাকি। তবে মধ্যবর্তী কোনো প্রজাতি থেকেই মানবদেহে এসেছে বলে ধারণা করছেন তারা।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ২০১৯ সালের ডিসেম্বরে শেষে চীনের উহানে নতুন করোনাভাইরাস শনাক্ত হওয়ার আগে তা সেখানে ছড়িয়েছিল বলে কোনো ইঙ্গিত পাওয়া যায়নি। বেইজিংয়ের সঙ্গে কয়েক মাসের আলোচনার পর গত জানুয়ারিতে করোনাভাইরাসের উৎস খুঁজতে উহানে যায় বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার তদন্ত দল। তবে তাদের কর্মকাণ্ডের উপর বিশেষ নজর রেখেছিল চীনা কর্তৃপক্ষ।

আর চীনের স্বাস্থ্য কমিশনের বিশেষজ্ঞ লিয়াং ওয়ানিয়ান বলেছেন, উহানে শনাক্ত হওয়ার আগে কোভিড-১৯ অন্যান্য অঞ্চলে থাকতে পারে।

হিমায়িত খাবার পরিবহন ও ব্যবসার দিকে ইঙ্গিত করে তদন্ত দল বলছে, এই ‘কোল্ড চেইন’ ধরে ভাইরাসটি সংক্রমণের সম্ভাবনা খতিয়ে দেখতে আরও তদন্ত হওয়া দরকার।

আমদানি করা খাদ্যের মাধ্যমে করোনাভাইরাস চীনে এসেছে, এমন তত্ত্বকে ইঙ্গিত করে লিয়াং ওয়ানিয়ান আরও বলেন, গবেষণাগুলোয় দেখা গেছে, অনেক দূর থেকে আসা হিমায়িত পণ্যে ভাইরাসের উপস্থিতি থাকতে পারে। ২০১৯ সালের ডিসেম্বরের আগে উহান থেকে সংক্রমণ ছড়ানোর কোনো ‘প্রমাণ’ নেই বলেও দাবি করেন তিনি।

লিয়াং ওয়ানিয়ানের মন্তব্যকে সমর্থক করে ডব্লিউএইচওর তদন্ত দলের প্রধান বেন এমবারেক বলেন, ২০১৯ সালের ডিসেম্বরের আগে ভাইরাস ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়ার কোনো ‘প্রমাণ’ নেই।

চীনের শীর্ষ ভাইরাস গবেষণাগারগুলোর একটি উহান ইনস্টিটিউট অব ভাইরোলোজি থেকে করোনাভাইরাস ছড়িয়েছে বলে জল্পনা চলছিল। যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের কাছ থেকেই এই তত্ত্ব ছড়িয়ে পড়ে। গত এপ্রিলে প্রকাশ্যে আসা যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের তার বার্তায় উহানে জৈবনিরাপত্তা নিয়ে দূতাবাস কর্মীদের উদ্বেগের ইঙ্গিত পাওয়া যায়।

সে সময় যুক্তরাষ্ট্রের ন্যাশনাল ইন্টেলিজেন্স ডাইরেক্টরের দপ্তর থেকে বলা হয়, ভাইরাসটি মানবসৃষ্ট বা জেনেটিকালি মোডিফায়েড কি না, কোনো প্রাণী থেকে মানবদেহে এসেছে বা ল্যাবরেটরি দুর্ঘটনা তা কর্মকর্তারা তদন্ত করে দেখছে।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার তদন্ত দলের প্রধান বলেছেন, তদন্তকালে গবেষণাগার ঘুরে দেখা গেছে সেখান থেকে কোনো কিছু ‘বেরিয়ে যাওয়ার কথা নয়’।

তুমি এটাও পছন্দ করতে পারো

উত্তর দিন

আপনার ইমেইল ঠিকানা প্রচার করা হবে না.

WP2Social Auto Publish Powered By : XYZScripts.com