“খালেদা জিয়া এখনো মুক্ত নন”, বলতে গেলে সরকার এখনো তাকে কারাগারে আটকে রেখেছে

0

সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার আজ কারাবন্দীর তিন বছর। ২০১৮ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট (ষড়যন্ত্রমূলক) মামলায় তাকে পাঁচ বছরের কারাদণ্ড দেয়া হয়। ঢাকার ৫ নম্বর বিশেষ জজ আদালতের এ মামলায় রায় ঘোষণার পরই তাকে কারাগারে নেয়া হয়।

দীর্ঘ দিন কারাগারে থেকে গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়ায় খালেদা জিয়ার জীবনরক্ষার জন্য চিকিৎসা নেয়ার সুযোগ দিতে ফৌজদারি কার্যবিধি ৪০১(১) ধারায় সাজা স্থগিত করে মুক্তি দেয়ার জন্য তার পরিবারের পক্ষ থেকে আবেদন করা হয়। ওই আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে গত ২৫ মার্চ সরকারের নির্বাহী আদেশে খালেদা জিয়ার সাজা স্থগিত করে ছয় মাসের জন্য মুক্তি দেয়া হয়। এরপর গত ২৫ সেপ্টেম্বর থেকে দ্বিতীয় দফায় আরো ছয় মাসের জন্য সাজা স্থগিত করে মুক্তির মেয়াদ বৃদ্ধি করা হয়। তবে সরকারের নির্বাহী আদেশে ফৌজদারি কার্যবিধি ৪০১(১) ধারায় চিকিৎসার জন্য কারাগার থেকে খালেদা জিয়াকে মুক্তি দেয়া হয়েছে। কিন্তু তাকে চিকিৎসাসেবা করতে দেয়া হচ্ছে না। প্রকারান্তরে তিনি জেল কর্তৃপক্ষ তথা সরকারের নিয়ন্ত্রণেই আছেন বলে অভিযোগ করেছেন খালেদা জিয়ার আইনজীবীরা।

এ বিষয়ে খালেদা জিয়ার আইনজীবী প্রবীণ আইনবিদ খন্দকার মাহবুব হোসেন বলেন, বাংলাদেশে গত ১২ বছর আওয়ামী লীগের শাসন আমলে বিএনপি নেতা-কর্মীসহ সাধারণ মানুষকে মিথ্যা মামলা দিয়ে নির্যাতন করা হয়েছে। বেগম খালেদা জিয়া তিনবারের প্রধানমন্ত্রী যে ধরনের মামলা দিয়ে তাকে আটক রাখা হয়েছে, এখনো তিনি মুক্ত নন, বলতে গেলে কারাগারেই আছেন। তিনি বলেন, কারাগারে তাকে শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন করা হয়েছে। তাকে পুরাতন কারাগারের একটি পরিত্যক্ত কক্ষে রেখে শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন করা হয়েছে। দেশে যখন গণতন্ত্র ফিরে আসবে জনগণ এর বিচার করবে।

বিএনপির আইন সম্পাদক ব্যারিস্টার কায়সার কামাল বলেন, ‘কারাবন্দী বেগম খালেদা জিয়া গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়ায় তার পরিবারের পক্ষ থেকে আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে রাষ্ট্র তাকে প্রথমে ছয় মাস এবং পরবর্তীতে আরো ছয় মাস জেল থেকে মুক্তি দেয়। কিন্তু আমরা পর্যবেক্ষণ করছি তাকে অসুস্থতার জন্য যে ধরনের চিকিৎসা দেয়া প্রয়োজন তা থেকে তাকে বঞ্চিত করা হচ্ছে। রাষ্ট্রযন্ত্র ব্যবহার করে বারবার বেগম খালেদা জিয়ার আইনগত ও সাংবিধানিক অধিকার এবং ন্যায়বিচার থেকে বঞ্চিত করা হচ্ছে। আমরা প্রত্যাশা করি বেগম খালেদা জিয়া সুচিকিৎসার জন্য তার পরামর্শ মতো বিশেষায়িত চিকিৎসা নিয়ে জীবন রক্ষার সুযোগ পাবেন। তিনি আরো বলেন, তাকে চিকিৎসার জন্য ফৌজদারি কার্যবিধি ৪০১(১) ধারায় কারাগার থেকে মুক্তি দেয়া হয়েছে। কিন্তু তাকে চিকিৎসাসেবা করতে দেয়া হচ্ছে না। প্রকারান্তরে তিনি জেল কর্তৃপক্ষ তথা সরকারের নিয়ন্ত্রণেই আছেন।’

আইনজীবীরা জানান, জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট ও জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট (ষড়যন্ত্রমূলক) মামলায় খালেদা জিয়াকে ১৭ বছর কারাদণ্ড দেয়া হয়। খালেদা জিয়াকে মুক্ত করতে এই দুই মামলায় জামিন নিতে তার আইনজীবীরা হাইকোর্ট ও সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগে মানবিক কারণে চিকিৎসার জন্য বারবার আবেদন করেও ব্যর্থ হন। অন্যসব মামলায় তিনি জামিন পাওয়ার পরও এই দুই মামলায় জামিন না হওয়ায় আইনি পথে জামিনের জন্য চেষ্টার পাশাপাশি গুরুতর অসুস্থ খালেদা জিয়ার জীবন রক্ষার জন্য চিকিৎসা নেয়ার সুযোগ দিতে ফৌজদারি কার্যবিধি ৪০১(১) ধারায় সাজা স্থগিত করে মুক্তি দেয়ার জন্য তার পরিবারের পক্ষ থেকে আবেদন করা হয়। ওই আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে গত ২৫ মার্চ সরকারের নির্বাহী আদেশে খালেদা জিয়ার সাজা স্থগিত করে ছয় মাসের জন্য মুক্তি দেয়। এতে ২০১৮ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি থেকে কারাবন্দী অসুস্থ বেগম খালেদা জিয়া মুক্তি পান।

আইনজীবীরা আরো জানান, খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে সর্বমোট ৩৭ (ষড়যন্ত্রমূলক) মামলা রয়েছে। অসুস্থতার কারণে জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট ও জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট মামলায় সাজা স্থগিত করে সরকার তাকে মুক্তি দিয়েছে। এ দুই মামলা বাদে অন্য সব মামলায় তিনি জামিনে আছেন। আর সরকার নির্বাহী আদেশে তাকে চিকিৎসার জন্য মুক্তি দিয়েছেন তাই আদালতে অ্যাপিয়ার করার জন্য তাকে শারীরিকভাবে সুস্থ হতে হবে। কোনো ট্রায়াল কোর্টে উপস্থিত থেকে মামলা মোকাবেলা করতে হলে তাকে সুস্থ হতে হবে। আর সুস্থ হলে তিনি আদালতে অ্যাপিয়ার করবেন।

তুমি এটাও পছন্দ করতে পারো

উত্তর দিন

আপনার ইমেইল ঠিকানা প্রচার করা হবে না.

WP2Social Auto Publish Powered By : XYZScripts.com