মমতাকে ‘রামকার্ড’ দেখাবেন মোদি!
ভারতের পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের নির্বাচনে ‘রামকার্ড’ খেললেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। রোববার হলদিয়ার জনসভায় মোদি বলেছেন, পশ্চিমবঙ্গ এবার মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জিকে রামকার্ড দেখাবে। তিনি বলেছেন, ”বাংলার মানুষ ফুটবল ভালোবাসেন। তাই ফুটবলের পরিভাষায় বলি, তৃণমূল একের পর এক ফাউল করছে। অপশাসন, দুর্নীতি, তোলাবাজির ফাউল। মানুষ সব দেখতে পাচ্ছে। বাংলার মানুষ তৃণমূলকে রামকার্ড দেখাতে চলেছে।”
প্রধানমন্ত্রীর এই কথা থেকে স্পষ্ট, পশ্চিমবঙ্গে তার তুরুপের তাস হতে চলেছেন শ্রীরাম। মোদির সভাতে বারবার সোচ্চারে ‘জয় শ্রীরাম’ ধ্বনি উঠেছে। মোদির মুখেও বারবার উঠে এসেছে রাম-নাম। তিনি বলেছেন, ”পিসি-ভাইপোর জন্য যারা তৃণমূলে থাকতে পারছেন না, তারা দলকে রাম রাম করে এখানে জয় শ্রীরাম করতে চলে এসেছেন।”
এরপর অনেক বিশেষজ্ঞই মনে করছেন, পশ্চিমবঙ্গে বিধানসভার আসন্ন ভোট রামময় হয়ে উঠবে। প্রবীণ সাংবাদিক সৌম্য বন্দ্যোপাধ্যায় ডয়চে ভেলেকে বলেছেন, ”বিজেপি এবার অবশ্যই ‘জয় শ্রীরাম’ ধ্বনিকে হাতিয়ার করবে। তারা গ্রামে গ্রামে এই ধ্বনি ছড়িয়ে দেয়ার চেষ্টা করছে। আমি ১৯৮৪ সালে দিল্লি এসে দেখেছি, ‘জয় শ্রীরাম’ ছিল সম্ভাষণের ভাষা। কিন্তু রামজন্মভূমি আন্দোলনের সময় ‘জয় শ্রীরাম’ হয়ে যায় রণহুঙ্কার। পশ্চিমবঙ্গেও বিজেপি-র কাছে এটা রণহুঙ্কারই। নরেন্দ্র মোদির ভাবমূর্তি এবং রামনামকে নিয়ে পশ্চিমবঙ্গ জয় করতে চাইছে বিজেপি।”
গত ২৩ জানুয়ারি নেতাজির ১৫০ তম জন্মবার্ষিকীতে ভিক্টোরিয়া মেমোরিয়ালের অনুষ্ঠানে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলতে উঠতেই ‘জয় শ্রীরাম’ ধ্বনি ওঠে। মুখ্যমন্ত্রী তখন প্রতিবাদ জানিয়ে খুব সংক্ষিপ্ত ভাষণ দিয়ে বসে পড়েন। তার যুক্তি ছিল, ভিক্টোরিয়ার অনুষ্ঠান সরকারি, কোনো রাজনৈতিক দলের অনুষ্ঠান নয়। সেখানে কেন এই স্লোগান উঠবে? তারপর এনিয়ে বিতর্ক কম হয়নি। কিন্তু বিজেপি-র রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষ সহ অন্য নেতারা প্রশ্ন তুলেছেন, রামনামে কী আপত্তি থাকতে পারে?
গত লোকসভা নির্বাচনের সময় বিজেপি কর্মীরা তার উদ্দেশে ‘জয় শ্রীরাম’ স্লোগান দেয়ায় স্লোগানকারীদের মুখোমুখি হওয়ার জন্য ক্রুদ্ধ মমতা গাড়ি থেকে নেমে পড়েছিলেন। এই ঘটনাকে সামনে রেখে তখন প্রচারে নেমে পড়েছিল বিজেপি। দলীয় সূত্র জানাচ্ছে, তার সুফলও তারা ঘরে তুলতে পেরেছিলেন। এবার কি সেই ‘জয় শ্রীরাম’ ধ্বনি পশ্চিমবঙ্গে বিজেপি-কে এগিয়ে রাখবে বা রাজনৈতিক সুবিধা করে দেবে?
ডয়চে ভেলেকে বিজেপি নেতা সৌরভ সিকদার বলেছেন, ”রাম হলেন অন্যায়ের বিরুদ্ধে যুদ্ধের প্রতীক। যখনই রাবণ অন্যায়ের শাসন তৈরি করে তখন রামই পারেন, তা ভেঙে দিয়ে ন্যায়ের শাসন তৈরি করতে। পশ্চিমবঙ্গে রাম ছিলেন, আছেন, থাকবেন। পশ্চিমবঙ্গে অন্যায়ের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে রামই প্রতীক হিসাবে থাকবেন।”
তবে সৌম্য বন্দ্যোপাধ্যায়ের মতে, ”পশ্চিমবঙ্গে ভোটের ক্ষেত্রে দলের সংগঠন একটা বড় বিষয়। কোনো সন্দেহ নেই, রামকে হাতিয়ার করে এবং লোকবল, অর্থবল, ক্ষমতাবল ব্যবহার করে একটা হাওয়া তুলে দিতে পেরেছে বিজেপি। কিন্তু পশ্চিমবঙ্গের ভোটে শ্রীরামের বাইরে আরো অনেকগুলি প্রাসঙ্গিক বিষয় থাকবে। সেখানে যে দল ভালো করতে পারবে, তারাই এগিয়ে থাকবে।” সৌম্যর মতে, মমতাও এবার পুরোদমে মাঠে নেমেছেন। লড়াই তাই জমে গেছে।
পশ্চিমবঙ্গের ভোটদাতারা শ্রীরামে মজে মমতা ব্যানার্জিকে রামকার্ড দেখাবেন কি না, তা জানার জন্য ভোটের ফলাফল পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে।
সূত্র : ডয়চে ভেলে