ধানের শীষের নির্বাচনী অফিসে হামলা ও ভাংচুর
চতুর্থ দফায় পৌর নির্বাচনে চুয়াডাঙ্গা জেলার জীবননগর ও আলমডাঙ্গা পৌরসভায় চলছে নির্বাচনী প্রচার-প্রচারণা। আগামী ১৪ ফেব্রুয়ারি এ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা রয়েছে। নির্বাচনী প্রচারণায় ইতোমধ্যে উত্তাপ ছড়িয়েছে। আর এ উত্তাপ রূপ নিয়েছে সহিংসতায়। রোববার রাতে জীবননগরে নির্বাচনী সহিংসতার ঘটনা ঘটে।
এর আগে গত ১ ফেব্রুয়ারি রাতে ঠিক একইভাবে আলমডাঙ্গায় নির্বাচনী সহিংসতার ঘটনা ঘটেছিল। রোববার রাত সাড়ে ৮টার দিকে বিএনপি মনোনীত ধানের শীষের প্রার্থী শাজাহান কবিরের নির্বাচনী অফিসে হামলা ও ভাংচুর করা হয়েছে। এ সময় ধানের শীষ প্রার্থীর নির্বাচনী ব্যানার পুড়িয়ে দেয় দুর্বৃত্তরা। জীবননগর পৌরসভার সাবেক মেয়র নোয়াব আলীর বাড়ির সামনে অবস্থিত বিএনপির অস্থায়ী কার্যালয়ে এ হামলা ও ভাংচুর করা হয়। পরে রাত ৯টার দিকে জীবননগর পৌর নির্বাচনে বিএনপির পৌর নির্বাচনী কমিটির আহ্বায়কের বাড়িতেও হামলা চালানো হয় বলে অভিযোগ উঠেছে। তবে এ বিষয়ে জানতে চাইলে কেউ কথা বলতে রাজি হননি।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, রোববার রাত সাড়ে ৮টার দিকে পৌরসভার সাবেক মেয়র নোয়াব আলীর বাড়ির সামনে অবস্থিত বিএনপির অস্থায়ী কার্যালয়ে নেতা-কর্মীরা বসেছিলেন। এ সময় কয়েকজন যুবক মোটরসাইকেলযোগে এসে আচমকা অফিসে ঢুকে ভাংচুর করেই মোটরসাইকেল নিয়ে পালিয়ে যায়।
বিএনপির নির্বাচনী অফিসের কর্মী ও সমর্থকরা জানান, ‘আমরা সন্ধ্যা থেকেই অফিসে বসে নির্বাচনী কর্মকাণ্ড পরিচালনা করছিলাম। হঠাৎ রাত সাড়ে ৮টার দিকে মোটরসাইকেলযোগে ১০ থেকে ১৫ জন আমাদের অফিসের সামনে আসে। এ সময় তারা অতর্কিতভাবে অফিসে হামলা করে এবং ভাংচুর চালায়। পরে তারা মোটরসাইকেল নিয়ে ওই জায়গা থেকে দ্রুত পালিয়ে যায়।’
এ ব্যাপারে বিএনপি মনোনীত প্রার্থী শাজাহান কবির অভিযোগ করে বলেন, ‘আমরা নির্বাচনী মাঠে যাওয়ার আগে অফিসে বসে নেতা-কর্মীদের নিয়ে নির্বাচনী আলোচনা করছিলাম। এ সময় নৌকার একটি মিছিল নিয়ে বেশ কিছু যুবক মোটরসাইকেল নিয়ে অফিসের সামনে আসে এবং গাড়ি রেখে আমাদের অফিসে ঢুকে হামলা চালায় ও অফিসে থাকা চেয়ার-টেবিল ভাংচুর করে। তারা পালিয়ে যাওয়ার সময় অফিসে থাকা একটি এলইডি টিভি নিয়ে গেছে।’
তিনি আরো অভিযোগ করেন, ‘প্রতিনিয়ত আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা আমাদের নেতা-কর্মীদের ওপর হামলা-মামলা দেয়ার হুমকি দিয়ে আসছে।’
জীবননগর থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) সাইফুল ইসলাম জানান, ‘জীবননগর পৌর নির্বাচনে বিএনপি মনোনীত মেয়র প্রার্থীর অফিস ভাঙচুরের সংবাদ আমরা পেয়েছি। সংবাদ পেয়ে ঘটনাস্থলে পুলিশ পাঠানো হয়েছে। ঘটনাটির তদন্ত করা হচ্ছে। দোষী ব্যক্তিদের অবশ্যই আইনের আওতায় নিয়ে আসা হবে।’
এ দিকে জীবননগর পৌরসভা নির্বাচনে বিএনপি মনোনীত প্রার্থীর অফিসে হামলা ও ভাংচুরের ঘটনায় নিন্দা ও তীব্র প্রতিবাদ জানিয়ে চুয়াডাঙ্গা জেলা বিএনপি নেতা শরীফুজ্জামান শরীফ বলেন, ‘নির্বাচনের মাঠ থেকে বিএনপি প্রার্থীর কর্মী-সমর্থকদের মাঠছাড়া করাসহ ভোটারদের মধ্যে ভীতির পরিবেশ সৃষ্টি করছে আওয়ামী লীগের সন্ত্রাসীরা। অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন হলে আওয়ামী লীগের নিশ্চিত ভরাডুবি হবে বুঝতে পেরে তারা বিএনপির কর্মী-সমর্থকদের ওপর হামলা-মামলা করছে। এসব হামলা-ভাংচুর করে তারা সাধারণ ভোটারদের মধ্যে ভীতি সৃষ্টি করে নির্বাচন থেকে দূরে রাখতে চায়। গত এক সপ্তাহে আলমডাঙ্গা ও জীবননগরে বিএনপির নির্বাচনী অফিসে ও তার সমর্থকদের ওপর হামলা, ভয়-ভীতি দেখানো ও প্রচারকাজে বাঁধা দেয়া প্রমাণ করে দেশে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন হচ্ছে না। এ ছাড়া সারা দেশে অনুষ্ঠিত নির্বাচনগুলো পর্যালোচনা করলে বোঝা যায়, আওয়ামী লীগ জোর করে আজীবন ক্ষমতায় থাকতে চায়। কিন্তু জনগণ তা হতে দেবে না।’
উল্লেখ্য, এর আগে গত ১ ফেব্রুয়ারি আসন্ন আলমডাঙ্গা পৌরসভা নির্বাচনে আনুষ্ঠানিক প্রচার-প্রচারণা শুরুর চার দিনের মাথায় নির্বাচনী সহিংসতার ঘটনা ঘটে। বিএনপি মনোনীত ধানের শীষের প্রার্থী মীর মহিউদ্দিন ও স্বতন্ত্রপ্রার্থী (মোবাইল) বীর মুক্তিযোদ্ধা এম সবেদ আলীর নির্বাচনী অফিসে হামলা ও ভাংচুরের ঘটনা ঘটে। এ ঘটনার সপ্তাহ পার হতে না হতেই আবারো নির্বাচনী সহিংসতার ঘটনা ঘটল।