বাইডেনের হুঙ্কার
বিশ্বে আবার কর্তৃত্ব চায় আমেরিকা। কূটনীতির জোর খাটিয়ে রাশিয়ার আগ্রাসন, চীনের মার্কিন অর্থনীতিকে প্রভাবিত করার প্রবণতায় এবার রাশ টানতে চায় তারা। মার্কিন স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের প্রথম ভাষণে ঘোষণা করলেন নতুন মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন। বিশ্বের সমস্ত দেশকে সেখান থেকেই বার্তা দিলেন, ‘আমেরিকা ইজ ব্যাক।’ অর্থাৎ ‘আমেরিকা আবার পুরনো মেজাজে ফিরছে।’
প্রেসিডেন্ট হওয়ার পর বৃহস্পতিবার প্রথম স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কর্মীদের উদ্দেশে বক্তৃতা করেন বাইডেন। সেখানেই এই ঘোষণা। বার্তা স্পষ্ট। গত চার বছরে সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের জমানায় আমেরিকার যে ‘অবনতি’ হয়েছে তা পুষিয়ে নিতে হবে। কীভাবে? বাইডেনের কাছে এর সমাধানে প্রথম দু’টি পদক্ষেপ প্রস্তুত। প্রথমত, রাশিয়ার কথা মেনে নেয়া যাবে না। প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের আগ্রাসী নীতি মেনে নেওয়ার মনোভাব ছাড়তে হবে। দ্বিতীয়ত, মার্কিন অর্থনীতিকে যেভাবে প্রভাবিত করার চেষ্টা করছে চীন, যেভাবে বিভিন্ন ক্ষেত্রে মানবাধিকার লঙ্ঘন করেছে তারা, তার জবাবদিহি করতে হবে আমেরিকার কাছে।
বৃহস্পতিবার দুপুর ২টা ৪৫ মিনিটে ওয়াশিংটনে মার্কিন স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণায়ের সদর দপ্তর হ্যারি এস ট্রুম্যান বিল্ডিংয়ে ভাষণ দেন বাইডেন। সেখানে প্রথমেই তার রাশিয়া বিরোধী অবস্থান স্পষ্ট করে দেন। রাশিয়ার প্রধান বিরোধী নেতা অ্যালেক্সেই নাভালনির প্রসঙ্গ তুলে বাইডেন বলেন, ‘প্রেসিডেন্ট পুতিনের অমানবিক আচরণ নিয়ে আমেরিকা এতদিন কিছু বলেনি। কিন্তু আর তা চলতে দেয়া হবে না। পুতিনের সঙ্গে বিষয়টি নিয়ে কথা হয়েছে।’ বাইডেন বলেছেন, ‘প্রেসিডেন্ট পুতিনকে ব্যাপারটা বেশ পরিষ্কার করেই বুঝিয়ে বলেছি।
তবে আমার পূর্বসূরির ঢঙে নয়। আমি তাকে বলেছি রাশিয়ার ‘হ্যাঁ’–তে ‘হ্যাঁ’ মেলানোর দিন শেষ। মার্কিন নির্বাচনে তাদের হস্তক্ষেপ, আমেরিকার উপর সাইবার আক্রমণ আর মেনে নেবে না আমেরিকা। এমনকী রাশিয়ার নাগরিকদের সঙ্গে অমানবিক আচরণ, নাগরিকদের উপর বিষ প্রয়োগের ঘটনাও মেনে নেওয়া হবে না। তেমন হলে রাশিয়ার বিরুদ্ধে পদক্ষেপ করতে একবারও ভাববে না আমেরিকা।’ রাশিয়ার পুতিন বিরোধী নেতা অ্যালেক্সেই নাভালনিকে বিষ প্রয়োগের অভিযোগ উঠেছিল আমেরিকার বিরুদ্ধে। পরে দীর্ঘ চিকিৎসার পর সুস্থ হয়ে দেশে ফেরা নাভালনিকে ফের গ্রেফতার করে ক্রেমলিন। নাভালনির মুক্তির দাবিতে আন্দোলনকারীদেরও গ্রেফতার করে পুতিন প্রশাসন। বাইডেন তার বক্তৃতায় স্পষ্ট করে দিয়েছেন, এর কোনওটাই মেনে নেবে না আমেরিকা।
চীন নিয়েও তার ভাষণে কড়া বার্তা দিয়েছেন বাইডেন। তিনি বলেন, ‘বেইজিংয়ের সঙ্গে আমেরিকা কাজ করবে। তবে যখন আমেরিকার প্রয়োজন পড়বে তখনই। তার আগে চীনকে আমেরিকার কাছে জবাবদিহি করতে হবে। আমেরিকার অর্থনীতি, মেধা সম্পদ এবং মানবাধিকার লঙ্ঘন করার ব্যাপারে উত্তর দিতে হবে। যেভাবে আমেরিকার চাকরির বাজারের ও বাণিজ্যের ক্ষতি করেছে চীন, তার জবাবদিহি করতে হবে।’ ট্রাম্প জমানায় ‘আমেরিকা ফার্স্ট’ নীতি চালু ছিল।
বাইডেনের কথায় স্পষ্ট, আর ‘প্রথমে আমেরিকা’ নীতিতে হাঁটবে না বাইডেন প্রশাসন। এবার ‘আমেরিকাই প্রথম’ নীতি চলবে। বাইডেনের কথায়, ‘আমি যা করতে চলেছি, তার কেন্দ্রে রয়েছেন আপনারা। আমাদের বিশ্বশক্তির কেন্দ্রে পৌঁছতেই হবে।’ ট্রাম্পের নানা নীতির জন্য আমেরিকার কূটনীতিকরা উৎসাহ হারিয়েছিলেন। তাদের উৎসাহিত করে বাইডেন বলেন, ‘দেশের কূটনীতি আবার আগের মেজাজে ফিরবে। তাই এবার উঠে পড়ে লেগে পড়ুন। আমেরিকাকে তার পুরনো জায়গায় ফেরাতেই হবে।’