ওবায়দুল কাদেরের হুমকি জুলুমবাজ কর্তৃত্ববাদী শাসনেরই বহিঃপ্রকাশ: রিজভী

0

আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের উদ্দেশ্যে বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম-মহাসচিব অ্যাডভোকেট রুহুল কবির রিজভী বলেছেন, হুঙ্কার দিয়ে লাভ নেই। আপনাদের সব জারিজুরি ক্রমাগতভাবে ফাঁস হচ্ছে।

ওবায়দুল কাদেরের কড়া সমালোচনা করে তিনি বলেছেন, ‘নিরপেক্ষ নির্বাচনের দাবিতে ৬ মহানগরীর মহাসমাবেশ কর্মসূচিকে দেশের শান্তিপূর্ণ পরিবেশ বিনষ্টের ষড়যন্ত্র বলে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বিএনপির সমাবেশ শক্ত হাতে দমনের হুমকি দিয়েছেন। মানুষের ভোটের অধিকার কেড়ে নিয়ে জণরোষের ভয়ে ওবায়দুল কাদের সাহেবরা ঘরে বসে হুঙ্কার দিচ্ছেন। এই হুঙ্কার দিয়ে লাভ নেই। আপনাদের জারিজুরি সব ক্রমাগতভাবে ফাঁস হচ্ছে। জনগণের নিকট পরিস্কার হয়ে গেছে-বর্তমান শাসন সম্পূর্ণরুপে গণতন্ত্রবিবর্জিত এবং মাফিয়াদের দ্বারা পরিচালিত। রাইট টু অ্যাসেম্বলি সংবিধান স্বীকৃত। গণতান্ত্রিক অধিকার হচ্ছে সভা-সমাবেশ করা। আর সেই সভা-সমাবেশ বন্ধ করার হুমকি কোন রাজনৈতিক নেতা দিতে পারেন না, সেটি কেবল মাফিয়ারাই দিতে পারে।’

গতকাল শনিবার (৬ ফেব্রয়ারী) নয়াপল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন।

রিজভী বলেন, ‘গতকাল ৬টি মহানগরে সমাবেশের জন্য কর্মসূচি ঘোষণা করেছেন গত নির্বাচনে বিএনপি মনোনীত মেয়র প্রার্থীরা। এই সমাবেশের উদ্দেশ্য নির্বাচনী অনিয়মের প্রতিবাদ করা এবং নিরপেক্ষ নির্বাচনের দাবি। বিএনপির প্রতিটি সমাবেশ সুশৃঙ্খল ও শান্তিপূর্ণ পরিবেশে অনুষ্ঠিত হয়। গতকালও বিএনপির মনোনীত মেয়র প্রার্থীবৃন্দ সুষ্পষ্টভাবে বলেছেন-উল্লিখিত দাবির প্রেক্ষিতেই সমাবেশগুলো অনুষ্ঠিত হবে। এই বক্তব্যেই আওয়ামী সাধারণ সম্পাদক স্বভাবসূলভ হুমকির মাধ্যমে প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করলেন। ওবায়দুল কাদের সাহেবের বক্তব্য প্রচণ্ড অবাক করেছে জনগণকে। সমাবেশের কথা শুনে তিনি বিচলিত হয়ে পড়েছেন।’

বিএনপির এই শীর্ষনেতা বলেন, ‘আসলে ওবায়দুল কাদের সাহেবরা এখন নিজেদের ছায়া দেখলেই ভয় পাচ্ছেন। এই ওবায়দুল কাদের সাহেবই যখন তখন দেশে-বিদেশে ষড়যন্ত্র তত্ত্ব আাবিস্কারের ঘোষণা দেন এবং মানুষের কাছে তামাশার পাত্র হন। ওবায়দুল কাদেরের হুমকি জুলুমবাজ কর্তৃত্ববাদী শাসনেরই বহিঃপ্রকাশ। ক্ষমতার বেপরোয়া আস্ফালনে ওবায়দুল কাদেরদের বন্ধ্যা আত্মতৃপ্তির কথাকে মানুষ গুরুত্ব দেয় না। আওয়ামী নেতাদের মতো বিচিত্র বহুরুপী মানুষদের কথার কোন সারবত্তা নেই। শুধু প্রধানমন্ত্রীর পদলেহন করতেই বিরোধী দলের প্রতি ওবায়দুল কাদের সাহেবরা এই ধরণের হুঙ্কার দিয়ে থাকেন। ৬ মহানগরে সমাবেশ নিয়ে ওবায়দুল কাদেরের বক্তব্যে আবারও প্রমাণিত হলো-প্রাণবন্ত গণতন্ত্রের জন্য যে দলীয় সংস্কৃতি, ঐতিহ্য এবং উদার সাংস্কৃতিক দৃষ্টিভঙ্গি ও প্রবণতা অপরিহার্য তা আওয়ামী লীগ কখনোই রপ্ত করেনি।’

রিজভী বলেন, ‘আপনারা বারবার দেশ-বিদেশের গণমাধ্যমে দেখেছেন-ইকোনমিষ্ট ইন্টেলিজেন্স ইউনিটের গবেষণায় যে প্রকাশ করেছে তাতে স্বৈরতান্ত্রিক বা কর্তৃত্ববাদী শাসনের তালিকায় আছে বাংলাদেশ। গত এক দশক ধরেই বাংলাদেশের অবস্থানের কোন পরিবর্তন হয়নি। এক দশক ধরেই বাংলাদেশের নিজস্ব ভূমিতে গণতন্ত্রের শিকড় যাতে না গজাতে পারে এজন্য আওয়ামী সরকার সকল শক্তি নিয়োগ করেছে। গুম, বিচার বহির্ভূত হত্যা ও লাখো লাখো মিথ্যা মামলার ছড়াছড়ি শুধু নয়, বিরোধী দলকে দমণ ও গণমাধ্যমের কন্ঠরুদ্ধ করার জন্য ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের মতো নানা কালাকানুন করে অমানবিক নিষ্ঠুরতার সীমাহীন আবর্তের মধ্যে দেশকে ঠেলে দিয়েছে। বর্তমানে শুধু বিরোধী দল ও মত নয়, সাংবাদিকদেরও কোন নিরাপত্তা নেই, ডিজিটাল জগতে স্বাধীনভাবে প্রবেশের কোন অধিকার নেই।’

তিনি বলেন, ‘এদের শাসনামলে ৫০ জন সাংবাদিক খুন হয়েছেন। গতবছরও দু’জন সাংবাদিক খুন হয়েছেন, ৭৮ জনকে মেরে পঙ্গু করে দেয়া হয়েছে, ১৬৬ জন সাংবাদিকের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা দেয়া হয়েছে। তাই বিএনপিসহ বিরোধী দলের কোন সমাবেশের কথা শুনলেই ওবায়দুল কাদের সাহেবদের কাঁপুনি ধরে। কারণ প্যান্ডোরাস বক্স খুলে গিয়ে সকল সত্যগুলো পুনরায় বের হতে থাকবে। সুতরাং সুশাসন নয়, আওয়ামী সরকার সন্ত্রাস বিতরণের কেন্দ্রে পরিণত হয়েছে।’

রিজভী আরও বলেন, ‘জাতীয়তাবাদী শক্তির অপরাজেয় জীবনীশক্তি, দেশপ্রেমিক মানুষকে যিনি উজ্জীবিত করে এসেছেন, শত নির্যাতনের মধ্যেও যিনি গণতন্ত্র অর্জনের প্রশ্নে স্বমহিমায় অটল-আপোষহীন অঙ্গীকার ব্যক্ত করেন, অন্যায়ের বিরুদ্ধে যাঁর অঙ্গীকারাবদ্ধ মুষ্টিবদ্ধ হাত আজো লাখো মানুষের হৃদয়ে সংগ্রামী চেতনা ছলকে ওঠে সেই নিপীড়িত-নির্যাতিত মজলুম নেত্রী দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে আজ প্রায় তিন বছর ধরে আটকে রাখা হয়েছে। গত ২০১৮ সালের ৮ ফেব্রুয়ারী তাঁকে অন্যায়ভাবে গ্রেফতার করা হয়। গত মার্চে কারাগার থেকে বাড়ীতে নিয়ে আসা হলেও তিনি মূলতঃ গৃহবন্দী। যিনি অপরিসীম নিষ্ঠাসহকারে ভালবাসা দিয়ে দেশের জনগণের অধিকারকে পুণরুদ্ধার করেছিলেন সেই নেত্রী এখন গৃহবন্দী।’

তুমি এটাও পছন্দ করতে পারো

উত্তর দিন

আপনার ইমেইল ঠিকানা প্রচার করা হবে না.

WP2Social Auto Publish Powered By : XYZScripts.com