চীন-মার্কিন সমীকরণে মিয়ানমার!

0

ওয়াশিংটন এবং বেইজিং এই ইস্যুতে বিপরীত পক্ষ নিলে মিয়ানমারের রাজনৈতিক ভবিষ্যত, আঞ্চলিক ভূ-রাজনীতি এবং মার্কিন-চীন শীতল যুদ্ধে এর প্রভাব পড়তে পারে। আর মিয়ানমার সঙ্কটের সঙ্ঘাতমুখর পরিণতি শুধু এই দেশটির জন্যই নয়, একই সাথে পুরো অঞ্চলের ওপর অস্থির প্রভাব ফেলতে পারে। এর সমাধানমুখী বিকল্প হলো- আন্তর্জাতিক অংশগ্রহণের মাধ্যমে গণতান্ত্রিক যে রূপান্তর গত ১০ বছরে মিয়ানমারে হয়েছে এর ধারাবাহিকতা বজায় রাখতে কোনো একটি ফর্মুলা বের করা। মিয়ানমার থেকে চীনা প্রভাবকে মুছে দিয়ে অথবা দেশটিতে পাশ্চাত্যে অংশগ্রহণে বাধা তৈরি করে এই সমাধান সম্ভব হবে না।

গার্ডিয়ানের এক বিশ্লেষণে এক্ষেত্রে ১৯৯১ সালে কম্বোডিয়ার জন্য জাতিসঙ্ঘ যে মডেল অনুসরণ করেছিল, তেমন একটি ফর্মুলা নিয়ে অগ্রসর হওয়ার বিষয় বিবেচনা করার কথা বলা হয়েছে। কম্বোডিয়া ইস্যুটি বৈশ্বিক প্রভাবগুলোর ক্ষেত্রে আরো বিস্তৃত ছিল এবং মিয়ানমারের রাজনৈতিক সমাধানের জন্য অনেক অংশগ্রহণকারীর প্রয়োজন হবে না কম্বোডিয়ার মতো। মিয়ানমারের গণতান্ত্রিক ধারাবাহিকতা বজায় রাখা এবং রোহিঙ্গা সঙ্কটের একটি গ্রহণযোগ্য সমাধানের জন্য আমেরিকা, চীন, বাংলাদেশ এবং ভারতের সক্রিয় অংশগ্রহণের সাথে ইন্দোনেশিয়া বা তুরস্ককে যুক্ত করা যেতে পারে।

বলার অপেক্ষা রাখে না, অং সান সু চি গণতন্ত্রের একটি ‘আইকন’ থেকে সেনাবাহিনীর সাথে সমন্বয় করতে পারেন, এমন এক জাতীয়তাবাদী রাজনীতিবিদ হিসেবে রূপান্তরিত হতে চেয়েছিলেন। এই কৌশলটি শেষ পর্যন্ত ব্যর্থ হয়েছে। রোহিঙ্গাদের ওপর সেনাবাহিনীর ভয়াবহ অত্যাচারকে সমর্থন করা এবং আন্তর্জাতিক ন্যায়বিচার আদালতে এ কাজের প্রতি সমর্থন দেয়ার ব্যাপারে তার রেকর্ডটি আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় ক্ষমাযোগ্য মনে করেন কি না, সংশয় রয়েছে। তবে পাশ্চাত্যের জন্য সু চির বিকল্প খুব একটা দেখা যায় না। মিয়ানমারে একটি শান্তিপূর্ণ, গণতান্ত্রিক ও অন্তর্ভুক্তিমূলক সমাধানের দৃষ্টিভঙ্গি বাস্তবায়নে সহায়তা করার জন্য আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের পক্ষে সু চিকে বাদ দিয়ে কিছু করা সহজ হবে না। মনে রাখতে হবে, সেনাবাহিনী যত বিতর্কই সৃষ্টি করার চেষ্টা করুক না কেন, সু চি ও তার দল সব বিবেচনায় গ্রহণযোগ্য একটি নির্বাচনে ৮৩ শতাংশ আসন লাভ করেছে। যেখানে স্বরাষ্ট্র ও প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় সরাসরি সেনাবাহিনী নিয়ন্ত্রণ করে; সেখানে নির্বাচন কমিশনের এককভাবে ভোট জালিয়াতি করার অভিযোগকে সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের অভিযোগের সাথেই তুলনা করা যায়।

মিয়ানমারের সামরিক অভ্যুত্থানের একটি আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক প্রভাবও থাকবে। বহু বছর ধরে এশিয়া, আফ্রিকা বা ল্যাটিন আমেরিকার সেনা অভ্যুত্থানপ্রবণ দেশগুলোতে সামরিক বাহিনীকে ক্ষমতা দখল করতে দেখা যায়নি। মিসর ও সুদান এর ব্যতিক্রম। মধ্যপ্রাচ্যের এ দুটি দেশে সামরিক বাহিনী ক্ষমতা দখল করেছে পাশ্চাত্যের নেপথ্য ইন্ধনে। মিয়ানমারে একই ঘটনা ঘটার পর এটি আন্তর্জাতিক পর্যায়ে ক্ষমতা দখল বা পরিবর্তনে একটি প্রবণতা হয়ে দাঁড়ায় কি না সেটি দেখার বিষয়।

তুমি এটাও পছন্দ করতে পারো

উত্তর দিন

আপনার ইমেইল ঠিকানা প্রচার করা হবে না.

WP2Social Auto Publish Powered By : XYZScripts.com