বিক্ষোভ দমাতে টুইটার অ্যাকাউন্ট বন্ধের আহ্বান ভারতের
ভারতে চলমান কৃষক বিক্ষোভের পরিপ্রেক্ষিতে দেশটির সরকারের অনুরোধে টুইটার কর্তৃপক্ষ অন্তত ২৫০ অ্যাকাউন্ট সাময়িকভাবে বন্ধ করে দিয়েছে। সোমবার টুইটারের এই পদক্ষেপে খ্যাতনামা বিভিন্ন সংবাদ ম্যাগাজিন ও কৃষক আন্দোলনে সংশ্লিষ্টদের অ্যাকাউন্ট বন্ধ হয়ে যায়।
ভারতের তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের এক সূত্র বার্তা সংস্থা এএফপির কাছে জানায়, কেন্দ্রীয় সরকার ‘জননিরাপত্তার জন্য হুমক ‘ সৃষ্টি করার অভিযোগে অন্তত ২৫০ টুইটার অ্যাকাউন্টের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার অনুরোধে একাউন্টগুলো সাময়িকভাবে বন্ধ করে দেয়া হয়।
সোমবার বিকেলে এই অ্যাকাউন্টগুলো বন্ধ করা হয়। তবে কয়েক ঘণ্টা পরেই তা আবার চালু করা হয়।
গত বছরের সেপ্টেম্বরে কেন্দ্রীয় মোদি সরকারের প্রস্তাবিত নতুন কৃষি সংস্কার আইন লোকসভায় পাস হলে ভারতজুড়ে কৃষকরা বিক্ষোভ শুরু করে। গত ২৬ নভেম্বর থেকে সারাদেশ থেকে হাাজার হাজার কৃষক রাজধানী নয়াদিল্লির উপকণ্ঠে জড়ো হয়ে কৃষি আইনের প্রতিবাদে বিক্ষোভ করে আসছে।
গত ২৬ জানুয়ারি, ভারতের প্রজাতন্ত্র দিবসে রাজধানী নয়াদিল্লিতে কৃষকদের এক র্যালি থেকে সহিংসতার সৃষ্টি হলে পুলিশ ডজন খানেক কৃষক ও দিল্লিভিত্তিক ক্যারাভান ম্যাগাজিনের এক সাংবাদিককে আটক করে।
টুইটারের সোমবারের পদক্ষেপে ম্যাগজিনটিসহ কৃষক আন্দোলনের কর্মী ও সংশ্লিষ্ট ইউনিয়ন, বিরোধীদলীয় নেতা, এক অভিনেতা ও এক অর্থনীতিবিদের একাউন্ট বন্ধ করা হয়।
টুইটারের এক মুখপাত্র এ প্রসঙ্গে বলেন, সময়ে সময়ে বিশেষ কোনো দেশে বাছাই করা কনটেন্টে প্রবেশ বন্ধ রাখা জরুরি যদি সঠিক তদন্তের পর তা অনুরোধ করা হয়।
কৃষক আন্দোলনের এক মুখপাত্র জানান, তাদের অ্যাকাউন্ট আন্দোলনে সমর্থন ছাড়া আর কোনো ত্রুটিই করেনি।
ক্যারাভানের নির্বাহী সম্পাদক বিনোদ কে জোস জানান, তাদের একাউন্ট বন্ধের এই পদক্ষেপ সংবাদের জেরে প্রকাশনার ওপর আক্রমণের দীর্ঘ তালিকায় সাম্প্রতিকতম।
বিশ্বজুড়ে গণমাধ্যমের স্বাধীনতা তদারককারী সংস্থা রিপোর্টার্স উইদাউট বর্ডারস টুইটারের এই পদক্ষেপের নিন্দা জানিয়ে বলেছে, ‘এটি নির্লজ্জ সেন্সরশীপের জঘন্য ঘটনা।’
সংস্থাটি জানায়, ‘এই বন্ধের আদেশের মাধ্যমে, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ওরওয়েলের মিনিস্ট্রি অব ট্রুথের মতো আচরণ করেছে, যারা কৃষকদের বিক্ষোভ সম্পর্কে নিজস্ব বক্তব্য চাপিয়ে দিতে চায়।’
ইংরেজ লেখক জর্জ ওরওয়েলের ‘নাইন্টিন এইটি ফোর’ উপন্যাসে ওশেনিয়া মহাদেশে এক কাল্পনিক দেশের বিষয়ে গল্প বলেন। ওই দেশের মিনিস্ট্রি অব ট্রুথ (সত্য মন্ত্রণালয়) সরকারের স্বার্থে ওশেনিয়ার যাবতীয় ঘটনার বিষয়ে নিজস্ব বক্তব্য তৈরি করে প্রচার-প্রপাগান্ডায় ব্যবহার করতো।
দিল্লিতে কৃষকদের র্যালিতে সহিংসতার ঘটনায় এখন পর্যন্ত অন্তত পাঁচটি মামলা দায়ের করা হয়েছে। সাংবাদিক ও বিরোধীদলীয় নেতাদের বিরুদ্ধে দায়ের করা এই মামলায় তাদেরকে ঘৃণা ছড়ানো ও ষড়যন্ত্রের অভিযোগে অভিযুক্ত করা হয়।
রিপোর্টার্স উইদাউট বর্ডারের ২০২০ সালের প্রেস ফ্রিডম ইনডেক্স অনুসারে ১৮০টি দেশের মধ্যে ভারত ১৪২ তম অবস্থানে রয়েছে।
সূত্র : আলজাজিরা