গণতন্ত্রকে কবরে শুইয়ে শেখ হাসিনার শক্তিশালী বিরোধী দল চাওয়া ‘শ্রেষ্ঠ ইয়ার্কি’: রিজভী

0

‘গণতন্ত্রের স্বার্থে শক্তিশালী বিরোধী দল নিঃসন্দেহে গুরুত্বপূর্ণ’- প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দেয়া এমন বক্তব্যের কড়া সমালোচনা করেছেন বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম-মহাসচিব অ্যাডভোকেট রুহুল কবির রিজভী।

তিনি বলেছেন, ‘গণতন্ত্র, আইনের শাসন, মানবাধিকার, রাষ্ট্র ও ভোটাধিকার ধ্বংসকারী রাতের ভোটে নির্বাচিত ‘অটো প্রধানমন্ত্রীর’ মুখে এই বক্তব্য নির্লজ্জতা ও হাস্যকর। গণতন্ত্রকে কবরে শায়িত করে এখন শক্তিশালী বিরোধী দল ও গণতন্ত্রের ধারা অব্যাহত রাখতে চেয়ে প্রধানমন্ত্রীর এ বক্তব্য দেশের মানুষের সঙ্গে বছরের শ্রেষ্ঠ ইয়ার্কি শ্রেষ্ঠ তামাশা।’

এর আগে গতকাল রবিবার মুজিববর্ষ ওয়েবসাইটের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী তাঁর বক্তব্যে বিরোধী দলগুলোর প্রতি ইঙ্গিত করে বলেছিলেন, ‘গণতন্ত্রের স্বার্থে শক্তিশালী বিরোধী দল নিঃসন্দেহে গুরুত্বপূর্ণ। গণতন্ত্রের জন্য শক্তিশালী বিরোধী দল অবশ্যই দরকার, কারণ আমরা গণতন্ত্রের ধারা অব্যাহত রাখতে চাই। এখন বিরোধী দল বলতে যে দলগুলি আছে তাদের নেতৃত্ব সেভাবে নেই বলেই তারা জনগণের আস্থা-বিশ্বাস অর্জন করতে পারেনি‘।’

সোমবার (১ ফেব্রয়ারি) দুপুরে নয়াপল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যের প্রতিক্রিয়ায় রিজভী আহমেদ এসব কথা বলেন।

রিজভী বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রীর এ বক্তব্য বছরের শ্রেষ্ঠ ইয়ার্কি শ্রেষ্ঠ তামাশা। এ ধরনের রসিকতা ও মিথ্যাচার তাঁর রাজনৈতিক সংস্কৃতির অংশ। বিবেকহীন মানুষের কথা আমলযোগ্য নয়। তিনি বেমালুম ভুলে গেছেন যে, জনগণের ভোটে নয়, তিনি আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর দ্বারা রাতের ভোটে নির্বাচিত প্রধানমন্ত্রী। তিনি যা বলেন, করেন তার উল্টোটা। তাঁর কথার সাথে কাজের কোনও মিল নেই।’

প্রধানমন্ত্রীর বিভিন্ন সময়ে দেয়া ভাষণ-বক্তব্যগুলোর প্রতি আলোকপাত করে রুহুল কবির রিজভী বলেন, ‘শেখ হাসিনা প্রায়ই বলেন, ‘আমি প্রধানমন্ত্রীত্ব চাই না, আমি মানুষের শান্তি চাই’। কিছুদিন আগেও একটি বিদেশি সংবাদমাধ্যমকে বলেছেন ‘আর চাই না প্রধানমন্ত্রীত্ব!’ এসব কথা বলে আবার তাঁর মোসাহেব মন্ত্রীদের দিয়ে বলান, ‘শেখ হাসিনা যতদিন জীবিত ও কর্মক্ষম থাকবেন ততদিন প্রধানমন্ত্রী পদ থেকে কেউ সরাতে পারবে না।’ এখন বলছেন- ‘শক্তিশালী বিরোধী দল লাগবে উনার’। প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্য রেজিমের চামুন্ডারাই কেবল মহিমা কীর্তণ করে থাকে, যা জনগণের কাছে বিশ্বাসযোগ্য নয়। সম্ভবত ভাঁড় ও মোসাহেব পরিবেষ্টিত রাজসভায় সুচিন্তা ও মননশীলতা হারিয়ে গিয়ে বিকৃত রুচির পরিধি বৃদ্ধি পায়। গণতন্ত্রকে ধ্বংস করা আওয়ামী লীগের ধর্ম। গণতন্ত্রকে নিহত করে সেই পুরনো একদলীয় বাকশালই জেঁকে বসেছে বর্তমানে। গণতন্ত্রের লাশের ওপর পুরো রাষ্ট্র ও সমাজটাকে নিয়ে যাওয়া হয়েছে ভয় ও ত্রাসের অধীনে।’

বিএনপির এই শীর্ষনেতা বলেন, ‘দেশের পরিস্থিতি এতটাই খারাপ যে এখন বিকল্প মত প্রকাশেরও সুযোগ নেই। ক্ষমতাসীনদের নিয়ন্ত্রণে গণতন্ত্র ও মিডিয়া। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বিরোধীদল নির্মূলের কাজ করে আসছেন অত্যন্ত সুপরিকল্পিতভাবে। যে দেশে গুম ও ক্রসফায়ার আর লক্ষ লক্ষ নেতাকর্মীর নামে মিথ্যা ও গায়েবি মামলা জাতীয় জীবনের অংশ হয়, সে দেশে শক্তিশালী বিরোধী দল গড়ে তোলার কথা যে বছরের ‘শ্রেষ্ঠ ইয়ার্কি’ ছাড়া আর কিছুই নয়।’

রিজভী বলেন, ‘বর্তমান সরকার পরিকল্পিতভাবে শুধুমাত্র বিএনপি নয়, সকল বিরোধী দল এবং ভিন্ন মতাবলম্বীদের নির্মূলের চেষ্টা করছেন। নিশিরাতের সংসদে আওয়ামী লীগের বানানো একটি কথিত বিরোধী দল আছে। তাদের নেত্রী সংসদে দাঁড়িয়ে বলেন, তাঁরা দেশে-বিদেশে নিজেদের পরিচয় দিতে পারেন না। সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলতে লজ্জা লাগে। কারণ, সবাই জানতে চায়, তারা সরকারি দল না বিরোধী দল। প্রধানমন্ত্রীর উদ্দেশ্যে বিরোধী দলীয় নেতা প্রশ্ন রাখেন, ‘আমরা সরকারি দল, না বিরোধী দল, কোনটা আমরা?’’

তিনি আরও বলেন, ‘পৃথিবীতে এমন নজিরবিহীন মিডনাইটের ‘অটো এমপিদের’ সংসদ আর নেই। যেমনিভাবে তারা এবারে অটো পাস আর জিপিএ-৫ এর ছড়াছড়ি দেখালেন সেটিরও নজির পৃথিবীতে  নেই। মিডনাইট নির্বাচন করে ক্ষমতা জবরদখলে রাখতে হলে শেখ হাসিনার দরকার মেরুদণ্ডহীন একটি অশিক্ষিত জাতির। তাই নজিরবিহীন অটো পাস দিলেন কোমলমতি ছাত্রছাত্রীদের।’

রিজভী বলেন, ‘আওয়ামী লীগের অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা আবুল মনসুর আহমেদ দুঃখ করে তাঁর বইয়ে লিখেছেন, ‘১৯৭৩ সালে যেখানে অন্য কোনও দলের ক্ষমতায় আসার কোনও আভাস ছিল না, তারপরও ছোট্ট বিরোধী দলকে আওয়ামী লীগ সহ্য করতে পারেনি।’

বিএনপির অন্যতম এই মুখপাত্র বলেন, ‘আওয়ামী লীগের বর্তমান প্রধানমন্ত্রী গণতন্ত্র হত্যার বিজয় অভিযানের অগ্রগতির ছায়াসঙ্গী করেছেন বিরোধী দলের ওপর পৈশাচিক নিপীড়ন-নির্যাতন চালিয়ে। গণতন্ত্রকে কবরে শায়িত করে এখন গণতন্ত্রের ধারা অব্যাহত রাখতে চান তিনি। শক্তিশালী বিরোধী দল চান। জনগণ জানে, প্রধানমন্ত্রী নির্ভেজাল টাটকা মিথ্যা কথা বলছেন। আদতে তিনি চান বিরোধী দল-ও মতের কবর রচনা করতে। যা তাঁর গত এক যুগের কর্মকাণ্ডে হাড়ে হাড়ে টের পাচ্ছে দেশের মানুষ।’

রিজভী বলেন, ‘আওয়ামী লীগ আর গণতন্ত্র পরস্পরবিরোধী সত্তা। এক সাথে চলতে পারে না। একদিকে দুর্নীতি-দুঃশাসন অন্যদিকে আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী এবং দলীয় সন্ত্রাসীদের ওপর নির্ভর করে বিরোধী নেতাকর্মীদের ওপর হামলা, মামলা, খুন ও জখম চালিয়ে দেশব্যাপী ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করা হয়েছে। দেশে অনিশ্চয়তা, অস্থিতিশীলতা সৃষ্টি করা হয়েছে। বিএনপিকে কীভাবে নেতৃত্বশূন্য করা যাবে, অস্তিত্বশূন্য করা যাবে, নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে হাজার হাজার মামলা দিয়ে, গুম করে, খুন করে দলটিকে অকার্যকর করা যাবে, সেটাই দীর্ঘ বারো বছর ধরে আওয়ামী লীগের প্রধান কর্মসূচি হয়ে এসেছে।’

তিনি বলেন, ‘বিরোধী দলের নেতৃত্বকে মাস্টারপ্ল্যানের মাধ্যমে হত্যা চেষ্টা অব্যাহত রেখেছেন প্রধানমন্ত্রী। যিনি প্রতিহিংসা ও বিদ্বেষের রাজনীতিতে ডুবে থাকেন তিনি কি করে শক্তিশালী বিরোধী দলের কথা বলেন ? এ যেন ‘ভুতের মুখে রাম নাম’। সম্পূর্ণ প্রতিহিংসার বশবর্তী হয়ে এদেশের সবচেয়ে জনপ্রিয় নেত্রী, চারবারের নির্বাচিত প্রধানমন্ত্রী বিএনপি চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়াকে মিথ্যা মামলায় বন্দী রেখে বিনা চিকিৎসায় হত্যা করার জন্য গৃহবন্দি করে রাখা হয়েছে তা দেশবাসী দেখতে পাচ্ছে। তাঁকে চিকিৎসার জন্য বিদেশে যেতে দেয়া হচ্ছে না। বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের নামে অসংখ্য মিথ্যা মামলা দিয়ে, ফরমায়েশী রায় দিয়ে দেশে ফিরতে দেয়া হচ্ছে না। আমাদের প্রায় ৩৫ লাখ নেতাকর্মীর নামে এক লাখেরও বেশি মামলা দায়ের করা হয়েছে। এছাড়াও ৫০০-এর বেশি গুমসহ হাজারো নেতা-কর্মীকে হত্যা করা হয়েছে।’

বিএনপির এই নেতা বলেন, ‘আমাদের দলের সকল সিনিয়র নেতার নামে অসংখ্য মামলা। আদালতের বারান্দায় বিএনপি নেতাদের দিন কাটে। বিএনপির মতো বিশ্বে খুব কমই রাজনৈতিক দল আছে যারা গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠায় এতো নির্যাতন সহ্য করেছে। দেশে নির্বাচন ব্যবস্থাকে পুরোপুরি ধ্বংস করে অবৈধভাবে সরকার গঠন করে বড় বড় কথা বললেও গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের লড়াইয়ে তারা পরাজিত হবেই। আওয়ামী লীগ ও তাদের গৃহপালিত দল ছাড়া এদেশে বর্তমানে সুষ্ঠু ভোট হয়, একথাটি কেউ বিশ্বাস করে না। দেশের বৃহত্তম দল বিএনপিসহ অন্যান্য সকল রাজনৈতিক দল ও নাগরিক সমাজ গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠার যে আন্দোলন করেছে তার বিজয় সুনিশ্চিত।’

রিজভী বলেন, ‘শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন আওয়ামী আক্রমণের অভিঘাতে, নির্বিচার লুণ্ঠন ও ধ্বংসে বাংলাদেশের রাজনৈতিক ও সামাজিক কাঠামো ভেঙে ফেলা হয়েছে। বর্তমানে দেশে স্বমহিমায় বিরাজ করছে শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আওয়ামী নাৎসীবাদের এক ভয়ানক মূর্তি।’

তিনি আরও বলেন, ‘বরিশালের গৌরনদী পৌরসভার নির্বাচনে ধানের শীষের মেয়র প্রার্থীর প্রচার মাইক ভেঙ্গে ফেলা হয়েছে, পোস্টার-ব্যানার লাগাতে দেয়া হয়নি, লাগানো পোস্টার ছিঁড়ে ফেলা হয়েছে। নেতাকর্মীদের মারধরসহ প্রাণনাশের হুমকি দেয়া হয়েছে। ভোটের দিন বিএনপির এজেন্টদের কেন্দ্র থেকে বের করে দিয়েছে আওয়ামী ক্যাডার’রা। ভোটারদের কাছ থেকে ব্যালট পেপার কেড়ে নিয়ে তাতে নৌকা প্রতীকের সিল মেরে ব্যালট বাক্স ভর্তি করা হয়েছে। সেখানে ভোট বর্জনের ঘোষণা দিয়ে অনতিবিলম্বে সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের দাবি জানিয়েছেন বিএনপি মনোনীত মেয়র প্রার্থী জহির সাজ্জাদ হান্নান শরীফ।’

সংবাদ সম্মেলনে বিএনপির চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আব্দুস সালাম, যুগ্ম-মহাসচিব হাবিব-উন-নবী খান সোহেল, কেন্দ্রীয় নেতা মীর সরাফৎ আলী সপু ও আব্দুস সালাম আজাদ প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।

তুমি এটাও পছন্দ করতে পারো

উত্তর দিন

আপনার ইমেইল ঠিকানা প্রচার করা হবে না.

WP2Social Auto Publish Powered By : XYZScripts.com