কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে অবৈধ গ্যাস সিন্ডিকেট
২০১৩ সাল থেকে সরকারি নির্দেশনা অনুযায়ী সারাদেশে নতুন গ্যাস সংযোগ দেয়া বন্ধ থাকলেও ব্রাহ্মণবাড়িয়া যেন এর ব্যতিক্রম। প্রতিদিনই নতুন নতুন গ্যাস সংযোগ দেয়া হচ্ছে এখানে। অবাধে চলছে অবৈধ গ্যাস সংযোগের মহোৎসব।
অভিযোগ রয়েছে, সংশ্লিষ্ট অসাধু ব্যক্তিদের ম্যানেজ করে একটি সিন্ডিকেট অবৈধভাবে গ্যাস সংযোগ দিয়ে গ্রাহকদের কাছ থেকে মোটা অঙ্কের অর্থ হাতিয়ে নিচ্ছে। এতে একদিকে যেমন সরকার হারাচ্ছে বিপুল পরিমাণ রাজস্ব তেমনি প্রাণহানীর মত বড় ধরনের দুঘর্টনার আশংকাও রয়েছে।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, জেলার সদরসহ বিভিন্ন স্থানে এই চক্রটি হাজার হাজার অবৈধ গ্যাস সংযোগ দিচ্ছে। সদর উপজেলার সুহিলপর, ঘাটুরা, সুতিয়ারা, নন্দনপুর, নাটাই, বিহাইরসহ বিভিন্ন গ্রামের বাসাবাড়িতে চক্রটি অবৈধ গ্যাস সংযোগ দেয়ার মাধ্যমে গ্রাহকদের কাছ থেকে হাতিয়ে নিচ্ছে কোটি কোটি টাকা। অভিযোগ রয়েছে- বাখরাবাদ গ্যাস ডিস্ট্রিবিউশনের স্থানীয় কার্যালয়ের কিছু অসাধু কর্মকর্তা-কর্মচারীর যোগসাজশে বছরের পর বছর এ অবৈধ গ্যাস সংযোগের কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে চক্রটি।
কর্তৃপক্ষ বিভিন্ন সময় অভিযান চালিয়ে এসব অবৈধ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করলেও কোনোভাবেই যেন এ সিন্ডিকেটকে প্রতিরোধ করা যাচ্ছে না। মাইলের পর মাইল অবৈধ সংযোগ দিয়ে যাচ্ছে তারা।
গ্যাসের অবৈধ এ সংযোগ সবচেয়ে বেশি রয়েছে সদরের সুহিলপুর ইউনিয়নের ।
সুহিলপুর গ্রামের ফারুক মিয়া বলেন, নিয়ম অনুযায়ী একটি বৈধ সংযোগের জন্য যেখানে ৮-১০ হাজার টাকা দিতে হয় সেখানে প্রতিটি সংযোগের জন্য ৬০ হাজার থেকে এক লাখ টাকা পর্যন্ত আমাদের কাছ থেকে নেয়া হয়েছে। কিন্তু তারা সংযোগ দিলেও বই না থাকায় ম্যাজিট্রেস্ট এসে অভিযান চালিয়ে সংযোগ বিছিন্ন করে দিয়ে গেছে। এখন তাদের কাছে টাকা চাইলে উল্টো ভয়ভীতি দেখাচ্ছে।
সুতিয়ারা গ্রামের ইউসুফ মিয়া বলেন, এত টাকা দিয়েও গ্যাস সংযোগ আনার পর বছরের পর বছর বিল বই পাচ্ছি না। আবার অনেকে বিল বই পেয়ে বছরের পর বছর ব্যাংকে টাকা জমা দিয়ে এলেও তাদের সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দিয়েছে অফিসের লোকজন।
এছাড়া অনেকে জমিজমা বিক্রি করে এমনকি ধার-দেনা করে সিন্ডিকেটকে স্ট্যাম্পে চুক্তির মাধ্যমে টাকা দেয়ার পর সংযোগ পেলেও তা আবার বিচ্ছিন্ন করে দেয়া হয়েছে। আমরা এ ঘটনার বিচারের দাবি জানাচ্ছি।
ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা পঙ্কজ বড়ুয়া বলেন, সিন্ডিকেটের বিরুদ্ধে কেউ লিখিত অভিযোগ জানায়নি। বাখরাবাদ গ্যাস ডিস্ট্রিবিউশন কর্তৃপক্ষের কাছে কেউ লিখিত অভিযোগ দিয়েছে কি না তা জানি না। অভিযোগ পেলে তদন্ত করে আইনি ব্যবস্থা নেয়া হবে।
ব্রাহ্মণবাড়িয়া বাখরাবাদ গ্যাস ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেডের ব্যবস্থাপক শফিকুল ইসলাম বলেন, অবৈধ সংযোগের ব্যাপারে অভিযান অব্যাহত আছে। চক্রটির বিরুদ্ধে অনেক গ্রাহক মুখে বললেও লিখিত অভিযোগ কেউ করেনি। কর্মচারীদের মধ্যে যদি কেউ অবৈধ গ্যাস সংযোগের সঙ্গে জড়িত থাকে এবং এ ব্যাপারে লিখিত অভিযোগ পেলে ব্যবস্থা নেয়া হবে।