৭৫ সালের ৭ নভেম্বরের পরাজিত অপশক্তি জনগণকে দাবিয়ে রাখতে চায়: তারেক রহমান
বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান বলেছেন, স্বাধীনতার সুবর্ণ জয়ন্তীর দ্বারপ্রান্তে বাংলাদেশ। কিন্তু দুর্ভাগ্য বাংলাদেশের, দুর্ভাগ্য জনগণের, অপ্রিয় বাস্তবতা হচ্ছে, স্বাধীন বাংলাদেশে আজ একটি স্বাধীন সরকার নেই, স্বাধীন বাংলাদেশে নাগরিকরা আজ পরাধীন, স্বাধীন বাংলাদেশের সেনাপ্রধান কে হবেন সেটিও নাকি নির্ধারিত হয় অন্য দেশ থেকে।
গস্বাধীনতার সুবর্ণ জয়ন্তী উদযাপনে গঠিত বিএনপির জাতীয় কমিটির ভার্চুয়াল বৈঠকে তিনি এসব কথা বলেন।
বৈঠকে সভাপতিত্ব করেন বিএনপি’র জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য ও বাংলাদেশের সুবর্ণ জয়ন্তী উদযাপনে বিএনপি গঠিত জাতীয় কমিটির সভাপতি ড. খন্দকার মোশাররাফ হোসেন। বৈঠকে সুবর্ণ জয়ন্তী উদযাপনে বছরব্যাপী বিস্তারিত কর্মসূচি গ্রহন ও প্রণয়ন এবং দেশের চলমান সংকট নিয়ে আলোচনা হয়। বৈঠকে বিএনপির জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য, সুবর্ণ জয়ন্তী উদযাপনে জাতীয় কমিটি ও উপকমিটির শীর্ষ নেতারা অংশ নেন ।
বৈঠকে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তারেক রহমান বলেন, জনগণের সামনে একটি বিষয় স্পষ্ট, আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় থাকলে দেশে গণতন্ত্র, ভোটাধিকার থাকেনা। আবার দেশে গণতন্ত্র, ভোটাধিকার থাকলে আওয়ামী লীগ থাকেনা। এই বাস্তবতায় তিনি বলেন, আওয়ামী লিগ এবং তাদের দোসরদের কবল থেকে বাংলাদেশকে মুক্ত করতে বাংলাদেশের পক্ষের শক্তি, দেশপ্রেমিক জাতীয়তাবাদী শক্তি, গণতন্ত্রের পক্ষের শক্তির দুর্বার প্রতিরোধ গড়ে তোলা এখন সময়ের দাবি।
সবাইকে আন্দোলনের প্রস্তুতি নেয়ার আহবান জানিয়ে তারেক রহমান বলেন, হতাশার কিছু নেই। হিটলার থেকে হাসিনা, আইয়ুব খান কিংবা ইয়াহিয়া, মানুষকে পরাজিত করে মানুষের অধিকার কেড়ে নিয়ে বিশ্বের কোনো দেশে কখনো কোন স্বৈরাচার টিকে থাকতে পারেনি। বাংলাদেশেও পারবেনা। গণতন্ত্রকামী মানুষ জেগে উঠলে বাংলাদেশেও ক্ষমতাসীন অপশক্তির দুঃশাসন আর দীর্ঘায়িত হবেনা।
বিএনপিকে দেশপ্রেমিক জাতীয়তাবাদী শক্তির নেতৃত্বদানকারী ও প্রতিনিধিত্বকারী রাজনৈতিক দল উল্লেখ করে তারেক রহমান বলেন, বিভিন্ন কারণেই বিএনপির কাছে বাংলাদেশের স্বাধীনতা ও বিজয় অনেক বেশি গুরুত্ত্ব ও তাৎপর্যপূর্ণ। কমপক্ষে দু’টি কারণ উল্লেখ করে তিনি বলেন, যিনি বাংলাদেশের মহান স্বাধীনতার ঘোষক তিনিই বিএনপি’র প্রতিষ্ঠাতা এবংবিএনপির জন্মের মৌল ভিত্তি কিংবা মৌল চেতনা’ই হলো বাংলাদশের মুক্তিযুদ্ধের মূলমন্ত্র, সাম্য-মানবিক মর্যাদা এবং সামাজিক সুবিচার।
তারেক রহমান বলেন, সদ্য স্বাধীন বাংলাদেশে যারা রাষ্ট্র ক্ষমতায় বসেছিল তারা মুক্তিযুদ্ধের কাঙ্খিত ধারায় দেশ পরিচালনায় সক্ষম হলে হয়তো বিএনপি গঠনের প্রয়োজন হতোনা। স্বাধীনতাত্তোর বাংলাদেশে ক্ষমতাসীন সরকার মুক্তিযুদ্ধের মূলমন্ত্র থেকে সরে গিয়ে স্বেচ্ছাচারিতায় লিপ্ত হওয়ায় সময়ের প্রয়োজনেই বিএনপির জন্ম হয়েছিল। অতএব, বাংলাদশের মুক্তিযুদ্ধ, বাংলাদেশের স্বাধীনতা, বাংলাদেশের স্বাধীনতার ঘোষক জিয়া এবং বিএনপি একইসূত্রে গাঁথা।
তিনি বলেন, জাতীয়তাবাদী শক্তির কাছে, বাংলাদেশের পক্ষের শক্তি কাছে জিয়াউর রহমান মানেই মুক্তিযুদ্ধের বাংলাদেশ। জিয়াউর রহমান মানেই মুক্তিযুদ্ধের মূলমন্ত্র সাম্য-মানবিক মর্যাদা-সামাজিক সুবিচার। বিএনপি মানেই মাতৃভূমির স্বাধীনতার রক্ষক। বিএনপি মানেই মানুষের বাক ও ব্যক্তি স্বাধীনতার রক্ষাকবচ।
বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান বলেন, ৭৫ সালের ৭ নভেম্বরের পরাজিত অপশক্তি বরাবরই মিথ্যাচার এবং অপপ্রচার চালিয়ে জাতীয়তাবাদী শক্তিকে দাবিয়ে রাখতে চায়। এ ব্যাপারে সবাইকে সতর্ক এবং সচেতন থাকার আহবান জানিয়ে তারেক রহমান বলেন, ৭৫ সালের ৭ নভেম্বরের পরাজিত অপশক্তি এখন মহাজোটের নামে একজোট হয়েছে। তাদের টার্গেট হচ্ছে দেশপ্রেমিক জাতীয়তাবাদী শক্তি এবং দেশের মর্যাদার প্রতীক সেনাবাহিনীকে দুর্বল করে রাখা।
তারেক রহমান বলেন, ৭৫ সালের ৭ নভেম্বরের পরাজিত অপশক্তির চক্রান্ত এবং ও ষড়যন্ত্রের অংশ হিসেবে দেশে-বিদেশে জাতীয়তাবাদী শক্তিকে প্রশ্নবিদ্ধ করতেই ২০০৪ সালে সুপরিকল্পিতভাবে ২১ আগষ্টের ঘটনা ঘটানো হয়েছিল। ‘২১ আগস্ট ‘ এবং কথিত ‘ওয়ান ইলেভেন’ কোনো বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয় বরং ‘২১ আগস্ট’ এবং ‘ওয়ান-ইলেভেন’ একই সূত্রে গাঁথা। একটি ‘ওয়ান-ইলেভেন’ এর নাটক মঞ্চস্থ করার জন্যই পরিকল্পতিভাবে ‘২১ আগষ্টের ঘটনা’ ঘটানো হয়েছিলো।
তিনি বলেন, ৭৫ সালের ৭ নভেম্বর যারা দেশকে উল্টো পথে নিতে ব্যর্থ হয়েছিল, ২০০৭ সালে কথিত ‘ওয়ান-ইলেভেনে’র মাধ্যমে তারা সফল হয়। ‘মাদার অফ ডেমোক্রেসি’ বেগম খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে মিথ্যাচার এবং ২০০৯ সালে বিডিআর পিলখানায় সেনা হত্যাযজ্ঞ ৭৫ এর ৭ নভেম্বরের পরাজিত অপশক্তির প্রতিশোধের অংশ। ‘ ঐতিহাসিক ৭ নভেম্বর এবং ৭ নভেম্বরের পূর্বাপর প্রেক্ষাপট নতুন প্রজন্মের সামনে যথাযথভাবে তুলে ধরার জন্য তিনি দেশপ্রেমিক জাতীয়তাবাদী শক্তির প্রতি আহবান জানান।
তারেক রহমান বলেন, ২০১৮ সালের ২৯ ডিসেম্বর দিবাগত নিশিরাতে ১০ কোটি মানুষের ভোটাধিকার হরণ করে যারা বর্তমানে ক্ষমতা জবরদখল করে আছে, তারা সত্য আড়াল করে রাখতে চায়। র্যাব পুলিশের ভয় দেখিয়ে জনগণকে তাদের কলংকিত ইতিহাস ভুলিয়ে দিতে চায়। আদালতকে ব্যবহার করে ইতিহাস নির্মাণ করতে চায়। তবে, সচেতন মানুষ কখনোই তাদের এসব বিকৃত ইতিহাস বিশ্বাস করেনা।
বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান বলেন, দেশের মানুষ বিশেষ করে তরুণ প্রজন্ম জানতে চায়, স্বৈরশাসক আয়ুব খানের ‘বেসিক ডেমোক্রেসি ‘আর বাকশালের মধ্যে পার্থক্য কি? মুক্তিযুদ্ধকালীন সরকারের প্রধানমন্ত্রী ছিলেন তাজউদ্দীন আহমদ। কেন তাকে স্বাধীনতাত্তোর আওয়ামী লীগ সরকারের মন্ত্রিসভা থেকে পদত্যাগ করতে হলো ? ১৯৭৫ সালের ৬ নভেম্বর দিনে-রাতে কারা খোদ ক্যান্টনমেন্টের ভেতর ১৩ জন সেনা অফিসারকে হত্যা করেছিল ? স্বাধীন বাংলাদেশে আওয়ামীলীগকে কে নিষিদ্ধ করেছিল? ১৮ মাসের দণ্ডপ্রাপ্ত এক রাজাকারকে মন্ত্রী বানিয়ে কোন সরকার তার গাড়িতে জাতীয় পতাকা তোলার সুযোগ করে দিয়েছিলো? খুন-গুম-অপহরনের বিচার বন্ধে বাংলাদেশের ইতিহাসে কে প্রথম ইনডেমনিটি জারি করেছিল ?
বিএনপি’র ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান আশা প্রকাশ করে বলেন, বিএনপির বছরব্যাপী সুবর্ণ জয়ন্তীর নানা কর্মসূচির মধ্য দিয়ে জনমনে থাকা এমন অনেক প্রশ্নের জবাব বেরিয়ে আসবে। বেরিয়ে আসবে ইতিহাসের অনেক অজানা সত্য, অগোচরে থাকা অনেক তথ্য। একইসঙ্গে, দুর্নীতি-সন্ত্রাস-নৈরাজ্যে পতিত সদ্য স্বাধীন বাংলাদেশকে, আধুনিক, উন্নত ও বিশ্ব দরবারে মর্যাদাশীল রাষ্ট্রে পরিণত করার ক্ষেত্রে শহীদ জিয়ার বলিষ্ঠ নেতৃত্ব এবং স্বাধীন বাংলাদেশের ৫০ বছরে জনগণের প্রত্যাশা ও প্রাপ্তিপূরণে বিএনপির সাফল্য কথাও নতুন প্রজন্ম আরো বেশি করে জানতে পারবে বলেও তিনি আশা প্রকাশ করেন।
তারেক রহমান বলেন, স্বাধীনতা ও মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে বিএনপি’র নতুন ইতিহাস তৈরির প্রয়োজন নেই। বাংলাদেশের সৃষ্টি ও বিনির্মানে স্বাধীনতার ঘোষক জিয়া এবং বিএনপির ভূমিকা ইতিহাসের আপন আলোয় উদ্ভাসিত। কারণ, বাংলাদেশের জন্ম, বিকাশ অগ্রগতি ও সাফল্য প্রতিটি ক্ষেত্রেই শহীদ জিয়া ও বিএনপি অঙ্গাঙ্গিভাবে জড়িত। গণতান্ত্রিক বাংলাদেশ মানেই বিএনপি, বিএনপি মানেই গণতান্ত্রিক বাংলাদেশ।সুবর্ণ জয়ন্তী উদযাপনের পাশাপাশি তারেক রহমান দলের সর্বস্তরের নেতাকর্মীদের প্রতি ঐতিহাসিক ৭ নভেম্বরের পরাজিত অপশক্তিকে আবারো পরাজিত করার চূড়ান্ত প্রস্তুতি নেয়ার আহবান জানান।
তিনি বলেন, গণতন্ত্র ও ভোটাধিকার পুনরুদ্ধারে চলমান এই আন্দোলনের স্লোগান ‘দেশ বাঁচাও -মানুষ বাঁচাও’