জিয়াউর রহমানকে স্বাধীনতার ঘোষক না বলায় রাষ্ট্রপতিকে ধন্যবাদ দিতে অস্বীকৃতি এমপি সিরাজের
রাষ্ট্রপতি তার বক্তব্যে বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমানকে স্বাধীনতার ঘোষক উল্লেখ না করায় তাকে ধন্যবাদ জানাতে পারছি না বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপি দলীয় সংসদ সদস্য গোলাম মোহাম্মদ সিরাজ।
রোববার সংসদে রাষ্ট্রপতির ভাষণের ওপর আনা ধন্যবাদ প্রস্তাবের আলোচনায় বিরোধী দলীয় সংসদ সদস্য এ মন্তব্য করেন। এ সময় সরকারদলীয় সংসদ সদস্যরা তার কথার প্রতিবাদ জানান। এসময় সংসদে হইচই শুরু হয়। এক পর্যায়ে সরকার দলের এমপিদের চুপ থাকার আহ্বান জানান ডেপুটি স্পিকার ফজলে রাব্বী মিয়া। এ সময় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সংসদে উপস্থিত ছিলেন।
রাষ্ট্রপতির বক্তব্যের সমালোচনা করে সিরাজ বলেন, রাষ্ট্রপতি তার বক্তব্যে ঘুষ, দুর্নীতি, সন্ত্রাস, হত্যা, ধর্ষণ নিয়ে কোনো কথা বলেননি এবং দিক নির্দেশনা দেননি বলে আমি তাকে ধন্যবাদ দিতে পারছি না।রাষ্ট্রপতি শুধু পরিচ্ছন্ন রাজনীতিবিদ নন; তিনি আমাদের অভিভাবক। তিনি রাষ্ট্র্রের অভিভাবক। রাষ্ট্রপতি প্রধানমন্ত্রীর সফলতার কথা বলেছেন। আমিও বলি। প্রধানমন্ত্রীকে ধন্যবাদ দিতে চাই, গণতন্ত্র আর সুশাসন বাদ দিয়ে সন্ত্রাস-জঙ্গিবাদ নির্মূলের জন্য। নারীর ক্ষমতায়নের জন্য ধন্যবাদ দিতে চাই। জনগণ রাষ্ট্রপতির মুখে সত্য ভাষণ শুনতে চায়। তার মুখে সত্যের অপলাপ শুনতে চায় না।
স্বাস্থ্য ও আর্থিক খাতেরও সমালোচনা করে বিএনপির এই সংসদ সদস্য বলেন, টাকা পাচারকারীরা অদৃশ্য ও অধরা রয়ে গেছে। এদের পৃষ্ঠপোষক কারা? এরা সবাই সরকারের মদদপুষ্ট, সরকারের সঙ্গে সরাসরি সম্পৃক্ত। তিনি অভিযোগ করেন, সরকারের ঘনিষ্ঠ লোককে সুবিধা দেওয়া হচ্ছে। এসময় তিনি ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের নেতাদেরও সমালোচনা করেন।
সিরাজ বলেন, সরকারি দলের সর্বস্তরের নেতারা ইউনিয়ন থেকে রাজধানী পর্যন্ত সর্বগ্রাসী দুর্নীতিতে জড়িয়ে পড়েছেন। বিচারহীন দেশে দাপিয়ে বেড়াচ্ছেন। চলমান সংসদেও এক ডজন সংসদ সদস্য দুর্নীতি, সরকারি-বেসরকারি জমি দখল, বিদেশে অর্থ পাচার, মানব পাচারে জড়িত। তাদের কোনো জবাবদিহিতা নেই।
এমপি সিরাজ বর্তমান সরকারে অধীনে বিভিন্ন নির্বাচনের সমালোচনা করে বলেন, ভোটের মালিক পুলিশ, প্রশাসন আর নির্বাচন কমিশন। ভোট মানে উইং সার্টিফিকেট। হাজার কোটি টাকা, জনগণের অর্থ ব্যয় করে প্রহসনের নির্বাচন করে কী লাভ? একনায়কতন্ত্র আর গণতন্ত্র দুটি পরস্পরবিরোধী। তিনি বলেন, সরকারকে যে কোনো একটি পথ বেছে নিতে হবে। গণতন্ত্রের মিথ্যা বুলি বাদ দিয়ে অঘোষিত বাকশাল পন্থা পরিহার করে, সরাসরি বাকশাল সরকার গঠন হোক। নতুবা দেশের মালিক জনগণকে দেশটি ফিরিয়ে দিন। ফিরিয়ে দিন মানুষের অধিকার, মানুষের স্বাধীনতা।
সরকার দলীয় সংসদ সদস্যদের হইচইয়ের নিন্দা জানিয়ে এমপি সিরাজ বলেন, আমার সহকর্মীরা অযথা হইচই করছেন। জনগণ আমাদের কথা শুনতে চায়। সংখ্যায় কম হলেও শুনতে চায়।
এমপি সিরাজের গণতন্ত্রের চর্চার বক্তব্যের জবাবে ডেপুটি স্পিকার ফজলে রাব্বী মিয়া বলেন, আপনি (সিরাজ) চর্চার কথা বললেন। এই চর্চা আপনারা ওই গ্যালারি থেকে… থুথুর চর্চা আমার গায়ে দেখিয়েছিলেন ৯০-৯১, ২০০১ সালে। গায়ে থুথু দিয়েছিলেন। আমি তখন জাতীয় পার্টি করতাম। আই অ্যাম কনফেসিং। যেহেতু আমি বিএনপিকে অ্যাটাক করে বক্তব্য দিয়েছিলাম, আমার গায়ে থুথু দেয়া হয়েছিল। এই প্রাকটিসও আপনারা দেখিয়েছেন। এসময় সবাইকে অনুরোধ জানিয়ে ডেপুটি স্পিকার বলেন, সংসদীয় গণতন্ত্রের জন্য সহনশীলতা থাকতে হবে। গণতন্ত্রের ভাষা পেতে হলে, আপনাকে গণতন্ত্রের ভাষায় কথা বলতে হবে।