মেম্বারকে টাকা-গরু দিয়েও ভিক্ষুকের ভাগ্যে জুটল না প্রকল্পের ঘর!
শেষ সম্বল একটি গরু ও ভিক্ষা করে সঞ্চিত ২৫ হাজার টাকা স্থানীয় ইউপি মেম্বার আব্দুল জলিল মিয়াকে দিয়েও সরকারি আবাসন প্রকল্পের ঘর পাননি বলে অভিযোগ করেছেন রংপুরের মিঠাপুকুরের শাল্টি গোপালপুর ইউনিয়নের মরিচবাড়ি গ্রামের ভিক্ষুক অন্ধ এনদা মিয়া।
এছাড়াও গরু-ছাগল ও নগদ টাকা দিয়েও প্রধানমন্ত্রীর আবাসন প্রকল্পের ঘর না পাওয়ার অভিযোগ জানিয়েছেন ওই গ্রামের কিছু প্রতিবন্ধী ও ছিন্নমূল মানুষ। ঘর দেবার কথা বলে তাদের কাছ থেকেও ওই ইউপি মেম্বার টাকা নিয়েছেন বলে অভিযোগ ভুক্তভোগীদের।
মরিচবাড়ি এলাকার ভিক্ষুক অন্ধ এনদা মিয়া (৩০) বলেন, ‘আমি তো ভিক্ষুক, ভিক্ষা করে খাই। অন্যের জমিতে থাকি। ভিক্ষা করে একটা গরু কিনছিনু সেই গরুটাও জলিল মেম্বার সরকারের কাছ থেকে ঘর নিয়ে দেয়ার কথা বলে হামার কাছ থেকে নিয়ে গেছে ভাই। আমিতো চোখে দেখি না। আমার মায়ের কাছ থেকে ২৫ হাজার টাকাও নিয়েছে। হামাক ঘর তো দিল না, হামার গরুও নিলো টাকাও নিলো। আমি তোমার কাছোত বিচার চাই।’
একই এলাকার মর্জিনা খাতুন (৬০) বলেন, ‘বাবা মুই তো মানুষের বাড়িতে ঝিয়ের কাজ করে খাই। থাকি মানুষের জমিতে। থাকার তো একনা মোর ঘরও নাই। সরকার থেকে একটা ঘর পাওয়ার আসায় জলিল মেম্বারের কাছোত ৩০ হাজার টাকা দিছিনু কিন্তু মেম্বার মোর টাকা নিয়ে মোক আর ঘর দেয় নাই। টাকাও দেয় নাই। মুই তোমার কাছ বিচার দিনু। তোমরা মোর টাকাটা নিয়ে দেও।’
ওই গ্রামের বদিউজ্জামানের স্ত্রী রসিদা বেগম (৩০) বলেন, ‘সরকারের কাছ থেকে ঘর নিয়ে দেয়ার কথা বলে হামার গ্রামের জলিল মেম্বার আমার কাছ থেকে ৫০ হাজার টাকা দাবি করে আমি ১০ হাজার টাকা দেই। বাকি টাকা দিতে না পারায় মেম্বার ইট বালু নিয়ে গেছে।’
একই এলাকার মোহাম্মদ আলীর ছেলে দুদু মিয়া জানান, ‘সরকারের বরাদ্দকৃত ঘর দেয়ার কথা বলে আমার কাছ থেকেও ২৫ হাজার টাকা নেন জলিল মেম্বার। আমাকে ঘর তো দিলোই না টাকাও ফেরত দেননি। টাকা চাইতে গেলে উল্টো গালিগালাজ করেন।’
ভুক্তভোগী গ্রামবাসীরা জানিয়েছেন, কেউ গবাদিপশু বিক্রি করে, কেউ আবার চড়া সুদের উপর ঋণ নিয়ে টাকা দিয়েছেন ইউপি মেম্বার জলিলকে।
এ বিষয়ে জলিল মেম্বার বলেন, ‘আমি কারো কাছ থেকে কোনো টাকা নেইনি। আমাকে ফাঁসানোর জন্য আমার প্রতিপক্ষ চক্রান্ত করছে।’
তিনি আরো বলেন, ‘আমি শুনেছি আওয়ামী লীগের শামীম নামের এক ছেলে টাকা নিয়েছে ওই অন্ধের কাছ থেকে। তবে আমি টাকা নেই নাই।’
শামীমের সাথে মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, ‘আমি কী এলাকার মেম্বার যে মানুষ আমাকে টাকা দেবে?’
মেম্বারের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘মেম্বারের সাথে আমার বিরোধ থাকার কারণে মেম্বার আমাকে জড়াতে চান।’
মেম্বার টাকা নিছে কী না জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আমি জানি না। সেটা তাদের বিষয়।’
জেলা প্রশাসক আসিব আহসান বলেন, ‘গৃহহীন মানুষগুলো স্থায়ীভাবে বসবাস করার জন্য একটি করে ঘর পাচ্ছেন। টাকা নেয়া ও ঘর না দেয়ার বিষয়ে আমাদের কাছে অভিযোগ এলে তদন্ত করে ব্যবস্থা নেয়া হবে।’