কেন্দ্রের মূল ফটকে আওয়ামী লীগ নেতা-কর্মীদের সশস্ত্র পাহারা বসিয়ে ভোট লুটের মহোৎসব

0

কিশোরগঞ্জের স্থগিত হওয়া ভোট কেন্দ্রে শনিবার সকাল থেকে ভোটগ্রহণের ‘আনুষ্ঠানিকতা’ শুরু হয়েছে। তবে কেন্দ্রে প্রবেশ করতে দেয়া হয়নি সাধারণ ভোটারদের। সকাল থেকেই ওয়ালী নেওয়াজ খান কলেজ কেন্দ্রটির মূল ফটকে বসানো হয়েছে আওয়ামী লীগ নেতা-কর্মীদের সশস্ত্র পাহারা। দুপুর পৌনে ১২টার দিকে কেন্দ্রের দায়িত্বরত কর্মকর্তাদের কাছ থেকে ব্যালট বই নিয়ে আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা মেতে উঠেছেন ভোট লুটের মহোৎসবে। এ পরিস্থিতিতে দুপুর ১টার দিকে বিএনপির মনোনীত প্রার্থী ঘোষণা দেন ভোট বর্জনের।

সকাল সাড়ে ১০টার দিকে কেন্দ্রটিতে সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, ফটকটি প্রায় বন্ধ রেখে শুধু একটি কপাট খোলা রাখা হয়েছে। আশপাশে রয়েছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর লোকজন। কপাটের ভিতরের দিকে হাত প্রসারিত করে দাঁড়িয়ে আছেন স্বয়ং জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি কামরুল আহসান শাহজাহান। বাইরে থেকে তার লোকজনের পাঠানো আওয়ামী লীগের ভোটারদেরই শুধু তিনি ভিতরে প্রবেশ করার অনুমতি দিচ্ছেন। এ দৃশ্যের ছবি তুলতে গেলে তিনি নয়া দিগন্তের এ সংবাদদাতার দিকে তেড়ে আসেন।

বেলা সাড়ে ১১টার দিকে অন্য সাংবাদিকরা কেন্দ্রে প্রবেশ করতে গেলে ফটকেই তিনি তাদের আটকিয়ে দেন। সাংবাদিকরা তাদের কার্ড প্রদর্শন করে জানতে চান, নির্বাচন কমিশন সাংবাদিকদের তথ্য সংগ্রহের অনুমতি দিয়েছে, কেন ভিতরে প্রবেশ করতে দেয়া হবে না। এ সময় এ প্রতিবেদকসহ জেলার বেশ কয়েকজন সাংবাদিকের সাথে তিনি দুর্ব্যবহার করেন।

সাংবাদিকদের তিনি সাফ জানিয়ে দেন, ‘কিসের সাংবাদিক, কিসের অনুমতি, কোনো সাংবাদিককে এ কেন্দ্রে এলাও করা হবে না। এ কেন্দ্র আমার, এখানে আমার আইন চলবে।’

দুপুর ১২টার দিকে জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ফটকের দায়িত্ব যুবলীগ-ছাত্রলীগ নেতাদের হাতে ছেড়ে দিয়ে কেন্দ্রের ভিতরে প্রবেশ করেন। এ সময় কেন্দ্রের ভিতর থেকে বের করে দেয়া হয় বিএনপির এজেন্টদের। এরপর শুরু হয় ভোট লুটের মহোৎসব।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে কেন্দ্রের একটি কক্ষে দায়িত্বে থাকা এক কর্মকর্তা জানান, দুপুর ১২টার দিকে আওয়ামী লীগের সভাপতি সাধারণ সম্পাদক ও জেলা মহিলা আওয়ামী লীগের সভানেত্রী কেন্দ্রের কক্ষে প্রবেশ করেই পুলিং অফিসার, সহকারী প্রিজাইডিং অফিসারদের কাছ থেকে ভোটের সব সিল, ব্যালট বই নিয়ে নেন। পরে আওয়ামী লীগ, যুবলীগ ও ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা এসব ব্যালটে সিল মারতে থাকে। এ পরিস্থিতিতে দুপুর ১টার দিকে বিএনপির প্রার্থী ভোট বর্জনের ঘোষণা দেন।

তবে জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা ও কিশোরগঞ্জ পৌর নির্বাচনের রিটার্নিং অফিসার মোহাম্মদ আশ্রাফুল আলম দাবি করেন, কিশোরগঞ্জ পৌরসভার স্থগিত হওয়া ওয়ালী নেওয়াজ খান কলেজের পূর্ব তিনতলা ভবনের কেন্দ্রটির পুনঃভোট গ্রহণ অবাধ ও সুষ্ঠুভাবে হয়েছে। এখানে কোনো আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি ঘটেনি।

উল্লেখ্য, নির্বাচন কমিশনের তফসিল অনুযায়ী দ্বিতীয় ধাপে কিশোরগঞ্জ পৌরসভায় গত ১৬ জানুয়ারি ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হয়। এ পৌরসভায় মোট ভোট কেন্দ্র ২৮টি। মোট ভোটারের সংখ্যা ৭১ হাজার ৮৪ জন। এর মধ্যে ওয়ালী নেওয়াজ খান কলেজের পূর্ব তিনতলা ভবনের এ কেন্দ্রটি আওয়ামী লীগ জোর করে দখলে নিয়ে নিলে রিটার্নিং অফিসার কেন্দ্রটির ভোটগ্রহণ স্থগিত ঘোষণা করেন। স্থগিত এ কেন্দ্রটি ছাড়া ২৭ কেন্দ্রের বেসরকারি ফলে আওয়ামী লীগ প্রার্থী মো: পারভেজ মিয়া ৪৮৪ ভোটে এগিয়ে ছিলেন। কেন্দ্রগুলোতে তিনি নৌকা প্রতীকে পেয়েছিলেন ২০ হাজার ৯২২ ভোট। বিএনপির মনোনীত প্রার্থী হাজী মো: ইসরাঈল মিয়া ধানেরশীষ প্রতীকে পেয়েছিলেন ২০ হাজার ৪৩৮ ভোট। স্থগিত হওয়া এ কেন্দ্রটিতে এক হাজার ৮৫২ ভোট থাকায় নির্বাচনের চূড়ান্ত ফলাফল ঘোষণা ঝুলে ছিল।

তুমি এটাও পছন্দ করতে পারো

উত্তর দিন

আপনার ইমেইল ঠিকানা প্রচার করা হবে না.

WP2Social Auto Publish Powered By : XYZScripts.com