হেডস্কার্ফ নিষিদ্ধের প্রস্তাব দিলেন ফ্রান্সের বিরোধীদলীয় নেতা লে পেন
ফ্রান্সের উগ্র জাতীয়তাবাদী রাজনৈতিক দল ন্যাশনাল র্যালির নেতা ম্যারি লে পেন জনসমাগমের সব স্থানেই মুসলিম মহিলাদের হেডস্কার্ফ নিষিদ্ধ করার প্রস্তাব দিয়েছেন। শুক্রবার প্যারিসে দলীয় কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে এই প্রস্তাব দেন তিনি।
সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, ‘আমি মনে করি হেডস্কার্ফ পোশাকের একটি ইসলামপন্থী উপাদান।’
সম্মেলনে লে পেন ফ্রান্সে ’সর্বগ্রাসী ও খুনে’ ইসলামপন্থী চিন্তাধারা নিষিদ্ধের জন্য আইন পাসের প্রস্তাব করেন।
এবারই প্রথম ম্যারি লে পেন হেডস্কার্ফ ও হিজাবের নিষিদ্ধের কথা বলছেন না।
ফ্রান্সের হিজাব নীতি সবসময়ের জন্যই একটি আলোচিত ইস্যু। হিজাব নিয়ে বিভিন্ন সময়ই দেশটিতে মুসলমানদের সমস্যার মুখোমুখি হতে হয়েছে এবং আদালতে সংবিধান লঙ্ঘনের অভিযোগে আইনি লড়াই চালাতে হয়েছে।
হিজাবসহ ইসলাম সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন বিষয়ের বিরুদ্ধেই সরব রয়েছেন ম্যারি লে পেন। ২০২২ সালের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনকে সামনে রেখে ১৫ মাস আগেই ৫৩ বছর বয়সী ফরাসি এই রাজনীতিবিদ এই বিষয়গুলোকে মূল লক্ষ্যে রেখে নির্বাচনী প্রচারণায় নামতে যাচ্ছেন।
সম্প্রতি প্রকাশিত জনমত জরিপে দেখা যায়, জনপ্রিয়তায় ম্যারি লে পেন বর্তমান প্রেসিডেন্ট ইম্যানুয়েল ম্যাক্রনের প্রায় সমান অবস্থানে আছেন। যুক্তরাষ্ট্রের ডোনাল্ড ট্রাম্প ও ইতালির মাত্তেও স্লাভিনিকে ছিটকে পড়তে হলেও নিজের জনপ্রিয়তা বাড়িয়েছেন লে পেন।
এর আগে লে পেন দুইবার ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট পদে নির্বাচনে অংশ নেন। এরমধ্যে ২০১৭ সালে রাজনীতিতে নতুন অভিষেক হওয়া ইম্যানুয়েল মাক্রনের কাছে হেরে যান তিনি।
কিন্তু বর্তমানে ফ্রান্সের জনসাধারণের মধ্যে অভিবাসন বিরোধী ও ইইউ বিরোধী মনোভাবের বিস্তার এলিসি প্রাসাদে পৌঁছাতে লে পেনকে সহায়তা করতে পারে বলে মন্তব্য করছেন বিশেষজ্ঞরা।
জরিপ সংস্থা হ্যারিস ইন্টারেক্টিভের পরিচালিত এক জরিপের বরাত দিয়ে লে প্যারিসিয়ান পত্রিকার এক প্রতিবেদনে বলা হয়, বর্তমানে যদি ফ্রান্সে দ্বিতীয় দফায় দুইজনের অংশগ্রহণে নির্বাচন হয়, তবে লে পেন ৪৮ ভাগ ভোট পাবেন। অন্যদিকে ম্যাক্রন পাবেন ৫২ ভাগ ভোট।
ফরাসি রাজনীতি বিশেষজ্ঞ জ্যা-ইভ ক্যামু বলেন, ‘এটি এই পর্যন্ত তার সর্বোচ্চ অবস্থান।’
তিনি বলেন, লে পেন করোনা মহামারীতে লকডাউনের পরিপ্রেক্ষিতে সাধারণ মানুষের হতাশা ও ক্রোধ থেকে ফায়দা নিচ্ছেন। পাশাপাশি স্কুলে রাসূল মোহাম্মদ সা.-এর বিতর্কিত কার্টুনচিত্র প্রদর্শনের কারণে এক ফরাসি স্কুলশিক্ষককে এক চেচেন মুসলিম তরুণের হত্যার জেরে ফরাসিদের মধ্যে ইসলামবিদ্বেষী মনোভাবের বিস্তার ঘটেছে। ২০২০ সালে দেশটিতে ইসলামোফোবিয়া সংশ্লিষ্ট হামলা ৫০ ভাগ বেড়েছে।
জ্যা-জ্যারে ফাউন্ডেশনের এই বিশেষজ্ঞ বলেন, ‘এই ক্ষেত্রে ম্যারি লে পেনের সুবিধা রয়েছে। তার দল আগেই থেকেই ইসলামপন্থার নিন্দায় তাদের অবস্থানের জন্য পরিচিত।’
এ দিকে ফরাসি স্কুলশিক্ষকের হত্যায় ফ্রান্সে অভিবাসন বিষয়ে বিতর্কের সূচনা হলেও আন্তর্জাতিকভাবে ম্যাক্রনের জন্য বিষয়টি সঙ্কটের সৃষ্টি করে।
’মুক্তমতের অধিকার’ সমর্থনে ম্যাক্রন ওই সময় বলেন, ‘আমরা কার্টুন আঁকা বন্ধ করবো না।’ পরে বিভিন্ন ফরাসি গণমাধ্যম ও নগর কর্তৃপক্ষ মুসলমানদের জন্য অবমাননাকর এই কার্টুনটি বিভিন্ন স্থানে প্রকাশ করতে থাকে।
ফ্রান্সের এই পদক্ষেপের প্রতিবাদে ইন্দোনেশিয়া থেকে মরক্কো পর্যন্ত বিভিন্ন মুসলিম দেশের রাষ্ট্রপ্রধান নিন্দা জানান। পাশাপাশি বিভিন্ন দেশের মুসলিম জনসাধারণ এর প্রতিবাদ করে।