আওয়ামী লীগ নেতাকে চাঁদা না দেয়ায় সকালে ঘর গুড়িয়ে বিকেলে দোকানিকে হাতুড়িপেটা
কক্সবাজারের ঈদগাঁওতে চাঁদা না দেয়ায় এক ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীকে ধরে এনে হাতুড়ি পেটা করে হাত-পা ভেঙে দেয়ার অভিযোগ উঠেছে। এর আগে তার সেমিপাকা বসতঘরটিও গুড়িয়ে দেয়া হয়।
আশঙ্কাজনক অবস্থায় আহত ব্যবসায়ীকে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পুলিশ পাহারায় চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে। এ ঘটনায় এজাহার দেয়া হলেও অভিযুক্তরা এখনও আটক হননি।
আহত ব্যবসায়ী বদি আলম (৪০) ইসলামপুর ইউনিয়নের ভিলেজার পাড়ার পূর্ব নাপিতখালীর দলিলুর রহমানের ছেলে।
ভুক্তভোগীর পরিবারের দাবি, চাঁদা না দেয়ায় স্থানীয় ইউপি সদস্য সাহাব উদ্দিনের নেতৃত্বে চিহ্নিত সন্ত্রাসীরা এ ঘটনা ঘটিয়েছে।
এসব বিষয় উল্লেখ করে শুক্রবার বিকেলে কক্সবাজার রিপোর্টার্স ইউনিটির কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলন করেছেন আহত ব্যবসায়ীর স্ত্রী পারভিন আক্তার (৩৫)।
অভিযুক্ত ইউপি সদস্য সাহাব উদ্দিন
সংবাদ সম্মেলনে প্রশাসনের হস্তক্ষেপ কামনা করে পারভিন আক্তার বলেন, স্থানীয় ইউপি সদস্য সাহাব উদ্দিন আলোচিত সন্ত্রাসী। কিছুদিন আগে তিনি আমার স্বামীর (বদি আলমের) কাছে অর্ধলাখ টাকা চাঁদা দাবি করেন। নয়তো এলাকায় দোকান করতে দেয়া হবে না বলে হুমকি দেন।
এত টাকা দেয়া অসম্ভব হওয়ায় চাঁদা দাবির বিষয়টি স্থানীয় কয়েকজন গণ্যমান্য ব্যক্তিকে অবগত করা হয়। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে গত ২৩ জানুয়ারি সকালে অসংখ্য মানুষের উপস্থিতিতে সাহাব উদ্দীন ও তার বাহিনীর লোকজন আমাদের সেমিপাকা বাড়িটি সম্পূর্ণভাবে গুড়িয়ে দেন। তারা এতে উত্তর বন বিভাগের ফুলছড়ি রেঞ্জের কর্মকর্তা আলাউদ্দিন মিয়ার সহযোগিতা নেন।
পারভিন আক্তার সংবাদ সম্মেলনে আরও দাবি করেন, সকালে ঘর গুড়িয়ে দেয়ার পর একইদিন বিকেলে ঈদগাঁও বাজারের একটি সেলুনের দোকান থেকে মাথায় অস্ত্র ঠেকিয়ে সিএনজিতে তুলে নিয়ে অপহরণ করা হয় তার স্বামী বদি আলমকে। পরে ইউপি সদস্য শাহাব উদ্দীনের নেতৃত্বে হাত-পা বেঁধে হাতুড়ি দিয়ে পেটানো হয়। এতে তার হাত-পা ভাঙার পাশাপাশি মাথায় মারাত্মক আঘাতের কারণে জ্ঞান হারিয়ে ফেললে মৃত ভেবে ফেলে পালিয়ে যায় অপহরণ ও প্রহারকারীরা।
পরে খবর পেয়ে পুলিশ গিয়ে তাকে (আহত বদি আলমকে) উদ্ধার করে কক্সবাজার সদর হাসপাতালে নেয়। সেখানে তার অবস্থার অবনতি হলে উন্নত চিকিৎসার জন্য চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে হস্তান্তর করেন চিকিৎসকরা।
এ ঘটনায় ইউপি সদস্য সাহাব উদ্দীন, তার ভাই মো. শাহাজান, ওমর ফারুক, চিহ্নিত সন্ত্রাসী বিন্ডি দিল্লি মঞ্জুর, নজরুল, হাসানসহ সাতজনকে আসামি করে এজাহার দেয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন পারভিন আক্তার।
সংবাদ সম্মেলনে পারভিন ও বদি আলম দম্পতির সন্তান রবিউল হাসান (২৫), সুজন ছোটন (১০), জন্নাতুল ফেরদৌস (৭), কানিজ ফাতেমা (৫) ও আয়েশা ছিদ্দিকা (২ মাস) উপস্থিত ছিলেন।
বদি আলমের স্ত্রী পারভিন আক্তার
এদিকে অভিযোগ অস্বীকার করে ইউপি সদস্য সাহাব উদ্দীন বলেন, বদি আলমের ঘরটি বনবিভাগের জায়গা ছিল। বনবিভাগই তার ঘরটি উচ্ছেদ করেছে।
মারধরের বিষয়ে বলেন, বদি আলমকে মারধর করেছে ইসলামপুর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি মনজুর আলম।
তবে ইউনিয়ন আওয়ামী লীগ সভাপতি মনজুর আলম বলেন, বদি আলমকে আমি কোন দুঃখে মারতে যাব? তাকে কে বা কারা মেরেছে তা তার পরিবারের সদস্যরাই ভালো বলতে পারবেন। তাছাড়াও বদি আলমকে অপহরণ ও প্রহারের বিষয়টি সবার জানা।
ফুলছড়ি রেঞ্জ কর্মকর্তা আলাউদ্দিন মিয়াও সাহাব উদ্দিনের সুরে সুর মিলিয়ে বলেন, বদি আলমের ঘরটি বনবিভাগের জায়গায় ছিল। তাই উচ্ছেদ করা হয়েছে।
আশপাশের এত বাড়ি-ঘর অক্ষত রেখে শুধু তার বাড়ি ভাঙা হলো কেন জানতে চাইলে তিনি বলেন, লিস্ট করে অভিযান চালানো হচ্ছে, বাকিগুলো ধীরে ধীরে উচ্ছেদের আওতায় আসবে। কারও সাথে যোগসাজশের বিষয়টি সঠিক নয়।
কক্সবাজার র্যাব-১৫ সূত্র জানায়, সম্প্রতি ইসলামপুরে র্যাবের এক সোর্স হত্যার ঘটনায় তদন্ত করতে গিয়ে সাহাব উদ্দিনসহ বেশ কয়েকজনের নাম উঠে এসেছে। যারা অবৈধ ব্যবসাসহ অপরাধমূক কাজের নেতৃত্ব দেন বলে জানা গেছে। আলোচিত সোর্স হত্যাকাণ্ডের পেছনেও তাদের হাত রয়েছে বলে জানিয়েছে স্থানীয়রা।
বদি আলমকে আহত অবস্থায় উদ্ধার ও এ ঘটনায় এজাহার পাওয়ার কথা স্বীকার করে ঈদগাঁও থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. আবদুল হালিম বলেন, কারা মেরেছে বিষয়টি তদন্ত করে ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে। বদি আলমের বিরুদ্ধে আগের একটি মামলায় ওয়ারেন্ট থাকায় তাকে পুলিশ হেফাজতে রেখে মেডিকেলে চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে।