ভারতের ‘ভ্যাকসিন কূটনীতিতে’ পাকিস্তান বাদ কেন?
পাকিস্তান করোনাভাইরাসের টিকা দেবার অভিযান শুরু করার পরিকল্পনা করেছে আগামী সপ্তাহ থেকে। এতে ব্যবহৃত হবে চীনের তৈরি ভ্যাকসিন, আর প্রথমেই এ টিকা দেয়া হবে স্বাস্থ্যকর্মীদের।
অথচ এর বেশ কিছু দিন আগেই – মধ্য-জানুয়ারি থেকে – পাকিস্তানের চির-বৈরী প্রতিবেশী ভারতে শুরু হয়ে গেছে পৃথিবীর বৃহত্তম কোভিড টিকাদান কর্মসূচি। টিকা তৈরির ক্ষেত্রে ভারত একটা ‘পাওয়ারহাউস’ – পৃথিবীর ৬০ শতাংশ টিকা তৈরি হয় ভারতে। এ ছাড়া ভারত তার প্রতিবেশী দেশগুলোকে লাখ লাখ ডোজ করোনাভাইরাসের টিকা বিনামূল্যে দিচ্ছে – যাকে বলা হচ্ছে ‘ভ্যাকসিন কূটনীতি’।
ভারতের ‘ভ্যাকসিন কূটনীতিতে’ পাকিস্তান বাদ
ভারতের যে প্রতিবেশীরা বিনামূল্যে এই টিকা পাচ্ছে – তার মধ্যে পাকিস্তান নেই।
পাকিস্তানের কর্তৃপক্ষ ইতোমধ্যে তিনটি টিকা সেদেশে ব্যবহারের জন্য অনুমোদন দিয়েছে। চীনের সিনোফার্ম, রাশিয়ার স্পুটনিক ভি, এবং অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকা।
এর মধ্যে চীন ৫ লাখ ডোজ সিনোফার্ম টিকা পাকিস্তানকে দান করবে, যার প্রথম চালান এই সপ্তাহ শেষেই এসে পৌঁছাবে।
তবে করাচি শহরের একজন টিকা আমদানিকারক উসমান গনি বিবিসিকে জানিয়েছেন, এটা প্রয়োজনের তুলনায় কিছুই নয়।
পাকিস্তানে এ পর্যন্ত ৫ লাখ ৩০ হাজার লোক করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছে এবং ১১ হাজার ৫১৪ জনের মৃত্যু হয়েছে।
এ পরিস্থিতিতে আরো বেশি নিশ্চিত হবার জন্য পাকিস্তান বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার কোভ্যাক্স কর্মসূচির মাধ্যমে আরো ভ্যাকসিন পাবার চেষ্টা করবে।
তবে এখন আশঙ্কা তৈরি হচ্ছে, ধনী দেশগুলো হয়তো নিজেদের জন্য টিকা বিশাল মজুত গড়ে তুলবে – দরিদ্র দেশগুলোকে বঞ্চিত করে।
সেকারণেই টিকার সরবরাহ নিশ্চিত করতে একটা বিরাট ভূমিকা পালন করতে পারে পাকিস্তানের প্রতিবেশী ভারত।
ভারত থেকে পাকিস্তানে টিকা যেতে ‘সময় লাগবে’
পাকিস্তান আর ভারতের সম্পর্ক এত খারাপ হলেও তাদের মধ্যে ফার্মাসিউটিক্যাল বাণিজ্য কিন্তু স্থিতিশীলভাবেই চলছিল।
ভারত থেকে পাকিস্তান ২০১৮ সালে ৬ কোটি ২০ লাখ ডলারেরও বেশি মূল্যের ফামাসিউটিক্যাল সামগ্রী আমদানি করেছে।
পাকিস্তানে বিক্রি হওয়া ওষুধের সক্রিয় উপাদানগুলোর ৬০ থেকে ৭০ শতাংশই আমদানি হয় ভারত থেকে। আর পাকিস্তানে শিশু ও গর্ভবতী নারীদের যত টিকা দেয়া হয় তার ৯০ শতাংশই আসে ভারত থেকে।
তাই উসমান গনি মনে করেন, পাকিস্তান অদূর ভবিষ্যতেই ভারত থেকে টিকা পাবে।
কোভিশিল্ড নামে অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকার টিকা, আর স্থানীয়ভাবে উৎপাদিত কোভ্যাক্সিন – এই দুটিই ভারতে তৈরি হচ্ছে।
উসমান গনি বলছেন, ‘ভারত সারা পৃথিবী থেকে বিপুল পরিমাণ ভ্যাকসিনের অর্ডার পেয়েছে। আমাদের সাথে সীমান্তের ওপারের টিকা উৎপাদনকারীদের ভালো সম্পর্ক আছে। আমরা সরবরাহ পাবার চেষ্টা করবো, কিন্তু এর জন্য সময় লাগবে।’
ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একজন মুখপাত্র বলেছেন, তিনি ভারতে-তৈরি টিকার জন্য পাকিস্তানের দিক থেকে কোনো অনুরোধের ব্যাপারে জ্ঞাত নন।
চীনা প্রভাব মোকাবিলার করার কৌশল ভারতের টিকা কূটনীতি?
ভারতে উৎপন্ন টিকার কিছু চালান বিনামূল্যে পাঠানো হয়েছে প্রতিবেশী বাংলাদেশ, ভূটান, নেপাল, মালদ্বীপ, মিয়ানমার, শ্রীলংকা, সেশেলস ও বাহরাইনে। বাণিজ্যিক রফতানি হচ্ছে ব্রাজিল ও মরক্কোতে।
অনেকে মনে করেন, ভারত এই ভ্যাকসিন কূটনীতি চালাচ্ছে এই অঞ্চলে ক্রমবর্ধমান চীনা প্রভাব মোকাবিলার করার কৌশলের অংশ হিসেবে।
দিল্লির অবজারভার রিসার্চ ফাউন্ডেশন নামে একটি থিংকট্যাংকের গবেষক হর্ষ পন্থ এবং আর্শি তির্কী বলছিলেন, ‘ভারত তার ভ্যাকসিন কূটনীতি দিয়ে চীনের সাথে সরাসরিভাবেই প্রতিযোগিতা করছে।’
তারা বলছেন, চীন এই টিকার বিষয়টিকে তাদের বৃহত্তর ভূ-রাজনৈতিক উচ্চাভিলাষের অংশ করেছে।
“চীন এমনকি তাদের ‘সফ্ট পাওয়ার’কে জোরদার করার জন্য তাদের ‘স্বাস্থ্য সিল্ক রোড’ উদ্যোগেও এই টিকার বিষয়টিকে খোলাখুলিভাবে অন্তর্ভুক্ত করেছে”, বলছিলেন এই দুই গবেষক।
তবে চীনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র ঝাও লিজিয়ান বলছেন, ‘টিকার ক্ষেত্রে বিভিন্ন দেশের মধ্যে কোনো উগ্র প্রতিযোগিতা হওয়া উচিত নয়, সংঘাত তো নয়ই।’
সূত্র : বিবিসি