বিএনপি সমর্থিত আইনজীবীদের মারধরের অভিযোগ আ. লীগ নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে
নারায়ণগঞ্জ আইনজীবী সমিতির বার্ষিক নির্বাচনে ভোট নিয়ে বাকবিতণ্ডার জেরে বিএনপি সমর্থিত আইনজীবীদের মারধরের অভিযোগ উঠেছে আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে।
আইনজীবীরা অভিযোগ করেন, আইনজীবী সমিতির নির্বাচনে আপ্যায়ন সম্পাদক পদে প্রার্থী জাহিদুর রহমানকে মারধর করেছে নারায়ণগঞ্জ চেম্বারের সভাপতি খালেদ হায়দার খান কাজল। এছাড়াও আওয়ামী লীগের লোকজনের মারধরের শিকার হয় আইনজীবী সালাউদ্দিন ভূঁইয়া সবুজ, জাহিদুল ইসলাম, শেখ আঞ্জুম, আহম্মেদ রিফাতসহ বেশ কয়েকজন।
আইনজীবী শেখ আঞ্জুম আহম্মেদ রিফাত বলেন, ‘এখানে আইনজীবীদের নির্বাচন ছিল। কিন্তু বহিরাগত আওয়ামী লীগ ও ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা এসে আমাদের আইনজীবীদের মারধর করে। পরাজয় নিশ্চিত জেনে তারা এ হামলা চালিয়েছে। আইনজীবী সমিতির নির্বাচনে তারা কেন আসবে?’
নারায়ণগঞ্জ আইনজীবী সমিতির সাবেক সভাপতি সাখাওয়াত হোসেন খান বলেন, ‘নির্বাচন কমিশনার করা হয়েছে আওয়ামী লীগ নেতা সামসুল ইসলাম ভূইয়াকে। যাকে নিয়ে আমরা প্রথম থেকে অভিযোগ জানিয়ে আসছিলাম। আজ নির্বাচনে ভোট পড়েছে ৮৫২টি। কিন্তু তারা বলে ৯০৪টি। এ নিয়ে বাকবিতণ্ডা শুরু হয়। পরে পিপি ওয়াজেদ আলী খোকনের নেতৃত্বে আওয়ামী লীগের আইনজীবীরা আমাদের সভাপতি ও সেক্রেটারি প্রার্থীসহ অন্যান্য প্রার্থী ও আইনজীবীদের মারধর করে। ভবনের নিচেও আওয়ামী লীগ, ছাত্রলীগ, যুবলীগ, স্বেচ্ছাসেবকলীগ নেতারা আমাদের আইনজীবীদের মারধর করে। আর ওইসময় আদালত চত্বরে এমপি শামীম ওসমান নেতাকর্মীদের নিয়ে অবস্থান করছিলেন।
তবে এসব অভিযোগ মিথ্যা বলে দাবি করেছেন মহানগর আওয়ামী লীগের আইন বিষয়ক সম্পাদক ও নারায়ণগঞ্জ জেলা ও দায়রা জজ আদালতের পাবলিক প্রসিকিউটর (পিপি) ওয়াজেদ আলী খোকন।
তিনি বলেন, ‘এসব অভিযোগ মিথ্যা। সকাল থেকে শান্তিপূর্ণ ভোট হয়েছে। ভোট গণনা নিয়ে বিএনপির আইনজীবীরা অভিযোগ তুললে তখন উভয়ের মধ্যে ধাক্কাধাক্কি হয়।’
আইনজীবী সমিতি নির্বাচনের প্রধান নির্বাচন কমিশনার ও সোনারগাঁও উপজেলা আওয়ামী লীগের আহ্বায়ক আইনজীবী সামসুল ইসলাম ভূইয়া দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, ‘ধাক্কাধাক্কি ও বাকবিতণ্ডা হয়েছে। কেউ মারধর করেনি।’
সাংবাদিকদের লাঞ্ছনার অভিযোগ
এদিকে, নারায়ণগঞ্জ আইনজীবী সমিতির বার্ষিক নির্বাচনে বিশৃঙ্খলার ভিডিও ধারণ করতে গিয়ে স্থানীয় কয়েকজন সাংবাদিক লাঞ্ছনার শিকার হয়েছেন বলে অভিযোগ উঠেছে।
বৃহস্পতিবার বিকেলে সদর উপজেলার চাঁদমারী এলাকায় আইনজীবী সমিতি ভবনের নিচ তলায় আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা তাদের মারধর ও কয়েকজন সাংবাদিকের মোবাইল ফোন কেড়ে নেন বলে অভিযোগ করেন তারা।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, ‘সকাল ৯টা থেকে ভোটগ্রহণ শুরু হয়ে বিকেল ৫টায় শেষ হয়। পরে ভোটকেন্দ্রের ভেতরে অবস্থান করা নিয়ে আওয়ামী লীগ ও বিএনপি সমর্থিত আইনজীবীদের মধ্যে বাকবিতণ্ডা হয়। এ সময়ে নারায়ণগঞ্জ চেম্বারের সভাপতি খালেদ হায়দার খান কাজলের নেতৃত্বে শহর যুবলীগের সভাপতি শাহাদাৎ হোসেন সাজনু, মহানগর স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি জুয়েল হোসেন, জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সহসভাপতি আলী আকবারসহ বেশ কয়েকজন সেখানে যান।
এসময় সেখানে হট্টগোল ও মারধরের ঘটনা ঘটে বলে জানিয়েছেন সাংবাদিকেরা।
অনলাইন নিউজ পোর্টাল ‘মোবাশ্বির শ্রাবন বলেন, ‘বিকেল ৫টায় হঠাৎ সমিতির নবনির্মিত ভবনের ভেতরে হট্টগোল শুরু হয়। তখন আমরা সাংবাদিকেরা সেখানে যাই। ওই সময়ে বেশ কয়েকজনকে মারধর করা হয়। আমরা তাদের ভিডিও ধারণ করতে গেলে আমার মোবাইল ফোন ছিনিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করে। এক পর্যায়ে ধাক্কা ও মারধর করে বের করে দেয়া হয়। সেখানে আমরা নিজেদের সাংবাদিক পরিচয় দিলেও কেউ তা শোনেনি।’
স্থানীয় একটি টিভি চ্যানেলের সংবাদকর্মী সুজিত হোসেন বলেন, ‘আমি ভিডিও ধারণ করতে গেলে খালেদ হায়দার খান কাজল আমার মোবাইল ফোন ছিনিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করে। এসময় কয়েকজন সাংবাদিককে মারধর করে বের করে দেয়া হয়।’
মোহনা টিভির নারায়ণগঞ্জ জেলা প্রতিনিধি আজমীর ইসলাম বলেন, ‘এর সবাই বহিরাগত আওয়ামী লীগ কর্মী। তাই তাদের নাম পরিচয় জানি না। আমি দুইজন সাংবাদিককে মারধর থেকে উদ্ধার করি।’
এ বিষয়ে জানতে চাইলে ঘটনাস্থলে উপস্থিত নারায়ণগঞ্জ কোর্ট পুলিশের পরিদর্শক আসাদুজ্জামান বলেন, ‘আমি মারধর করতে দেখিনি। এ নিয়ে সাংবাদিক বা বিএনপির আইনজীবী কেউ কোন অভিযোগও করেনি। তবে বর্তমানে পরিস্থিতি শান্ত আছে।’
নারায়ণগঞ্জ চেম্বারের সভাপতি খালেদ হায়দার খান কাজলের মোবাইলে ফোনে একাধিকবার কল ও এসএমএস পাঠানো হলেও যোগাযোগ করা যায়নি। পরবর্তীতে ফোন নম্বর বন্ধ পাওয়া যায়।