টিকার নিবন্ধন আওয়ামী লীগ সরকারের নতুন জালিয়াতির সার্টিফিকেট: রিজভী

করোনা টিকার নিবন্ধন প্রক্রিয়া নিয়ে প্রশ্ন তুলে বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম-মহাসচিব অ্যাডভোকেট রুহুল কবির রিজভী বলেছেন, ‘সরকার আরেকটা জালিয়াতির সার্টিফিকেট চালু করেছে। যারা ভ্যাকসিন নেবে তাদের একটি সম্মতিপত্র বা অঙ্গীকারনামা দিতে হবে। সেখানে তার নাম, তার বাবার নাম, মায়ের নাম, আইডি নাম্বার- এগুলো দিতে হবে এজন্য যে, ভ্যাকসিন নেয়ার পর কিছু হলে সরকার দায়ী নয়।’

সোমবার (২৫ জানুয়ারি) দুপুরে নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের নিচতলায় আরাফাত রহমান কোকো স্পোটিং ক্লাবের উদ্যোগে তার ৬ষ্ঠ মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে দোয়া মাহফিলে তিনি এমন প্রশ্ন তুলেন। ২০১৫ সালের ২৪ জানুয়ারি মালয়েশিয়ায় হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মারা যান কোকো।

রুহুল কবির রিজভী বলেন, ‘এখানেই তো সন্দেহ আরও ঢুকিয়ে দেয়া হলো। একটা টিকা দেবেন সেই টিকাটা সকল গবেষণায় উত্তীর্ণ হবে যে, টিকা নেয়ার পর এই করোনা ভাইরাস আমাকে আক্রমণ করবে না। সেখানে অঙ্গীকারনামা কেন? সেখানে সম্মতিপত্র কেনো? সেখানে সই দেবে কেন? জনগণ তো আরও সন্ত্রস্ত হলো, ওখানে ঢাল ম্যা কুঁচ কালা হ্যায়।’

ভারতের প্রতি ইঙ্গিত করে রিজভী বলেন, ‘ভারত নিজে তাদের দেশের লোককে এই করোনার টিকা দিচ্ছে না। মার্চ মাসে ট্রায়াল করবে। আমরা বাংলাদেশের লোক কি তেলাপোকা, আমরা কি ব্যাঙ, আমরা কি গিনিপিগ?’

তিনি বলেন, ‘এখন ভারতের যে ভ্যাকসিন সেটা বাংলাদেশের মানুষের ওপর প্রয়োগ করা হবে, প্রয়োগ করে ওরা দেখবে যে, এরা বাঁচে না মরে, এরা অসুস্থ হচ্ছে না সুস্থ হচ্ছে। সেটা দেখে তারপরে নিশ্চিত হবে। এরপরে ভিআইপিরা দেবেন, এরপরে রাষ্ট্রপতি দেবেন, এরপরে প্রধানমন্ত্রী দেবেন।’

তিনি আরও বলেন, ‘আবার তামাশা করেছেন তথ্যমন্ত্রী হাছান মাহমুদ, যিনি বিএনপিকে টিকা নেয়ার জন্য অনুরোধ করেছেন। গুম, খুন, বিচারবর্হিভূত হত্যা, ক্রসফায়ার- এসব করেও তাদের মনের সাধ মিটছে না। এখন ভেজাল টিকা নিয়ে দেখবে বিএনপির লোকেরা মরে না বাঁচে। তারপরে তারা নেবে।’

রিজভী বলেন, ‘কত বড় নিষ্ঠুর তামাশা, কত বড় রসিকতা! যে দেশ নিজের দেশের ওপর টিকা প্রয়োগ করেনি, তারা আমাদেরকে দিচ্ছে এটা ট্রায়াল করার জন্য। এটা আমার কথা নয় বা বাংলাদেশের মিডিয়াও এটা বলেনি। আন্তর্জাতিক সংবাদ সংস্থা  রয়টার্স এটা বলেছে যে, ট্রায়াল হিসেবে এই টিকা বাংলাদেশকে দিয়েছে ভারত।’

বিএনপির এ শীর্ষ নেতা বলেন, ‘যে সরকার মানুষের জীবন নিয়ে তামাশা করে, মানুষের বাঁচা-মরা দিয়ে তামাশা করে, সেই সরকার জনগণের সরকার নয়। এটা আমরা বার বার বলেছি। শুধু ভোটের ক্ষেত্রে নয়, মানুষের জীবন বাঁচানোর ক্ষেত্রেও ওরা তাচ্ছিল্য করেছে, ওরা উপহাস করেছে।’

তিনি বলেন, ‘যখন লকডাউন দেয়ার কথা তখন লকডাউন দেয়নি। করোনায় শত শত মানুষ মারা গেছে, তারপরেও তারা ভ্রুক্ষেপ করেনি। করোনার সরঞ্জামের জন্য যেসমস্ত পদক্ষেপ নেয়া দরকার সেটা করেনি। না করেছে ভ্যান্টিলেটর, না করেছে অক্সিজেনের ব্যবস্থা। আজকে সারা বাংলাদেশের অর্ধেক হাসপাতালে ভেন্টিলেটর ও অক্সিজেনের কোনও সুবিধা নেই।’

স্থানীয় সরকার নির্বাচন পরিস্থিতির চিত্র তুলে ধরে তিনি বলেন, ‘নির্বাচন হলে সব ডাকাতি..। শ্রীপুরে কাউন্সিলর নির্বাচনে কিছুক্ষণ আগে খবর পেলাম বিএনপির প্রার্থীর ওপর হামলা হয়েছে। বিএনপি হলে সংগঠন করা যাবে না, আর ভোটকেন্দ্রে বিএনপির ভোটাররা যেতে পারবে না।’

তিনি বলেন, ‘চট্টগ্রামে মেয়র নির্বাচন হচ্ছে। প্রতিদিন বিএনপির কোনও না কোনও লোককে গ্রেফতার করা হচ্ছে। আর না হলে আওয়ামী লীগ-পুলিশ একসঙ্গে গিয়ে হামলা করছে। এই দৃষ্টান্ত সরকার স্থাপন করেছে।’

গতকাল সংসদে দেয়া শিক্ষামন্ত্রী দীপু মনির বক্তব্যের সমালোচনা করে রিজভী বলেন, ‘কোয়ালিটি এডুকেশন তো শেষ। জিপিএ ফাইভ পেয়েছে এসএসসি-এইচএসসিতে। বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি পরীক্ষা দিতে গেছে, খাতায় কিছুই লেখতে পারেনি। দুই বছর আগের ঘটনা। শিক্ষাব্যবস্থাকে এমনভাবে ধ্বংস করেছে যা বলার অপেক্ষা রাখে না। যখন এসব বিষয়ে সংসদে প্রশ্ন করা হয় তখন তারা গরুর রচনার দিকে চলে যায়। ওই বিএনপির নেতা-নেত্রীদের বিরুদ্ধে কথা বলতে থাকে।’

আরাফাত রহমান কোকোর স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করে তার মৃত্যু ‘স্বাভাবিক নয়, এক ধরনের হত্যাকাণ্ড’ বলেও দাবি করেন রিজভী।

বিএনপির ক্রীড়া সম্পাদক আমিনুল হক ও কৃষকদলের সদস্য জাহাঙ্গীর আলমের পরিচালনায় আলোচনা সভায় বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক আবদুস সালাম আজাদ, খন্দকার মাশুকুর রহমান মাশুক, কৃষকদলের সদস্য সচিব হাসান জাফির তুহিন ও কৃষিবিদ মেহেদী হাসান পলাশ প্রমুখ বক্তব্য রাখেন।

কোকোর আত্মার মাগফেরাত কামনা করে বিশেষ মোনাজাত করেন মাওলানা শাহ নেছারুল হক।