তিস্তার পানি দেয় না, ভ্যাকসিনে এতো ‘দরদ’ কেন? প্রশ্ন রিজভীর
করোনার ভ্যাকসিন নিয়ে সরকার ‘বিপদজনক ও সর্বনাশা খেলায় মেতেছে’ বলে অভিযোগ করেছেন বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব অ্যাডভোকেট রুহুল কবির রিজভী।
ভারতের ‘ভ্যাকসিন কৌশল’ ও বাংলাদেশ সরকারের ‘নতজানু নীতির‘ কঠোর সমালোচনা করে তিনি বলেছেন, ‘বাংলাদেশের মানুষ ভারতের গবেষণাগারের ‘ব্যাং, বিড়াল, তেলাপোকায়’ পরিণত হয়েছে। ভারত তিস্তার পানি তো দেয় না, কিন্তু উপহার হিসেবে ২০ লাখ ডোজ ভ্যাকসিন দিলো। এই দরদ উতলে উঠার কারণ কী? ভারত মূলত বাংলাদেশের মানুষদের ওপর ভ্যাকসিনের পরীক্ষা চালাতে চায়। বাংলাদেশের সরকার ভারতকে সেই সুযোগ করে দিয়েছে। কারণ ভোটারবিহীন বর্তমান মিডনাইট সরকারের দেশের মানুষের বাঁচা-মরা নিয়ে কোনও মাথাব্যাথা নেই।’
তিনি বলেন, ভারত থেকে যে টিকা এসেছে তা বাংলাদেশের মানুষের ওপর পরীক্ষা চালানোর জন্য এসেছে। ওরা (ভারত) দেখবে এই ভ্যাকসিন নেয়ার পরে মানুষ বাঁচে, না মরে, না অসুস্থ হয়। তারপরে ভিআইপিরা নেবে। তারপরে ভারত নেবে। ভারত বলছে, তারা মার্চে এটা ট্রায়াল করবে। আন্তর্জাতিক গণমাধ্যম রয়টার্স বলেছে, ভারত যে টিকা বাংলাদেশকে দিচ্ছে এটা ট্রায়ালের জন্য দিচ্ছে।’
সোমবার (২৫ জানুয়ারি) রাজধানীর তেজঁগাও অঞ্চলের ২৬ নং ওয়ার্ডের উদ্যোগে ১৯ জানুয়ারি শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের ৮৫তম জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে শীতবস্ত্র বিতরণ অনুষ্ঠানে তিনি এসব কথা বলেন।
রিজভী বলেন, ‘সুস্থ নির্বাচনকে একেবারে পরপারে পাঠিয়েছে বর্তমান নির্বাচন কমিশন। আর এ কারণে যারা আজ জনপ্রতিনিধি হওয়ার কথা তারা জনপ্রতিনিধি নয়। যারা জনগণ থেকে বিচ্ছিন্ন, যারা জনগণের শত্রু, তারাই প্রতিনিধিত্ব করছে। কেউ চেয়ারম্যান হচ্ছে, কেউ এমপি হচ্ছে, কেউ টাকা পাচার করছে, কেউবা ক্যাসিনো বাণিজ্য করছে। এসব আমার কথা না, সংবাদমাধ্যমের কথা।’
তিনি বলেন, ‘এ সরকার দিনের ভোট রাতে করেছে। যারা জনগণ থেকে বিচ্ছিন্ন তাদেরকে ক্ষমতায় বসিয়েছে। কিন্তু যারা (নিজ দল বিএনপির প্রতি ইঙ্গিত করে) জনগণকে ভালোবাসে তারা এখনও জনগণের পাশে আছে। তারা ক্ষমতায় থাকুক আর না থাকুক, জনগণের দুঃখে-কষ্টে সবসময় পাশে আছে।’
বিএনপির এই সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব বলেন, ‘সরকার আরেকটি ভানুমতির খেল দেখাচ্ছে। সেটা হচ্ছে ভ্যাকসিন নিয়ে। ২০ লক্ষ লোককে বিনা পয়সায় ভ্যাকসিন দেবে। ভারত থেকে ভ্যাকসিন নিয়েছে। ভারতের হাই কমিশন বলছে, বাংলাদেশে আওয়ামী লীগই ভারতের বড় বন্ধু। অন্য কেউ না। যারা একটি দেশের একটি রাজনৈতিক দলকে বন্ধু মনে করে, তাদের দেয়া ভ্যাকসিন যদি দেশের জনগণ নেয় তাহলে মানুষ বাঁচবে কি বাঁচবে না, সেই গ্যারান্টি নাই।’
তিনি বলেন, ‘সরকার বারবার বলছে ভ্যাকসিন ভিআইপিদের আগে দেয়া হবে না। আগে দেয়া হবে সাধারণ জনগণকে। প্রশ্ন হলো, ভিআইপিদের আগে দেয়া হবে না কেন? আগে ভিআইপিদের দেন, তারা সুস্থ থাকুক, তারপর দেশের জনগণকে দেন। কিন্তু এখানেই রহস্য, সরকার সাধারণ জনগণকে আগে ভ্যাকসিন দিয়ে এর কার্যকারিতা ও পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া পরীক্ষা করতে চায়। কারণ, দেশের মানুষের বাঁচা-মরা নিয়ে সরকারের কোনও মাথাব্যাথা নেই।’
বিএনপির এই শীর্ষ নেতা আরও বলেন, ‘যারা ভ্যাকসিন নেবে তাদের একটি সম্মতিপত্র স্বাক্ষর করতে হবে। সেই সম্মতিপত্রে নিজের নাম, বাবা-মায়ের নাম-ঠিকানা থাকবে। বলা হচ্ছে, ভ্যাকসিন নিয়ে যদি কেউ অসুস্থ হয় বা কোনও পার্শপ্রতিক্রিয়া হয় তাহলে সরকার দেখবে। এখানেই তো সন্দেহ ঢুকে গেল। এই যে সম্মতিপত্র, অঙ্গীকারনামা- এটা কেন? বিজ্ঞানের পরীক্ষায় যদি উত্তীর্ণ হয় যে এই টিকা সাধারণ মানুষকে দেয়া যাবে তাহলে অঙ্গীকারনামা কেন? এই যে অঙ্গীকারনামা, সম্মতিপত্র এর থেকে প্রমাণিত হয় ভারত থেকে যে টিকা আসছে তার মধ্যে ‘সন্দেহ আছে’। কারণ প্রধানমন্ত্রী, রাষ্ট্রপতি, ওবায়দুল কাদের, হাছান মাহমুদ আগে টিকা নেবেন না। আগে দেয়া হবে গরিব, সাধারণ জনগণকে।’
তিনি বলেন, ‘আমাদের মাথা ব্যথা সর্দি জ্বর হলে প্যারাসিটামল কিনি, কারণ জানি এ ওষুধটা খেলে আমাদের মাথা ব্যথা সারবে। তখনতো অঙ্গীকারনামা দেয়া লাগে না। মুচলেখা দেয়া লাগে না। করোনা টিকা নিতে এখন অঙ্গীকারনামা দিতে হবে কেন? এর কারণ হলো, ভারত থেকে যে টিকা আসছে তা বাংলাদেশের মানুষের ওপর গবেষণা চালানোর জন্য।’
রাকসু’র সাবেক এই ভিপি বলেন, ‘একটি গবেষণাগারে ব্যাং, বিড়াল যেমন বিচ্ছিন্ন করা হয়, তার ভেতরে যেমন দেখা হয় কী আছে, মানবদেহ সম্পর্কে জানার জন্য যেমন ওই প্রাণীগুলোর দেহ কাটা হয়, আজ ঠিক তেমনিভাবেই বাংলাদেশের মানুষ ভারতের গবেষণাগারের ‘ব্যাং, বিড়ালে’ পরিণত হয়েছে। ওরা দেখবে, এই ভ্যাকসিন নেওয়ার পরে মানুষ বাঁচে, না মরে, না অসুস্থ হয়।’
তিনি বলেন, ‘কত বড় বিপদজনক ও সর্বনাশা খেলায় মেতেছে সরকার। বাংলাদেশের মানুষ অন্য দেশের গবেষণাগারের প্রাণী হিসেবে কাজ করবে? বাংলাদেশের মানুষ তেলাপোকায় পরিণত হয়েছে। গবেষণাগারে যেমন তেলাপোকাকে পরীক্ষা করা হয় তেমনি বাংলাদেশের মানুষের উপর টীকা দিয়ে পরীক্ষা করা হচ্ছে। তাই আমাদেরকে সতর্ক থাকতে হবে। যাতে আমরা তেলাপোকায় পরিণত না হয়। সরকার নিজে ক্ষমতায় থাকার জন্য প্রভুরা যা বলছে তাই করছে। কই আমাদের তিস্তার পানি তো দেয় না। ২০ লক্ষ ডোজ দিল তাদের দরদ এতো উতলে গেছে? তিস্তায় পানি দেয় না, ভালো বন্ধু হলে তো দিতেন।’
ঢাকা মহানগর উত্তর স্বেচ্ছাসেবক দলের সিনিয়র যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আজিজুর রহমান মুসাব্বির এর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন স্বেচ্ছাসেবক দলের সভাপতি মোস্তাফিজুর রহমান, সাধারণ সম্পাদক আব্দুল কাদের ভূইয়া জুয়েল, ঢাকা মহানগর উত্তর বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আনোয়ারুজ্জামান আনোয়ার ও স্বেচ্ছাসেবকদলের সাংগঠনিক সম্পাদক ইয়াছিন আলী প্রমুখ।