আপনি নেত্রী, ভ্যাকসিনের ‘প্রথম ডোজটা’ আপনিই নিন: হাসিনাকে জাফরুল্লাহ
সবার আগে গণমাধ্যমের সামনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ভ্যাকসিনের ‘প্রথম ডোজ’ নেয়ার আহ্বান জানিয়েছেন গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা ও ট্রাস্টি ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী।
তিনি বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী সবার আগে প্রকাশ্যে ভ্যাকসিনের প্রথম ডোজ নিলে, ভ্যাকসিন নিয়ে মানুষের মধ্যে আস্থা তৈরি হবে। ভ্যাকসিন বৈজ্ঞানিকভাবে সত্য, সব মানুষের এটা নেয়া উচিত।’
এ প্রবীণ চিকিৎসক সরকারকে ওষুধ ও চিকিৎসা ক্ষেত্রে ব্যাপকভাবে গবেষণা বাড়ানোরও আহ্বান জানান।
শুক্রবার (২২ জানুয়ারি) রাজধানীর গণস্বাস্থ্য নগর হাসপাতালে অনুষ্ঠিত “করোনা টিকার সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনা” বিষয়ে সাংবাদিক সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন।
ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী বলেন, ‘ভ্যাকসিন বিষয়ে জনগণের আস্থা ফেরাতে আমি প্রস্তাব করছি, এই ভ্যাকসিন প্রথমেই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা টেলিভিশন ক্যামেরার সামনে নেবেন। তাহলে জনগণের আস্থা বাড়বে। উনি যেহেতু আমাদের নেত্রী, তাই ওনাকে দিয়েই আমাদের ভ্যাকসিনের যাত্রা শুরু হোক।’
এসময় অর্থমন্ত্রীকে উদ্দেশ্য করে ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী বলেন, ‘আমাদের অর্থমন্ত্রী প্রথম ভ্যাকসিন নিতে চেয়েছেন। তার প্রথমে ভ্যাকসিন নেয়ার প্রয়োজন নেই। তার থেকে প্রথমে তাকে অন্য একটা কাজ করে দিতে হবে। উনি বলেছেন, ৪৩ বিলিয়ন ডলার আমাদের বর্তমানে উদ্বৃত্ত রয়েছে। এত এত বিলিয়ন ডলার থেকে মাত্র আধা বিলিয়ন ডলার গবেষণা এবং ভ্যাকসিন উৎপাদনের জন্য বরাদ্দ করে দেন। উনি (অর্থমন্ত্রী) এটা করলে আমরা নিজেরাই উৎপাদন করে সকলেই করোনার ভ্যাকসিন নিতে পারবো এবং পাশাপাশি অন্য দেশকেও সহযোগিতা করতে পারবো।’
ভারত থেকে টিকা আমদানির প্রসঙ্গে ডা. জাফরুল্লাহ বলেন, ‘ভারত থেকে টিকা আমদানির বিষয়ে সরকার প্রথমে বলেছে, এটা ‘জি টু জি’ (সরকার থেকে সরকার) পদ্ধতিতে করা হচ্ছে। কিন্তু এটা হচ্ছে একটি প্রাইভেট কোম্পানির সঙ্গে আরেকটি প্রাইভেট কোম্পানির চুক্তি। বাংলাদেশ সরকার তার সাক্ষী হয়েছে। বাংলাদেশ সরকার গ্যারান্টি দিয়েছে টাকা দেয়ার বিষয়ে। এখানে বেক্সিমকো এক পয়সাও বিনিয়োগ করেনি। বরং বেক্সিমকো এ থেকে যে পরিমাণ লাভ করেছে সেই টাকা দিয়ে তারা ফ্রান্সের ওষুধ কোম্পানি সানোফির বাংলাদেশ অংশের ৫৪ শতাংশ ৩ কোটি ৫৫ লাখ পাউন্ড দিয়ে কিনে নিয়েছে। এরমধ্যে আবার ৪৫ শতাংশের মালিক ছিল বাংলাদেশ সরকার।’
তিনি আরও বলেন, ‘কথা ছিল ভারত যে দামে ভ্যাকসিন পাবে আমরাও সেই দামে পাবো। কিন্তু আমরা সেই দামে পাচ্ছি না। ১২শ কোটি টাকা বিনা টেন্ডারে মন্ত্রিসভায় অনুমোদন দেয়া হয়েছে। কিন্তু বেগম খালেদা জিয়া তো দুই কোটি টাকার মামলা থেকেও রেহাই পাননি। সুতরাং আপনারাও যে ভবিষ্যতে ঝামেলায় পড়বেন না, সেই নিশ্চয়তা নেই। তাই আমি সাবধান করে দিচ্ছি, এটি একটি ‘অন্যায় এবং ভুল’ কাজ। সরকারের এ কাজ করা উচিত হয়নি।’
জাফরুল্লাহ বলেন, ‘সারা পৃথিবীতে যে জিনিসের দাম বেশি থাকে তখন সেই জিনিস ভেজাল ও নকল তৈরি হয়। কোনও সস্তা ওষুধ কখনোই নকল হয় না। দামি ওষুধেই ভেজাল হয়। তাই সরকারের কাছে আমার অনুরোধ, যতদিন পর্যন্ত সরকারের এই তিন কোটি ডোজ না দেয়া হবে, ততোদিন বেসরকারিভাবে টিকা আমদানি করতে দেয়া উচিত হবে না।’
জাফরুল্লাহ চৌধুরী বলেন, ‘দুঃসংবাদ হলো ভারতের এক-তৃতীয়াংশ ব্যক্তি এই ভ্যাকসিন নিতে অস্বীকার করছে। কিছু পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া থাকেই, প্রত্যেকটা ওষুধেই পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া আছে, ভ্যাকসিনেরও আছে। এটা নিয়ে ভয় পাওয়ার কিছু নেই। তবে এক-তৃতীয়াংশ ব্যক্তি যখন ভয় পাচ্ছে, তখন একটা সন্দেহের উদ্রেক ঘটে বটে।’
সংবাদ সম্মেলনে আরও উপস্থিত ছিলেন, অধ্যাপক ডা. নজরুল ইসলাম, অধ্যাপক ডা. জাকির হোসেন, অধ্যাপক ডা. সায়েদুর রহমান, অধ্যাপক ডা. মুহিব উল্লাহ খোন্দকার, গণস্বাস্থ্যের কেন্দ্রের গণমাধ্যম উপদেষ্টা জাহাঙ্গীর আলম মিন্টু প্রমুখ।