দেশকে ‘নতজানু’ করে রাখার ষড়যন্ত্র চলছে: মির্জা ফখরুল
দেশকে ‘নতজানু’ করে রাখার ষড়যন্ত্র চলছে বলে মন্তব্য করেছেন মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তিনি বলেন, তারা (সরকার) আজকে অত্যন্ত পরিকল্পিতভাবে দেশের মানুষকে তাদের অধিকার থেকে বঞ্চিত করেছেন, দেশের মানুষকে তাদের যে পরিচিতি আছে, সেখান থেকে দূরে ঠেলে দিতে চাইছেন।
গতকাল বৃহস্পতিবার (২১ জানুয়ারি) বিকালে স্বাধীনতার সূবর্ণজয়ন্তী উদযাপনে দলের এক ওয়েবিনারে বিএনপি মহাসচিব এই মন্তব্য করেন।
ফখরুল বলেন, আজকে একটা ষড়যন্ত্র চলছে যে, বাংলাদেশ তার যে স্বতন্ত্র, স্বাধীনতা, সার্বভৌমত্ব তাকে ভুলে গিয়ে সে অন্য জায়গায় নতজানু হয়ে থাকুক- এভাবে পরিকল্পনা চলছে। যে পরিকল্পনাকে আমাদের রুখে দিতে হবে।
বিএনপি মহাসচিব বলেন, দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া সেই পতাকাই ধারণ করেছেন, যে পতাকা স্বাধীনতার ঘোষক জিয়াউর রহমান তার হাতে তুলে দিয়েছিলেন এবং একইভাবে আমাদের নেতা তারেক রহমান তিনিও সেই পতাকা তুলে ধরছেন। আজকে আমাদের সেই পতাকা তুলে ধরেছেন। এই পতাকাই মুক্তির পতাকা।
মহাসচিব বলেন, আমাদের স্লোগান একটাই- আমরা আজকে শৃঙ্খলিত হতে চাই, আমরা আজকে মুক্ত হতে চাই এবং মানুষকে এই অবস্থা থেকে বাঁচাতে চাই। শহীদ জিয়াউর রহমানের যে আদর্শ সেই আদর্শ অনুসরণ করে, আমরা মানুষকে বাঁচাতে চাই, দেশকে বাঁচাতে চাই। আসুন আমরা সেই লক্ষ্যে সবাই ঐক্যবদ্ধভাবে এগিয়ে যাই।
বিএনপির স্বাধীনতা সূবর্ণজয়ন্তী উদযাপনে গঠিত ‘সেমিনার ও সিম্পোজিয়াম কমিটি’র উদ্যোগে ‘স্বাধীনতার ঘোষক শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান ও বাংলাদেশি জাতীয়তাবাদের ধ্যান-ধারনা’ শীর্ষক এই ওয়েবিনার হয়। এতে মূল প্রবন্ধ পাঠ করেন শিক্ষাবিদ ড. মাহবুব উল্লাহ।
তিনি বলেন, জিয়াউর রহমান যে গানটি ভালোবাসতেন- ‘প্রথম বাংলাদেশ, আমার শেষ বাংলাদেশ, বাংলাদেশ বাংলাদেশ বাংলাদেশ’। আমার অথবা আমাদেরও শেষ ঠিকানা হচ্ছে বাংলাদেশ। যেটা বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের দলীয় সঙ্গীত আছে, তার মধ্য দিয়ে এটা ফুঁটে উঠে।
ফখরুল বলেন, বাংলাদেশ সম্পর্কে এই যে আমাদের অনুভূতি, এই অনুভূতি যতই প্রবল হবে, ততই কিন্তু আমরা জাতি হিসেবে শক্তিশালী হবো।
মির্জা ফখরুল বলেন, শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান ও বাংলাদেশি জাতীয়তাবাদ– এই দুইটাকে আলাদা করে দেখার সুযোগ নেই। কারণ শহীদ জিয়াই বাংলাদেশের জনগণের জন্য নতুন একটা পরিচিত, স্বতন্ত্র একটা অস্তিত্ব তার বক্তব্যের মধ্য দিয়ে, তার রাজনীতির মধ্য দিয়ে সেটা প্রমাণ করেছেন। তিনি তার দূরদৃষ্টি সম্পন্ন চিন্তার মধ্য দিয়ে জাতিকে বাংলাদেশি জাতীয়তাবাদ উপহার দিয়েছিলেন।
আমি ব্যক্তিগতভাবে মনে করি এটি একটা দর্শন। এই দর্শনের ওপর ভিত্তি করেই আমাদের জাতি সত্ত্বা দাঁড়াতে শুরু করেছে। অলরেডি ৫০ বছর পার করে ফেলেছি আমরা। আপনি দেখবেন আওয়ামী লীগ অত্যন্ত পরিকল্পিভাবে বাংলাদেশি জাতীয়তাবাদ ধারনা বিরোধিতা করে। কিন্তু আজকে যখন পাসপোর্ট তৈরি করেছে নতুন করে, সেই পাসপোর্টেও বাংলাদেশি জাতীয়তাবাদ রাখতে বাধ্য হয়েছে। আসলেই ওটাই সত্য ও ওইটাই সঠিক কথা।
জিয়াউর রহমানের স্বাধীনতার ঘোষণার প্রসঙ্গ টেনে তিনি বলেন, আসলে জিয়াউর রহমানকে আলাদা করে স্বাধীনতার কথা চিন্তাও করা যায় না। কারণ তার স্বাধীনতা ঘোষণার মধ্য দিয়ে গোটা জাতি অনুপ্রাণিত হয়ে যুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়েছিলো। এই নিয়ে অনেকে অনেক কথা বলতে পারেন। আমাদের যারা সরকারে আছে, তাকে অখ্যাত মেজর হিসেবে চিহ্নিত করতে চান। এই অখ্যাত মেজরের ঘোষণায় কিন্তু তখন বাংলাদেশের সাড়ে ৭ কোটি মানুষ যুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়েছিলো। তখন তাদের বড় বড় নেতারা সেইদিন জনগণের সামনে সেই ঘোষণাটি দিতে পারেননি।
তিনি আরও বলেন, যারা আজকে শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানকে ভুলিয়ে দিতে চান, তার সম্পর্কে বিকৃত কথা, ইতিহাস বিকৃত করে জনগণের সামনে তুলে ধরতে চান, নতুন প্রজন্মের সামনে তুলে ধরতে চান, তাদের উদ্দেশ্যে শুধু একটি কথা বলতে চাই- যার যে অবদান সে অবদানটাকে স্বীকার করুন। অন্যথায় আপনারা যেটাকে মহান করে তুলে ধরতে চান, সবচেয়ে বড় এবং একমাত্র নেতা হিসেবে দেথাতে চান তাকেও কিন্তু খাটো করা হয়। শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের যেটা প্রাপ্য সেটা তাকে অবশ্যই দিতে হবে। তিনি স্বাধীনতার ঘোষণা দিয়েছিলেন, তিনি বাংলাদেশের রণাঙ্গনে যুদ্ধ করে দেশ স্বাধীন করার নেতৃত্ব দিয়েছিলেন, তার ডাকেই মানুষ যুদ্ধ ক্ষেত্রে নেমে এসেছিলো।
১৯৭৫ সালে রাজনৈতিক পট পরিবর্তনের প্রসঙ্গ টেনে মির্জা ফখরুল বলেন, রাজনৈতিক পটপরিবর্তনে যে নতুন দিগন্তের সূচনা করেছিলেন শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়া্উর রহমান। একটা হতাশ একেবারে হতাশায় নিমজ্জিত একটা জাতিকে তিনি একটা আশার আলো দেখিয়েছিলেন এবং কর্মে উদ্দীপ্ত করেছিলেন- এটা বাস্তবতা এবং তারই ফলে আজকে বাংলাদেশ যেখানে দাঁড়িয়েছে তার ভিত্তিটা তিনি নির্মাণ করে দিয়েছেন। মাত্র সাড়ে তিন বছরে একটা জাতিকে যেহেতু তিনি একটা পরিচিতি দিতে পেরেছিলেন, এটা স্বাতন্ত্র দিয়েছিলেন, সেজন্য আজকে জাতি এই জায়গায় এসছে এবং লড়াইটা করছে।
স্বাধীনতা যুদ্ধে মানুষের মূল আকাঙ্ক্ষাখাটা ছিলো একটা গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র ব্যবস্থা, এটা মুক্ত সমাজ ব্যবস্থা। দুর্ভাগ্য আমাদের, আজকে এই ৫০ বছর পরে আমরা এটা পালন করতে যাচ্ছি- কী বলে পালন করব? আমাদের তো লজ্জা হওয়া উচিত যে, আমরা ৫০ বছর পরেও একটা সুষ্ঠু রাজনৈতিক কাঠামো নির্মাণ করতে পারিনি। আমরা নির্মাণ করতে পারিনি যে, একটা চমৎকার ব্যবস্থার মধ্য দিয়ে শান্তিপূর্ণভাবে ক্ষমতা পরিবর্তন হবে এবং সেটার জন্য দায়ী আজকে যারা ক্ষমতা জোর করে দখল করে আছে, অস্ত্র নিয়ে দখল করে আছে জনগণ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে তাদের কারণেই এই অবস্থা সৃষ্টি হয়েছে।
কমিটির আহ্বায়ক বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. আবদুল মঈন খানের সভাপতিত্বে সদস্য সচিব ইসমাইল জবিহউল্লাহ‘র সঞ্চালনায় আলোচনা সভায় স্থায়ী কমিটির সদস্য জমির উদ্দিন সরকার, গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, নজরুল ইসলাম খান, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা কাউন্সিলের সদস্য আবদুস সালাম, অধ্যাপক সুকোমল বড়ুয়া, যুগ্ম-মহাসচিব সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক খন্দকার মুস্তাহিদুর রহমান, অবসরপ্রাপ্ত জজ ইকতেদার আহমেদ প্রমুখ বক্তব্য দেন।
এছাড়া সকালে স্বাধীনতার সূবর্ণজয়ন্তী উদযাপনে সিলেট বিভাগ সমন্বয় কমিটির সভা হয়। সেখানে দলের ভাইস চেয়ারম্যান অধ্যাপক এজেডএম জাহিদ হোসেন, সিটি মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী, সাংগঠনিক সম্পাদক সাখাওয়াত হাসান জীবনসহ কমিটির সদস্যরা ছিলেন।