নির্বাচনী ব্যয় খাতে অতিরিক্ত ১১৫৭ কোটি টাকা চায় ইসি
পৌরসভা, ইউনিয়ন পরিষদ, চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনসহ স্থানীয় সরকারের অন্যান্য নির্বাচন আয়োজনে অতিরিক্ত ১ হাজার ১৫৭ কোটি টাকা চেয়েছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। এছাড়া প্রশিক্ষণ খাতেও অতিরিক্ত ৭৪ কোটি ৩০ লাখ টাকা চেয়েছে এই সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানটি।
জানা গেছে, সম্প্রতি নির্বাচনী ব্যয় খাত, প্রশিক্ষণ, টেলিযোগাযোগ সরঞ্জামাদি এবং সফটওয়্যার ও ডাটাবেজ সংরক্ষণের জন্য অতিরিক্ত বরাদ্দ চেয়ে অর্থ বিভাগের সিনিয়র সচিব আব্দুর রউফ তালুকদারকে চিঠি দিয়েছেন ইসির সিনিয়র সচিব মো. আলমগীর। চিঠিতে ২০২০-২১ অর্থবছরে পাওয়া বাজেটের কথা উল্লেখ করে সংশোধনী বাজেটও চাওয়া হয়েছে।
চিঠিতে তিনি উল্লেখ করেছেন, পৌরসভা, ইউনিয়ন পরিষদ, চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন এবং উপজেলা পরিষদ সাধারণ নির্বাচনের পাশাপাশি জাতীয় সংসদ ও স্থানীয় সরকারের শূন্য আসনের উপ-নির্বাচন মিলিয়ে চলতি (২০২০-২১) অর্থবছরে প্রায় ৪ হাজার ১০২টি নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। অর্থবছরের শুরুতেই বিশেষ কার্যক্রম নির্বাচনী খাতে ১ হাজার ৩৬৮ কোটি ৪৭ লাখ ৫ হাজার টাকার প্রাক্কলিত বাজেট বরাদ্দের চাহিদা অর্থ মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছিল। চাহিদার পরিপ্রেক্ষিতে পরবর্তীতে অর্থ মন্ত্রণালয় থেকে আলোচনা সাপেক্ষে চলতি ২০২০-২১ অর্থবছরে নির্বাচন খাতে ৪৩৩ কোটি ৪০ লাখ টাকার সংস্থান করা হয়েছে। চলতি অর্থবছরে স্থানীয় সরকারের বিভিন্ন সাধারণ নির্বাচন, উপ-নির্বাচন পরিচালনা ও আইনশৃঙ্খলা ব্যয় বাবদ ৪৩৩ কোটি ৪০ লাখ টাকার অতিরিক্ত ১ হাজার ১৫৭ কোটি ৫১ লাখ ৮২ হাজার টাকার সংশোধিত বাজেট প্রয়োজন হবে। এই নির্বাচনগুলো অনুষ্ঠানের বিষয়ে নির্বাচনী ব্যয়ের আর্থিক পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছে।
এছাড়া নির্বাচনী প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউটের প্রশিক্ষণ খাতে চলতি অর্থবছরের শুরুতেই ৩৬২ কোটি ৪৯ লাখ ৭৭ হাজার টাকার প্রাক্কলিত বাজেট বরাদ্দের চাহিদা অর্থ মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছিল। এ চাহিদার পরিপ্রেক্ষিতে পরবর্তীতে অর্থ মন্ত্রণালয় থেকে চলতি ২০১০-২১ অর্থবছরে প্রশিক্ষণ খাতে ৬০ কোটি টাকা সংস্থান রাখা হয়েছে। এসব নির্বাচন ইভিএম ও ব্যালট পেপারের মাধ্যমে অনুষ্ঠিত হবে। নির্বাচন কমিশনের সিদ্ধান্তের পরিপ্রেক্ষিতে আগামী ৩০ জুন পর্যন্ত সেই ৬০ কোটি টাকার সঙ্গে অতিরিক্ত ৭৪ কোটি ২৯ লাখ ৯৫ হাজার টাকার সংশোধিত বাজেট প্রয়োজন হবে।
এর আগে, গত বছরের মে মাসে অর্থ মন্ত্রণালয়ের জারি করা প্রশিক্ষণ বিষয়ক নীতিমালা অনুসরণ করায় প্রশিক্ষণ খাতে প্রাথমিক প্রাক্কলিত চাহিদা ৩৬২ কোটি ৪৯ লাখ ৭৭ হাজার টাকা কমিয়ে ১৩৪ কোটি ৩০ লাখ টাকা সংশোধিত বাজেট প্রস্তাব করা হয়েছে। এছাড়া নির্বাচন কমিশন সচিবালয়ের জাতীয় পরিচয়পত্র নিবন্ধন অনুবিভাগের চাহিদা অনুযায়ী নতুন কোড যুক্ত করে যৌক্তিকতা বিশ্লেষণ করে চাহিদা উপস্থাপন করা হয়েছে।
সংশোধনী বাজেট চেয়ে চিঠিতে উল্লেখ করা হয়, নির্বাচনী ব্যয় হিসেবে ২০২০-২১ অর্থবছরের বাজেটে ৪৩৩ কোটি ৪০ লাখ টাকার সংস্থান রাখা হয়েছিল, সেখানে সংশোধিত বাজেটে ১ হাজার ৫৯০ কোটি ৯১ লাখ ৮২ হাজার টাকা চাওয়া হয়েছে। পাশাপাশি, নির্বাচনী প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউটের প্রশিক্ষণ খাতে ৬০ কোটি টাকার সংস্থান রাখা হয়েছিল, সেখানে সংশোধিত বাজেটে ১৩৪ কোটি ৩০ লাখ টাকার বাজেট চাওয়া হয়েছে। ফলে নির্বাচনী ব্যয় খাতে অতিরিক্ত ১ হাজার ১৫৭ কোটি ৫১ লাখ ৮২ হাজার টাকা এবং প্রশিক্ষণ খাতে অতিরিক্ত ৭৪ কোটি ৩০ লাখ টাকার প্রয়োজন হবে।
সেই সঙ্গে জাতীয় পরিচয়পত্র (এনআইডি) নিবন্ধন অনুবিভাগের চাহিদার পরিপ্রেক্ষিতে টেলিযোগাযোগ সরঞ্জামের জন্য বাজেটে বরাদ্দ না থাকলেও সংশোধিত বাজেটে ৭ কোটি টাকা বরাদ্দ চেয়েছে নির্বাচন কমিশন। এছাড়া কম্পিউটার সফটওয়্যার ও ডাটাবেজ রক্ষণাবেক্ষণের জন্য ১৫ কোটি টাকা চেয়েছে ইসি।
এ বিষয়ে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ইসির এক কর্মকর্তা বলেন, ‘নির্বাচনী ব্যয়ের জন্য বছরের শুরুতেই আমরা ১৪শ কোটি টাকা চেয়েছিলাম। তখন টাকাটা তারা দেয়নি। তারা জানতে চেয়েছিল বছরের কোন সময়ে টাকা লাগতে পারে। সে সময় আমরা বলেছিলাম, যেহেতু জানুয়ারি থেকে পৌরসভার নির্বাচন এবং ইউপি নির্বাচনগুলো ধাপে ধাপে হবে, তাই জানুয়ারিতে টাকা লাগতে পারে। এরপর বলা হয়েছিল সংশোধিত বাজেটের সময় কী কী খাতে টাকা লাগতে পারে সে বিষয়ে প্রস্তাব পাঠাতে। আর নির্বাচন প্রশিক্ষণ খাতে যে বরাদ্দ এখন চেয়েছি সে সময়ও এই টাকাই চেয়েছিলাম, তখন এটিও দেয়নি। নিয়ম অনুযায়ী বাজেট প্রস্তাব করার পর প্রথমে যে অর্থ বরাদ্দ দেয়া হয়, সেখানে ঘাটতি থাকলে সংশোধিত বাজেটে এই টাকা নতুনভাবে প্রস্তাব করা যায়।’
সার্বিক বিষয়ে জানতে ইসির সিনিয়র সচিব মো. আলমগীরের সঙ্গে একাধিকবার ফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তিনি কল ধরেননি। মোবাইলে এসএমএস পাঠালেও তিনি উত্তর দেননি।
এর আগে গত বছরের ১৪ ডিসেম্বর প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) ও নির্বাচন কমিশনারদের বিরুদ্ধে সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিল গঠনের আবেদন করেন দেশের ৪২ জন বিশিষ্ট নাগরিক। আর্থিক অনিয়ম, দুর্নীতি ও নির্বাচন সংশ্লিষ্ট গুরুতর অসদাচরণের অভিযোগ তুলে রাষ্ট্রপতির কাছে এ আবেদন করা হয়। এ বিষয়ে সরাসরি কথা বলার জন্য রাষ্ট্রপতির সঙ্গে সাক্ষাতের সময় চেয়ে অনুরোধও জানান আবেদনকারীরা।
সার্বিক বিষয়ে জানতে চাইলে সুশাসনের জন্য নাগরিকের (সুজন) সম্পাদক বদিউল আলম মজুমদার বলেন, ‘আমার মনে হয় এসব টাকা অপচয় করার চেয়ে এই নির্বাচন কমিশনকে অবসরে পাঠিয়ে যারা নির্বাচনে দাঁড়াতে চায় তাদেরকে যদি ঘোষণা করে বা লটারি করে নির্বাচিত করে দেয়, কিংবা সরকারি দলের যারা মনোনয়ন দেয় তাদের নির্বাচিত ঘোষণা করলে এতগুলো টাকা সাশ্রয় হবে আমাদের। আর যে ইভিএমের কথা এসেছে, এই ইভিএম হলো সর্বোচ্চ নিকৃষ্টতম ইভিএম। এই ইভিএম আন্তর্জাতিক মানদণ্ড পূরণ করে না, আন্তর্জাতিক মানদণ্ড হলো, এখানে একটা পেপার ট্রেইল থাকতে হবে এবং ব্যালট পেপার থাকতে হবে। ইভিএম না রাখায় আমাদের দেশের বিশেষজ্ঞ জামিলুর রেজা চৌধুরী আমাদের চিঠিতে স্বাক্ষরই করেননি। ইভিএম ভয়ানক যন্ত্র, কমিশন চাইলে যা খুশি করতে পারে। নির্বাচন কমিশনের বিশ্বাসযোগ্যতা শূন্যের কোটায়। তাই কোনোভাবেই এজন্য আর অর্থ দেয়া সঠিক হবে না।’