কৌশল বদলে জুয়ার আসর

0

ক্যাসিনোবিরোধী অভিযানের পর প্রায় বন্ধ রয়েছে রাজধানীর মতিঝিলের ক্লাব পাড়াসহ বেশিরভাগ ক্লাবের জুয়ার আসর। তবে পেশাদার জুয়াড়িরা ক্লাব ছেড়ে এখন ছড়িয়ে পড়েছে রাজধানীর বিভিন্ন বাসাবাড়িতে। ধনাঢ্যরা গোপনে অভিজাত এলাকার ফ্ল্যাটে ফ্ল্যাটে জমিয়ে তুলেছে জুয়ার আসর। থেমে নেই নিম্নবিত্তদের জুয়া খেলাও। ফুটপাত থেকে শুরু করে রিকশার গ্যারেজ, বস্তি, বাসাবাড়ি ও চায়ের দোকানের আড়ালেও বসছে জুয়ার জমজমাট আসর। এসব আসরে প্রতি রাতে উড়ছে কোটি কোটি টাকা। কোথাও স্থানীয় প্রভাবশালী, কোথাও পুলিশ কর্মকর্তা আবার কোথাও-বা সন্ত্রাসীরা এসব জুয়ার আসরের নিয়ন্ত্রক হয়ে উঠেছেন। গত কয়েকদিনে রাজধানীর বিভিন্ন এলাকা ঘুরে বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষের সঙ্গে কথা বলে এসব তথ্য জানা গেছে।

তাদের ভাষ্য, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর চোখ ফাঁকি দিতে জুয়াড়িরা তাদের খেলার ধরন বদলে ফেলেছে। বিশেষ করে প্রকাশ্যে জুয়া খেলার ক্ষেত্রে জুয়াড়িরা বিশেষ কৌশল গ্রহণ করছে। আগে টাকার স্তূপ সামনে রেখে খেলা হলেও এখন টাকা থাকে পকেটে। হিসাব রাখে খাতায়। খেলা শেষে জয়-পরাজয় অনুযায়ী টাকার ভাগবাটোয়ারা হয়।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, আইনের দৃষ্টিতে জুয়া খেলা শুধু একটিমাত্র অপরাধ হলেও এটিকে ঘিরে আরও অনেক অপরাধের জন্ম হচ্ছে। চুরি, ছিনতাই ও ডাকাতি থেকে শুরু করে পারিবারিক সহিংসতা এবং সামাজিক অস্থিরতা তৈরির নেপথ্যে জুয়া অন্যতম প্রভাবক হিসেবে কাজ করছে।

গত বছরের ফেব্রুয়ারিতে হাইকোর্ট ঢাকার অভিজাত ১৩ ক্লাবসহ সারা দেশে সব ধরনের জুয়া খেলা নিষিদ্ধ বলে রায় দেয়। রায়ে দেশের কোথাও ‘জুয়ার উপকরণ’ পাওয়া গেলে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে তা জব্দের নির্দেশ দেওয়া হয়। বিচারপতি শেখ হাসান আরিফ ও বিচারপতি মো. মাহমুদ হাসান তালুকদারের হাইকোর্ট বেঞ্চের ওই রায়ে আরও বলা হয়, যেসব খেলার ফলাফল দক্ষতার বদলে ‘চান্স’ বা ‘ভাগ্য’ দিয়ে নির্ধারিত হয়, সেগুলোই জুয়া খেলা। আদালত বলেছে, হাউজি, ডাইস, ওয়ান টেন, চরচরির মতো খেলাগুলো দক্ষতার পরিবর্তে ভাগ্যের ওপর নির্ভর করে। আইনে এসব খেলা নিষিদ্ধ করা হয়েছে। এ ধরনের খেলার অনুমতি, খেলার আয়োজক ও অংশগ্রহণকারীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশের পাশাপাশি আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে এসব খেলার সরঞ্জাম জব্দের নির্দেশ দেওয়া হয় রায়ে।

পুলিশ কর্মকর্তারা বলছেন, কেউ যদি গোপনে তার বাসাবাড়িতে জুয়ার আসর বসায় তাহলে সেখানে অভিযান পরিচালনা করা দুরূহ। দরজা খুলতে খুলতেই সবকিছু সরিয়ে ফেলে। এতে আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ সম্ভব হয় না। প্রকাশ্যে খেলার বিভিন্ন স্পট নিয়মিত অভিযান পরিচালনা করে গুঁড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। আগের মতো এখন আর প্রকাশ্যে জুয়া খেলা হয় না।

২০১৯ সালের ১৮ সেপ্টেম্বর রাজধানীর ফকিরাপুলে ইয়ংম্যান্স ক্লাবে গিয়ে ক্যাসিনোবিরোধী অভিযান শুরু করে র‌্যাব। এরপর একে একে রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন স্বনামধন্য ক্লাবগুলোতে র‌্যাবের ধারাবাহিক অভিযানে বেরিয়ে আসতে থাকে ক্যাসিনোর অন্ধকার জগৎ। ঢাকা মহানগর দক্ষিণ যুবলীগের তৎকালীন সভাপতি (পরে বহিষ্কৃত) ইসমাইল হোসেন চৌধুরী সম্রাটসহ একে একে গ্রেপ্তার হন ক্ষমতাসীন দলের বেশ কয়েকজন প্রভাবশালী নেতা। বর্তমান সরকারের অন্যতম আলোচিত এ ‘শুদ্ধি অভিযান’ ছিল মূলত টেন্ডারবাজ, দুর্নীতিবাজ, মাদক, ক্যাসিনো ও জুয়ার কারবারের বিরুদ্ধে। ক্যাসিনোবিরোধী ওই অভিযানের পর কিছুদিন জুয়া খেলা বন্ধ থাকলেও ফের তা শুরু হয়, তবে কৌশল বদলে ভিন্ন অবয়বে। জুয়ার আসর ক্লাব থেকে ছড়িয়েছে বিভিন্ন ফ্ল্যাটে। ক্যাসিনো সরঞ্জামের বদলে জায়গা নিয়েছে অনলাইন থেকে পাওয়া বিভিন্ন চিপস কিংবা অ্যাপস। আবার প্লেয়িং কার্ডের (তাস) মাধ্যমেও কোটি কোটি টাকার জুয়া খেলা হচ্ছে।

রাজধানীর বিভিন্ন এলাকা ঘুরে বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মে বেট ৩৬৫ ঘিরে যেমন জুয়া খেলা হচ্ছে, তেমনি ইন্টারনেটভিত্তিক জুয়া খেলার বিভিন্ন অ্যাপস নামিয়ে সরাসরি টাকা আদানপ্রদানের মাধ্যমে জুয়া খেলায় যুক্ত হয়েছেন বিভিন্ন বয়সের লোকজন। তিন পাত্তি ও লুডুর গেম ডাউনলোড করেও জুয়া খেলছে তারা। এই কৌশলে ঢাকা উত্তর সিটি করপরেশনের (ডিএসসি) ৩৩ নম্বর ওয়ার্ডের বেড়িবাঁধ এলাকার মিনাবাজার সংলগ্ন জুলহাসের চায়ের দোকানে জুয়া খেলা হচ্ছে। দিনের বেলায় চা-সিগারেট বেচাবিক্রি চললেও সন্ধ্যা নামলেই সেখানে বসে জুয়ার আসর। এলাকার নিম্নআয়ের মানুষ থেকে শুরু করে শিক্ষার্থীসহ প্রায় সব শ্রেণি-পেশার মানুষই যান সেখানে। তবে রাজধানীর গুলশান, বনানী, উত্তরা ও ধানমন্ডির মতো অভিজাত এলাকায় জুয়া খেলার ধরন ভিন্ন। এসব এলাকার বিভিন্ন ক্যাফেতে প্রকাশ্যে জুয়া খেলা হলেও সাধারণের পক্ষে তা বোঝার উপায় থাকে না। কারণ ইউরোপিয়ান  ফুটবল লিগ থেকে শুরু করে যেকোনো খেলাকে উপলক্ষ করে বিভিন্ন ক্লাবের ভক্ত (ফ্যান) সেজে নির্ধারিত ক্যাফে বা রেস্টুরেন্টে মিলিত হন ধানমন্ডি ও বনানী এলাকার জুয়াড়িরা। গেট-টুগেদারের নামে নির্দিষ্ট ক্যাফেতে বসে ফুটবলে গোল কিংবা ক্রিকেটের প্রতি বলে বা রানে টাকার বাজি চলে। বাইরে থেকে মনে হবে ক্যাফে বা রেস্টুরেন্টের গ্রাহকরা বসে খেলা দেখছেন। কিন্তু মূলত তারা জুয়া খেলেন।  ধানম-ি, কলাবাগান ও শের-ই বাংলানগর এলাকার বিভিন্ন মানুষের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, সন্ধ্যার পর শুক্রাবাদ ঢালের বিভিন্ন এলাকার রিকশার গারেজ এবং এলাকাটির ৯২ নম্বর গলির তুটু কাকার ঘরে জুয়ার বোর্ড পরিচালিত হয়। এখানে প্রতি বোর্ডে লাখ টাকা পর্যন্ত বাজি ধরা হয়। এছাড়া একই এলাকার ১২ নম্বর গলিতেও আরেকটি বোর্ড চলে। স্থানীয় এক সাবেক কমিশনার এই জুয়ার দুটি বোর্ড পরিচালনা করেন। যেখানে প্রতিদিন ১০-২৫ লাখ টাকার জুয়া খেলা হয়। এমনকি মাঝেমধ্যে এই সংখ্যা কোটির অঙ্ক ছাড়িয়ে যায় বলে জানান এক জুয়াড়ি। এছাড়া কলাবাগান প্রথম লেনের মঈন নামে একজনের অফিস কক্ষে, কলাবাগান স্টাফ কোয়ার্টারের কমিউনিটি সেন্টার ও গ্রিন রোডের ভোজন বিলাস গলির শেষ মাথায় ভাঙ্গা ভবন নামে একটি ভবনে নিয়মিত জুয়ার আসর বসে। এসব আসরে প্রতি রাতে লাখ লাখ টাকা লেনদেন হয়।

স্থানীয়রা জানান, সান্তোর রেস্টুরেন্ট (ংধহঃড়ড়ৎ ৎবংঃধঁৎধহঃ) ও ধানম-ি ক্লাবেও দুটি জুয়ার বোর্ড বসে। রাত ১০টার পর থেকে জুয়ার কার্যক্রম শুরু হয়ে চলে শেষ রাত পর্যন্ত। এখানে ঢুকলে খেলা শেষ না হওয়া পর্যন্ত বাইরে বের হওয়ার নিয়ম নেই।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ক্যাসিনোবিরোধী অভিযানকালে সাময়িকভাবে বন্ধ থাকলেও এখনো গুলশানের অনেক নামিদামি ক্লাবে জুয়ার আসর চালাচ্ছেন প্রভাবশালীরা। বিশেষ করে গুলশান-১ এ পুরাতন ভারতীয় ভিসা সেন্টার সংলগ্ন অল কমিউনিটি ক্লাব, খামারবাড়ি কৃষিবিদ ক্লাব, কারওয়ানবাজারের মোশাররফের ক্লাব, সদরঘাটের উল্টোপাশে ৪ নম্বর সিমসন রোডে শপিং সেন্টারের আন্ডারগ্রাউন্ডে প্রতি রাতেই বসছে জুয়ার আসর। ৩৭ নম্বর ওয়ার্ড  আওয়ামী লীগের দুই নেতার নিয়ন্ত্রণেও চলছে একাধিক জুয়ার আসর। জুয়ার আসর বসছে বনানী পোস্ট অফিসের পাশে প্রিভিলেজ ক্লাব, গুলশান ইউনাইটেড হাসপাতালের গলিতে ক্যাপিটাল ক্লাব ও ধানম-ির বিভিন্ন ক্লাব ও ফ্ল্যাটবাড়িতে। যেখানে প্রতি রাতে কোটি কোটি টাকার খেলা চলছে।

একই চিত্র পাওয়া গেছে পল্লবীর বিভিন্ন এলাকার মানুষের সঙ্গে কথা বলে। তারা জানিয়েছেন বাউনিয়াবাদ পোড়া বস্তির বাসিন্দা শুক্কুর মাতবরের নিয়ন্ত্রণে একাধিক জুয়ার আসর পরিচালিত হচ্ছে। হারুন মোল্লা মাঠের বিপরীত পাশে টুইন টাওয়ার ভবনে বিশেষ কৌশলে খেলা হয় লাখ লাখ টাকার জুয়া। এই ভবনের বাইরে লাগানো একাধিক ক্লোজ সার্কিট টেলিভিশন ক্যামেরা। জুয়া চলাকালীন সেইসব ক্যামেরায় মনিটরিং করা হয় বাইরের দৃশ্য। সন্দেহজনক কেউ এলে কিংবা আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর উপস্থিতি ধরা পড়ার সঙ্গে সঙ্গেই তারা বিকল্পপথে পালিয়ে যান। এই ভবনে সন্ধ্যার পর প্রতি রাতেই খেলা চলে।

এসব বিষয়ে জানতে চাইলে শুক্কুর মাতবর বলেন, ‘আমি বাউনিয়াবাদ এ ব্লক ইউনিটের আওয়ামী লীগের সভাপতি। আমার রাজনৈতিক প্রতিপক্ষের লোকজন এ ধরনের মিথ্যা তথ্য দিয়েছে। এটি যদি সত্য প্রমাণ করতে পারেন, তাহলে আমি গলায় দড়ি দিয়ে মরব। আর না পারলে যারা তথ্য দিয়েছে তাদেরও মরা উচিত।’

স্থানীয়রা জানান, পলাশনগরের মুচিপাড়া সংলগ্ন জিলানের ক্যারম বোর্ডের আসরে সারা দিন জুয়া খেলা চলে। এখানে ২০ থেকে ৩০ জন ক্যারম বোর্ডের খেলোয়াড় রয়েছে, যারা প্রতিদিন বিটভিত্তিক  ৫ থেকে ১০ হাজার টাকা পর্যন্ত খেলে থাকেন। একই পদ্ধতিতে জুয়া চলছে রূপনগর থানার আলোকদি গ্রামে ইস্টার্ন হাউজিংয়ের মাথায়। এখানে ক্যারম বোর্ডের সহায়তায় চলে ৭ গুটির খেলা।  রেড গুটিকে টার্গেট করে টাকার অঙ্ক ওঠানামা করে। ভাসানটেকের মুক্তিযোদ্ধা স্কুলের সামনে টোনারটেকে সালামের রিকশার গ্যারেজে চলে রিকশাচালক ও মালিকদের জুয়ার আসর। বাবু ওরফে ক্যারম বোর্ড বাবুর নিয়ন্ত্রণে ভাসানটেকে ৬টি ক্যারম বোর্ডের আসরে জুয়া চলে। সংশ্লিষ্টরা জানান, স্থানীয় সন্ত্রাসী রূপচানের আশ্রয়ে এখানকার সব জুয়ার আসর ঘিরে জমজমাট মাদক ও যৌন কারবার চলে। বাবুর একাধিক মোবাইল ফোনে বক্তব্য জানার জন্য ফোন করলে তিনি রিসিভ করেননি।

ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) একজন অতিরিক্ত উপকমিশনার (এডিসি) এই প্রতিবেদকের সঙ্গে আলাপচারিতায় বলেন, ‘রাজধানীর বিভিন্ন জুয়ার স্পট বা আস্তানা গুঁড়িয়ে ফেলার পর এমন সব ব্যক্তি ফের জুয়ার আসর পরিচালনার জন্য তদবির শুরু করেন, তাতে চরম বিব্রতবোধ করি। পরে ওই এলাকা থেকে চলে যেতে হয়।’

জুয়া পারিবারিক-সামাজিক শান্তি বিনষ্টের অন্যতম কারণ বলে মনে করছেন সমাজবিজ্ঞানীরা। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজ বিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক রাশেদা ইরশাদ নাসির বলেন, “জুয়া এখন ‘ব্যবসার’ অংশ হিসেবে ব্যবহার হচ্ছে। বিদ্যমান বৈধ আয়ের সঙ্গে এটি সাংঘর্ষিক হলেও ধীরে ধীরে এর ব্যাপ্তি ঘটছে। এটা এক ধরনের প্রতারণা। সোজাপথে আয় না করে মানুষ এখন এই ধরনের প্রতারণার আশ্রয় নিচ্ছে। এতে ধূর্ত ও চতুরেরা টাকার কুমির হচ্ছে। অন্যদিকে সাধারণেরা প্রতাারিত হয়ে নিঃস্ব হচ্ছে। দীর্ঘদিন ধরেই এটা চলে আসছে। যতদিন যাচ্ছে ততই বিচ্যুতি ঘটছে মূল্যবোধের। কষ্টার্জিত উপার্জনের পথে না গিয়ে জুয়া, প্রতারণা বা কৌশলে আশ্রয় নেওয়ার প্রবণতা বেড়েছে। এতে সমাজে বৈষম্যের সৃষ্টি করছে।”

আইনের দৃষ্টিতে জুয়া শুধু একটিমাত্র অপরাধ হলেও এটি অসংখ্য অপরাধের জন্ম দিচ্ছে উল্লেখ করে এই সমাজ বিজ্ঞানী বলেন, ‘চুরি, ছিনতাই, ডাকাতি, নারী নির্যাতন থেকে শুরু ভয়ংকর সব অপরাধ কর্মকাণ্ডের দিকে মানুষকে নিয়ে যাচ্ছে জুয়া। জুয়ার কারণে যৌতুকের মতো ঘটনাও বেড়েছে। এরকম হাজারো অপরাধের জন্ম দিচ্ছে এই জুয়াড়িরা। পারিবারিক ও সামাজিক শান্তি বিনষ্টের অন্যতম কারণ এই জুয়া খেলা।’

ঢাবির অধ্যাপক রাশেদা ইরশাদ নাসির আরও বলেন, ‘জুয়ার নেতিবাচক প্রভাব অনেক সুদূরপ্রসারী। এটাকে থামাতে গেলে আইনের যথাযথ প্রয়োগ ও অপরাধীদের শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে। এই ধরনের অপরাধের সঙ্গে প্রভাবশালীরা জড়িত থাকে। তাদেরও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির আওতায় আনতে হবে। আইনি দুর্বলতা থাকলে সেটিকে যুগোপযোগী করার জন্য রাজনৈতিক ও সামাজিক ব্যক্তিত্ব থেকে শুরু করে আইনজ্ঞদের সমন্বিত ভূমিকা গ্রহণ করতে হবে।’

সংশ্লিষ্ট পুলিশ কর্মকর্তারা জানান, জুয়ার আসর ঘিরে মাদক ও যৌন কারবারের শক্তিশালী সিন্ডিকেট সক্রিয় রয়েছে রাজধানী ঢাকাসহ সারা দেশেই। যদিও ঢাকার বাইরে জুয়া আইনে অভিযান পরিচালনা করা সম্ভব হলেও রাজধানীতে ডিএমপি অধ্যাদেশ অনুসরণ করে জুয়াড়িদের বিরুদ্ধে অভিযান পরিচালনা করতে হয়। এতে জুয়ার সঙ্গে জড়িতদের গ্রেপ্তার করে আদালতে পাঠানোর পরদিনই জুয়াড়িরা একশ বা দেড়শ টাকার মুচলেকোয় ছাড়া পেয়ে ফের একই পেশায় জড়িয়ে যায়। এতে জুয়াড়িদের বিরুদ্ধে কার্যকর কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ করা যাচ্ছে না। এর প্রভাব সবখানেই পড়ছে। ফলে দিন দিন এই ধরনের অপরাধ বেড়ে যাচ্ছে।

রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় গোপন কিংবা প্রকাশ্য জুয়ার আসর প্রসঙ্গে জানতে চাইলে ঢাকা মহানগর পুলিশের জনসংযোগ শাখার অতিরিক্ত উপকমিশনার (এডিসি)  ইফতেখারুল ইসলাম বলেন, ‘প্রকাশ্যে যেসব স্পটে জুয়া খেলা হতো সেসব ভেঙে দেওয়ার কারণে এখন জুয়াড়িরা গোপন আস্তানায় চলে গেছে। বিভিন্ন বাসাবাড়িতে জুয়ার আসর বসানোর কারণে সেখানে অভিযান পরিচালনা দুরূহ হয়ে পড়েছে। এছাড়া এই ধরনের অপরাধের জন্য বড় কোনো শাস্তি না থাকায় অনেক ক্ষেত্রেই তারা পরোয়া করেন না।’

তিনি আরও বলেন, ‘ক্যারম বা কার্ডের মাধ্যমে জুয়া খেলাকে অনেকেই অপরাধ হিসেবে মনে করেন না। এভাবেই তাদের বোধ গড়ে উঠেছে। আবার অনেকে অপরাধ জেনেও এ ধরনের কাজে যুক্ত রয়েছেন। পুলিশ এই ধরনের অপরাধীদেরে বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য সবসময়ই সচেষ্ট রয়েছে।’

পুলিশের অ্যাডিশনাল ডিআইজি ওয়ালিদ বলেন, ‘জুয়া খেলা সঙ্গে অনেক ধরনের অপরাধ কর্মকান্ডের যোগসূত্র রয়েছে। কাজেই এই ধরনের অপরাধ কর্মকান্ড নিয়ন্ত্রণের জন্য সব থানা পুলিশকেই নির্দেশনা দেওয়া আছে।’

তুমি এটাও পছন্দ করতে পারো

উত্তর দিন

আপনার ইমেইল ঠিকানা প্রচার করা হবে না.

WP2Social Auto Publish Powered By : XYZScripts.com