জনগণ জাতীয় পার্টিকে বিকল্প শক্তি হিসেবে চায় : কাদের
জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান ও সংসদে বিরোধীদলীয় উপনেতা গোলাম মোহাম্মদ (জিএম) কাদের বলেছেন, দেশের মানুষ জাতীয় পার্টিকে বিকল্প শক্তি হিসেবে দেখতে চায়। দেশের প্রধান তিনটি শক্তির মধ্যে জাতীয় পার্টিই এখন সবচেয়ে গ্রহণযোগ্য দল। মানুষ চায় জাতীয় পার্টি আরও শক্তিশালী দল হিসেবে রাষ্ট্রক্ষমতা গ্রহণ করে দেশকে উন্নয়ন ও প্রগতির দিকে এগিয়ে নেবে।
এশিয়ার সর্ববৃহৎ শপিংমল রাজধানীর যমুনা ফিউচার পার্ক কনভেনশন সেন্টারের ‘মহল’ হলে শনিবার দুপুরে জাতীয় পার্টি ঢাকা জেলার দ্বিবার্ষিক সম্মেলনে জিএম কাদের এসব কথা বলেন।
সম্মেলন উপলক্ষে জেলার নেতাকর্মীদের মধ্যে বিপুল উৎসাহ-উদ্দীপনার সৃষ্টি হয়। ব্যানার-ফেস্টুন নিয়ে সকাল থেকে ঢাকা জেলার ৫টি উপজেলা- দোহার, নবাবগঞ্জ, কেরানীগঞ্জ, সাভার ও ধামরাই এবং ৩টি পৌর শাখার নেতাকর্মীরা আসতে শুরু করেন। হাজার হাজার নেতাকর্মীর উপস্থিতিতে যমুনা ফিউচার পার্ক কনভেনশন সেন্টারের ‘মহল’ হল কানায় কানায় পূর্ণ হয়ে যায়।
বেলা ১১টায় পার্টির চেয়ারম্যান জিএম কাদের দলের প্রেসিডিয়াম সদস্য এবং সাবেক মহিলা ও শিশুবিষয়ক প্রতিমন্ত্রী অ্যাডভোকেট সালমা ইসলাম এমপিকে সঙ্গে নিয়ে পতাকা উত্তোলন ও শান্তির প্রতীক সাদা পায়রা উড়িয়ে সম্মেলনের উদ্বোধন করেন। এরপর নৃত্যের মাধ্যমে নেতাকর্মীদের বরণ করা হয়। পরে অ্যাডভোকেট সালমা ইসলাম এমপি পার্টির চেয়ারম্যান জিএম কাদেরকে ফুল দিয়ে শুভেচ্ছা জানান। ঢাকা জেলা শাখার সদস্য সচিব খান মোহাম্মদ ইসরাফিল (খোকন) পার্টির মহাসচিব মসিউর রহমান রাঙ্গাকে ফুল দিয়ে শুভেচ্ছা জানান। এ সময় জেলার নেতাকর্মীরা অন্য কেন্দ্রীয় নেতাদের ফুল দিয়ে শুভেচ্ছা জানান। পরে পবিত্র কোরআন তেলাওয়াত ও গীতা পাঠের পর কেন্দ্রীয় ও ঢাকা জেলার নেতারা শুভেচ্ছা বক্তব্য দেন। এ সময় উপস্থিত ছিলেন যমুনা গ্রুপের পরিচালক মেহনাজ ইসলাম (তানিয়া)।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে জিএম কাদের বলেন, ১৯৯১ সালের আগ পর্যন্ত জাতীয় পার্টি ছিল বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় রাজনৈতিক শক্তি। কিন্তু ’৯১ সালের পর থেকে কখনও সম্মিলিত, আবার কখনও এককভাবে জাতীয় পার্টিকে ক্ষতিগ্রস্ত করা হয়েছে। জাতীয় পার্টির সভা-সমাবেশে হামলা করা হয়েছে। মামলা হয়েছে নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে। কিন্তু তাতেও জাতীয় পার্টি দুর্বল হয়নি। জাতীয় পার্টি দুর্বল হয়েছে যখন পার্টি থেকে সিনিয়র নেতারা চলে গেছেন। ভাঙনে দুর্বল হয়েছে জাতীয় পার্টি। এখন আগামী দিনের জন্য জাতীয় পার্টিকে প্রস্তুত করতে হবে। দেশের মানুষ এক বুক প্রত্যাশা নিয়ে জাতীয় পার্টির দিকে তাকিয়ে আছে।
বিশেষ অতিথির বক্তব্যে জাতীয় পার্টির মহাসচিব ও বিরোধীদলীয় চিফ হুইপ মসিউর রহমান রাঙ্গা বলেন, ঢাকা হচ্ছে বাংলাদেশের রাজনীতির প্রাণ। ঢাকা দখলে থাকলেই রাজনীতি নিয়ন্ত্রণ করা যায়। ’৯০ সালে শুধু ঢাকার আন্দোলনে পল্লীবন্ধু হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ ক্ষমতা ছেড়ে দেন। ইচ্ছা থাকলে ক্ষমতায় থাকতে পারতেন। কিন্তু তিনি মানুষের রক্তের ওপর দিয়ে ক্ষমতায় থাকতে চাননি। আগামী জাতীয় নির্বাচনের আগেই ঢাকায় জাতীয় পার্টিকে আরও শক্তিশালী করতে সবার প্রতি আহ্বানও জানান পার্টির মহাসচিব।
সম্মেলনে সভাপতিত্ব করেন জাতীয় পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য এবং সাবেক মহিলা ও শিশুবিষয়ক প্রতিমন্ত্রী অ্যাডভোকেট সালমা ইসলাম এমপি। সভাপতির বক্তব্যে তিনি বলেন, জাতীয় পার্টি ধ্বংসের রাজনীতি করে না, উন্নয়নের রাজনীতি করে। আমাদের নেতা পল্লীবন্ধু হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ সেই শিক্ষা দিয়ে গেছেন। আমাদের প্রতি দেশের মানুষের ভালোবাসা আছে। তাই আসুন প্রস্তুত হই। নতুন সম্ভাবনার আলোর পথে আমরা নতুনভাবে যাত্রা শুরু করি। জয় আমাদের হবেই। আমরা জয়ী হব ইনশাআল্লাহ। কর্মীদের আরও সক্রিয় হওয়ার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, আপনারা আরও সক্রিয় হোন। দলকে সুসংহত করতে মিলেমিশে কাজ করুন।
মানুষ আজ জাতীয় পার্টির দিকে অনেক আশা নিয়ে তাকিয়ে আছে উল্লেখ করে অ্যাডভোকেট সালমা ইসলাম বলেন, জাতীয় পার্টি আরও শক্তিশালী হবে ইনশাআল্লাহ। প্রিয় নেতা হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের আদর্শ ও উন্নয়নের রাজনীতির অনুপ্রেরণা বুকে ধারণ করে আমাদের নেতাকর্মীরা আরও জোরেশোরে কাজের প্রচার ও প্রসারে আত্মনিয়োগ করবে- দেশের মানুষ এটাই দেখতে চান। তাদের প্রত্যাশা জাতীয় পার্টি আরও শক্তিশালী হয়ে আগামীতে দেশের শাসন পরিচালনা করবে। আসবেই আসবে দেশের সুদিন।
আগামী নির্বাচনের প্রস্তুতির কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, সব ষড়যন্ত্র মোকাবেলা করে সামনে এগিয়ে যেতে হবে। আগামী নির্বাচনের জন্য এখন থেকেই প্রস্তুতি চালিয়ে যান। নিশ্চয় আমরা জয়ী হব।
নেতাকর্মীদের উদ্দেশে সালমা ইসলাম এমপি বলেন, আমি সব বিশ্বাস ও আস্থার সঙ্গে বলতে চাই, আমাদের ভবিষ্যৎ খুবই উজ্জ্বল। আমরা পারব, নিশ্চয় পারব। আর সেটা সম্ভব করবেন আপনারা। তিনি বলেন, প্রত্যেকে যদি আন্তরিকতার সঙ্গে কাজ করি, তবে টেকনাফ থেকে তেঁতুলিয়া পর্যন্ত জাতীয় পার্টিকে আমরা সুসংহত করতে পারব।
নিজ এলাকা নবাবগঞ্জ ও দোহারের কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, আজ আমার মনে বারবার গুঞ্জন তুলছে আমাদের প্রিয় নেতার সেই প্রিয় গানের একটি কলি- ‘নতুন বাংলাদেশ গড়ব মোরা, নতুন করে আজ শপথ নিলাম।’ দেশকে ভালোবেসে, দেশের জন্য কিছু করার স্বপ্ন নিয়ে আমরা সবাই জাতীয় পার্টিতে এসেছিলাম। পার্টির আদর্শ ও নেতা এরশাদের গতিশীল নেতৃত্বের প্রতি আস্থাশীল হয়ে আমিও জাতীয় পার্টিতে এসেছিলাম। আমার এলাকা দোহার-নবাবগঞ্জের স্বপ্নের জনপদ হিসেবে গড়ার কাজে উঠেপড়ে লেগেছিলাম জাতীয় পার্টির ৯ বছরের শাসনামলের পরবর্তী সময়ে। আমার এলাকায় জাতীয় পার্টির অস্তিত্ব প্রায় বিলুপ্ত হয়ে গিয়েছিল। ওয়ার্ড-ইউনিয়ন কমিটিগুলো নতুন ধাপে পুনর্গঠিত করে আমি থানা পর্যন্ত জাতীয় পার্টিকে আবার চাঙ্গা করে তুলতে সফল হই। এখনও নিরলসভাবে কাজ করে চলছি।
নেতাকর্মীদের উদ্দেশে অ্যাডভোকেট সালমা ইসলাম বলেন, আজ আমাদের অনেক আনন্দের দিন। আমাদের প্রাণপ্রিয় দল জাতীয় পার্টি আবার জেগে উঠেছে। ঢাকা জেলার সম্মেলন মহাসম্মেলনে পরিণত হয়েছে। আপনাদের উৎসাহ-উদ্দীপনা দেখে আমার বাববার মনে পড়ছিল পল্লীবন্ধু হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের কথা। তিনি আজ এ মহাসমাবেশে থাকলে অনেক খুশি হতেন।
তিনি বলেন, পল্লীবন্ধু হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের ইন্তেকালের পর অনেকেই জাতীয় পার্টির ভবিষ্যৎ নিয়ে খানিকটা চিন্তিত ছিলেন। কিন্তু সময়ের ধারাবাহিকতায় সব সন্দেহ ও সংশয় মিথ্যা হয়ে গেছে। আমাদের দলের নেতাদের মধ্যে মধুর সম্পর্কের কারণে কোনো সমস্যা হয়নি। সংশয় কিংবা সমস্যার কালো ছায়া জাতীয় পার্টিকে স্পর্শ করতে পারেনি। দলীয় নেতাকর্মীদের মায়ের মতো ও আমাদের নেত্রী বেগম রওশন এরশাদ জাতীয় সংসদে বিরোধীদলীয় নেতা হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। পল্লীবন্ধু এরশাদের সুযোগ্য ছোট ভাই গোলাম মোহাম্মদ কাদের দলের নেতৃত্ব দেয়ার সব গুণের অধিকারী, দলের প্রতিটি নেতাকর্মী তাকে পল্লীবন্ধুর যোগ্য উত্তরসূরি মনে করেন। তিনি দলের প্রধান চালিকাশক্তি হিসেবে চেয়ারম্যানের আসন অলঙ্কৃত করেছেন। শক্ত হাতেই তিনি হাল ধরেছেন আমাদের প্রিয় দলের।
সালমা ইসলাম এমপি আরও বলেন, আমাদের দুই কোটির মতো নতুন ভোটার আছে। পল্লীবন্ধু যখন রাষ্ট্র পরিচালনার ভার নিয়েছিলেন, সেই নয়টি বছর, সে সময়ের উন্নয়নের কথা তাদের বলতে হবে। একবার বন্যা হয়েছিল, সে সময় বুক পর্যন্ত পানি নিয়ে মানুষের পাশে গিয়ে তাদের বাঁচিয়ে এনেছিলেন পল্লীবন্ধু। এসব নতুন ভোটারদের বলতে হবে।
প্রেসিডিয়াম সদস্য জিয়াউদ্দিন আহমেদ বাবলু বলেন, জাতীয় পার্টি বাংলাদেশের রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত ছিল নয় বছর পল্লীবন্ধু এরশাদের নেতৃত্বে। পল্লীবন্ধু এরশাদ আমাদের পার্টির চালিকাশক্তি। উনি নেই, তার কর্মকাণ্ড আছে। উনার সংস্কারগুলো আছে। সেগুলোকে ভিত্তি করেই জাতীয় পার্টি আগামী প্রজন্মের কাছে কর্মসূচি তুলে ধরবে। আরেক প্রেসিডিয়াম সদস্য সৈয়দ আবু হোসেন বাবলা বলেন, আমরা এখন জাতির স্বার্থে বিরোধী দল। কিন্তু আগামী নির্বাচনে জাতীয় পার্টির বিকল্প নেই। জনগণ অধীর আগ্রহে জাতীয় পার্টির জন্য অপেক্ষা করছে।
অনুষ্ঠান পরিচালনা করেন জাতীয় পার্টির ঢাকা জেলা শাখার সদস্য সচিব ও সাবেক এমপি খান মোহাম্মদ ইসরাফিল (খোকন)। আরও বক্তব্য দেন জাতীয় পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য সুনীল শুভরায়, এসএম ফয়সল চিশতী, হাজী সাইফুদ্দীন আহমেদ মিলন, আলমগীর সিকদার লোটন, নাজমা আকতার এমপি, চেয়ারম্যানের উপদেষ্টা রওশন আরা মান্নান এমপি, ভাইস চেয়ারম্যান জহিরুল ইসলাম জহির, নুরুর ইসলাম নুরু, জহিরুল আলম রুবেল, যুগ্ম মহাসচিব গোলাম মোহাম্মদ রাজু, যুব সংহতির সাধারণ সম্পাদক ফখরুল আহসান শাহাজাদা, জাতীয় ছাত্র সমাজের সাধারণ সম্পাদক আল মামুন, ঢাকা জেলার সাবেক সহসভাপতি আসাদুজ্জামান চৌধুরী রানা, দোহার উপজেলার সভাপতি ডা. আলাউদ্দিন আল আজাদ, সাধারণ সম্পাদক আবদুল আলিম, নবাবগঞ্জ উপজেলার যুগ্ম আহ্বায়ক জুয়েল আহমেদ, জাহাঙ্গীর চোকদার, ধামরাই উপজেলার আহ্বায়ক আবদুল মালেক, কেরানীগঞ্জ উপজেলার আহ্বায়ক শাকিল আহম্মেদ, সদস্য সচিব লাইজুল ইসলাম (লাইজু), সাভার উপজেলার সাবেক সাধারণ সম্পাদক এমএ আজিজুর রহমান আজিজ, ঢাকা জেলার জাতীয় ছাত্র সমাজের সাধারণ সম্পাদক ইউসুফ আলী, নবাবগঞ্জের ছাত্র সমাজের সভাপতি খলিল দেওয়ান, জাতীয় ছাত্র সমাজের সাবেক সহসভাপতি জিয়াউল হক জুয়েল প্রমুখ।