সরকারি দুর্নীতিই সবচাইতে ‘বড় সমস্যা’
শৈশবে আমরা পড়িয়াছি—‘সকালে উঠিয়া আমি মনে মনে বলি/ সারা দিন আমি যেন ভালো হয়ে চলি।’ কিন্তু যেই সকল অফিসে ঘুষের লেনদেনের সুযোগ রহিয়াছে, সেইখানকার সুযোগসন্ধানী কর্মীরা সকালে উঠিয়া সম্ভবত মনে মনে বলেন—তাহারা যেন সারা দিন গোপনে ‘দুর্নীতি’ করিয়া চলিতে পারেন।
দুর্নীতি করাটাই যেন তাহাদের ‘ভালো’ হইয়া চলিবার সমার্থক। এখনো স্কুলে পড়ানো হয়—অনেস্টি ইজ দ্য বেস্ট পলেসি। কিন্তু আমাদের সমাজে কেহ সৎ থাকিতে চাহেন না। সৎ থাকিবার বিষয়টি যেন বোকামির নামান্তর। কেহ যদি বলেন অমুক লোকটি সৎ, তখন পালটা বলা হয়—কত টাকা পর্যন্ত তাহার সততার সীমা? কিংবা বলা হয়, লোকটি সুযোগের অভাবে সৎ। অর্থাৎ সুযোগ পাইলে রাক্ষসের মতো অর্থ গিলিবে, চুরি কিংবা দুর্নীতি করিবে।
অবস্থা এমন দাঁড়াইয়াছে যে, অনেকে বলিয়া থাকেন, সরকারি অধিকাংশ খাতে যেই সকল কর্মকর্তা কর্মচারী রহিয়াছেন, কিছু ব্যতিক্রম বাদে, তাহারা তাহাদের অফিসে কেবল একটি ‘ড্রয়ার’ পাইলেই আর কিছু লাগে না। অর্থাৎ মাসে মাসে বেতনের প্রয়োজন পড়ে না। দুর্নীতির এমন দুঃসহ মনস্তত্ত্ব কি করিয়া এই জাতির মধ্যে গাঁথিয়া গেল? প্রায় প্রত্যেকের মতো এক একটি শিয়াল আর বকধার্মিক বসবাস করে। শিয়ালের নিকট মুরগি বর্গা দেওয়ার মতো পরিস্থিতি। এই কারণে কিছুদিন পূর্বে একটি আন্তর্জাতিক জরিপে দেখা গিয়াছে—বাংলাদেশের ৭২ শতাংশ মানুষ মনে করেন, সরকারি দুর্নীতিই সবচাইতে ‘বড় সমস্যা’।