স্বজনপ্রীতি ও দুর্নীতির ফলে জনগণের টিকা প্রাপ্তি অনিশ্চয়তার মধ্যে পড়েছে: বিএনপি
দুর্নীতি করার অভিলাষেই সরকার করোনার ভ্যাকসিন আমদানিতে ‘মধ্যস্বত্ত্বভোগী’ নিয়োগ দিয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
গতকাল রবিবার (১০ জানুয়ারি) সকালে গুলশানে চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, ‘ভ্যাকসিন সরকার সরাসরি না কিনে ‘মধ্যস্বত্ত্বভোগী’ নিয়োগ দিয়েছে দুর্নীতির জন্যে। এর মাধ্যমে জনগণের অর্থ নয়-ছয় করে দুর্নীতির ক্ষেত্র তৈরি করা হয়েছে।’
বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘সরকারি সুবিধাভোগী পদধারী মধ্যস্বত্ত্বভোগী নিয়োগ নিয়ে নীতিগতভাবেই শুধু নয়, আইনগতভাবেও অপরাধমূলক একটা কাজ হয়েছে। জাতীয় স্থায়ী কমিটির সভা মনে করে, সরকারের লাভজনক পদে নিয়োগকৃত কোনও ব্যক্তি, যিনি আমদানিকারক প্রতিষ্ঠানের শীর্ষ কর্মকর্তা, তার এই (ভ্যাকসিন ক্রয়) সম্পৃক্ততা বেআইনি ও অপরাধমূলক।’
মির্জা ফখরুল বলেন, ‘মানুষের জীবন রক্ষাকারী ভ্যাকসিন আমদানি প্রক্রিয়ায় অস্পষ্টতা, স্বজনপ্রীতি ও দুর্নীতির ফলে জনগণের এই টিকা প্রাপ্তি অনিশ্চয়তার মধ্যে পড়েছে। ভ্যাকসিন কবে আসবে- এটা নিয়ে গোটা জাতির সঙ্গে আমরাও চরমভাবে উদ্বিগ্ন। এখন পর্যন্ত তারা (সরকার) কোনও সুনির্দিষ্ট সময়ও নির্ধারণ করতে পারেনি।’
তিনি বলেন, ‘ভারত থেকে যে ভ্যাকসিন আমদানি করা হবে এখন পর্যন্ত তারও কোনও নিশ্চয়তা আমরা পাইনি। কারণ ভারতের হাই কমিশনার বলেছেন, আগে ভারতের চাহিদা মেটানো হবে, তারপরে তারা রফতানির বিষয়টি নির্ধারণ করবেন। তাদের পররাষ্ট্র সচিবও একই কথা বলছেন। আমরা পত্র-পত্রিকায় দেখছি, শ্রীলংকার সাথে তারা চুক্তি করেছেন যে, শ্রীলংকাকে তারা আগে অগ্রাধিকার দেবেন। এই বিষয়গুলো অস্পষ্ট এবং এর মাধ্যমে পুরোপুরিভাবে বাংলাদেশের মানুষকে আবার প্রতারণার শিকার করা হচ্ছে।’
তিনি বলেন, ‘ভ্যাকসিনটা জীবন রক্ষার একটা বিষয়। এটা একটা অগ্রাধিকার। সেই ভ্যাকসিন নিয়েও সরকার দুর্নীতি শুরু করেছে, যেটা আমরা পত্র-পত্রিকায় দেখছি। এই সরকার যে পুরোপুরিভাবে দায়িত্বজ্ঞানহীন এবং জনগণের প্রতি যে তাদের কোনও রকম দায়-দায়িত্ব নেই সেটাই এখানে পুনরায় প্রমাণিত হচ্ছে।’
বিএনপি মহাসচিব আরও বলেন, ‘টিকা আমদানির দায়িত্ব শেয়ারবাজার লুণ্ঠনকারী বির্তকিত বেক্সিমকো গ্রুপকে দেয়ার সিদ্ধান্তে জাতীয় স্থায়ী কমিটির সভায় গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়।’
শনিবার দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের সভাপতিত্বে স্থায়ী কমিটির এই ভার্চুয়াল সভায় এভার কেয়ার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন স্থায়ী কমিটির সদস্য মওদুদ আহমদের আশু রোগমুক্তির কামনায় দেশবাসীর কাছে দোয়া চাওয়া হয় বলেও জানান বিএনপি মহাসচিব।
‘দেশে দুর্নীতির সর্বগ্রাসী চিত্র’ তুলে ধরে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) সাবেক মেয়র ও বর্তমান মেয়র পরস্পরের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ তুলছেন। এটা দিয়েই বর্তমান সরকারের দুর্নীতির সর্বগ্রাসী চিত্র প্রকাশ হয়েছে। কারণ একজন বর্তমান মেয়র, আরেকজন সাবেক মেয়র। বর্তমান মেয়র অভিযোগ করছেন যে, সাবেক মেয়র দুর্নীতি করেছেন। তার মুখ দিয়ে বেরিয়ে আসছে, আগে দুর্নীতি কি হয়েছে?’
ডিএসসিসির বর্তমান মেয়র ব্যারিস্টার তাপসের প্রতি ইঙ্গিত করে ফখরুল বলেন, ‘যারা এখন আছেন, তারা কী করছেন সেটাও আমরা পত্র-পত্রিকায় দেখতে পারছি। সুতরাং বর্তমানে দেশে দুর্নীতির সর্বগ্রাসী যে চিত্র সেটাই বেরিয়ে এসেছে।’
সংবাদ সম্মেলনে দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান উপস্থিত ছিলেন।