দুই ঠিকাদারের দুর্নীতিতে দুর্ভোগে ৩০ গ্রামের মানুষ
নড়াইলের লোহাগড়া উপজেলার সত্রহাজারী-ব্রাহ্মণডাঙ্গা সড়ক নির্মাণে দুই ঠিকাদারের অনিয়ম ও দুর্নীতিতে চার বছর ধরে দুর্ভোগ পোহাচ্ছেন হান্দলা গ্রামসহ পার্শ্ববর্তী তিনটি ইউনিয়নের অন্তত ৩০ গ্রামের মানুষ। দ্রুত সড়কটি পাকাকরণের কাজ সম্পন্নের মাধ্যমে দুর্ভোগ নিরসনের দাবি জানিয়েছেন এলাকাবাসী।
সড়কটি পাকাকরণের জন্য পোড়ামাটিসহ নিম্নমানের খোয়া ব্যবহার ও সিডিউল মোতাবেক কাজ না করায় এবার দুদকের একটি টিম সড়কটি পরিদর্শন করেছে।
এলজিইডি অফিস সূত্রে জানা গেছে, লোহাগড়া উপজেলার উত্তরাঞ্চলের লাহুড়িয়া, শালনগর ও নোয়াগ্রাম ইউনিয়নসহ পার্শ্ববর্তী এলাকার মানুষের জেলা শহরের সঙ্গে সরাসরি যোগাযোগ স্থাপনের জন্য ২০১৭ সালের জানুয়ারি মাসে সত্রহাজারী-ব্রাহ্মণডাঙ্গা সড়কের হান্দলা থেকে ব্রাহ্মণডাঙ্গা পূর্বপাড়া মাদরাসা পর্যন্ত প্রায় দুই কিলোমিটার সড়ক পাকাকরণের কাজ শুরু হয়।
প্রথমে কাজটি চুক্তিবদ্ধ হন ফরিদপুরের ঠিকাদার আকরাম হোসেন রাজা। তিনি প্রথমে রাস্তাটি খুঁড়ে রেখে ব্যবসায়িক সমস্যার কারণে কাজটি ফেলে রেখে চলে যান। এরপরই হান্দলা গ্রামসহ পার্শ্ববর্তী গ্রামবাসীর দুর্ভোগ শুরু হয়।
বর্ষাকালে রাস্তাটি খালে পরিণত হয়। চলাচলের অযোগ্য হয়ে পড়ে সড়কটি। এলজিইডি কর্তৃপক্ষ ওই কাজটি বাতিল করে পুনরায় টেন্ডার করতেই সময় কেটে যায় প্রায় আড়াই বছর।
সড়কটি পুনরায় টেন্ডার হলে কাজ পায় নড়াইলের ইডেন প্রাইজ নামে একটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। ওই প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে কাজটি কিনে নেন লাহুড়িয়া গ্রামের ঠিকাদার কামরুজ্জামান কোমর। এক বছর আগে কাজ শুরু করেই তিনি পোড়ামাটি ও নিম্নমানের খোয়া ব্যবহার শুরু করেন। স্থানীয় জনগণের বাধায় ছয় মাস কাজ বন্ধ থাকার পর নিম্নমানের খোয়া সরিয়ে নিয়ে নেন।
পরে পুনরায় গত বছরের ডিসেম্বর মাসে কাজ শুরু করেন ওই ঠিকাদার। রাস্তায় প্রথম স্তরে ১০ ইঞ্চি বালু দেয়ার পর দ্বিতীয় স্তরে বালু খোয়ার সংমিশ্রণের কাজ শুরু হয়। অর্ধেক বালু ও অর্ধেক খোয়ার সংমিশ্রণে ৬ ইঞ্চি পুরু করার কথা থাকলেও সেখানে সর্বোচ্চ ২৫ ভাগ খোয়া এবং ৭৫ ভাগ বালু দেয়া হয়েছে। এছাড়া যে খোয়া ব্যবহার করা হয়েছে তা অত্যন্ত নিম্নমানের।
হান্দলা গ্রামের বাসিন্দা আব্দুল কাদের, চর ব্রাহ্মণডাঙ্গা গ্রামের বাসিন্দা আবুল কাশেমসহ একাধিক ব্যক্তি জানান, ওই ঠিকাদার কিছুদিন আগে যে নিম্নমানের খোয়া সরিয়ে নিয়েছিলেন সেই খোয়া বালু মিশিয়ে পুনরায় রাস্তায় দিয়েছেন। হান্দলা স্কুলমাঠে ভালো মানের কিছু খোয়া রাখা হয়েছে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে দেখানোর জন্য। এলজিইডি কর্তৃপক্ষকে অনেকটা বোকা সাজিয়ে নিম্নমানের উপকরণ দিয়ে রাস্তার কাজ করার চেষ্টা করেছেন ঠিকাদার।
এ ব্যাপারে ঠিকাদার কামরুজ্জামান কোমর বলেন, কিছু খোয়া খারাপ এসেছে। রাস্তায় বালুর সঙ্গে খোয়ার মিশ্রণ কম হয়েছে। তবে কাজ এখনও শেষ হয়নি। আরও খোয়া দেয়া হবে। এরপর থেকে ভালো খোয়া দিয়ে কাজ করা হবে।
এলজিইডির লোহাগড়া উপজেলা প্রকৌশলী অভিজিৎ মজুমদার বলেন, আধা কিলোমিটার অংশে খোয়া নিম্নমানের দেয়া হয়েছে। ওই খোয়া সরিয়ে নিতে বলা হয়েছে। মিশ্রণে খোয়ার পরিমাণও কম আছে। এ নিয়ে যথাযথভাবে কাজ করতে ঠিকাদারকে চিঠি দেয়া হয়েছে।
এলজিইডির নড়াইলের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. সুজায়েত হোসেন বলেন, ঠিকাদারকে সিডিউল মেনে কাজ করতে হবে। খারাপ খোয়া সরিয়ে নিয়ে পুনরায় কাজ করার জন্য বলা হয়েছে। প্রয়োজনবোধে চুক্তি বাতিল করে পুনরায় টেন্ডার আহ্বান করা হবে। কিন্তু কাজের মান নিয়ে কোনো ছাড় দেয়া হবে না।
এদিকে অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগের প্রেক্ষিতে দুদকের একটি প্রতিনিধি দল সড়কটি পরিদর্শন করেছেন। দুদকের যশোর সমন্বিত জেলা কার্যালয়ের উপপরিচালক মো. নাজমুচ্ছায়াদাতের নেতৃত্বে তদন্তকালে অভিযোগের সত্যতা পেয়েছেন প্রতিনিধি দল।
পরিদর্শনকাল উপপরিচালক মো. নাজমুচ্ছায়াদাত বলেন, দুদুকের হটলাইন ১০৬ নম্বরে অভিযোগের ভিত্তিতে ঢাকা থেকে সড়কটি পরিদর্শনের নির্দেশ দেন। একদম পুরোনো খুবই খারাপ ইটের খোয়া দেয়া হয়েছে। বালুর চেয়ে খোয়ার পরিমাণও কম। এগুলো তুলে ফেলতে নিদের্শ দিয়েছি। এলাকাবাসীর দুর্ভোগের কথা বিবেচনা করে খারাপ উপকরণ সরিয়ে নিয়ে কাজ চলমান রাখার জন্য নির্দেশ দিয়েছি। এ ব্যাপারে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।