ঢাকার নিউমার্কেট এলাকার ফুটপাতে দিনে লাখ টাকা চাঁদাবাজি
২০১৭ সালের মাঝামাঝি সময়ে টানা অভিযান চালিয়ে নিউমার্কেট এলাকার ফুটপাত থেকে হকার উচ্ছেদ করেছিল ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন (ডিএসসিসি)। এরপর বেশ কয়েক মাস এলাকার ফুটপাত হকারমুক্ত ছিল। পরে ধীরে ধীরে ফুটপাতগুলো আবার হকারদের দখলে চলে যায়। তবে চাইলেই কেউ পণ্যের পসরা সাজিয়ে ফুটপাতে বসতে পারেন না। এখানে ব্যবসা করতে হলে প্রতিদিন গুনতে হয় নির্দিষ্ট পরিমাণের চাঁদা।
হকাররা বলেন, নিউমার্কেটের আশপাশের সড়কগুলোতে প্রতিদিন পাঁচ শতাধিক হকার বসেন। এসব হকারের কাছ থেকে দিনে গড়ে ২০০ টাকা করে চাঁদা তোলেন লাইনম্যানরা। এই হিসাবে দিনে প্রায় লাখ টাকা চাঁদা ওঠে।
গতকাল বৃহস্পতিবার দেখা যায়, নিউমার্কেটের দক্ষিণ কোণ থেকে উত্তর কোণ পর্যন্ত ফুটপাতে হরেক রকম পণ্যের পসরা সাজিয়ে বসেছেন অর্ধশতাধিক হকার। এসব পণ্য কিনতে ফুটপাতে জটলা তৈরি করেছেন ক্রেতারা। এ কারণে ফুটপাত দিয়ে পথচারীদের হাঁটার কোনো উপায় নেই। বাধ্য হয়ে পথচারীরা রাস্তায় নেমে চলাচল করছে।
নিউমার্কেটের দ্বিতীয় ফটকের উত্তর পাশের ফুটপাতে পলিথিন বিছিয়ে নারীদের বিভিন্ন ধরনের ব্যাগ বিক্রি করছিলেন মিরাজ উদ্দিন। তিনি বলেন, প্রতিদিন বেলা ১১টার পর থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত তিনি ফুটপাতে ব্যাগ বিক্রি করেন। এ জন্য সন্ধ্যার পরপর লাইনম্যান জাকিরকে ২০০ টাকা চাঁদা দিতে হয়। এই ফুটপাতের অন্য ব্যবসায়ীরা তাঁকে একই পরিমাণ চাঁদা দেন।
মিরাজের সঙ্গে যখন কথা হচ্ছিল, তখন পাশেই ঘুরঘুর করছিলেন লাইনম্যান জাকির। তিনি নিজেকে আওয়ামী লীগের ১৮ নম্বর ওয়ার্ডের আওতাধীন নীলক্ষেত ইউনিটের কর্মী বলে দাবি করেন। জাকির বলেন, ‘ফুটপাতে হকার বসায় রাস্তাঘাট নোংরা হয়। তাই তাঁদের কাছ থেকে ২০ টাকা করে নিয়ে রাস্তা ঝাড়ু দেওয়াই।’
আওয়ামী লীগের ১৮ নম্বর ওয়ার্ডের সভাপতি সহিদুল কবির বলেন, জাকির নামে নীলক্ষেত ইউনিটে একজন কর্মী আছে বলে জানি। চাঁদাবাজির অভিযোগ সম্পর্কে তিনি খোঁজ নিয়ে দেখবেন।
গতকাল দেখা যায়, নিউমার্কেটের উত্তর পাশে ঢাকা নিউ সুপার মার্কেট (দক্ষিণ) ভবনের উত্তর-পূর্ব ফটকের সামনের ফুটপাত ও রাস্তায় জুতা, ব্যাগসহ বিভিন্ন ধরনের পণ্যের পসরা নিয়ে বসছেন শতাধিক হকার। এতে চন্দ্রিমা সুপার মার্কেটের সামনে দিয়ে গাড়ি চলাচলে সমস্যা হচ্ছে। হকারদের কারণে ফাঁকা জায়গায় গাড়িও পার্ক করা যাচ্ছে না।
এই ফুটপাতে ঝুড়িতে করে দীর্ঘদিন ধরে জুতার ব্যবসা করেন এক হকার। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ওই হকার বলেন, নিউমার্কেটের চারপাশের রাস্তার পার্কিং ইজারা পেয়েছেন মেসার্স টাইমস ইন্টারন্যাশনালের মালিক ও যুবলীগের ১৮ নম্বর ওয়ার্ডের সভাপতি ফরমান মোল্লা। এখন তাঁর লোকজন পার্কিংয়ের জায়গায় হকার বসিয়ে চাঁদাবাজি করছেন।
তবে ফরমান মোল্লা বলেন, এর সঙ্গে তিনি এবং তাঁর প্রতিষ্ঠানের কেউ জড়িত নয়।
নীলক্ষেতের ইসলামিয়া মার্কেটে ব্যবসায়ী বহুমুখী সমবায় সমিতি লিমিটেডের সামনে থেকে সায়েন্স ল্যাব পর্যন্ত মীরপুর রোডের পূর্ব পাশে ফুটপাতে আছেন তিন শতাধিক হকার। এর মধ্যে চাঁদনি চক শপিং কমপ্লেক্স, বলাকা সিনেমা হল, নূর ম্যানশন, ধানমন্ডি হকার্স মার্কেট, নূর জাহান সুপার মার্কেটের সামনে হকারের সংখ্যা বেশি। এ এলাকায় ফুটপাত থেকে শিপন ও রানা নামে দুই লাইনম্যান চাঁদা তোলেন বলে জানিয়েছেন হকাররা। চেষ্টা করেও ওই দুজনের সঙ্গে যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি।
নিউমার্কেটের পূর্ব পাশে পৃথক দুটি পদচারী–সেতুও হকারদের দখলে। তাঁরা পথচারীদের চলাচলের পথে পণ্যের পসরা সাজিয়ে বসছেন। এতে এই দুটি সেতুতে ওঠা-নামায় সমস্যার সৃষ্টি হয়। এ ছাড়া সরকারি ছুটির দিনে পদচারী–সেতুতে জটলা লেগে থাকে বলে জানিয়েছেন স্থানীয় বাসিন্দা ও ব্যবসায়ীরা।
নিউমার্কেট থেকে কেনাকাটা করে চাঁদনি চকে যাচ্ছিলেন আবুল কালাম দম্পতি। তাঁরা বলেন, পদচারী–সেতুটি ছয় ফুটের মতো চওড়া। এর মধ্যে চার ফুটই দখল করে রাখেন হকাররা।
জানতে চাইলে ডিএসসিসির সম্পত্তি কর্মকর্তা মনিরুজ্জামান বলেন, এক সপ্তাহ আগেও নিউমার্কেট এবং এর আশপাশের ফুটপাত থেকে হকারদের উচ্ছেদ করা হয়েছিল। মাঝখানে কয়েক দিন বিরতি থাকায় হকাররা আবার বসেছেন। আগামী রোববার থেকে এ এলাকায় টানা অভিযান চলবে। ফুটপাত পথচারীদের ফিরিয়ে দেওয়া হবে।