ক্ষমতায় এসে গণতন্ত্রের দরজা-জানালা বন্ধ করে দিয়েছে আওয়ামী লীগ: বিএনপি
ক্ষমতায় এসে আওয়ামী লীগ গণতন্ত্রের সব দরজা-জানালা বন্ধ করে দিয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব অ্যাডভোকেট রুহুল কবির রিজভী।
গতকাল মঙ্গলবার নয়া পল্টনে দলটির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ মন্তব্য করেন।
রিজভী বলেন, একটি ষড়যন্ত্রের নির্বাচনে ক্ষমতায় আসার পর থেকে গণতন্ত্রের সব দরজা-জানালা বন্ধ করে দিয়েছে আওয়ামী লীগ। নাগরিক স্বাধীনতার গলায় ফাঁসির দড়ি লটকিয়ে দিয়েছে। নিঃশব্দ বোবাকণ্ঠই হচ্ছে আওয়ামী বাকশালীদের কাছে প্রিয়।
তিনি বলেন, ‘ক্ষমতাসীনরা উৎপীড়নের পথ বেছে নিয়ে যেভাবে গণতন্ত্রকে বিষাক্ত গ্যাস চেম্বারে ঢুকিয়েছেন, তার পরিণতি হবে এই সরকারের জন্য ভয়াবহ। মার্কিন রাষ্ট্রনায়ক টমাস জেফারসন বলেছেন, অন্যায় যখন আইন, তখন প্রতিরোধই একমাত্র কর্তব্য।’
বাংলাদেশের নির্বাচনের ইতিহাসে ৫ জানুয়ারিকে এক কালিমালিপ্ত দিন বলে অভিহিত করে রিজভী বলেন, ‘সাত বছর আগে ২০১৪ সালের এই দিনে সারাদেশে ভোটার ও বিরোধী দলের প্রার্থীবিহীন একতরফা বিতর্কিত, প্রতারণামূলক, হাস্যকর ও শতাব্দীর শ্রেষ্ঠ প্রহসনমূলক একদলীয় পাতানো নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। সারাদেশে নির্বাচন কেন্দ্রগুলো ছিল একদম ফাঁকা। কোথাও কোথাও ভোটারের বদলে ভোটকেন্দ্রে চতুষ্পদ প্রাণীর বিচরণ দেখেছে বিশ্ববাসী।
স্বাধীনতাত্তোর বাংলাদেশে প্রথম জাতীয় সংসদ নির্বাচনেও আওয়ামী লীগ ভোট চুরি করেছে বলে দাবি করে রিজভী বলেন, ‘স্বাধীনতা অর্জনের মাত্র সোয়া এক বছরের মাথায় ১৯৭৩ সালের ৭ মার্চ অনুষ্ঠিত নির্বাচনেও আওয়ামী লীগ জনগণের উপর বিশ্বাস রাখতে পারেনি। তারা সন্ত্রাস, ভোট ডাকাতি ও কারচুপির আশ্রয় নিয়েছিল।’
‘জনগণের ক্ষমতার প্রতি অবিশ্বাসী-অবিশ্বস্ত আওয়ামী লীগ মানুষের ভোটাধিকার হরণ করতে পরিকল্পিতভাবে ২০১১ সালে সংবিধান থেকে তত্ত্বাবধায়ক সরকার পদ্ধতি বাতিল করে দিয়েছিল। এরপর যেকোনো উপায়ে ক্ষমতা কুক্ষিগত করে রাখতে তারা প্রস্তুতি গ্রহণ করতে থাকে।’
রিজভী বলেন, ‘৫ জানুয়ারি ২০১৪ সালে প্রহসনের নির্বাচন প্রায় সকল রাজনৈতিক দল বর্জন করেছিল। কিন্তু শেখ হাসিনা ও তার দলকে ক্ষমতায় রাখার জন্য জাতীয় ও আন্তর্জাতিক চক্রান্ত দৃশ্যমান হয়। জাতীয় পার্টি তাদের সকল মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার করার পরেও বন্দুকের নলের মুখে ভয় দেখিয়ে কয়েকজনকে বিজয়ী ঘোষণা করে গৃহপালিত বিরোধী দলের আসনে বসানো হয়।’
বিএনপি এই শীর্ষ নেতা বলেন, “আজকের এ দিনে ভোটারবিহীন নির্বাচনের মাধ্যমে মানুষের ভোটাধিকার কেড়ে নিয়ে জনগণকে করা হয়েছে পরাধীন। স্বাধীনভাবে ভোট প্রদানের অধিকার ও ইচ্ছাকে ধ্বংস করা হয়েছে। গলাটিপে হত্যা করা হয়েছে সংবিধান, গণতন্ত্রকে। অঘোষিত বাকশাল প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে। ‘লাল ঘোড়া’ দাবড়িয়ে দেয়ার আদলে স্বৈর সরকারের সন্ত্রাসী বাহিনী, গুম-খুন বাহিনী, দখল-লুটেরা বাহিনী, ধর্ষক বাহিনী লণ্ডভণ্ড করে চলেছে গোটা দেশ।”
তিনি বলেন, ‘এখন জনগণ জানে, যেকোনো নির্বাচনের আগে নৌকা প্রতীক টেন্ডারে তোলা হচ্ছে। যে প্রার্থী বেশি দামে কিনতে পারে তার ভাগ্যের শিকে ছেঁড়ে। নৌকা প্রতীক পাওয়া মানে নির্বাচিত হওয়া। এভাবে আওয়ামী লীগ এখন ভোট ডাকাত লীগে পরিণত হয়ে বাংলাদেশের অবাধ সুষ্ঠু নিরপেক্ষ নির্বাচন ব্যবস্থাকে জাদুঘরে পাঠিয়ে দিয়েছে।’
তিনি বলেন, ‘আওয়ামী লীগের কাছে নির্বাচন, গণতন্ত্র, মানবাধিকার, স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব কিছুর মূল্য নেই। তাদের কাছে জবরদস্তি করে ক্ষমতায় দুর্নীতি লুটপাট করে সব চেটেপুটে খাওয়াটাই মুখ্য।’