হাসিনা-কাদের বুঝতেই পারছেন না- ‘তারা এখন গণদুশমন’: রিজভী

0

করোনা পরিস্থিতি মোকাবিলায় সরকারের ব্যর্থতার কঠোর সমালোচনা করে বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব অ্যাডভোকেট রুহুল কবির রিজভী বলেছেন, ‘করোনা ভাইরাসের প্রাদুর্ভাব শুরুর পর গণভবনের চার দেয়ালে আটকে পড়া প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কিংবা র‌্যাব-পুলিশের পাহারায় টিকে থাকা ওবায়দুল কাদের সাহেবরা বুঝতেই পারছেন না যে, তারা এখন গণদুশমনে পরিণত হয়েছেন। তাই অযথা বিএনপির বিরুদ্ধে বালখিল্যসুলভ বক্তব্য-মন্তব্য করা ছাড়া তাদের হাতে আর কোনও কাজ নেই।’

তিনি বলেন, ‘ইদানিং লক্ষ্য করছি, আওয়ামী লীগের কয়েকজন নেতা-মন্ত্রী বিশেষ করে দলটির সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের প্রতিদিন প্রেস ব্রিফিংয়ে বিএনপির বিরুদ্ধে মনগড়া বক্তব্য দেয়াকেই নিজেদের একমাত্র রাজনৈতিক কর্মসূচি হিসেবে গ্রহণ করেছেন। কারণে-অকারণে প্রতিদিন বিএনপির বিরুদ্ধে মিথ্যাচারে জনগণের কাছে ওবায়দুল কাদের নিজেকে একটি হাস্যকর চরিত্রে পরিণত করেছে।’ 

সোমবার (০৪ জানুয়ারি) সকালে নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এক প্রেস ব্রিফিংয়ে তিনি এসব কথা বলেন। 

সম্প্রতি সোস্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল হওয়া ওবায়দুল কাদেরের আপন ছোট ভাই নোয়াখালীর কোম্পানীগঞ্জের বসুরহাট পৌরসভা মেয়র আব্দুল কাদের মির্জার একটি বক্তব্য প্রসঙ্গে রিজভী বলেন, ‘গত বৃহস্পতিবার সকালে পৌরসভার বটতলা চত্বরে সংবাদ সম্মেলনে আব্দুল কাদের মির্জা বলেছেন, ‘সুষ্ঠু নির্বাচন হলে আওয়ামী লীগের এমপিরা নির্বাচিত হওয়া দূরে থাক পালানোর দরজাও খুঁজে পাবে না’। আব্দুল কাদের মির্জার বক্তব্য বাংলাদেশের বর্তমান পরিস্থিতির বাস্তব চিত্র। আমরা আশা করি, আব্দুল কাদের মির্জার সঙ্গে বিএনপির কোনও সম্পৃক্ততা না খুঁজে ওবায়দুল কাদের সাহেব নিজের আপন ছোট ভাইয়ের বক্তব্যটির গুরুত্ব অনুধাবন করবেন। কাদের মির্জার বক্তব্যে সুস্পষ্টভাবে প্রমাণিত হলো- নির্বাচন কমিশনকে কোলের মধ্যে বসিয়ে আওয়ামী সরকার নির্বাচনের নামে দেশবাসীর সঙ্গে প্রতারণা করেছে দীর্ঘ ১২ বছর ধরে।’ 

বিএনপি সিনিয়র এ নেতা বলেন, ‘জনগণের ভালোবাসাধন্য রাজনৈতিক দল জনগণের ভোটে ক্ষমতায় গিয়ে রাষ্ট্র ও প্রশাসন পরিচালনা করবে, এটাই হচ্ছে একটি গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রের চরিত্র। কিন্তু নিশিরাতের ভোট ডাকাত সরকার এখন সম্পূর্ণ র‌্যাব-পুলিশ এবং প্রশাসননির্ভর হয়ে পড়েছে। নিশিরাতের সরকারের পাহারাদার পুলিশের হুঙ্কার শুনলে প্রতীয়মান হয়- বাংলাদেশ সম্পূর্ণরূপে অবৈধ ক্ষমতাদখলদারদের দ্বারা বন্দি। পুলিশের হুঙ্কার শুনে শেখ হাসিনা-ওবায়দুল কাদেররা লজ্জা পান কিনা জানি না, তবে জনগণ লজ্জিত হয়।’ 

‘সম্প্রতি নিজের ব্যর্থতা ঢাকতে গিয়ে কুষ্টিয়া পুলিশের এসপি যেভাবে জনগণের প্রতি হুঙ্কার দিয়েছেন তাতে গণতন্ত্রকামী মানুষের কাছে এটা পরিষ্কার হয়েছে, এই সরকার শুধুমাত্র গণতন্ত্র ও আইনের শাসনেরই কবর রচনা করতে গিয়ে পুলিশকে বেআইনি কাজে উৎসাহ দিচ্ছে। স্রেফ কোনোভাবে ক্ষমতায় টিকে থেকে দুর্নীতি লুটপাট চালানোর সুযোগ নিতে নিজেদের আত্মমর্যাদাও বলি দিয়েছে। জনগণের কষ্টার্জিত অর্থে প্রজাতন্ত্রের বেতনভোগী একজন কর্মচারী-এসপি দেশের নাগরিকদের প্রতি যে ধরণের শব্দ ব্যবহার করে বক্তব্য দিয়েছেন তাতে সরকারের উস্কানি রয়েছে। প্রশাসনের এই ধরণের রাজনৈতিক বক্তব্য নজীরবিহীন’- বলেন রিজভী।

তিনি আরও বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গতকাল রবিবার গণভবন থেকে ভার্চুয়ালি রাজশাহীর সারদা বাংলাদেশ পুলিশ একাডেমিতে ৩৭তম পুলিশ ক্যাডারের প্রশিক্ষণ সমাপনী অনুষ্ঠানে বলেছেন, ‘পুলিশ বাহিনীর সদস্যদেরকে পেশাগত দায়িত্ব পালনের সময় মৌলিক অধিকার, মানবাধিকার এবং আইনের শাসনকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিতে হবে।’ হায় কি রিডিকিউলাস ও ভন্ডামী! বাস্তবতা হলো এই অবৈধ প্রধানমন্ত্রী কথা বলার সময় খুব ভালো সাজার চেষ্টা করেন। গণতন্ত্রের কথা বলেন, মানবাধিকার রক্ষার কথা বলেন, আইনের শাসনের কথা বলেন। আর কাজের ক্ষেত্রে করেন তার উল্টোটা। তাহলে এতদিন ধরে বিচারবহির্ভূত হত্যা করেছে কারা, গুম করেছে কারা, বিএনপি’র লক্ষ লক্ষ্য নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা দায়ের করেছে কারা, কারা ঘর থেকে তুলে নিয়ে গিয়ে নেতাকর্মীদের গ্রেফতার করে রিমান্ডের নামে নির্যাতন করেছে, কারা লাশ ও প্যারালাইসিস রোগীর নামে গায়েবিক মামলা সাজিয়েছে। এরা সবাই শেখ হাসিনা প্রধানমন্ত্রীর সাজানো আইনশৃঙ্খলা বাহিনী।’ 

বিএনপির এ মুখপাত্র বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশেই এরা দেশকে বিরোধীদলশূন্য করতে সারা দেশে জল্লাদের ভূমিকা পালন করেছে। প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে এবং প্রশ্রয়ে ভোটাধিকারের কবর রচনা করতেই এই পুলিশ-র‌্যাবই সর্বোচ্চ ভূমিকা পালন করেছে। এরা দেশের সর্বাধিক জনপ্রিয় নেত্রী, মহান স্বাধীনতার ঘোষকের সহধর্মিনী বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার সাথে দুর্ব্যবহার করেছে। শেখ হাসিনার আন্দোলনের ফসল মঈনউদ্দিন-ফখরউদ্দিন এর বাহিনী দেশনায়ক তারেক রহমানকে শারীরিকভাবে নির্যাতন করেছে। দেশবাসীর কাছে গণতন্ত্র হত্যার কসাই হিসেবে বিবেচিত হবে শেখ হাসিনার গড়ে তোলা এই আইনশৃঙ্খলা বাহিনী।’

কর্মসূচি:
২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সকল রাজনৈতিক দল নির্বাচন বর্জনের পরেও জনগণের দাবিকে উপেক্ষা করে একতরফা ভোটারবিহীন নির্বাচনের মাধ্যমে ক্ষমতা দখলের কলঙ্কিত অধ্যায়কে ঘৃণার সঙ্গে স্মরণ করার জন্য আগামীকাল ৫ জানুয়ারি সারা দেশে বিএনপি কার্যালয়ে কালো পতাকা উত্তোলন এবং দলের নেতাকর্মীরা কালো ব্যাজ ধারণ করবে।

সরকার দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে রাখতে সম্পূর্ণ ব্যর্থ হওয়ায় আগামী ৭ জানুয়ারি সারা দেশে থানা পর্যায়ে বিএনপিসহ সকল অঙ্গ-সংগঠন দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধির প্রতিবাদে এবং বাণিজ্যমন্ত্রীর পদত্যাগের দাবিতে মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করবে।

এই নির্বাচন কমিশনকে সংবিধান প্রদত্ত দায়িত্ব পালনে ব্যর্থতা, দুর্নীতি ও পক্ষপাতিত্বের কারণে সকল দায় নিয়ে পদত্যাগ করতে হবে। নির্বাচন কমিশনের পদত্যাগের দাবিতে আগামী ১০ জানুয়ারি বিএনপির উদ্যোগে সারা দেশে পৌরসভা ও মহানগরে মানববন্ধন কর্মসূচি পালিত হবে। 

ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণ বিএনপির উদ্যোগে উক্ত কর্মসূচি ওইদিন জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে সকাল ১১টায় অনুষ্ঠিত হবে।

সংবাদ স‌ম্মেল‌নে আরও উপ‌স্থিত ছি‌লেন বিএন‌পির চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আবুল খা‌য়ের ভূইয়া, যুগ্ন-মহাস‌চিব হা‌বিব-উন-ন‌বী খান ‌সো‌হেল ও সহ-সাংগঠ‌নিক সম্পাদক আব্দুস সালাম আজাদ প্রমুখ।

তুমি এটাও পছন্দ করতে পারো

উত্তর দিন

আপনার ইমেইল ঠিকানা প্রচার করা হবে না.

WP2Social Auto Publish Powered By : XYZScripts.com